আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লাল মাটির দেশে কালো মাটির মানুষ-খাঁচার পাখি/বনের প্রানী

ঘুম ভাঙ্গল ভোড় ৩ টায়। আমার ব্রিসবেনের সময় তখন সকাল ১১ টা। জাম্বিয়া ব্রিসবেন থকে ৮ ঘন্টা পেছনের পৃথিবীতে। ঘুম ভেঙ্গেই মনে হলো আমার চেনা জানা মানুষ গুলোর কাছে আমি কেমন অতীত হয়ে গেলাম ! আমি এখন সবার অতীতে!! ক্লিফ কাজে যায় সকাল ৪ টায়। আমি উঠেই ফিল করলাম বাবা ভয়াবহ ঠান্ডা এখানে।

ঠান্ডায় হাড় মাংস মজ্জা সব কাপাকাপি শুরু করে দিয়েছে। মোটা কুইল্টের নিচে থেকেও ঠান্ডা যাচ্ছে না, ক্লিফ বলেছিল তেমন একটা ঠান্ডা না তাই আমি তেমন শীতের কাপড়ও আনি নাই । এখন নিজের চুল নিজেরই ছিড়তে ইচ্ছে করল গরম কাপড় না আনার জন্য । ক্লিফ বলেছে আজ সকাল ৬ টায় সে আমাকে শহরে নিয়ে যাবে বাসার জন্য খাবার কিনতে। বাড়িতে কোন খাবার নেই রান্না করবার মতন।

আমি ঠান্ডার সাথে যুদ্ধ করতে করতে উঠলাম। গরম কাপড় যা ছিল সব গায়ে চড়িয়ে ভাবলাম ক্লিফ আমাকে নিতে আসার আগে বাইরে একটু হেটে আসি কারন তখন মাত্র ভোড় ৫ টা বাজে। বাইরে যেতে গিয়ে দেখি আমি বাড়িতে তালা বন্ধ!!! ক্লিফ আমাকে বাড়িতে তালা দিয়ে রেখে চলে গেছে। ওকে এস এম এস করতেই সে জানালো যে তার কাছে ডুপ্লিকেট চাবি ছিল না.....আর এখানে বাড়ির দরজা খুলে রাখা সেইফ না, এক লোকাল নাকি কোন এক এক্সপ্যাট কে বাড়ির ভিতর এসে খুন করে রেখে গেছিল কিছু দিন আগে, চুড়িও হয় এখানে....তাছারা সাপ খোপও ঢুকে পরতে পারে বাড়িতে যে কোন সময়..... তাই সে আমাকে তালা মেরে রেখে চলে গেছে....আজ একটা ডুপ্লিকেট চাবি নিয়ে আসবে বাড়ি ফেরার সময়। নিজেকে এক খাঁচায় বন্দি পাখি বলে মনে হলো.......চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম এই বাসাটা একটা ছোটখাট খাঁচারই মতন, পার্থক্য এই যে আমার মত বড় পাখির জন্য একটা বড় খাঁচা।

বাড়ির জানালা দরজায় ডাবল, ট্রিপল প্রোটেকশন দেয়া। দরজা স্টিলের তৈরি তার উপরে আছে ঘন তারের জাল আর তার সাথে ঘন নেট। জানালাতেও সেই একই ব্যবস্থা, গ্লাস তার পরে জাল আর নেট। ব্যলকনিতে গ্লাস, গ্রিল, জাল, নেট আর তার সাথে বাইরে ঝোলানো প্লস্টিকের ব্লাইন্ড। আমি পুরা হতভম্ব হব কি ডাবলভম্ব হয়ে গেলাম !! খাঁচার ভেতর পাখি যেমন উড়ুৎ ফুরুৎ করে এদিক সেদিক উরাল দিয়ে খাঁচার শিকের ফাক ফোকোরের সাথে ধাক্কা খেয়ে খেয়ে শিকের ফাক গুলো দিয়ে বাইরের পৃথিবীটা কে যতটা পারে দেখবার চেষ্টা করে আমিও তেমন বাসাটার এদিক থেকে সেদিকে ধাক্কা খেতে খেতে বাইরের পৃথিবীটা কে দেখবার চেষ্টা করছিলাম।

বাইরে যেদিকে তাকাই শুধু বিরান ভূমি, লাল মাটি, পোড়া ঘাস আর জঙ্গল, নীল আকাশের গায়ে হয় মরা গাছ নয়ত সবুজ গাছের মাথা ঝুলো ঝুলি করছে। লাল ধুলায় মাখামাখি হয়ে ছরিয়ে ছিটিয়ে দু একটা টিনের ঘড় আশে পাশে। বুঝলাম আমাদের ঘরটাও বাইরে থেকে তেমনই দেখতে। মানুষ জনের কোন চিহ্ন নেই কোথাও.....সাদা, কালো রঙিন কেউ কোথাও নেই মনে মনে ভাবি হায়রে বাবা এ কোথায় এলাম........। "সুখে থাকতে ভুতে কিলায়" কথাটা নিজেই নিজেকে বললাম আবারও ।

রাগে দুঃখে টিভি ছেড়ে আং মাং বাং ভাষায় আফ্রিকান প্রোগ্রাম দেখা শুরু করলাম আর কি। ক্লিফ আমাকে নিতে এল সকাল ৭.৩০শে। বাইরে বের হতেই ঠান্ডা বাতাসের আরেকটা ধাক্কা খেলাম। আমার পরনে সয়েটার, ওভারকোট, মাফলার, টুপি, হাত মোজা....এত সব পরেও আমি ঠান্ডায় হু হু করে কাঁপছি। যাই হোক আমরা রওনা দিলাম শহরের দিকে।

শহর!! শহর মানে লুম্মুয়ানা মাইন সাইড থেকে ৯০কিমি এর মত দুরে টাউন "সোলওয়াজি"। দেড় ঘন্টার মত লাগে পৌছাতে। লুম্মুয়ানা মাইনের গেটে পৌছাতে লাগে ২০ মিনিট। গেটেও আবার মহা পাহারা। ব্রেদ টেস্ট, লাইসেন্স টেস্ট থেকে শুরু করে গাড়ির নাম্বার পর্যন্ত সব কিছুই রেকর্ড করা থাকে।

আর মাইনের গাড়ি গুলো শুধু যাদের মাইনে কাজ কররার পারমিট আছে তারই চালাতে পারে। মাইনের ভেতরেও শুধু তারাই ঢুকতে পারে যাদের নাম রেজিস্ট্রেশন করা আছে....। যেমন আমি ঢোকার সময় শুধু আমার নয় আমার ল্যাপটপ, ক্যামেরা আর Iphone কেও রেজিস্ট্রেশন করানো হয়েছে । আজ পথে যেতে যেতে আশে পাশের ছোট ছোট গ্রাম গুলো চোখে পরল ভাল করে। আমাদের দেশের গ্রাম গুলোর চাইতে অন্যরকম কিছু নয়।

তবে পার্থক্য একটাই আমাদের গ্রাম গুলো একসাথে অনেক গুলো ঘর নিয়ে একটা ছোট্ট গ্রাম হয়। এখানে কিছু দুরে দুরে ঝোপ আর জঙ্গলের ভেতর পথের দুপাশে ছেরা ছেরা ৩/৪ টা পরিবার আর ঘর নিয়ে ছোট ছোট গ্রামের মত। একেকটা ছোট্ট এরিয়ায় হয়ত একটা কুয়ো আছে পানির জন্য বা কখনও দু'তিনটে ছেরা গ্রামের জন্য একটা কুয়ো। সবাই হাইওয়ের পাশ দিয়ে হেটে হেটে অন্য গ্রামে যায় মাথায় করে পানি আনতে। জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হেটে শর্টকাটে মানুষজন হাটে না বিষক্ত সাপ খোপ আর পোকা মাকড়ের ভয়ে।

মশাও একটা ব্যপার এখানে। মশার কামড়ে ম্যালেরিয়ায় মানুষ এখানে প্রতিনয়ত ভুগছে আর তার সাথে যক্ষা'র খুব দাপট। এই দু'টো অসুখে এখানেকার মানুষেরা হরহামেশাই ভোগে, যেমন আমরা সর্দি কাশিতে ভুগি....যেন কোন ব্যপারই না। হাইওয়ের দু'পাশে দেখলাম মানুষের বাড়ির সামনে ছোট ছোট মাচা মত করে নিজেদের বাগানের সব্জি বিক্রি করে। মজার ব্যপার হলো এরা যা'ই বিক্রি করুক না কেন তা টমেটো হোক আর মিষ্টি কুমড়া হোক বা মরিচই হোক না কেন, তা চমৎকার করে ডিসপ্লে করে রাখে।

বুঝলাম এখানকার মানুষ টমেটো বেশি খায়। রাস্তার দুপাশেই শুধু টমেটো বেচতে দেখলাম না, যেখানেই যাই এই টমেটো বাবাজি আছেন। আর দেখলাম চারকোল বিক্রি করছে রাস্তার পাশে- বার্বিকিউ এর জন্য। এরা জঙ্গলের গাছ পুড়িয়ে চারকোল বানায় আর টমেটোর মতো এই জিনিসও সর্বত্র পাওয়া যায়। আরেকটা জিনিস খুব চোখে পরে তা হলো প্রতি ৮/১০কিমি পর পর একটা করে স্কুল, আর স্কুল গুলোর আগে রাস্তায় ৬ টা করে স্পিড ব্রেকার।

এই মানুষ গুলোর আমাদের দেশের গ্রামের মানুষদের চাইতেও অবস্থা খারাপ। বাড়ি ঘড়ের অবস্থাও আমাদের দেশের গ্রাম গুলোর চাইতে অনেক করুন দশা, তবু এরা প্রায় প্রতি ৮/১০কিমি পর পর একটা করে স্কুল পেয়েছে। এদের গ্রামের মানুষ গুলোও বেশির ভাগই তাদের নিজেদের ভাষার পাশাপাশি ইংলিশ বোঝে ও বলতে পারে। তাদের নিজেদের ছোট শহরেই প্রায় ৫/৬ রকমের ভাষাভাষি মানুষ বাস করে আর এই ভাষা গুলোর অনেক গুলোই সাবাই জানেনা। তাই এরা নিজেদের সাথে নিজেরা কথা বলার জন্য ইংলিশের আশ্রয় নেয়।

সব পরিবারের শিশুরাই স্কুলে যায়। হাইওয়ের দুপাশ দিয়ে স্টুডেন্টদের হেটে যেতে দেখা যায় সব সময়। ভাবলাম আমাদের দেশের মানুষ গুলোর কেন এই মানষিকতা বা শিক্ষা নেই। কারনটা আমি নিজেও ভাল জানি না তবে যারা এত কষ্ট করে জীবন চালায় এখানে, তারা শিক্ষিত হবার জন্য এত সুযোগ পায়, আর আমাদের দেশের মানুষদের এখানকার মতন পানির অভাব নেই, আমাদের গ্রাম গুলোর অবস্থাও এত খারাপ নয়, তবু আমাদের দেশের গ্রাম তো দুরের কথা মফস্বল শহরের মানুষজনের ক'জন ইংরেজিতে কথা বলে বা ক'টা স্কুল আছে প্রতি ১০ মাইলে? আমি বলছি না ইংরেজি জানলেই শিক্ষিত হয় তবে এদের চাইতে আবস্থা ভাল হওয়া সত্তেও কতটা সুযোগ লেখাপড়ার জন্য আমদের দেশের মানুষরা পাচ্ছে বা যেটুকু পাচ্ছে তা কতটা ব্যবহার করছে ঠিক ভাবে? অবশেষে সোলওয়াজি শহরে পৌছালাম আমরা। শহর বলতে দেখতে আমাদের গ্রামদেশে গঞ্জ যাকে বলে তেমন কিছু একটা দেখায়।

মানে সোজা কথায় অজপাঁড়া গাঁ থেকে আমরা গঞ্জে গেলাম। যেহেতু ওখানে প্রচুর মাইন আর সেখানে সাদা চামড়ার এক্সপ্যাটরা ফ্যামিলি নিয়ে থাকে তাই একখানা ইন্টারন্যশনাল লেভেলের না হলেও মোটামুটি চলার মত সেই লেভেলের সুপার মার্কেট আছে একটা। ক্লিফ আমাকে তাড়া দিল কারন সেদিন সোমবার, কাজের দিন....আমাকে বাড়ি পৌছে দিয়ে সে কাজে যাবে। কোন মতে কিছু রান্নার জন্য সব্জি আর মাংস কিনে ফিরতি পথ ধরি। ছবি তোলা বা চারিদিকে ঘুরে আর কিছু দেখা হলো না।

তবু গাড়ি থেকে একটা দুটো লোকাল মানুষদের ছবি তুললাম। ফেরত পথে কয়েকটা গ্রামের বাজার দেখলাম। আবারো সেই টমেটো আর নানান জাতের সব্জি বিক্রি হচ্ছে সেখানে। সেদিন আর নামার সময় হলো না ঠিক করলাম পরের বার ঠিক নেমে দেখব কি বিক্রি করে ওরা। একটা জিনিস খেয়াল করলাম যে ওখানে ৭০% মেয়েরা মাথায় উইগ পরে।

নানান রকমের স্টাইল করা উইগ। নিজেদের চুল ওরা একদম পছন্দ করে না। অথচ আমার কাছে ওদের ঐ কোকড়া চুল কিযে ভাল লাগে। যাদের সামর্থ আছে তারা সবাই উইগ পরে আর যাদের উইগ কেনার সামর্থ নেই তারা তাদের চুল ব্রেইডিং করে রাখে। তবে উইগও খুব সস্তা ওখানে তাই গ্রামে, গঞ্জে, শহরে সবা মেয়েরাই উইগ পরতে বেশি পছন্দ করে।

আর নাহলে মাথায় স্কার্ফ বেধে রাখে। যাদের ছোট বাচ্চা আছে, বাচ্চাটাকে পিঠের উপর বেধে মা'রা সুন্দর কাজ করে বেরাচ্ছে আর বাচ্চাটা টুকটুক করে চারদিকে চেয়ে চেয়ে দেখছে কোন কান্না কাটি নেই, ঝামেলা নেই। শুধু খিদেপেলে আওয়াজ দেয়। বেশির ভাগ মা'ই বাচ্চাদের ব্রেস্টফিড করায়। যেখানে সেখানে বসে বাচ্চাকে খাওয়ানো শুরু করে দেয় আরকি ।

বাড়ি ফেরার মুখে ক্লিফ ইন্টারনেটের দোকান থেকে নেট কানেকশন কিনে দিল আমাকে। সেখান থেকে ফেরার পথে মাইনের জুনিয়র অফিসারদের একোমোডেশন দেখলাম, সিনিয়র সিঙ্গল অফিসারদের একোমোডেশন দেখলাম সিনিয়র সিঙ্গল অফিসারদের একোমোডেশন, যেখানে ক্লিফ আমি আসার আগে থাকত। আর আমাদের একোমোডেশন হলো ম্যারেড অফিসার একোমোডেশন। যারা এখানে বছরের পর বছর পার্মানেন্ট ভাবে থাকেন তারা তাদের বাড়ির সামনে পেছনে চমৎকার বাগান বানিয়ে নিয়েছেন। এখানে ম্যারেড অফিসাররা রাজার হালে থাকেন।

তাদের ফ্রি মেইড, গার্ডেনার সব আছে। সব কালোরা এখানে সাদাদের বাড়িতে কাজ করে মেইড আর গার্ডেনার হয়ে। বাড়ি ফিরে ক্লিফ আমাকে রেখে চলে গেল। বলল কাল থেকে এক মেয়ে আসবে আমাকে ঘরের কাজ করে দেবার জন্য, মানে মেইড। আমি নিজের কাজ নিজে করতেই বেশি অভ্যস্ত আমার দীর্ঘ প্রবাস জীবনের জন্য।

মেইড দিয়ে কাজ করানোতে আমি বরং আজকাল অস্বস্তি বোধ করি। নিজেকে কেমন শাসক শাসক লাগে, ভাল লাগেনা। ক্লিফকে বলায় সে বলল আমার একা থাকতে খারাপ লাগতে পারে তাই এই মেইড বাড়িতে থাকলে আমার একা একা মনে হবে না, তো আমি আর কিছু বললাম না, মনে মনে ভাবলাম দেখি কি হয়। নতুন জগতের একজন মানুষকে তো জানা যাবে অন্তত। আমি যখন বাড়ি ফিরলাম তখন আমার শরীরের ঘরিতে রাত ১১টা বাজে।

ওখানে দুপুর ৩ টে মানে আমার ব্রিসবেনের সময় রাত ১১টা। ঘুমে আমার অবস্থা কাহিল। সব ফেলে দিলাম ঘুম। ক্লিফ কাজ থেকে ফিরে এসে বললো আমি যেন কখনও কোন দরজা বা জানালা না খুলে রাখি কারন যেকোন সময় শুধু চোর ডাকাত নয় সাপ, পোকা মাকড় বা মশা মাছিও ঢুকে যাবে বাড়িতে। বাইরে বের হলেও যেন ফুলস্লিভ কাপড় পরে হাত/পা ঢেকে বের হই কারন মশা দিনের বেলাতেও কামড়ে দিতে পারে আর তাতে ম্যলেরিয়া হতে পারে যেকোন সময়।

আমি বাড়ির পেছনের জঙ্গলে হাটতে যাবার কথা বলতেই না না করে উঠল বলল সেখানে তো যাওয়া যাবেই না সাপে কেটে আমার পটল তুলিয়ে দেবে। ভাবি এতো ঝামেলা করে কেমন করে বাচে মানুষ এই খাঁচার ভেতর নিজেকে বন্দি করে? সেদিন আর আমার কিছু করা হলো না দেখাও হলো না। পরের দিন একই অবস্থা ভোর বেলা ঘুম ভাঙ্গে। ভাবলাম আজ হাটতে যাবো। সকাল ৭ টায় বের হয়ে হাটতে হাটতে চলে গেলাম যেখানে মাইনের বড় বড় ডাইরেক্টদের একোমোডেশন সেখানে।

চমৎকার করে বাগান বানিয়ে সাজানো বাড়িগুলো। বাগানে কালো গার্ডেনারদের কাজ করতে দেখলাম। মেইডরা কাপর ধুয়ে পেছনের বাগানে শুকোতে মেলে দিচ্ছে......। ঠিক ছবিতে দেখা জীবন এখানে। অলমোস্ট যখন ৫কিমি হেটে ফেলেছি তখন দুটি মেয়েকে মর্নিং ওয়াক করতে আমার দিকেই এগিয়ে আসতে দেখলাম।

ওরা আমাকে দেখে এগিয়ে এসে কথা বলল। ক্যাথরিন আর রবিন। চমৎকার দু'জন মেয়ে। ওরা এখানে কয়েক বছর ধরে আছে। দু'জনেই ব্রিসবেনের মেয়ে।

ওরা আমাকে ওদের সাথে হাটতে নিয়ে গেল। বলা শুরু করল এখানকার জীবন যাপনের গল্প। দু'জনেই এই লুম্মিয়ানা কে খুব ভালবেসে ফেলেছে। এখানে থাকতেই ওদের এখন বেশি ভাল লাগে। আমাকে ওরা আমাদের বাড়ির পেছনের জঙ্গলের ভেতরের হাটার ট্র‌্যাকে নিয়ে গেল।

সেখান থেকে আমরা গেলাম এক লেকের পাশে হাটা পথে। জঙ্গলের ভেতর চোখে পরল কিছু বিশাল আকারের হর্নবিল। প্রেম করে বেরাচ্ছে এক জোরা হর্নবিল দম্পতি সেখানে বিশাল ডানা ঝাপটিয়ে। আফ্রিকায় আমার প্রথম জঙ্গলি প্রানি দেখা! হাটতে হাটতে চোখে পরল বন্য জন্তুর পায়ের ছাপ। প্রায় ছোট খাট একটা বাঘের থাবার মতন থাবা, কিছু পিপড়ার মাটি খোড়ার চিহ্ন তার সাথে ছোট ছোট আরো কিছু প্রানির পায়ের ছাপ।

ছোট ছাপ গুলো দেখে বানরের পায়ের ছাপের মতন মনে হলো আর বড় গুলো ৪ ইঞ্চি মত লম্বা থাবা- জানিনা কিসের তা, বাঘের নাকি অন্যকিছু। আমরা তিনজনই খুব উত্তেজিত হয়ে পরলাম সেই থাবার চিহ্ন দেখে। নিশ্চই এরা লেকটাতে পানি খেতে এসেছিল এখানে। আহা যদি সত্যি দেখতে পেতাম একটু! আবার ভয় ভয়ও করতে থাকল একটু একটু, আমাদের কাছে তো একটা লাঠিও নেই যে জন্তু এলে তাড়া করব। কি আর করা কোনো জন্তুর দেখা না পেয়ে আমরা বাড়ির পথ ধরলাম।

প্রায় ১০ কিমি হেটে বাড়ি পৌছালাম সেদিন। কথা হলো পরের দিন আবার একসাথে হাটতে যাবো। এভাবেই বন্ধুত্ব হলো ক্যাথরিন আর রবিন এর সাথে........। আমার প্রথম বন্ধু এই বিরান ভূমিত........। বাড়ি ফিরতেই মেইড মেয়েটা এল।

নাম তার নেটি। তেল তেলে কালো মুখ, চকচকে সাদা চোখ, মাথার চুল লাল স্কার্ফে ঢাকা চমৎকার শান্ত আর মিষ্টি চেহারার এক মহিলা সে। আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরলাম ওকে কাজ দেখিয়ে দিতে। অনেক বছর কাউকে দিয়ে কাজ করাই নাই তাই কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছিল কাজের কথা বলতে। নেটি কে তার বাড়ির কথা জিঙ্গেস করলাম।

কে আছে তার বাড়িতে.....এই সব আরকি। বাড়িতে তার চার ছেলে মেয়ে। সবাই স্কুলে যায় ছোট ছেলেটা ছারা, ছোট তার স্কুলে যাবার বয়স হয়নাই এখনও। স্বামী তার বাড়িতেই থাকে কাজ করে না। নেটি এই মাইনের বাড়ি গুলো তে কাজ করে সংসার চালায়।

সকাল ৮ টায় আসে আর বিকেল ৪ টায় বাড়ি যায়। তাদের প্রধান খাবার হলো "শিমা" (Nshima)। একধরনের কর্নফ্লাওয়ার। Nshima or nsima or Bidia is a cornmeal product and a staple food in Zambia, Malawi and the Kasai Oriental and Kasai Occidental provinces of the Democratic Republic of Congo. It is made from ground maize (corn) flour known locally as mealie-meal. Nshima is very similar to ugali or posho of East Africa, sadza of Zimbabwe, pap of South Africa and fufu of West Africa. শিমা এই শিমা কে সুজির মতন রান্না করে শাক বা সব্জি অথবা মাছ মাংস বার্বিকউ বা রান্না করে তা দিয়ে খায়। ওটাই ওদের প্রধান খাবার।

ওকে বললাম আমাকে একদিন ওদের গ্রামে বেরাতে নিয়ে যেতে। সে বলল নিশ্চই নিয়ে যাবে। বললাম আমাকে ওদের আফ্রিকান নাচ শেখাতে সে শুনে হাসে। সে আমার চুল ছুয়ে দেখে গাল ছুয়ে দেখে ......আমি যেন অন্য গ্রহ থেকে ছিটকে আসা মানুষ ওর কাছে.....। চলবে......।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।