আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

American History X : বর্ণবাদের করুণ পরিণতি (মুভি রিভিউ)

চাই মাতৃভূমির সমৃদ্ধি। আবহমান কাল থেকে, যুগ যুগান্তর ধরে সারা দুনিয়া ব্যাপী এই যে এত এত যুদ্ধ - হানাহানি, অশান্তি আর রক্তপাত - এসবের অন্যতম একটা কারণ হচ্ছে বর্ণবাদ। সাদা - কালোর বিভেদ, জাতিগত দ্বন্দ্ব আর নিরর্থক অহংবোধ মানুষকে বরাবরই নিয়ে গেছে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। শ্রেষ্ঠত্বের অহমিকা আর মিথ্যে গর্ব বারবার ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে মনুষ্যত্বের আবরণ আর প্রশস্ত করেছে পতনের পথ। সেই মধ্যযুগে যেমন কালো মানুষদের কেবল তাদের চামড়ার রংয়ের জন্যে দাস জাতি হিসেবে গণ্য করা হত, আজো পৃথিবীর নানা দেশে তাদের গণ্য করা হয় দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে।

পাকিস্তানীরা যেমন আমাদের নিচু শ্রেণির মানুষের তকমা দিয়ে অবর্ণনীয় অত্যাচার করেছে, আজ এই মূহুর্তে মিয়ানমারে রোহিঙ্গারাও ঠিক তেমনি অত্যাচারের সম্মুখীন হচ্ছে। ব্রিটিশরা সারা দুনিয়ায় উপনিবেশ স্থাপন করেছিল, আভিজাত্যের দোহাই দিয়ে নিংরে নিয়েছে তামাম দুনিয়ার ধন-সম্পদ, ঠিক অন্য সব উপনিবেশ স্থাপনকারী দেশগুলোর মত। হিটলারী আমলে নাৎসি ভাবধারায় বিশ্বাসী জার্মানরা যেমন নিজেদের শ্রেষ্ঠ জাতি বলে ঘোষনা দিয়ে ইহুদীদের উপর ঘটিয়েছে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ হত্যাকান্ড, তেমনি আজ ইজরাইলী ইহুদিরা যেন নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতেই প্রতিনিয়ত অকথ্য অত্যাচারের স্টীম রোলার চালাচ্ছে অসহায় ফিলিস্তীনিদের উপর। কিন্তু এটা মানতেই হবে, অত্যাচারীর পতন কেবলই সময়ের ব্যাপার মাত্র। সেইসাথে একচোখা, প্রপাগান্ডা সর্বস্ব ভাবাদর্শের পতন অবশ্যম্ভাবী।

হিটলারের পতন হয়েছে। এককালের অপরাজেয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্য এখন মৃত। কালের সাক্ষী হয়ে রয়ে যাওয়া ইতিহাসের পাতার দিকে একবার তাকালেই দেখা যাবে এ ধরণের অনেক অনেক দৃষ্টান্ত। মানুষ যখন থেকে সভ্য হয়েছে, তখন থেকে বিবেকবান মানুষ অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। সাহিত্য, শিল্পের এমন কোন ধারা নেই যেখানে বর্ণবাদের প্রতিবাদ করা হয়নি, চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হয়নি অত্যাচারীর মসনদের নড়বড়ে, বিদ্ধস্তপ্রায় ভিত্তিমূল।

আর এই ধারায় সর্বশেষ সংযোজন হচ্ছে চলচিত্র। অসংখ্য সিনেমা নির্মিত হয়েছে এই বিষয় নিয়ে। ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে, সম্পূর্ণ আলাদা ঘটনাপ্রবাহের উপর ভিত্তি করে। এর মাঝে কিছু কিছু মুভি আমাদের নাড়া দেয় প্রচন্ড ভাবে, যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চায় বর্ণবাদের করুন পরিণতি। আমাদের আজকের মুভি রিভিউ ঠিক তেমনি একটা মুভি নিয়ে।

মুভিটির নাম American History X ১৯৯৮ সালে মুক্তি পাওয়া এই মুভিটিতে অত্যন্ত চমৎকার একটি গল্পে তুলে ধরা হয়েছে বর্ণবাদের করুণ পরিণতি। ডেরিক ভিনিয়ার্ড (এডোয়ার্ড নরটন ) একজন নব্য নাৎসি । মা আর ছোট দুই ভাই-বোনকে নিয়ে তার সংসার। বাবা ছিলেন একজন অগ্নী নির্বাপক। বেশ বর্ণবাদীও ছিলেন তিনি।

মারা গেছেন কৃষ্ণাঙ্গ এক সন্ত্রাসীর গুলিতে, তাদেরই এলাকায় আগুন নিভাতে গিয়ে। বাবার এই করুণ মৃত্যুতে ডেরিক ভয়াবহ আঘাত পায়। এমনিতেই বাবার উগ্রপন্থা তাকে বেশ কিছুটা প্রভাবিত করেছিল, এখন বাবার এই পরিণতি তাকে পুরোদমে খেপিয়ে তোলে। নাৎসী ভাবাদর্শে অণুপ্রাণীত হয় সে। হয়ে ওঠে কঠোর বর্ণবাদী।

তার চোখে এখন কালো মানুষ মানেই খারাপ, কালো মানুষ মানেই সাক্ষাৎ শয়তান। তার বিশ্বাস - দিন দিন কালো এবং অভিবাসীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে আশংকা জনক ভাবে। এরা সংকুচিত করে দিচ্ছে সাদাদের কাজের সুযোগ, হুমকি তৈরী করছে সাদাদের টিকে থাকার উপর। অতএব, নিজ এলাকার উগ্রপন্থী সাদাদের দল 'ডিসাইপলস অফ ক্রাইস্ট' এ যোগ দেয় ডেরিক। খুব দ্রুত হয়ে ওঠে এই গ্যাঙের সেকেন্ড ইন কমান্ড।

শুরু করে কালো এবং অভিবাসীদের উপর অকথ্য অত্যাচার। পরিণতি সহজেই অনুমেয়, জেলে যায় ডেরিক - খুনের অপরাধে। এদিকে ডেরিকের প্রভাব পড়তে শুরু করে তার ছোট ভাই ড্যানির উপর। জেলে থাকা বড় ভাই এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে সেও যোগ দেয় শ্বেতাঙ্গ উগ্রপন্থীদের দলে আর অপেক্ষা করতে থাকে ভাইয়ের মুক্তির। ড্যানির মনে দৃঢ় বিশ্বাস, ভাই জেল থেকে বেরিয়ে খুব খুশী হবে তার এই রুপান্তরে।

ভাইকে গর্বিত করবে সে। কিন্তু জেল থেকে বেরিয়ে আসা ডেরিক কি সেই আগের ডেরিকই থাকবে নাকি বুঝতে শিখবে বর্ণবাদের অসারতা?? ড্যানিরই বা কি পরিণতি?? সে কি পারবে এই ভয়াবহ ঘৃণার জগৎ থেকে বের হয়ে আসতে?? জানতে হলে দেখে ফেলুন মুভিটা। এই মুভিটা নন - লিনিয়ার টাইম লাইনে বানানো হয়েছে। অর্থাৎ, ভিন্ন ঘটনা প্রবাহকে মুভির শেষে এক সুতোয় গেঁথে তৈরী করা হয়েছে গোটা মুভি। আর এই কাজটা করতে ব্যাবহার করা হয়েছে ফ্ল্যাশব্যাক এবং বর্তমান ঘটনাপ্রবাহর সমান্তরাল উপস্থাপন।

তাই মুভির গল্পে আলোকপাত করার সময় ইচ্ছে করেই অনেক কিছু এড়িয়ে গেলাম। নয়ত মুভির চমক অনেকটাই শেষ হয়ে যাবে। ডেরিক চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন নরটন। তিনি এই চরিত্রে অভিনয়ের সুবাদে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কারের জন্য অস্কার মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ছোট ভাই ড্যানির চরিত্রে এডোয়ার্ড ফার্লং আর দুই ভাইয়ের হাই স্কুল শিক্ষক ডঃ বব সোয়েনীর চরিত্রে এভেরী ব্রুকস এর অভিনয় ও মনে রাখার মত।

এক কথায় দুর্দান্ত মুভি। এন্ডিংটা বহুদিন ধরে মনে থাকবে এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। আমার রেটিং : 8/10 ডাউনলোড লিঙ্কঃ (সৌজন্যেঃ জলন্ত-বিশ্ব )মিডিয়াফায়ার  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।