আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কবি আহসান হাবীব (১৯১৭ – ১৯৮৫)

তুমি ভালো না বাসলেই বুঝতে পারি ভালোবাসা আছে। তুমি ভালো না বাসলেই ভালোবাসা জীবনের নাম ভালোবাসা ভালোবাসা বলে দাঁড়ালে দু’হাত পেতে ফিরিয়ে দিলেই বুঝতে পারি ভালোবাসা আছে। কবি আহসান হাবীব এর কল্যাণে বাংলা সাহিত্যের অনেক লেখক মূলধারার সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছিলেন। আজকের বাংলা কবিতার অনেক প্রতিষ্ঠিত কবির প্রথম লেখা ছাপা হয়েছে আহসান হাবীবের হাত ধরে। তাঁর রুচি ও নিষ্ঠায় তখন 'দৈনিক বাংলা'-র সাহিত্য পাতা একটি আদর্শ সাহিত্য পাতার মর্যাদা অর্জন করেছিল।

সম্পাদক হিসেবে ছিলেন একেবারেই নির্মোহ প্রকৃতির। সেই সময় দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য পাতা যখন অনুরোধ আর স্বজনপ্রীতিতে ভরপুর হয়ে উঠেছিল ঠিক তখন তিনি স্থাপন করেছেন অনন্য এক বিরল দৃষ্টান্ত। সে সময় 'দৈনিক বাংলা' ও আহসান হাবীবকে কেন্দ্র করে বাংলা ভাষা ও বাংলা সাহিত্যে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছিল। অসাধারণ ব্যক্তিত্ববোধ, মনন, রুচি ও আচার আচরণে তিনি হয়ে উঠেছেন একজন কিংবদন্তি সম্পাদক। কবি হিসেবে আহসান হাবীবের যাত্রা শুরু হয় অবিভক্ত বাংলায়।

বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল তখনো ছিল অখণ্ড আকাশের মতো। খেলাঘর পাতা আছে এই এখানে, স্বপ্নের ঝিকিমিকি আঁকা যেখানে। এখানে রাতের ছায়া ঘুমের নগর, চোখের পাতায় ঘুম ঝরে ঝরঝর। এইখানে খেলাঘর পাতা আমাদের, আকাশের নীল রং ছাউনিতে এর। ফরাসি কবি শার্ল বোদলেয়র এবং ইংরেজ কবি টি.এস. এলিয়টের প্রবর্তনায় যে আধুনিকতার উদ্বোধন বাংলা কবিতায় ঘটেছিলো তিরিশের কবিদের রচনাকর্মেণ্ড তারই যথার্থ উত্তরপুরুষ বাংলাদেশের কবি আহসান হাবীব ।

ড. হুমায়ুন আজাদ লিখেছেন : তিনি ..‘প্রথম প্রকৃত আধুনিক কবি। আহসান হাবীব তাঁর রচনায় ব্যক্ত করেন প্রবল আশাবাদ। কবিতায় স্বদেশলগ্নতা ও পুনঃমানবিকীকরণের উদ্বোধন ঘটান তিনি। আহসান হাবীব ‘রক্তের অক্ষরে পথে স্বাক্ষরিত বহু ইতিহাস’- এর স্মৃতি নিয়ে কবিতার অন্য একটি পর্যায়ে উপনীত হন। কর্ডোভা, মিশর বা দূর ব্যাবিলনের স্মৃতিচারণ করে সভ্যতার এক-একটি সংঘাত ও পরিণামকেই যেন চিহ্নিত করেন।

ইতিহাসের শিক্ষাকে তিনি হতাশার কার্যকারণ হিসেবে গ্রহণ করেননিণ্ডনিয়েছেন ইতিবাচক হিসেবেই। কাল প্রবহমান ও বৈনাশিক হলেও তিনি তার সঙ্গেই থাকতে চান। আমি বড় অসুখী। আমার আজন্ম অসুখ। না না অসুখে আমার জন্ম।

এই সব মোহন বাক্যের জাল ফেলে পৃথিবীর বালক-স্বভাব কিছু বয়স্ক চতুর জেলে মানব-সাগরে। সম্প্রতি উদ্দাম হাতে নৌকো বায়। আমরা বিমূঢ়। আহসান হাবীবের উপর সত্তর দশকের কবি মাহবুব সাদিকের একটি লেখায় এ সম্পর্কে চমত্কার ধারণা পাওয়া যায়। লেখালেখির সূত্রে আহসান হাবীবের সঙ্গে তাঁর সখ্যতা তৈরি হয়েছিল।

তিনি লিখেন- "শোনা যায়, 'দৈনিক বাংলা'-র সাহিত্য সম্পাদক থাকা অবস্থায় একই পত্রিকার সম্পাদক কবি শামসুর রাহমান একবার কবিতা পাঠালে তিনি সে কবিতা বদলে দিতে বলেছিলেন। সম্পাদক কবি শামসুর রাহমান আহসান হাবীবের এই অনুরোধ মেনে নিয়েছিলেন। তাঁরা প্রত্যেকেই যে কত বড়মাপের মানুষ ছিলেন এবং সাহিত্যের গুণগত মানকে সর্বোচ্চ সম্মান করতেন, তা এসব ঘটনায় অবহিত হওয়া যায়। যাদের লেখা ছাপতে পারেননি তারা প্রথমে খামে করে কবিতা পাঠালেও পরবর্তীকালে খামে ভরে অশ্লীল গালিগালাজ পাঠাতেন। রিকশায় করে অফিসে যেতেন তিনি।

যেতে যেতে পথে কখনো কখনো অশ্লীল ধ্বনি শুনেছেন। কিন্তু শিল্পের বিচারক হিসেবে তিনি ছিলেন নির্বিকার। তিনি সাহিত্যের সত্যিকার অভিভাবক ও জ্ঞানতাপস"। এ ঘটনাই প্রমাণ করে সম্পাদক হিসাবে তিনি ছিলেন কতটা নির্মোহ এবং আপোষহীন। তাঁর এই আপোষহীন মানসিকতা তাঁকে এমন এক স্থানে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে যে তাঁর প্রতিতূল্য ব্যক্তি একমাত্র তিনি নিজেই।

অনবদ্য এই গুণের জন্য দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদনার ইতিহাসে তাঁর বিকল্প খুঁজে পাওয়া বিরল। তারা- একটি দু’টি তিনটি করে এলো তখন- বৃষ্টি-ভেজা শীতের হাওয়া বইছে এলোমেলো, তারা- একটি দু’টি তিনটি করে এলো। থই থই থই অন্ধকারে ঝাউয়ের শাখা দোলে সেই- অন্ধকারে শন শন শন আওয়াজ শুধু তোলে। সাহিত্যের প্রতি তাঁর এই ভালবাসা ছিল মৃত্যুর পূর্বক্ষণ পর্যন্ত। তাঁর প্রথম কবিতার বই 'রাত্রি শেষে' প্রকাশিত হয় ১৯৪৭ সালে কমরেড পাবলিশার্স থেকে।

প্রকাশক ছিলেন বাংলা সাহিত্যের খ্যাতিমান কথাশিল্পী সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ। আহসান হাবীবকে বলা হয় মৃদুভাষী কবি। কিন্তু স্বয়ং কবি এ ধারণার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। জীবন জীবিকার প্রয়োজনে বারবার স্থান বদল করলেও শেকড়ের প্রতি তিনি ছিলেন আজন্ম দায়বদ্ধ। আর তাই সাহিত্যের বিষয় হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছেন দেশ, মাটি, মানুষ, নিসর্গ ও প্রেম।

শৈশবে বেড়ে ওঠা জন্মগ্রাম শংকরপাশা আর পারিবারিক অর্থনৈতিক দূরাবস্থার প্রভাব তাঁর সাহিত্যে ছাপ ফেলেছে। মানুষের জীবনের সঙ্গে নিজের জীবন মিলিয়ে দেখেছেন তিনি। নিরীহ মানুষের জীবন, বৈষম্য, বন্টন, পরাধীনতা এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের দায় প্রভৃতি বিষয় ফুটে উঠেছে তাঁর 'রাত্রি শেষে' নামক প্রথম গ্রন্থে (কবিতা)। পরবর্তী সময়ে 'ছায়া হরিণ', 'সারা দুপুর', 'আশায় বসতি', 'মেঘ বলে চৈত্রে যাবো', 'দুই হাতে দুই আদিম পাথর' এবং 'প্রেমের কবিতা'সহ বিভিন্ন গ্রন্থে তিনি তাঁর কবিতা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন। সত্তর দশকে শিশু সাহিত্য রচনায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

শিশুকিশোর রচনার ঢং, বক্তব্য ও চিন্তা-চেতনায় তিনি নিয়ে আসেন নতুন ব্যঞ্জনা। আহসান হাবীব একজন খ্যাতিমান কবি ও সাহিত্যিক। শওকত ওসমান এবং কবি আহসান হাবীব ছিলেন ঘনিষ্ঠতম বন্ধু। তরুণ বয়সে কলকাতা থেকে, জীবন সায়াহ্নেও সেই বন্ধুত্ব ছিল অটুট । আহসান হাবীবের জন্ম ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি পিরোজপুরের শংকরপাশা গ্রামে৷ পিতার নাম হামিজুদ্দীন হাওলাদার৷ মাতা জমিলা খাতুন৷ তাঁর পাঁচ ভাই চার বোন৷ অর্থনৈতিক ভাবে অসচ্ছল পিতা মাতার প্রথম সন্তান তিনি৷ পারিবারিক ভাবে আহসান হাবীব সাহিত্য সংস্কৃতির আবহের মধ্যে বড় হয়েছেন৷ সেই সূত্রে বাল্যকাল থেকেই লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত হন তিনি৷ সেইসময় তাঁর বাড়িতে ছিল আধুনিক সাহিত্যের বইপত্র ও কিছু পুঁথি৷ যেমন আনোয়ারা, মনোয়ারা, মিলন মন্দির প্রভৃতি৷ এসব পড়তে পড়তে একসময় নিজেই কিছু লেখার তাগিদ অনুভব করেন৷ সাহিত্যের অনুকূল পরিবেশ নিয়ে পিরোজপুর গভর্নমেন্ট স্কুল থেকে ১৯৩৫ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন৷ এরপর তিনি চলে আসেন বরিশালে৷ ভর্তি হন সেখানকার বিখ্যাত বিএম কলেজে৷ কিন্তু অর্থনৈতিক সংকটের কারণে কলেজের পড়াশোনার পাঠ শেষ পর্যন্ত অসমাপ্ত রাখতে হয় তাঁকে৷ বিএম কলেজে দেড় বছর পড়ার পর ১৯৩৬ সালের শেষার্ধে কাজের খোঁজে তিনি রাজধানী কলকাতায় পাড়ি জমান৷ এভাবেই কবি আহসান হাবীবের বরিশাল থেকে তত্‍কালীন রাজধানী কলকাতায় পদার্পণ৷ এইখানে নিরঞ্জনা নদী ছিলো এই ঘাটে হাজার গৌতম স্নান করে শুদ্ধ হয়েছেন।

নদী আছে ঘাট আছে সেই শুদ্ধ জলের অভাব অশুদ্ধ মানুষ খুব বেড়ে গেছে সারিবদ্ধ স্নানার্থী মানুষ মরানদী মরাস্রোত ছাড়িয়ে এখন বলে দাও যেতে হবে অন্য কোনো নিরঞ্জনা নদীর সন্ধানে। পিরোজপুর থেকে রাজধানী কলকাতা। আবার সেখান থেকে রাজধানী ঢাকা আসেন আহসান হাবীব ঊনিশ শতকের পঞ্চাশের দশকে। এখানে এসেও চাকরি নেন দৈনিক আজাদ ও মাসিক মোহাম্মদীতে। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার উন্মাদনা, স্বৈরাচারী শাসকের ভূমিকা, সাম্প্রদায়িকতা রোমান্টিক সংবেদনশীল আহসান হাবীবের হৃদয়কে বেদনার্ত করেছে।

তাই কবি এক সময় মৃত্তিকার সাহচর্যেই আশ্রয় খুঁজেছেন। আহসান হাবীব বেড়ে উঠেছেন প্রথম মহাযুদ্ধ-পরবর্তী অস্থির আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক পটপরিসরে। যৌবনে প্রত্যক্ষ করেছেন দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ। দুই-দুটি মহাযুদ্ধের অভিঘাত তাঁর মনন চৈতন্যে সংবেদনশীল কবিদের মতোই ছাপ ফেলেছে। সময়-সংকটে মুহ্যমান মানবজীবনকে তিনি কবিতায় রূপ দিয়েছেন।

সমকালকে আহসান হাবীব তাঁর কবিতায় অন্তরঙ্গ আঙ্গিকেই তুলে এনেছেন। ‘সমকাল’ ও ‘সময়’ তাঁর রচনায় বিচিত্র অবয়বে ধরা দিয়েছে। তিনি লিখেছেন : ‘সময়ের পদধ্বনি আমাদের পুরোভাগে’। আপন বিশ্বাসে অটল থেকে নিজের লেখালেখি অব্যাহত রেখেছেন। উপমহাদেশের রাজনীতির টালমাটাল করা পাগলা হাওয়ার কবলে তিনি পতিত হননি।

অথচ তত্কালীন মধ্যবিত্ত সমাজ সেদিন স্বাধীনতার স্বপ্ন আর ধর্মীয় চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছিলেন। আহসান হাবীব সরাসরি রাজনীতি কিংবা ধর্ম উত্সারিত একটি লাইনও রচনা করেননি। দেশ বিভাগের পরবর্তী সময়েও তাঁর এই নির্বিকার মনোভাব অব্যাহত ছিল। সাহিত্য, রাজনীতি, দলবাজিতা কিংবা ধর্মের নামে বাড়াবাড়ি তিনি পছন্দ করতেন না। সচেতন ভাবেই তিনি এ ধরনের প্রচেষ্টা থেকে নিজেকে রেখেছেন মুক্ত।

অন্যদিকে নিজের কবিতাকেও রেখেছেন নিরাপদ দূরত্বে। তাঁর এমন নির্মোহতা প্রচণ্ড প্রাণ শক্তির পরিচয় বহন করে। কলেজ জীবনে পড়ালেখায় ইস্তফা দিয়ে শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণের জন্যই কলকাতায় যাননি তিনি। অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে ছিল সাহিত্যের প্রতি আজন্ম ভালবাসা। সমস্ত জীবন কাটিয়েছেন কাব্যচর্চা আর সাহিত্য সাধনায়।

গল্প লিখেছেন, উপন্যাস লিখেছেন, অনুবাদ করেছেন, এমনকি গানও লিখেছেন। ১৯৬৫ সালে পাক ভারত যুদ্ধের সময় বেশ কিছু উত্কৃষ্ট দেশাত্নবোধক গান রচিত হয়েছিল। আহসান হাবীবের - 'দুর্গম এ যাত্রাপথে কোনো বাধা মানব না' এ গানটি সে সময়েরই লেখা এবং তাঁর লেখা এই গানটি বেশ সুনাম কেড়েছিল। পাহাড় সমান ঢেউয়ের বুকে নৌকা আমার ভাসে মেঘমুলুকের পাহাড় থেকে ঝড়ের ঝাপটা আসে মাথার ওপর মুচকি হাসে বিজলী নামের মেয়ে আমি মেঘনা নদীর নেয়ে। আহসান হাবীব ১৯৪৭ সালের ২১ জুন বিয়ে করেন বগুড়া শহরের কাটনারপাড়া নিবাসী মহসীন আলী মিয়ারকন্যা সুফিয়া খাতুনকে।

দুই কন্যা ও দুই পুত্রের জনক ছিলেন আহসান হাবীব। তার দুই কন্যা হচ্ছেন, কেয়া চৌধুরী ও জোহরা নাসরীন এবং তাঁর দুই পুত্র হচ্ছেন, মঈনুল আহসান সাবের ও মনজুরুল আহসান জাবের। পুত্র মঈনুল আহসান সাবের একজন স্বনামখ্যাত বাংলা ঔপন্যাসিক। ১২/১৩ বছর বয়সে স্কুলে পড়ার সময়ই ১৯৩৩ সালে স্কুল ম্যাগাজিনে তাঁর একটি প্রবন্ধ ধরম' প্রকাশিত হয়৷ ১৯৩৪ সালে তাঁর প্রথম কবিতা মায়ের কবর পাড়ে কিশোর পিরোজপুর গভর্নমেন্ট স্কুল ম্যাগাজিনে ছাপা হয়৷ পরবর্তী সময়ে ছাত্রাবস্থায় কলকাতার কয়েকটি সাহিত্য পত্রিকায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হলে নিজের সম্পর্কে আস্থা বেড়ে যায়৷ স্কুলে পড়াকালীন তিনি প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তুকে কবিতায় উপস্থাপিত করে পুরস্কৃত হয়েছিলেন৷ ততদিনে অবশ্য দেশ, মোহাম্মদী, বিচিত্রার মতো নামি দামি পত্রপত্রিকায় তাঁর বেশ কিছু লেখা প্রকাশিত হয়ে গেছে৷ কলকাতা গিয়ে শুরু হয় আহসান হাবীবের সংগ্রামমুখর জীবনের পথচলা৷ তিনি কলকাতায় এসে ১৯৩৭ সালে দৈনিক তকবির পত্রিকার সহ সম্পাদকের কাজে নিযুক্ত হন । বেতন মাত্র ১৭ টাকা৷ পরবর্তীতে তিনি ১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত কলকাতার বুলবুল পত্রিকা ও ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত মাসিক সওগাত পত্রিকায় কাজ করেন৷ এছাড়া তিনি আকাশবাণীতে কলকাতা কেন্দ্রের স্টাফ আর্টিস্ট পদে ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কাজ করেন৷ কাব্যগ্রন্থ, বড়দের উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, ছোটদের ছড়া ও কবিতার বই সব মিলিয়ে আহসান হাবীবের বইয়ের সংখ্যা ২৫টির মতো।

তার উল্লেখযোগ্য কবিতার বই হচ্ছে- রাত্রিশেষ (১৯৪৮) মেঘ বলে চৈত্রে যাবো (১৯৭৬) বিদীর্ণ দর্পনে মুখ (১৯৮৫) । উপন্যাস- রাণী খালের সাঁকো এবং আরণ্য নীলিমা । শিশু সাহিত্য- জোছনা রাতের গল্প, পাখিরা ফিরে আসে, প্রবাল দ্বীপে অভিযান এবং ছোট মামা দি গ্রেট । তিনি ইউনেস্কো সাহিত্য পুরস্কার ও একাডেমী পুরস্কার (১৯৬১) আদমজী পুরস্কার (১৯৬৪) একুশে পদক (১৯৭৮) বাংলা একাডেমী পুরস্কার । এই মহান কবি ১৯৮৫ সালের ১০ জুলাই আহসান হাবীব মৃত্যুবরণ করেন।

৬৮ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বাংলা সাহিত্যের স্বনামধন্য এই কবি। আহসান হাবীবের কবিতায় জীবন ও গতির প্রতীক হয়ে আসে নদী, মিছিল এবং জোয়ার। মেঘ বলে চৈত্রে যাবো কাব্যে আহসান হাবীবের কাব্যদর্শন যেমন মানবিক সমগ্রতাবোধে স্পন্দিত, তেমনি প্রচণ্ড আশাবাদও ব্যক্ত হয়েছে এখানে : ‘আমি এই পথ থেকে ফিরবো না, কেননা,/ মানুষকে কোথাও না কোথাও যেতেই হয়/ অকাল সমৃদ্ধ এক সুস্থির আবাস তাকে/ অবশ্যই গড়ে নিতে হয়/ কোনোখানে’। আহসান হাবীবের সঠিক মূল্যায়ণ না হবার কারণ কি? আমাদের পাঠ্যপুস্তক প্রণেতারা যে ধরণের কবিতা পাঠ্য রেখেছিলেন তা তে কি আহসান হাবীব সম্বন্ধে সঠিক ধারণা লাভ সম্ভব? এই কবিকে আমরা ক'জনে চিনি? কতটা ভালোবাসা থাকলে এত গভীরভাবে দাবি করা যায় যে "আমি কোন আগুন্তুক নই!" ‘আবহমান’ কবিতায় ইলিশ শিকারী খালেক নিকিরির জীবনের সঙ্গে কবির নিজস্ব জীবন একাকার হয়ে যায়। মহৎ শিল্পী আহসান হাবীব নিজেকে আবিষ্কার করেছেন স্বদেশের চিরচেনা জীবনপটেণ্ড শিল্প ও জীবন তাঁর কবিতায় অঙ্গাঙ্গীসূত্রে আবদ্ধ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।