আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোট-টাই পরতে না জানা দিলীপ বড়ুয়া এখন ৬টি প্লটের মালিক।

শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া নিজে দুটি সরকারি প্লটের মালিক। স্ত্রীর নামে নিয়েছেন আরও একটি। এ ছাড়া মেয়ের নামে একটি এবং ভাইয়ের ছেলের নামে একটি মিলিয়ে মোট পাঁচটি প্লটের মালিক মন্ত্রীপরিবারের সদস্যরা। তাদের এসব প্লটই হচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) উত্তরা, পূর্বাচল ও ঝিলমিল প্রকল্পের। আর মন্ত্রী নিজে পাঁচ কাঠার আরেকটি প্লটের জন্য আবেদন করেছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কাছে।

শিল্পমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের পাঁচটি প্লট নেওয়ার ঘটনায় খোদ তার মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তবে তাদের কেউই চাকরিতে হয়রানি কিংবা বদলি আতঙ্কে মুখ খুলছেন না। প্রসঙ্গত, এসব তথ্যসংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে এসেছে। রাজউক সূত্রে জানা গেছে, দিলীপ বড়ুয়া শিল্পমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পর প্রথম সরকারি প্লট পান রাজউকের উত্তরা প্রকল্পে। সেখানে তার নিজের নামে পাঁচ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয় রাজউকের টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্টের ১৩ এ (সি) ধারার আওতায়।

এরপর রাজউক পূর্বাচলে জমি বরাদ্দের ঘোষণা দিলে সেখানেও তার স্ত্রী, সন্তান এবং পরিবারের অপর সদস্যের নামে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের শাখা-৬ এর সংশ্লিষ্ট ডেস্ক কর্মকর্তা জানান, গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত রাজউকের ১২তম বোর্ডসভার সিদ্ধান্তের আলোকে এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ১৩ এ (সি) ধারার সুপারিশ অনুযায়ী সংরক্ষিত কোটায় মোট ২২ জনকে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ ২২ জনের মধ্যে তিনজনই হচ্ছেন শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার পরিবারের সদস্য। এর মধ্যে তার স্ত্রী অধ্যাপিকা তৃপ্তি রানীর নামে পূর্বাচলে বরাদ্দ দেওয়া হয় পাঁচ কাঠা জমি। মন্ত্রীর মেয়ে ডা. উপমা বড়ুয়ার নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তিন কাঠা এবং দিলীপ বড়ুয়ার ভাই প্রয়াত ডা. শুভঙ্কর বড়ুয়ার ছেলে ডা. অলক বড়ুয়ার নামে দেওয়া হয়েছে তিন কাঠা।

মন্ত্রীপরিবারের এ সদস্যরা মিলে মোট ১১ কাঠা জমি পেয়েছেন পূর্বাচলে। এ জমির বর্তমান বাজারমূল্য আনুমানিক পাঁচ কোটি টাকা। এ ছাড়া মন্ত্রীর এপিএস পুলক বড়ুয়ার নামেও তিন কাঠার একটি প্লট বরাদ্দে দেওয়া হয়েছে পূর্বাচলে। প্রসঙ্গত, এই এপিএস মন্ত্রীর দূরসম্পর্কের আত্দীয়। খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, সব নিয়মনীতি ভঙ্গ করে দিলীপ বড়ুয়া তার নিজের নামে আরও একটি প্লট নিয়েছেন কেরানীগঞ্জে রাজউকের ঝিলমিল প্রকল্পে।

এখানে তার নামে বরাদ্দ দেওয়া প্লটে জমির পরিমাণ তিন কাঠা। বর্তমান বাজারমূল্যে এর দাম আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা। এর বাইরে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঁচ কাঠার একটি প্লটের জন্য আবেদন করেছেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, তার এই প্লট পাওয়ার বিষয়টিও চূড়ান্ত। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যরা একের অধিক সরকারি প্লট নিতে পারেন না।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, দিলীপ বড়ুয়ার ক্ষেত্রে এ নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের একাধিক পদস্থ কর্মকর্তা জানান, যেখানে সরকারি কর্মকর্তারা হাজারো দেনদরবার করে প্লট পাচ্ছেন না, সেখানে কোনো কোনো মন্ত্রী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা একের অধিক প্লটের মালিক হয়ে গেছেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মন্ত্রী নিজের জন্যই করছেন, অন্যদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় তার কাছে গুরুত্ব পায় না। তিনি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদেরও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। মন্ত্রী হিসেবে কর্মকর্তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় গত সাড়ে তিন বছরে কখনোই তিনি বিবেচনায় নেননি।

একাধিক কর্মকর্তা জানান, রাজউকের একজন কর্মকর্তা মন্ত্রীর হয়ে তার এসব প্লটের বিষয়ের যাবতীয় নথিপত্র দেখাশোনা করেন। এটা এখন অনেকটা ওপেন-সিক্রেট। এ বিষয় জানতে গতকাল রাতে দু'দফায় শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার মুঠোফোনে কল করলে তিনি কোন কথা বলতে চাননি, শুধু বলেন, আমি সংসদে আছিরে ভাই, ব্যস্ত আছি।  ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।