আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভালো কাজে বাড়াবাড়ি ভালো নয় : ৬

সাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ হলেও সংবিধানে কে কী বিধান লিখলো, এ নিয়ে জনগণের কোনো মাথাব্যথা নেই। অলিখিতভাবে এদেশে ব্যক্তিতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত, রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক ধর্মীয়-অধর্মীয় সব ক্ষেত্রেই। এ ব্যক্তিতন্ত্র চরমপন্থার প্রধান উৎস। এখানকার অধিকাংশ তরুণ পড়ালেখা শিখে মানুষ ও মনীষী হতে চায় না, তারা মুজিবসেনা বা জিয়ার সৈনিক হতে চায়। পত্রপত্রিকায় বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের পড়ালেখার খবর খুব একটা দেখা যায় না, মুজিব ও জিয়ার সৈনিকদের মারামারিতে কতোজন হতাহত হলো সেসবই চোখে পড়ে।

কিছুদিন আগে সিলেটে বিশাল ব্যানার দেখলাম, লেখা ‘নববর্ষের মুজীবীয় শুভেচ্ছা’। বিস্মিত হতে হতে বিস্মিত হবার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ইসলামভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোও প্রকৃতপক্ষে ব্যক্তির ইমেজভিত্তিক। মওদূদীবাদী, মাদানীপন্থী, চরমোনাইভক্ত, ফুলতলীভক্ত। শেষ দু’টি সাম্প্রতিক।

শুনেছি, চরমোনাইভক্তরা যিকিরে লাগলে তাদের ‘এশক’ নাকি বেদম লাফালাফি শুরু করে দেয়। সাহেব কিবলা ফুলতলীর বড় কৃতিত্ব হলো হাজার হাজার মানুষকে তিনি কুরআন পড়তে শিখিয়েছেন, এজন্যে বড় প্রতিদান পেতে পারেন তিনি – তবে বিশ্বাসগতভাবে ফুলতলী সাহেবের চরম শিক্ষা হলো ‘নবী নূরের তৈরি এবং তিনি গায়িব জানেন’। এ বিশ্বাসটা শুধু ভুলই নয়, একেবারেই অপ্রয়োজনীয় এবং সাঙ্ঘাতিক প্রতিক্রিয়াশীল। যদি রোধ করা না যায়, তবে কালো মেঘ থেকে বৃষ্টিপাত যেমন স্বাভাবিক তেমনি এ কালো বিশ্বাস থেকে একদিন নবীর উপাসনা শুরু হয়ে ব্যাপক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অগণিত পীর এদেশে, কুসংস্কার ও বাড়াবাড়ির অন্ত নেই।

পৃথিবীতে মুসলিম জাতির অস্তিত্ব আজ বিরাট বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ একে একে মুসলিম দেশগুলিকে গিলে ফেলতে চেষ্টা করছে। আফগানিস্তান-ইরাক-লিবিয়া লুণ্ঠিত, ফিলিস্তিন নির্যাতিত, মধ্যপ্রাচ্য বশীভূত। আত্মরক্ষার একমাত্র পথ – মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের ডাক। সময়টা ঝগড়ার নয়, ক্ষুদ্র বিতর্কে ডুবে থাকবার নয়, দল বাড়িয়ে বিভেদ ছড়িয়ে মেধা ও সময় অপচয় করবার নয়।

উপনিবেশ গণতন্ত্র ও মানবতাবাদের পোশাক পরে সাধুবেশে অনুপ্রবেশ করছে, মুসলিম বিশ্বের শ্রম ও বাজার দখল করে নিচ্ছে, মুসলিম সমাজ ও সংস্কৃতিতে মিশিয়ে দিচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তিক জীবাণু। এখন দরকার আত্মরক্ষা, দরকার এক হয়ে রুখে দাঁড়ানো। ইহুদি-খ্রিস্টানদের সমন্বিত এ ছদ্মবেশী ক্রুসেড মোকাবেলায় ইসলামী ভ্রাতৃত্বের ঐক্যশক্তির বিকল্প নেই। আমাদের উপলব্ধি করতে হবে, খুঁটিনাটি মতপার্থক্যের কারণে অপর মুসলিম ভাই বা ইসলামী দলকে বাতিল সাব্যস্ত করে বর্জন করবার সঙ্কীর্ণতা ও অসহিষ্ণুতায় ইসলাম বা মুসলিমের কোনো কল্যাণ নেই। আল্লাহর দেয়া এ দ্বীন একটি মধ্যপন্থী জীবনদর্শন।

এ দ্বীনের বিধায়ক চরমপন্থা ও প্রান্তিকতা পছন্দ করেন না। কুরআনে এই কথাটি নানাভাবে বহুবার বলা হয়েছে। তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে অন্তর্দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে পূর্বতন বহু জাতি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। বলা হয়েছে, আল্লাহ তাঁর দ্বীনকে মানুষের জন্যে সহজ করে দিয়েছেন, কঠিন করতে চান নি। অপ্রয়োজনীয় বিতর্কে আমরা যেন একে কঠিন করে না তুলি।

মানুষ তো ভুল করবেই। আমরা ভুল শুধরাতে চেষ্টা করবো, কিন্তু ভুল তো অসহিষ্ণু হয়ে ওঠা এবং একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবার কারণ হয়ে উঠতে পারে না। আল্লাহ নিজেও তাঁর বান্দার ছোটখাট ভুলের জন্যে ক্ষুব্ধ হন না, তিনি বলেন – ইন্নাল হাসানাত ইয়ুযহিবনাস সায়্যিআত, মানুষের ভালো কাজ তার মন্দ কাজকে মিটিয়ে ফেলে। সহীহ মুসলিমে উদ্ধৃত, রাসূল সা. বলেছেন – ‘যে ব্যক্তি চুল চিরতে বসেছে সে ধ্বংস হয়েছে। ’ হে আল্লাহ, আমাদেরকে সকল ক্ষুদ্রতা থেকে বাঁচিয়ে তোমার উদার দ্বীনকে উদার মনে উপলব্ধি করে ঐক্যবদ্ধ হবার তাওফিক দাও! ───────────────── ভালো কাজে বাড়াবাড়ি ভালো নয় : ১ ভালো কাজে বাড়াবাড়ি ভালো নয় : ২ ভালো কাজে বাড়াবাড়ি ভালো নয় : ৩ ভালো কাজে বাড়াবাড়ি ভালো নয় : ৪ ভালো কাজে বাড়াবাড়ি ভালো নয় : ৫ ───────────────── ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.