আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের গর্ব ওয়াসিম

চোখে যা দেখি, কানে যা শুনি, তা নিয়ে কথা বলবোই ! বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ওয়াসিম মিয়া মাত্র ১৭ বছর বয়সেই লাভ করেছেন যুক্তরাজ্যের তরুণ বর্ষসেরা প্রকৌশলী ২০১২-এর খেতাব। ওয়াসিমের মা-বাবা দুজনই বাংলাদেশি। যুক্তরাজ্যের কার্ডিফে জন্ম নিলেও বাংলাদেশের প্রতি রয়েছে তাঁর অপরিসীম ভালোবাসা। তাই প্রতিবছর ছুটি পেলেই ছুটে আসেন সিলেটের মৌলভীবাজারে নিজ গ্রামে। ই-মেইলের মাধ্যমে এই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অঞ্জলি সরকার ব্যর্থ হলেও থেমে যেয়ো না ওয়াসিম মিয়া যুক্তরাজ্যের তরুণ প্রকৌশলী হিসেবে পুরস্কৃত হওয়ায় বাংলাদেশের তরুণদের পক্ষ থেকে তোমাকে অভিনন্দন।

—ধন্যবাদ তোমাকে, ধন্যবাদ বাংলাদেশের তরুণদের। বিজ্ঞানের প্রতি তোমার আগ্রহ কবে থেকে? —খুব ছোটবেলা থেকেই আমার যন্ত্রপাতির প্রতি অন্য রকম ঝোঁক ছিল। প্রতিদিন আমরা এই যে কত রকমের যন্ত্র ব্যবহার করছি, এসব কীভাবে কাজ করে তা জানতে খুব ইচ্ছে হতো। স্কুলে থাকতে আমি প্রকৌশল বিষয়ে কিছুই করার সুযোগ পাইনি। কলেজে উঠে আমি প্রথম প্রকৌশল ক্লাবে যোগ দিই।

এর পর থেকে প্রকৌশলে আমার আগ্রহ বাড়তে থাকে। কীভাবে এ প্রকল্পের চিন্তা মাথায় এল? —কলেজে আমাদের অ্যাসাইনমেন্ট ছিল ‘ভ্রূণ মনিটর প্রকল্প’ নিয়ে। আমরা চেষ্টা করছিলাম এটিকে কীভাবে আরও উন্নত এবং কম খরচে তৈরি করা যায়। এই ব্যাপারটিতে আমার উৎসাহ বেড়ে যায় যখন ইউরোপের অন্যতম বড় একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়। কিন্তু বাজেট বেশি হওয়ায় তা বেশি দূর এগোয় না।

এ প্রকল্প নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমাদের যে কতবার ব্যর্থ হতে হয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। আমাদের কলেজে প্রকৌশল বিষয়ে অবকাঠামোগত সুবিধা খুব একটা ভালো ছিল না। আমাদের শিক্ষক পিটার স্পিয়ারের সহযোগিতায় আমরা একটি স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা খরচে গবেষণাগার ব্যবহার করার অনুমতি পাই। তখন আমাদের হাতে ছিল মাত্র দুদিন সময়। আইডিয়া খুঁজতে খুঁজতে এক দিন চলে গেল।

পরের দিন কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমরা একটা মডেল দাঁড় করিয়ে ফেললাম (যদিও চূড়ান্ত পর্যায়ে সেটি আর কাজ করেনি!) বিগ ব্যাং ২০১২ ফেয়ারে কীভাবে অংশ নিলে? —অনেকটা মনের জোর সম্বল করেই সহপাঠী জেসিকা আমি মিলে স্থির করি তরুণ বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের জন্য আয়োজিত বার্মিংহামের বিগ ব্যাং ফেয়ারে অংশ নেব। কিন্তু শুধু অংশ নিতে চাই বললেই তো আর অংশ নেওয়া যায় না। তৈরি করতে হবে একটি যন্ত্রের মডেল। শুধু আইডিয়া থাকলে চলবে না, তাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার পথ করে দিতে হবে! আমি কাজে লেগে গেলাম মডেলটির যান্ত্রিক দিকগুলো উন্নত করতে, আর আমার সহকর্মী জেসিকা কাজ করেছিল মডেলটির বৈদ্যুতিক দিকগুলো নিয়ে। অবশেষে আমরা যৌথভাবে যন্ত্রটার ডিজাইন শেষ করি।

পুরস্কার পাওয়ার ব্যাপারে কতটা আশাবাদী ছিলে? —আমরা যখন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলাম, পুরস্কার পাওয়ার এতটুকু আশাও ছিল না। আমরা বড়জোর এতটুকু চাইছিলাম যাতে দুএকজন মানুষ আমাদের যন্ত্রটি সম্পর্কে জানতে পারে এবং আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। তবে শেষ পর্যন্ত ৩৬০ তরুণ প্রতিযোগীর মধ্যে আমরাই বিজয়ী হই। বিগ ব্যাং ফেয়ারে আমরা নির্বাচিত হই বর্ষসেরা তরুণ প্রকৌশলী ২০১২ হিসেবে। জীবনে ব্যর্থতা এলে তা কীভাব মোকাবিলা করো? —তরুণ উদ্ভাবকদের আমি বলব, নিজের পথ নিজেকেই তৈরি করে নিতে হবে।

যেখানে ব্যর্থ হবে, সেখানে যেন থেমে যেয়ো না। প্রকৌশল পেশাটির মূলমন্ত্রই হলো ব্যর্থতাকে মোকাবিলা করে নতুন কোনো সমাধান খুঁজে বের করা। যখন তুমি কোনো একটি ব্যর্থতাকে জয় করবে, তখন এক অদ্ভুত সার্থকতায় তোমার মন ভরে যাবে। আর একটা জিনিস মনে রাখতে হবে যে সফল হতে হলে দলগতভাবে কাজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তোমার যদি একটি ভালো দল থাকে, সেটি যে তোমাকে কোথায় নিয়ে যাবে তা তুমি চিন্তাও করতে পারবে না।

বাংলাদেশের তরুণ বন্ধুদের জন্য তোমার পরামর্শ কী? —বাংলাদেশের তরুণদের জন্য আমি বলতে চাই যে তোমরা নিজেদের পছন্দের বিষয় নিয়ে গবেষণার চেষ্টা করো। বাংলাদেশের স্থপতির হাতেই যুক্তরাষ্ট্রের সিয়ার্স টাওয়ার তৈরি হয়েছে। ইন্টারনেটের জনপ্রিয় চ্যানেল ইউটিউবের যৌথ প্রতিষ্ঠাতাও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন। তাঁরা কখনো তাঁদের কাজে সফল হতেন না যদি না তাঁরা গবেষণা কিংবা উদ্ভাবনের জন্য নিজের সবটুকু ঢেলে দিতেন। কোনো কিছু উদ্ভাবন করতে যে সব সময় অনেক বড় পৃষ্ঠপোষক আর কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা দরকার হয় না, জেসিকা আর আমিই তার প্রমাণ।

আমি সবার জন্য একবাক্যে যা বলতে পারি তা হলো, তুমি যে কাজই করো না কেন, সব সময় সুযোগের সদ্ব্যবহার করবে। আর সুযোগ যদি না থাকে, নিজেই তা তৈরি করে নেওয়ার চেষ্টা করো। তুমি হয়তো জানোও না তোমার আজকের ছোট্ট একটি পদক্ষেপ ভবিষ্যতে তোমাকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে। সূত্র: প্রথম আলো ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.