আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাকৃবির বাস পোড়ালো বহিরাগতরা, ট্রেন লাইনে আগুন দিল শিক্ষার্থীরা

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ময়মনসিংহ শহর থেকে আসা একটি শিক্ষার্থীবাহী বাস গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলে বহিরাগত ক্যাডাররা। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীরা বেঁচে গেলেও অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর প্রতিবাদে বাকৃবিতে ট্রেন অবরোধসহ রেললাইন ও ক্যাম্পাসের সব রাস্তায় আগুন জালিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ফলে ট্রেন চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সব ধরনের ক্লাস পরীক্ষা বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন।

এ ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাস ময়মনসিংহ শহর থেকে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসছিল। কেওয়াটখালী এলাকার (রেল ওভারপাস) বাইপাস মোড়ে ২০-২৫ জন অস্ত্র হাতে বাসের গতিরোধ করে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন দেওয়ার পর তড়িঘড়ি করে বাস থেকে নামতে গিয়ে কয়েক শিক্ষার্থী আহত হন। আহত শিক্ষার্থীরা বলেন, ৬ জুন যেসব ক্যাডার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছিল, তারাই আজ বাসে আগুন দিল।

আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে এসে জীবনশঙ্কায় আছি। এদিকে বাসে আগুনের খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাকৃবি। সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কেআর মার্কেটে যাওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি জিপ ভাংচুর করেন। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জব্বারের মোড়ে এসে রেললাইনে আগুন জ্বালিয়ে দেন। রাত ৮টার দিকে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী কমিউটার ট্রেন অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।

লাইনের স্লিপার, নাট-বোল্টসহ যন্ত্রাংশ খুলে ফেলা হয়। অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা-ময়মনসিংহের রেল চলাচল বন্ধ করেছে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ। পরে ওই ট্রেন সুতিয়াখালী স্টেশনে পিছিয়ে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় আরও দুটি ট্রেন আটকা পড়ে। এতে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন।

বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সব রাস্তায় গাছ ও টায়ার ফেলে আগুন জ্বালিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেন। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ৬ জুন বহিরাগত ক্যাডার জসিম, কমিশনার ফারুক, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী রনিন ও কিরণসহ আরও ১০-১৫ ক্যাডার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০-১৫ শিক্ষার্থীর ওপর হামলা চালায়। তারাই ৭ জুন সকাল সাড়ে ৭টায় ক্যাম্পাসের প্রশাসন ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাসফরের গাড়িতে হামলা করে। ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেআর মার্কেটে রনিনের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন। হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরাপত্তা শাখার মাধ্যমে জসিম, ফারুক, রনিন ও কিরণসহ ১০-১৫ অজ্ঞাতপরিচয় হামলাকারীর নামে মামলা করে এবং হামলায় জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রনিন ও কিরণকে এক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে।

মামলার আসামিরা ১০ জুন কেওয়াটখালীতে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সমাবেশে ময়মনসিংহ-৪ আসনের সাংসদের ছেলে শান্ত, আকুয়া ইউনিয়েনের চেয়ারম্যান, ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মামলা তুলে নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তিন দিনের সময় বেঁধে দেন। গত মঙ্গলবার আলটিমেটাম শেষ হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল বাসে আগুন দেওয়া হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা লিখিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

বিচার না হওয়া পর্যন্ত সব ক্লাস পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ছাত্র ধর্মঘট অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত চলবে। আজকেই হামলাকারীদের প্রতিরোধে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলা হবে বলেও জানান শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার ক্লাস পরীক্ষা হবে কি-না_ এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে জানানো হয়, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্লাস পরীক্ষা বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষা বয়কট করলে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কর্মচারী নিয়োগকে কেন্দ্র করে বারবার সন্ত্রাসী হামলা ঘটছে বলে জানা গেছে। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় এক নেতা বলেন, ময়মনসিংহ শহরের কিছু বহিরাগত নিয়োগ বাণিজ্যকারী এবং বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দুষ্টচক্র প্রশাসনকে চাপে ফেলার জন্য এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। রাত পৌনে ১১টায় এ রিপোর্ট লেখার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. এমএ সালাম সমকালকে বলেন, আবারও মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ঘটনায় প্রায় অর্ধকোটি টাকার টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্যাম্পাসে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

একই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ রফিকুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জরুরি সভায় আছেন বলে জানানো হয়। রাত সোয়া ১১টার সময় ময়মনসিংহ থানার ওসি গোলাম সারোয়ার সমকালকে বলেন, হামলা ও বাস পোড়ানোয় জড়িত একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির পরিচয় জানাতে চাননি। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।