আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আশ্চার্য ফাজিল মেয়ে !! ফোন নম্বর নিল কিন্তু ফোন করলো না !!

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! আমাদের বাড়ির একটু দুরেই একটা হাই স্কুল আছে । প্রতিদিন আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে অনেক ছেলেমেয়েই স্কুলে যায় । পিচ্চিপাচ্চাও যেমন যায় আবার পিচ্চিপাচ্চার আপু মনি রাও যায় । সুতরাং পারার ছেলেদের কাছে আমাদের বাড়ির সামনের জায়গাটা একটা সুপরিচিত স্থান হয়ে উঠেছে । বিশেষ করে স্কুল শুরু আর ছুটি হবার সময়ে ।

গরমের ছুটিতে বাড়ি এসেছি । খাওয়া দাওয়া ঘুম ছাড়া আর কোন কাজ নেই । সেই সাথে যুক্ত হয়েছে আরো একটা কাজ । ইভ টিজিং ! দাড়ান ভাই এখনই পুলিশে খবর দিয়েন না । এটাকে ঠিক ইভ টিজিং বলে না ।

মেয়েদের সাথে টাংকি মারা বলতে পারেন । যাই এই করে সময় কাটছিল । একদিন আমি আর আমার বন্ধু মোমিন বাড়ির সামনে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম । ঠিক তখনই মেয়েটাকে দেখলাম । কাধে ব্যাগ নিয়ে মাথা নিচ করে হেটে যাচ্ছে ।

এই মেয়েটাকে তো আগে দেখি নি । মমিনকে বললাম -কে রে মেয়েটা ? আগে তো দেখি নি ? -এইটা লিটনের শালী । সীমান্ত স্কুলে নাইনে পড়ে । আমি বললাম -ডাক দে তো । মমিন ডাক দিল ।

-ভাল আছেন মমিন ভাই ? মেয়েটা খুব নরম ভাবেই জানতে চাইল । মেয়েটার চেহারা আহামরি সুন্দর তা বলবো না কিন্তু একটা মোলায়েম একটা ভাব আছে যা আমার ভাল লাগল । মমিন আরো কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করল । মেয়েটি মাথা নিচ করেই জবাব দিলো । আমি মেয়েটার দিকেই তাকিয়ে আছি ।

হঠাৎ‍ মেয়েটা চোখ তুলে চাইল । সরাসরি আমার দিকেই । আবার সঙ্গে সঙ্গেই চোখ নামিয়ে নিল । মেয়েটা চলে যাবার পরে মেয়েটার সম্মন্ধে জানতে চাইলাম । মমিন বলল -মেয়েটার নাম সাথী ।

লিটনের বড় শালী । ওদের একায় স্কুল অনেক দুরে বলে এখানে এসে পড়ছে । পাড়ার ছেলেরা এর পেছনে খুব ঘোরছে । কিন্তু সাথী কাউকে পাত্তা দিচ্ছে না । রকি তো একদম পাগল হয়ে গেছে ।

পরদিন সকালবেলা আবারও সাথীর জন্য বসে ছিলাম বাড়ির সামনে । আজ মমিন নেই । তাই একটু চিন্তায় ছিলাম । সাথীকে ঠিক মত ডাকতে পারবো তো ? একটু পরেই সাথীকে আসতে দেখতে পেলাম । মাথা নীচ করে এগিয়ে আসছে ।

আমি কেন জানি ইচ্ছে থাকা সত্তেও সাথীকে ডাকতে পারলাম না । কেমন যেন একটা সংকোচ কাজ করছিল । সাথী চলে যাবার পর নিজেকে ধিক্কার দিলাম । ঐটুকু একটা মেয়েকে ডাকতে ভয় পেলাম ! পরদিন সকালেও আমি একই ভাবে সাথীর জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম । আজ মেয়েটার সাথে কথা বলতেই হবে ।

একটু পরেই দেখলাম মহারানীর আগমত । মাথা নীচ করে হেটে যাচ্চে আমার সামনে দিয়ে । আমি ডাক দিলাম -এই মেয়ে শোন । সাথী সঙ্গে সঙ্গে দাড়িয়ে গেল । আমার কেন জানি মনে হল আমার ডাকার জন্যই বোধহয় মেয়েটা অপেক্ষা করছিল ।

-এদিকে এসো । সাথী আমার দিকে এগিয়ে এল । ঐ দিন তো সাথী নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল । কেমন একটা মোলায়েম ভাব ছিল । কিন্তু আজ সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে ।

আর কি সেই চোখের দৃষ্টি । আমি বললাম -কি নাম তোমার ? সাথী একটু যেন হেসে উঠল । বলল -আমার নাম জানার জন্য কি আমাকে ডেকেছেন ? আমার তো মনে হয় আমার নাম আপনি জানেন ! -আমি যার নাম তার কাছ থেকে শুনতে পছন্দ করি । সাথী আবার হাসল । বলল -আমার নাম সাদিয়া নুসরাত ।

-ভাল নাম । -শুধু নামই ভাল আমার ? আমি এই কথাটা শুনে খানিকটা বিভ্রান্ত হলাম । মেয়েটা কি বলতে চায় ? তারপর কি বলবো ঠিক খুজেই পেলাম না । আসলে আজ সাথীর চাওনীর মধ্যে কিছু একটা রয়েছে । আমার সব কিছু কেমন অলটপালট হয়ে যাচ্ছে ।

সাথী বলল -আচ্ছা অপু ভাই আমার স্কুলের দেরী হয়ে যাচ্ছে । আমি যাই ? -আচ্ছা । সাথী স্কুলের দিকে হাটা দিল । আমি ওর পথের দিকে তাকিয়ে রইলাম । সাথী পেছন ফিরে তাকাল ।

একবার । দুবার । তিনবার । তিনবারের বার হাত নাড়ল । সাথী চলে যাবার পর আমার এই খেয়াল হল যে মেয়েটা আমার নাম জানল কিভাবে ? আশ্চর্য ! এভাবেই দিন কাটতে লাগল ।

প্রতিদিন সকাল বেলা সাথীর সাথে কথা বলি । যাবার সময় ও পিছন ফিরে তাকায় । একটু হাসে । হাত নাড়ে । তারপর আমার ঢাকায় যাবার সময় চলে এল ।

আমার কিছু বলতে হল না । সাথী কোথা থেকে যেন খবর পেয়ে গেল । ঐ দিন সকালবেলা আমাকে বলল -আপনি কাল চলে যাবেন ? -হুম । -আর আসবেন না ? -আসবো না কেন ? -আমার একটা কথা রাখবেন ? -বল । -আজ বিকেলে পুলিশ পার্কে আসবেন একটু ।

-বিকেল বেলা ? -কখন ? -এই পাঁচটার দিকে । -আচ্ছা । -আসবেন কিন্তু । আমি অপেক্ষা করবো । আমি যা ভেবেছিলাম তার থেকে তো দ্রুত হয়ে গেল ।

এই মেয়ে তো দেখি এক ধাপ এগিয়ে । বিকেলবেলা পুলিশ পার্কে গিয়ে দেখি সাথী আগেই গিয়ে হাজির । ওকে নিয়ে পার্কের একদম শেষের দিকে বসলাম । -একা এসেছ ? বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলাম । -নাহ ।

স্বপ্না আপুর সাথে এসেছি । -কি সব্বনাশ বল কি ? আমি একটু ভয় পেলাম । স্বপ্না আমারই ক্লাস মেট । আমাদের বাড়ির কাছেই ওর বাড়ি । ও যদি জানতে পারে যে সাথীর সাথে আমি এখানে এসেছি তাহলে পুরো গ্রাম জানতে আর বাকি থাকবে না ।

-কোথায় ও ? সাথী হাসল । -ভয় পাবেন না । আপু তার বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে ব্যস্ত আছে । এদিকে আসবে না । বলেই সাথী হাসতে লাগল ।

কতক্ষন বসে ছিলাম জানি না । তবে ওর সাথে বসে থাকতে ভাল লাগছিল । যাওয়ার সময় হলে সাথী বলল -আপনার মোবাইল নম্বরটা দিবেন আমাকে ? -তাহলে তোমার নাম্বরটাও দাও । -আমার তো মোবাইল নেই । -তাহলে নম্বর নিয়ে কি করবে ? -যদি সুযোগ পাই ফোন করবো ।

আমি জানি আপনি আমার কথা আপনার মনে থাকবে না । মাঝে মাঝে ফোন করে মনে করিয়ে দেবো । আমি আমার মোবাইল নম্বর দিলাম । যাওয়ার সময় সাথী হঠাৎ‍ করেই আমার হাতটা ধরল । বলল -আমার কথা মনে রেখেন ।

সাথী চলে গেল । তারপর দিনই ঢাকা চলে আসি । ভেবেছিলাম দুয়েক দিনের মধ্যেই ও ফোন দিবে । কিন্তু একমাস পেরিয়ে গেলেও সাথী আর ফোন দিল না । ঈদের ছুটিতে যখন বাড়ি গেলাম খবর নিয়ে জানতে পারলাম সাথী আর এখানে থাকে না ।

এখান কার ছেলেগুলো নাকি খুব বেশি বিরক্ত করছিল । তাই ওকে আবার ওদের বাসায়ই পাঠিয়ে দিয়েছে । দেখতে দেখতে তিন বছর পার হয়ে গেল কিন্তু সাথীর ফোন আর এল না । ঐ দিন যাবার আগে ও বলেছিল আমার কথা মনে রেখেন । আমি তো ঠিকই মনে রেখেছি ।

কিন্তু ও মনে রাখে নি আমার কথা । ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।