আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শত্রুকে গাড়ি চাপায় মারবে

কে আমার আমি কার রাজীব, রাসেল, মাসুম, মিঠূ আমার বন্ধু। খুব কাছের বন্ধু। প্রাথমীক বিদ্যালয়ে বন্ধুত্ব শুরু। সবাই ঢাকায় বিভিন্ন পেশায় কাজ করছি। মাঝে মধ্যে বন্ধুরা ফার্মগেট আড্ডা দেই।

মাস দুয়েক আগে সবাই আড্ডায় বসে ছিলাম। হঠাৎ বসুন্ধারা সিটিতে যেতে সমার সম্মতি হল। ফার্মগেট থেকে প্রধান সড়কের ডান পাশ দিয়ে কারওয়ান বাজারের দিকে হাটছিলাম। এক মটর সাইকেল আরহী রাস্তার পাশ ধরে ধীর গতিতে চলছে। তার পেছনে দুটি যাত্রীবাহী বাস দ্রুত গতিতে আসছে।

তাদের লক্ষ্য কে-কার আগে এসে যাত্রী উঠানো। এর মধ্যে একটি বাস বামের সীমানা ছুয়ে সাইট নিতে যায়। এসময় মটর সাইকেল আরহীকে বেশগতিতে ধাক্কা দেয়। মটর সাইকেল আরোহী পশে পরে যায়। বাসটি দ্রুত গ্রতিতে চলে যায়।

যাত্রীদের শত চৎকার বাসচালক কর্ণপাত করেনি। সে দ্রুত পলিয়ে যায়। গাড়িটির হেলপার বারবার পেছনে তাকায় আর মিটি মিটি হাসে। গত মঙ্গলবার আমাদের ঢাকা মেডিকেল প্রতিনিধিকে ফোন করছিলাম। রাজধানীতে কি কি ঘটনা আছে।

কয়েকটি নিউ দেয়ার পরেই তিনি জানান- দুটি আরটি মানে সড়ক দুরর্ঘটনা আছে। একজন বৃদ্ধ আরেকজন ছাত্রী। তার বর্ননা অনুসারে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সায়মা আহমেদ ওরফে চাঁদনি বংশাল রোডস্থ বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তার পশ্চিম পাশ থেকে পার হয়ে পূর্ব পাশে যায়। পূর্ব পাশ দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় একটি বেপরোয়া বাস তাকে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। সায়মা রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকে।

রাত সাড়ে ১০ টার দিকে মাটিকাটার কাজ শেষে আজিম উদ্দিন হাজারীবাগের কালনার বাসায় ফিরছিলেন। হাজারীবাগ বেড়ীবাধে পৌঁছালে একটি হলুদ রংয়ের নাভানা টেক্সিক্যাব তাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থল তিনি মারা যান। দৈনিদিনের নানান ঘটনার খবর লেখা শেষে বসিছিলাম। সময় পার করতে ওনলাইন নিউজ সাইট দেখছিলাম। হঠাৎ ‘সড়ক পরিবহন ও ট্রাফিক আইনের ওপর মতামত আহ্বান’ শিরোনামের খবর চোখে পরল।

বিস্তারিত পড়ে জানতে পারলাম- সড়ক পরিবহন ও ট্রাফিক আইন-২০১২ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে এর খসড়া তৈরি করা হয়েছে। খসড়া আইনটি চূড়ান্ত করার আগে জনসাধারণ ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মতামত আহ্বান করেছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। সড়ক পরিবহন ও চলাচল আইন- ২০১২ তে ২২টি অধ্যায়ে ৩৭২ বিষয় বস্তু, সহ্রাধিক পাতায়, লক্ষ লক্ষ শব্দে লেখা হয়েছে। যা পড়ে আমি কিছু বূঝলাম না।

তবে সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে বাস চালকের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে তা বোঝার চেষ্টা করলাম। সড়ক পরিবহন ও ট্রাফিক আইন-২০১২’তে ‘অপরাধের দণ্ড’ অধ্যায়ের বিপজ্জনক চানচালানো শিরোনামের নিচের বিষয় গুলো পড়ে খুব একটা সন্তুষ্ঠ হতে পারলাম না। সড়কে মোটর যান চালাইয়া অপর ব্যক্তির মৃত্যু ঘটানো, (ক) যান চালানো লাইসেন্স ব্যতীত অথবা অযথার্থ লাইসেন্সসহ; অথবা (খ) মোটর যান ত্রুটিপুর্ণ ছিল; অথবা (গ) মোবাইল টেলিফোন ব্যবহারকালে বা উহাতে জবাব প্রদানকালে; অথবা (ঘ) উভয় কানে ইয়ারপ¬াগসহ বা উভয় কান ঢাকিয়া হেডফোন পরিহিত অবস্থায় অথবা (ঙ) বেপরোয়াভাবে বা বিপজ্জনকভাবে; অথবা (চ) অননুমোদিতভাবে প্রতিযোগিতায় বা গতি পরীক্ষাকালে; অথবা (ছ) অবহেলা বশত: বা যথাযথ সাবধানতা বা যুক্তিসঙ্গত বিবেচনা ব্যতীত; অথবা (জ) রক্তে মদের বেআইনী মাত্রাসহ; অথবা (ঝ) ত্র“টিপুর্ণ দুষ্টিশক্তিসহ অথবা অন্য কোন রোগ বা অক্ষমতাসহ অথবা ক্লান্তিকর বা অনুপযুক্ত অবস্থায়। এ অপরাধ সংক্রান্ত ধারা ৪৮(৬), ৬৬, ৭২, ৪৮(৬), ৬৬, ৭২, ২৪৬(১) ১৭৬, ২২৯(১), ২৩০(১), ২৫৩(২), ২৫৪(১), ২৫৭(১), ২৫৮(২), ৭০(৩) ২৫৯(১), ৬৯(৩), ৭০(৩)। যাই হক, সেই কথাই থেকে যাচ্ছে সড়কে কেউ মারা গেলে বাসচালক সহসাই পার পেয়ে যাচ্ছেন।

এ অপরাধের কারাদণ্ড : অনধিক পাঁচ বৎসর ;অথবা অর্থদণ্ড: অন্যুন ৫০ ইউনিট যাহা ৫০০ ইউনিট পর্যন্ত— বৃদ্ধি করা যাইবে; অথবা উভয় দণ্ড; এবং নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীগণকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপুরণ; দোষসুচক পয়েন্ট: আট অযোগ্যতা: কমপক্ষে তিন বৎসরের জন্য বাধ্যতাুলক যাহা সম্পুর্ণ জীবনকাল পর্যন্ত— বৃদ্ধি করা যাইবে। সড়ক পরিবহন ও চলাচল আইন আমার মতে জনবান্ধব হচ্ছে না। তাই তা পড়া বাধ দিয়ে অফিসের কাজে মনোযোগী হলাম। হঠাৎ সম্পাদকের চিৎকার। নিউজ এডিটরের কাছে একটি নিউজ চাচ্ছেন।

নিউজটি প্রথম পৃষ্ঠায় স্থান দেয়া হবে। ঘটনা নারায়ণগঞ্জের তাই আমার দায়িত্ব নয়। তবে জানার জন্য একটু খোঁজ নিলাম। দেখলাম সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ ব্যক্তি নিহত। ঘটনাটি নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার জাঙ্গাল এলাকায়।

একটি কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিক্সার ৫ যাত্রী নিহত হয়েছেন। আবার সড়ক পরিবহন ও চলাচল আইন- ২০১২’র অপরাধ, দণ্ড ও ঘটনার পাতায় চোখ রাখলাম। কিন্তু কোথাও দেখতে পেলাম না পেছন দেখে দাক্কা দিলে যদি কেউ মারা যায়, ধাক্কা প্রধানকারী চালকের শাস্তি কি? গত তিন বছর অপরাধ বিষয়ক রির্পোট করছি। এ সময়ে সহশ্রাধিক ঘটনায় হাজার ব্যক্তির নিহত হবার খবর লিখেছি। যার সিংহভাগ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে।

দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিধ, প্রায়ত অর্থমন্ত্রী ও রাজনৈতিক ব্যক্তি এম সাইফুর রহমান এই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এছাড়া আমার অনেক সহকর্মী সিনিয়র সাংবাদীক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। নিজের চোখের সমানে অনেক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রতিদিন গড়ে ৮ জন ব্যক্তি মারা এ একটি ঘটনায় মারা যাচ্ছে। তার পরেও কেন এ আইনটি কঠর করা হচ্ছে না? খবর নিয়ে জানতে পারলাম- এক মন্ত্রীসহ কয়েকজন এমপি বর্তমান সরকারের সঙ্গে আছেন যারা গাড়ি ব্যবসায়ী।

তাহলেকি তাদের ব্যবসার সুবিধার জন্য এ আইনটি প্রয়ণণ করা হচ্ছে? ছোট্ট বেলায় গল্প শোনতাম, অমক মোহাম্মদ ভাই নামের এক ব্যক্তি তার শত্রুতের গাড়ি চাপায় মারতেন। এমনকি একজন নায়ককেও তিনি মেরেছেন। অথবা যদি কেউ তার শত্রুকে গাড়ি চাপায় মেরে ফেলে তাহলে তো এই আইনেই বিচার হবে। এতে সবাই খুশি হবে। আমার ধারণা, যদি কারো সঙ্গে শত্রুতা থাকে সে রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে গেলে পেছন থেকে গাড়ি ধাক্কায় মেরে ফেলবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।