আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ফলের পুষ্টিগুণ, ঔষধিগুণ এবং অন্যান্য ব্যবহার – ৭ম পর্ব

আইনষ্টাইনও না-কি ভুলোমনা ছিলেন। কিন্তু আমি তো আইনষ্টাইন না!! গত ৬টি ধারাবাহিক পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে বাংলাদেশে প্রাপ্ত বহুল প্রচলিত ফলসমূহের পুষ্টিগুণ, ঔষধিগুণ এবং অন্যান্য ব্যবহার সম্পর্কে অবহিত করার চেষ্টা করেছি। আজ থেকে শুরু করবো বাংলাদেশে প্রাপ্ত প্রচলিত এবং অপ্রচলিত/নতুন ফলসমূহের মিশ্র বিবরণ: ৩১। গাব (Riverebony) পুষ্টিগুণ: এতে প্রচুর ক্যালসিয়াম আছে। ঔষধিগুণ: দেশী গাবের ফলের খোসার গুঁড়া আমাশয় নিরাময় এবং একজিমা ও চর্মপীড়ার মলম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

খোসা গরম পানিতে সেদ্ধ করে পান করে পান করলে পাতলা পায়খানা ও ডায়রিয়া নিরাময় হয়। পাতা ও বাকল গরম পানিতে সেদ্ধ করে পান করলে কৃমি, পাতলা পায়খানা, আমাশয় ও মূত্র সংক্রান্ত রোগ উপশম হয়। বিলাতি গাবের ফল রক্ত-আমাশয় ও উদারাময় রোগে ব্যবহৃত হয়। ফল মুখের ও গলার ঘা ধৌতকরণের কাজে ব্যবহৃত হয়। ব্যবহার: পাকা গাব খাওয়া হয়।

গাবের কষ (latex) দিয়ে মাছ ধরার জাল ও নৌকায় প্রলেপ দেওয়া হয়। ৩২। অড়বরই (Star Gooseberry) পুষ্টিগুণ: ভিটমিন সি ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ফল। ঔষধিগুণ: অড়বরই-এর রস যকৃত, পেটের পীড়া, হাঁপানি, কাশি, বহুমূত্র, অজীর্ণ ও জ্বর নিরাময়ে বিশেষ উপকারী। এর পাতার রস আমাশয় প্রতিষেধক ও বলকারক।

অড়বরই ফলের রসের শরবত খেলে জন্ডিস, বদহজম ও কাশি হতে রক্ষা পাওয়া যায়। হাঁপানি, কাশি, বহুমূত্র ও জ্বর নিরাময়ে এর বীচি ব্যবহার করা হয়। ব্যবহার: চাটনি, আচার ও মোরব্বা তৈরি করা হয়। ৩৩। কমলা (Mandarin) পুষ্টিগুণ: আমিষ ও ভিটামিন সি আছে।

ঔষধিগুণ: কমলা সর্দিজ্বর নিরাময়ে উপকারী। ফলের ছাল বমি নিবারক। ফলের শুষ্ক খোসা অম্লরোগ ও শারীরিক দুর্বলতা নিরসনে উপকারী। ফুলের রস মৃগী রোগ নিবারক। ৩৪।

ড্রাগন ফল (Dragon Fruit) পুষ্টিগুণ: ভিটামিন সি, মিনারেল এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত ফল। এই ফলে ফাইবার, ফ্যাট, এ্যাস, ক্যারোটিন, প্রচুর ফসফরাস, এসকরবিক এসিড, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন আছে। ঔষধিগুণ: সবধরণের ডায়েটের জন্য এ ফলটি উপযুক্ত। এ ফল শরীরের জন্য ফাইবার সরবরাহ করে যা পেটের পীড়া ও লিভার-এর জন্য উত্তম। ডায়াবেটিক আক্রান্ত রোগীদের শরীরের রক্তের গ্লুকোজকে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।

খাবারের পরে ডেজার্ট হিসেবে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এ ফল খাওয়ার রেওয়াজ আছে। একটি তাজা ফল খেয়ে মানব শরীরকে সতেজ ও সুস্থ রাখা যায় বলে কথা প্রচলিত আছে। ব্যবহার: সালাদের সাথে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। জুস তৈরিতে এই ফল অত্যন্ত উপযোগী। ৩৫।

রুটি ফল (Breadfruit) পুষ্টিগুণ: উচ্চ ক্যালরি সম্পন্ন, প্রচুর শর্করাযুক্ত কিন্তু প্রায় চর্বিবিহীন একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যোপোযোগী আঁশ, ক্যালশিয়াম, কপার, আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, থায়ামিন এবং নিয়াসিন। ঔষধিগুণ: পাতার ক্বাথ উচ্চ রক্তচাপ এবং শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। জিহ্বার প্রদাহ নিবারণে পাতা বেটে প্রলেপ দেয়া হয়। পাতা পুড়িয়ে ছাই দিয়ে চামড়ার চিকিৎসা করা হয়।

বৃহদাকার প্লিহার উপশমে ভাজা পাতার চূর্ণ বিশেষ কার্যকরী। কষ (latex) চর্মরোগ এবং সাইটিকা (sciatica) উপশমে বিশেষ উপকারী। ব্যবহার: কলার মতোই পাকা ফল হিসেবে অথবা সব্জি হিসেবে খাওয়া যায়। রুটির মতো চাক চাক করে কেটে ভেজেও খাওয়া যায়। নারিকেল, চিনি অথবা গুড় সহযোগে অতি উপাদেয় খাবার তৈরি করা যায়।

আবার রুটির মত সেঁকে লবণ, মরিচ গুঁড়া ও মাখন দিয়েও খাওয়া যায়। কিছু এলাকায় ক্যান্ডি, চিপ্‌স, এমনকি মিষ্টি আচার তৈরি করা হয়ে থাকে। পূর্ববতী পর্বসমূহ: ১ম পর্ব: আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, জাম ২য় পর্ব: কুল, কলা, আমড়া, পেঁপে, আনারস ৩য় পর্ব: নারিকেল, কামরাঙ্গা, লেবু, বাতাবি লেবু, সফেদা ৪র্থ পর্ব: শরিফা, চালতা, করমচা, বেল, লটকন ৫ম পর্ব: তেঁতুল, তাল, ডালিম, জামরুল, জলপাই ৬ষ্ঠ পর্ব: তরমুজ, পানিফল, আমলকি, খেজুর, কদবেল উৎস: কৃষি তথ্য সার্ভিস, কৃষি মন্ত্রণালয়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।