আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধনি-গরিবের অনিবার্য এক কৌতুক

একদেশে এক মনমরা রাজকুমারী ছিল। তার মনে কোনো দুঃখ ছির না, কোনো সুখও ছিল না। তাই সে সবসময় মনমরা হয়ে থাকতো। আবার সামান্যতেই খুব খুশি হওয়ার যে অনুপ্রেরণা-তাও ছিল রাজকন্যার মাঝে। মায়াবি দুটি চোখ-টানা টানা ভ্রু, মুক্তোঝরা হাসিসমৃদ্ধ দাঁত আর নিটোল হাসিতে ভরে রাখতে পারতো বন্ধুদের।

বন্ধুপাগল এই মেয়েটি একদিন কীভাবে যেন তার সব বিষন্নতাকে ছাপিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। নিজের কাজগুলো পরিপাটি করে সম্পন্ন করতে লাগল প্রত্যহ। কোনো বিষাদ আর নেই অবশিস্ট। বন্ধুরা তো হতবাক! তারা সারাক্ষণ কত শত অনুপ্রেরণা দেয়-কিছুতেই কিছু হয় না। তাদের হিসেব-নিকেশ কিছুতেই মিল কায় না।

কী হলো প্রিয় বন্ধুর; তাদের ভেতরে এই প্রশ্ন জাগে। আবার তা মিইয়েও যায়। ভাবে, সেতো আনন্দেই আছে; বিষাদ ভর করছে না আর। বর্ষাস্নাত ফুলের মতো স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে তার মন প্রাণ। তার খুশিতে উদ্বেলিত হয় চারিদিক।

প্রকৃতিও ঝকমক করে ওঠে নতুন আভায়। রাজকুমারী প্রেমে পড়েছে। তার রাজকুমার ঘোড়ায় চড়ে স্বপ্নের সিঁড়ি মাড়িয়ে তারই বুকে ধরা দিয়েছে। আস্তে আস্তে আলোয় ভরে যায় রাজকুমারীর তনুদেহমন। সুখের এ ধারা বইতে থাকে নিরলস।

রাজকুমার তাকে এত ভালবাসে যে আর কারোই দরকার পড়ে না। না কোনো বন্ধু বা কোনো স্বজনের। সেই পূরণ করতে থাকে তার সবাই আবদার। এভাবেই চলছিল তাদের সময়। একদা, রাজকুমারের পিতা-মাতার নির্দেশে দূরদেশে শিক্ষালাভের উদ্দেশে যেতে হয় তাকে।

হাওয়ায় জাহাজে উড়ে যায় রাজকুমার। তারপর হাওয়ায় হাওয়ায় কথা হয় কত শত হাজার; স্বপ্নরা বাসা বাঁধে দুজনকেই ঘিরে। রাজকুমার ফিরবে, তারা কত মজা করবে। প্রেমের সফল পরিণতিতে বাঁদবে সুখের সংসার। কিন্তু, পড়াশুনাশেষে এক অজানা ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় দুজনের স্বপ্নেরা।

এলোমেলো হয়ে যায় সবকিছু। রাজকুমার আর কোনো যোগাযোগই রাখতে পারে না। হয় না স্বপ্নের সুখ বুনন। অনেকদিন পরের কথা, রাজকুমারী জানতে পারে-তার প্রিয়তম রাজকুমার বিদেশি এক রাজকন্যার বাহুডোরে নিজেকে সঁপে দিয়েছে। হা কপাল।

বিষাদ আবারও ভর করে তার ওপর। রাজকন্যার এই দুঃখে কেপে ওঠে ধরণী। তারও বিষাদে ছেয়ে যায় মন। কোনো কাজে মন বসে না তার। শুধু ভাবে, মানুষ কেন এমন হয়।

রাজকুমারীর মন খারাপ দেখে দেখে বিষাদগ্রস্ত হয় তারই প্রতিবেশি এক ভিখেরিপুত্র। এত সুন্দর মেয়েটার মনে কিসের এত দুঃখ-তার খুব জানতে ইচ্ছে করে। কিন্তু, ভিখেরিপুত্র সাহস করতে পারে না। একদিন সাহস করেই সে এসব বিষয়ে কথা উঠায়। রাজকুমারী তোমার কিসের এতো দুঃখ? কেন তুমি মুখখানি এমন করে রাখো? তোমার মলিনমুখপানে চেয়ে যে কারোই কোনো স্বস্তি নেই।

এভাবে চলতে থাকে। আশায় তাকে ভিখেরিপুত্র। তার বিশ্বাস একদিন রাজকুমারী তাকে বলবে তার দুখের সাতকাহন। তার বিশ্বাস সত্যি হয়। রাজকুমারী অকপটে বিবৃত করে তার সবকথা।

মনপ্রাণ দিয়ে শুনে অনুভব করে ভিখেরিপুত্র। তার এমন নিষ্ঠায় বিমোহিত হয় রাজকন্যা। তাকে বন্ধু ভেবে নেয়। তারই সাথে কইতে থাকে তার জীবনের আদ্যোপান্ত। ভিখেরিপুত্রও আস্তে আস্তে রাজকন্যার সত্তার মাঝে মিশে যেতে থাকে।

এভাবে চলার এক পর্যায়ে রাজকন্যা ভুলে যেতে থাকে তার দুঃখের কালো অধ্যায়। নতুনভাবে বুঝতে থাকে জীবনকে। নতুন এক স্বপ্ন জাগে তার মনে। সব বিষন্নতা ঢেকে যায় ভিখেরিপুত্রের অবিরত ভালবাসায়। শরীরে মাদকতা এনে দেয় সে রাজকন্যার।

ভালবাসা আর বিশ্বাসের এক অকৃত্রিম মিশ্রণে দ্রবীভূত হয় দুটি প্রাণ, মিলে যায় এক মোহনায়। সে এক সোনালী সময় পার হয় তাদের। প্রতিটা ক্ষণ তাদের নতুন এক স্বপ্নের জন্ম দিতে থাকে। মিশে যায় দুজন দুজনার সাথে। মনের সাথে শরীরের যে অবশ্যাম্ভাবী মিলন তা হয়ে যায় কোনো এক রোমাঞ্চকর সময়ে।

ভালবাসার গাঢ়ত্ব প্রকাশিত হতে থাকে। রাজকন্যার সাথে ভিখেরিপুত্রের অসম এ বন্ধন মেনে নিতে পারেনি স্রষ্টা। তার হাতেই তো নাটাই, তার ইশারায় তো ওড়ে ঘুড়ি নীল আকাশে। বৈশাখের তপ্ত এক বিকেলে ওঠে কালবৈশাখী ঝড়। সে ঝড়ে উড়ে যায় ভিখেরিপুত্রের স্বপ্ন।

সে ঝড়ে ভর করে উড়ে আসে এক দানব ! সে দানব হলো বর্গী। তার কাজ হলো লটতরাজ। সে লুটে নেয় রাজকুমারীকে। সাথে তার বিশাল পাইক-বরকন্দাজ। এতো সিপাই নিয়ে কেউ আসেনি আগে।

ভিখেরিপুত্রের সুপ্ত কণ্ঠস্বর ঢাকা পড়ে যায় সেই মহারণের ডামাডোলে। অস্ফূট শব্দ না শোনার ভান করে রাজকুমারী। বীরকে সবাই ভালবাসে। তাছাড়া ভিকখরিপুত্রের কাছে নেই সোনাদানা মতিহার! জানে সে এতদিন মিশে। কী খাওয়াবে রাখবে কোথায়-এসব হিসেবও ছিল গোপনে।

হিসাব-নিকাশের খেলায় সবসময় হারে ভিকেরিরা। তার কোনো যোগ্যতাকেই আমলে আনা হয় না। জগৎ চলে অর্থবিত্তওয়ালাদের তুড়িতে। এখানেই নিঃস্ব হয়ে যায় নিঃস্ব সেই ভিখেরিপুত্র। তারপরও পথ চেয়ে থাকা ভিখেরিপুত্রের মিনতিতে রাজকন্যার মুক্তোঝরা হাসিতে ছিটকে পড়ে দৈববাণী- ভুলো না আমায়।

কোনো ভুল তুমি করোনি। আর আমাকে পাবে সবসময় তোমার পাশে। তার সেই অমীয় বাণীসুধা আঁকড়ে রাখে ভিখিরিপুত্র। সারাবেলা চলে তার নিজের সাথে সংঘাত, রাজকন্যা তাকে শেখালো নতুন মন্ত্র। তেলে জলে মেশে না কোনোদিন! সে যা শুনেছে, তা গরিবের সাথে ধনীমানুষের চিরাচরিত অনিবার্য এক কৌতুক।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।