আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গদে এডভোকেট সাহারা খাতুন - শেখ হাসিনার এক দুরদর্শিতাপূর্ণ নির্বাচন - এজন্য শেখ হাসিনাকে আরো একটি নোবেল পুরস্কার দেওয়া উচিত - কি বলেন আপনারা ?

Prothom Alo ঢাকা, সোমবার ,১৮ জুন ২০১২, ৪ আষাঢ় ১৪১৯, ২৭ রজব ১৪৩৩ একদা এক জঙ্গলে একদা এক জঙ্গলে সিমু নাসের | তারিখ: ১৮-০৬-২০১২ সে অনেক অনেক কাল আগের কথা। আমাদের সুন্দরবন তখন অনেক বড় একটা বন ছিল। সে বনে বাঘ, ভালুক, হাতি, ঘোড়া, সিংহ, জিরাফ, গন্ডার, নীলগাই, নেকড়েসহ দুনিয়ার তাবত প্রাণী বসবাস করত। সে এক দিন ছিল বটে, কারও খাবারের কোনো সমস্যা ছিল না, আবার যে কেউ অন্যের খাবারে পরিণত হতেও সময় লাগত না! অর্থাৎ সেই বনে ছিল এক অরাজক অবস্থা। বন শাসন করত বাঘ ও এক হালি প্রাণীদের ঐক্যজোট।

তাদের দুঃশাসনে সবাই যখন অতিষ্ঠ, তখন তাদের হটিয়ে দিয়ে বনের শাসনভার পেল নেকড়ে। ক্ষমতায় এসেই নেকড়েদের প্রধান বনের দুই ক্ষমতাধর প্রাণী বাঘ ও সিংহনেতাকে জেলখানায় পুরে রাখল। জঙ্গলে সাময়িকভাবে একটা শান্তি ফিরে এল। তবে সমস্যা হলো নিরীহ ভেড়াদের। ভেড়াদের গায়ে প্রকৃতিগতভাবেই লম্বা লোম হয়।

নেকড়েদের এটা একেবারেই পছন্দ না। লম্বা লোমওয়ালা ভেড়া দেখলেই নেকড়েরা সেলুনে নিয়ে গিয়ে লোম ছেঁটে দেয়। আবার একসঙ্গে তিনের অধিক ভেড়া দেখলেও নেকড়েরা সমস্যা করে। কিন্তু এভাবে বেশি দিন কি আর চলে? কিছুদিনের ভেতরই অবস্থা পাল্টাল। জঙ্গলে একটা সাধারণ নির্বাচন হলো।

প্রাণীদের বিপুল ভোটে জয়লাভ করল সিংহ গ্রুপ। সিংহাসনে বসল সিংহ। চারদিকের পশুপাখিরা সবাই ধন্য ধন্য করতে লাগল। সিংহাসনে বসেই সিংহরাজ বললেন, আর অরাজকতা নয়, নয় আর অন্যের কাছে বন বিক্রি করে দেওয়া। আমি নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে রাজ্য চালাতে চাই।

এখন থেকে আমি একা এই সুন্দরবন রাজ্য চালাব না। আমি চাই আমার একটা রাজসভা থাকুক। বনের পশুপাখিরা সবাই অবাক, এ আবার কেমনতর কথা! সবাই মিলে আবার কীভাবে বন চালায়? সবার কাছে বিষয়টা বোধগম্য করে তুলতে সিংহ বনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে বক্তব্য দিলেন, পশুসমাজের একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে গড়ে তোলা হবে এই রাজসভা। সেখানে হরিণ, গন্ডার, বানরসহ সবাই থাকবে। এদের মধ্য থেকে আবার গোটাবিশেককে একেকটা বিভাগের প্রধান বানানো হবে।

রাজার আদেশ শিরোধার্য। বনের সবাই তাদের প্রতিনিধি পাঠাল রাজদরবারে। এবার বিভিন্ন বিভাগের প্রধান নির্বাচনের পালা। প্রথমেই নির্ধারণ করা হলো ডাক বিভাগ। সেটা দেওয়া হলো কচ্ছপকে।

তার মতো এমন ধীরগতির আর কে-ই বা আছে। শিক্ষা বিভাগ পেল শিয়াল পণ্ডিত। কুমিরছানাদের উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে বনে সে এখন ব্যাপক জনপ্রিয়। স্বাস্থ্য বিভাগ পেল তিমি। এমন স্বাস্থ্যবান প্রাণীই কেবল বুঝতে পারে স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।

এক কোণে মিউ মিউ করছিল একটা কালো বেড়াল। তাকে দেওয়া হলো রেল বিভাগ। অর্থ বিভাগ পেল ক্যাঙারু। তার যোগ্যতা, সে খুব রাবিশ আর দুষ্টু। আর মাঝেমধ্যে দুষ্টুমি করতে করতে নাকি সে একদম ফেডআপ হয়ে যায়।

ধর্ম বিভাগ পেল বক। তার মতো এমন তপস্যা আর কে কবে করতে পেরেছে। যোগাযোগ বিভাগ পেল কুমির। কারণ, যেসব প্রাণী অলস, যারা নদী পার হওয়ার জন্য অনেক ঘুরপথের সেতু পার হতে চায় না, তারা কিছু কমিশন দিলেই কুমির পিঠে করে নদী পার করে দেয়। লজ্জাবতী বানরকে দেওয়া হলো বিদ্যুৎ বিভাগ।

কারণ, তার এতই লজ্জা যে সে দেখাই দিতে চায় না সবার সামনে। বিমান বিভাগ পেল ইগল। ছোঁ মেরে খেয়ে ফেলায় তার জুড়ি মেলা ভার বলে সে এই দায়িত্ব পেল। হাঙর কোনো বিভাগ না পেয়ে উসখুস করছিল অনেকক্ষণ। সিংহের নজর এড়াল না সেটা।

তিনি হাঙরকে ডেকে বললেন, এই যে সুন্দরবনের পরে বিশাল সমুদ্র, সেটা জয় করে আনতে পারবে? পারলে সমুদ্র বিভাগ তোমাকে দিয়ে দেব। হাঙর বিভাগ পাওয়ার লোভে তখনই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য জার্মানির মেরিটাইম আদালতের পথে সাঁতার কাটা শুরু করল। এভাবে আরও অনেক বিভাগ ভাগাভাগি হলো। বাকি রইল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ—স্বরাষ্ট্র বিভাগ। এই বিভাগের কাজ হবে বনের মধ্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা।

চাইলেই কোনো পশুপাখি যখন-তখন ধরে মেরে যাকে ইচ্ছা তাকে খেয়ে ফেলতে পারবে না। কে হতে পারে এই বিভাগের উপযুক্ত? অনেক খোঁজাখুঁজির পর শেষমেশ গন্ডারকে এই বিভাগের জন্য নির্বাচন করা হলো। দায়িত্ব পেয়েই গন্ডার ভাষণ দিয়ে উঠল, সন্ত্রাসী যে দলেরই হোক না কেন, তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। শুধু কোনো ধরনের বিভাগ পেল না বাঘ। কারণ, সে যে বিরোধী দল।

এভাবে দিন যায় মাস যায়। বছর ঘুরে আসতে না আসতেই বনে আবার অরাজক অবস্থা সৃষ্টি হয়। বনের কৈখালি, শ্যামনগর বিভিন্ন রেঞ্জ থেকে খবর আসে, বার্ষিক গোলপাতা সংগ্রহ অভিযানের টেন্ডারবাজিতে নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে ক্ষমতাসীন সিংহলীগের কর্মীরা। মাঝখান থেকে মারা পড়ছে নিরীহ ভেড়ারা। বনের এই অরাজকতার সুযোগে ক্ষমতাসীন দলকে বেকায়দায় ফেলতে হরতাল ডাকে বিরোধী বাঘদল।

বনের মধ্যে থাকা তেলের খনিতে তারা আগুন লাগিয়ে দেয়। সেই আগুনে পুড়ে মরে শত শত পোকামাকড় আর নিরীহ প্রাণী। এসবের মাঝখানে একদিন কেয়ামত নেমে আসে এক বাঘিনীর সাজানো সংসারে। স্বামী আর তিনটি ফুটফুটে ছানা নিয়ে বেশ ভালোই কাটছিল তার দিন। স্বামী বিরোধীদলীয় রাজনীতি করে, সেটা নিয়ে টেনশন থাকলেও কখনো ভাবেনি তার সংসার একদিন এমন তছনছ হয়ে যাবে।

যেদিনের ঘটনা সেদিন স্বামী আর তিন সন্তানকে ঘরে রেখে খাবার সংগ্রহ করতে বাইরে গিয়েছিল বাঘিনী। সন্ধ্যায় মুখে একটা হরিণ মেরে এনে দেখে নিজ বেডরুমে খুন হয়ে আছে তার স্বামী। আর তার তিন বাচ্চা উধাও। উধাও মানে উধাও, একেবারে গুম। এ ঘটনায় পুরো বনে তোলপাড় পড়ে গেল।

বনের গণমাধ্যম আর সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতে প্রচুর প্রচার পেল ঘটনাটি। চাপে পড়ে সিংহরাজ বক্তব্য দিলেন, কারও বেডরুম পাহারা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব নয়। আর স্বরাষ্ট্রপ্রধান গন্ডার জানাল, বনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের থেকে অনেক ভালো আছে। সে-ই সবচেয়ে সফল স্বরাষ্ট্রপ্রধান। ৪৮ ঘণ্টার ভেতর এই ঘটনার তদন্ত করে খুনিদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হবে আর গুম হওয়া তিন বাঘের বাচ্চাকে উদ্ধার করা হবে।

তারপর আবার দিন ঘুরে সপ্তাহ যায়, সপ্তাহ ঘুরে মাস যায়। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টাও আর শেষ হয় না, খুনিদেরও খুঁজে পাওয়া যায় না। গুম হওয়া তিন বাঘের বাচ্চাও উদ্ধার হয় না। কিন্তু বনের স্বরাষ্ট্রপ্রধান গন্ডার বক্তব্য দিতেই থাকে, বনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের থেকে অনেক ভালো হয়েছে। আমিই সবচেয়ে সফল স্বরাষ্ট্রপ্রধান।

আমিই সবচেয়ে সফল। অবশ্য স্বরাষ্ট্রপ্রধানেরই বা দোষ কী! গুম হওয়া বাঘের বাচ্চা উদ্ধার করা কি মুখের কথা! আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সময় পেল কই? তারা হরতাল ঠেকাবে নাকি কাজ করবে? আর তাদের তো গুম করেছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণী—মানুষ। l ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.