আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার কিশোরীবেলা পর্ব ৬ : বুকের মধ্যে হলুদ একটা পাতার দীর্ঘশ্বাস!

মনে রবে দীর্ঘশ্বাসে, আর ১মিনিট নীরবতায়....! প্রথম পর্ব দ্বিতীয় পর্ব তৃতীয় পর্ব চতুর্থ পর্ব পঞ্চম পর্ব এভাবে নতুন একটা বছর এসে পড়লো, আমি তখন ভয়ঙ্কররকম দিশেহারা । কুম্ভকর্ণ আমার সাথে আর নেই ব্যাপারটা আমাকে কষ্ট দিচ্ছিলো প্রতিনিয়ত । আমি দিলদরিয়া টাইপের প্রেমিকা ছিলাম না যে এরকম ভাববো ও যদি ভালো থাকে এতেই আমার সুখ,এই টাইপ ন্যাকামি ছিলো না আমার মাঝে । আমি খামখেয়ালিপনা বাড়তে লাগলো, সবচে আজব ব্যাপার আমি প্রতিটা দিনরাত ঐ ছেলেটার জন্য কাঁদতাম । মাঝে মাঝে আমাদের গেটটুগেদারে দেখা হলে দুঃখ মাথাচাড়া দিতো ।

আমার খুব কাছের ফ্রেণ্ড ছিলো ৩জন লায়লা,নওশীন আর মাসুম । আমি এদের কাছে বলতাম আর এরা গালিগালাজ করতো । মাসুম তো রেগেমেগে বলেই বসলো, কুম্ভকর্ণ BBF (বাংলাদেশ বলদ ফেডারেশন) এর সভাপতি । তবুও আমি চিন্তাগুলো বদলাতে পারিনি,ডায়রিতে ওকে উদ্দেশ্য করে চিঠি লেখা আর টপটপ চোখের পানি ফেলা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলো না । ওকে লেখা শেষ চিঠিটা হলো, "আমার কষ্ট, আমার মধ্যরাত, এই নির্জন মধ্যরাত তোমাকে মনে করিয়ে দেয় ।

তোমাকে মনে পড়া মানে সেইসব বাঁধ ভাঙ্গা দিনগুলো অতীত থেকে তুলে আনা । তোমার ও কি এমন মনে হয়? এই দেখো, আমার এখন ইচ্ছে করছে সবকিছু ছেড়েছুড়ে তোমার কাছে ছুটে যাই । জানি তুমি এখন বেশ ভালো আছো, অথচ তুমি বলেছিলে আমাকে ছাড়া থাকা তোমার পক্ষে অসম্ভব, তুমি শুধুই আমার একার । এখনো কি কোনো একলা মুহূর্তে তুমি আমার একার হয়ে ওঠো? আমি কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছি । তুমিই আমার কষ্ট, আমার মধ্যরাত ।

এ চিঠি তুমি পাবেনা । এমন বহু চিঠিই আমি লিখেছি যেগুলো গন্তব্যহীন, একা পুরোপুরি আমার মত । অসম্ভব ভালোবাসি তোমাকে.... -তোমারই মায়াবতী" আমি অচেনা হয়ে যাচ্ছিলাম, আমার দুরন্তপনা চঞ্চলতা হারিয়ে গিয়েছিল আমার কাছ থেকে । হ্যাঁ আমাদের যোগাযোগ ছিলো, ও যথেষ্ট ভদ্র বলে আমার পাগলামি সহ্য করতো... এরমাঝে কলেজের ২য়বর্ষে উঠে পড়লাম আর শুরু হলো টুকটাক লেখা । লেখালেখির ব্যাপারটা আমার কাছে প্রকৃতিপ্রদত্ত একটি ব্যাপার মনেহয়, খুব কম মানুষের এই অতিমাত্রায় অসাধারণ ক্ষমতা থাকে ।

আমার নেই ছিলোনা কখনো, আমি লিখতাম নিজের কথা কাগজে নানারঙের কলম দিয়ে, মূলত বর্ণহীন জীবনের গল্প রঙিন কলমে লিখে একটু সামঞ্জস্য আনা আর কি! আমি প্রথম গল্প (?!) লিখি নিশা আপুর জন্মদিনে,১৪জুন ২০১১ । তারপরের ঐ লেখাটা ফেবুর 'ভালবাসার গল্প' পেজে পাব্লিশ হওয়ার পর ওদের উত্‍সাহে লিখতে চেষ্টা করা! এদিকে কলেজে রেজাল্ট খারাপ হয়ে চলছিল, আমি এতটা ভেঙে পড়েছিলাম যে কিছুই চালাতে পারছিলাম না । হতাশা আর কষ্ট সবকিছুতে । এদিক থেকে আমার বন্ধু বাড়তে লাগলো ফেবুতে, সবার গালাগালিতে আমি একটা অসাধ্য সাধন করে ফেললাম । রোজার ঈদের ঠিক আগের রাতে কুম্ভকর্ণের সাথে আমার ২০১১সালের শেষ কথা হয় ।

আমি আর ওকে ফোন দেইনি অথবা টেক্সট,এটা ছিল আমার জন্য সবচে কষ্টকর তবুও কিভাবে যেনো করেছিলাম! এরই মাঝে ব্লগে আসা, ওয়াচে ঝুলে থাকা অনেকদিন । একটু একটু অখাদ্য লেখার শুরু আমার । লাইফে একজন অদ্ভুত বন্ধু পাই এসময়টায়, সৌরভ । সৌরভ অসম্ভব ভালো ওর ফ্রেণ্ড আর তাদের গার্লফ্রেণ্ডের সাথে আড্ডাগুলো মজার ছিল, দারুণ সাপোর্ট পেয়েছিলাম ওদের কাছ থেকে! প্রিটেস্ট এক্সাম হলো, রেজাল্ট একটু ভালো আসলো । এর মাঝে ভার্চুয়াল ভাইবোন বন্ধুদের সংখ্যা বাড়লো, প্রতিটা মানুষ ভীষন মমতায় আমাকে জড়িয়ে রেখেছিলো ।

হিসেব করলে দেখা যায় ২০১১সাল ছিল আমার সবচে ঘটনাবহুল বছর । আমি এদিকে কাঁদতে কাঁদতে পুরো বছরটাই পার করে দিয়েছি,পড়াশোনা দূরে থাক বইয়ের মাঝে চোখের পানির দাগ ছিলো । এভাবে এসে পড়লো আমার টেস্ট এক্সাম! আমার মা প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেলেন আমার অবস্থাতে, আমি ফার্স্ট ইয়ারে যাও একটু পড়েছি সেকেণ্ড ইয়ারে পাগলামি আর কান্নাকাটির উপরেই গেছে । ২মাস ২৭দিনের জন্য প্রায় ২টা বছর আমাকে পেইন সহ্য করতে হয়েছে । আমি এক্সাম দিলাম দেয়ার আগে আম্মুকে বল্লাম যে, এবছর HSC না আগামী ব্যাচে আমাকে দিতে হবে ।

এবছর দিলে আমার ফেল নিশ্চিত! সবকয়টা এক্সাম খারাপ দিয়ে আসলাম, সাইকোলজি এক্সামের দিন কলেজ ইনচার্জ বলে গেলো একটা সাবজেক্টে ফেল করলেও এলাউ করবেনা । আমি ধরেই নিলাম আমি বাংলা আর ইংলিশ বাদে সব সাবজেক্টে ফেল আসবে! রেজাল্ট দিলো ১৬ডিসেম্বর, আমি ঐদিন বাইরে ঘুরে এসে আম্মুর কাছ থেকে জানলাম আমি টেস্ট এক্সামে এলাউ হইনি । সব সাবজেক্টে ফেল না করলেও অর্থনীতি ২য় পত্রে ফেল আসছে আমার । আমার কাছে যেকয়টা ঘুমের ওষুধ আর ব্লেড ছিল নিয়ে ৮তলা ছাদে চলে গেলাম । ছাদের রেলিং এ পা ঝুলিয়ে বসে কাঁদতে লাগলাম, আমার মনে হচ্ছিলো আমার মাথার সব শিরা ছিড়ে যাবে,আমি সহ্য করতে পারছিলাম না ।

এদিকে একের পর এক কল আসতে লাগলো, ফ্রেণ্ডরা পাগল হয়ে গেলো । আমি যেনো কার কথা শুনে বাসায় ফিরেছিলাম! পরেরদিন সকালে ক্লাসটিচার বললো কল করে আম্মুকে আমাকে নিয়ে কলেজে যেতে, রিকোয়েস্ট করলে এলাউ করবে । আমার অবস্থা তখন এতটাই খারাপ আম্মুকে শুধু যেতে না করলাম । কারণ আমি জানতাম HSC দিলে আমি ফেল করবো অথবা GPA কম আসবে...দিয়ে দিলাম ১বছর গ্যাপ ! জানি অনেকের কাছে একটা ভুল সিদ্ধান্ত লাগবে, কিন্তু আমি জানি আসলে এই গ্যাপটা আমার জন্যে কতটা দরকার ছিল । এবং তারপরেই শুরু হল নতুন এক গল্প....! Photo Credit : অনন্ত ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।