আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কমন জেন্ডার: দি ফিল্ম

বাক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী দেখে আসলাম বাংলা ছবি ''কমন জেন্ডার: দি ফিল্ম''। ছবিটি পরিচালনা করেছেন নোমান রবিন। প্রযোজনা করেছে ই আর সিনেমা। পৃথিবীতে মানুষ যখন জন্ম গ্রহন করে তখন তার বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন সবাই খুব খুশি হয়। সবাই খুব আদর করে বাচ্চাকে।

আস্তে আস্তে সে বড় হয়। পরিচিত হয় নারী বা পুরুষ রুপে। কিন্তু একধরনের মানুষ আছে যারা জন্ম নেয় পুরুষ রুপে। আস্তে আস্তে সে যখন সে বড় হয় তার শারীরিক কিছু পরিবর্তন দেখা যায়, যা কিনা স্বাভাবিক না। পুরুষের শরীরে নারী'র রুপ।

তার আওয়াজ পুরুষের, দৈহিক বৈশিষ্ট্য নারীর। সে না পুরুষ, না নারী; সে ধএক অন্য মানুষ। সমাজ তাকে মানুষ হিসাবে স্বীকার করে না। পরিবার তাকে তেজ্য করে। তাকে মানুষ'রা বলে 'হিজড়া'।

এবার আসা যাক ছবির মূল কাহিনীতে । ছবিতে দেখা যায় একটি 'যৌন সংখালঘু' সম্প্রদায় যারা বিভিন্ন দোকানে-বাজারে ঘুরে ঘুরে টাকা তুলে জীবিকা নির্বাহ করে। তারা একসাথে হাসে-খেলে,গান গায়। তারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচ-গান করে। এগিয়ে যায় তাদের জীবন।

ঘটনার মোড় নেয় এক বিয়ের অনুষ্ঠানে যখন তারা গান করতে যায়। 'শুসমিতা' নামক যৌনসংখালঘু মানুষ সন্জ্ঞয় নামের একজনের সাথে বন্ধুত্ব করে ঐ অনুষ্ঠানে পরিচিত হয়ে। সন্জ্ঞয়-ই তাকে বন্ধুত্বের আহ্ববান জানায় একজন নারী ভেবে। কিন্তু শুসমিতা বলে ''আমি একজন হিজড়া, তুমি আমার সাথে Friendship করবা''? । সন্জ্ঞয় বলে''তাতে কি ?তুমি তো মানুষ? আমার তাতে চলবে।

" এইভাবে তাদের পথ চলা শুরু হয়। প্রতিদিন তাদের কথা হয়। নানান কথা। একদিন সন্জ্ঞয়-এর ফোন ছিনতাই হয় ;শুসমিতা তার বান্ধবীদের নিয়ে তা উদ্ধার করে দেয়। আরেকদিন তারা দুইজন ঘুরতে যায় একসাথে ।

শুসমিতা নিজেকে একজন নারী হিসাবে। একজন আরেকজনকে পছন্দ করে ফেলে। সন্জ্ঞয় তাকে তার বা-মা'র কাছে নিয়ে যায়। তার বাবা-মা শুসমিতা-কে অনেক অপমান করে। সন্জ্ঞয় তাদের বলে,'' তোমরা না বল মানুষের কোন জাত নাই, মানুষ সবাই সমান? সবার উপরে মানুষ বড়!'' তারা বলে,''সেসব অন্য জিনিস! হিজড়াদের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য না!" শুসমিতা খুব কষ্ট পায়।

সে সন্জ্ঞয়ের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে। রাগে-ক্ষোভে, অপমানে সে আত্মহত্যা করে। আরেক চরিত্র 'বুবলি'। সে তার মাকে দেখার জন্য লুকিয়ে তাদের বাসায় যায় । তার ভাই তকে মেরে বাসা থেকে বের করে দেয়।

পথে সে একজন মায়ের দেখা পায় যিনি তার সন্তানকে ভাত খাইয়ে দিচ্ছিল। সে তাকে মা ডাকার অনুমতি চায়। বলে,''ধর আমি তোমার বড় ছেলে সারাদিন কাজ সেরে বাড়ী ফিরে দরজায় দাড়িয়ে ডাকছি মাগো আমি আইছি দরজা খোল। তুমি বললা বুবলি বাজান আইছস, তোর লাইগা গরম ভাত রাখছি, খাইয়া নে। '' ছবিতে অসাধারনভাবে পরিচালক ফুটিয়ে তুলেছেন 'যৌন সংখালঘু' প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি।

ছবিতে দেখা যায় তারা সবাই কোন-না কোন পরিবারের সন্তান। তাদের পরিবার সমাজের ভয়ে তাদের ত্যাগ করেছে। কিন্তু তাদের মায়েরা তাদের জন্য কাঁদে। তারা কোন জাগায় ঠিকমত থাকতে পারে না, তাদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়। মানুষ তাদের কু-প্রস্তাব দেয়।

সবচেয়ে কঠিন বাস্তবতা যা দেখানো হয় তাদের মৃত্যুর পর তাদের কবর দিতে হয় ভিন্ন পরিচয়ে; 'হিজড়া' এই পরিচয়ে মৃত্যুর পরও তাদের ঠায় হয় না!!!! একটি ট্রাজেডি ঘটে যখন শুসমিতা'র মা সকল বাধা উপেক্ষা করে তার সন্তানের কাছে আসেন বহু বছর পর তাকে এক নজর দেখার আসায়, আদর করার ইচ্ছায়। কিন্তু হায়!!! তিনি সন্তানের লাশটাও দেখতে পারলেন না। আর পরিচালক আসাধারন চিত্রনাট্যের সাহায্যে ফুটিয়ে তুলেছেন প্রতিটি দৃশ্য। যারা অভিনয় করেছেন তারা প্রত্যেকেই খুব ভাবে চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তুলেছেন। বিশেষভাবে শুসমিতা'র চরিত্রে সাজু খাদেম অন্যন্যসাধারন অভিনয় করেছেন।

তাছাড়া সন্জ্ঞয় চরিত্রে প্রাণ রায়, বুবলি-তে দিলিপ চক্রবর্তী, মাসীতে সোহেল রানা ভাল অভিনয় করেছেন। অতিথি চরিত্রে ডলি জহুর, বিজরি, সাচ্চু, চিত্রলেখা গুহ ও অসাধারনভাবে চরিত্র চিত্রায়ন করেছেন। এইছবির কিছু দৃশ্য, সংলাপ আমাদের বিবেককে নাড়িয়ে দেয়। আমাদের চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমরা মানুষ মুখে যতই বড় কথা বলি কেন, আমাদের মন সমাজের রীতি-নীতি ভাংতে ভয় পায়। শেষে বলা হয় প্রত্যেক মানুষের বিচার হবে পুরুষ কিংবা নারী-হিসাবে, কিন্তু তাদের বিচার হবে কি হিসাবে ? প রিশেষে যারা বাংলা সিনেমার কথা শুনলে নাক শিটকান তাদের বলব একবারের জন্য হলে গিয়ে ছবিটি দেখবেন।

ছবির কিছু দৃশ্য  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।