আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লেজার-বিস্ময়কর এক যুগের সূচনা

আমি কখনো যায়নি জলে,কখনো ভাসিনি নীলে,কখনো রাখিনি চোখ ডানা মেলা গাঙচিলে লেজার বা LASER নিয়ে আমরা কম বেশী সবাই জানি-জানি লেজার মানে light amplification by stimulated emission of radiation। এতটুকুই ,এখন পত্র-পত্রিকায় দেখি ওমুক জায়গায় লেজার হয় তমুকে লেজার করেছে,কিছু বুঝি বেশীর ভাগই জানিনা আর তাই ব্যাপারটা এড়িয়ে চলি...আশে পাশে বলে লেজার করা ভালো না অনেক ব্যায়বহুল ইত্যাদি ইত্যাদি.আমার অবস্হাও এ থেকে ভালো কিছু ছিলোনা-তাই ভাবলাম চলুন না পরিচিত হয়ে আসি এই বিস্ময়কর জিনিসটির সাথে ঘুরে আসি লেজারের জগতে----- LASER (Light amplification by stimulated emission of radiation)-এর সহজ কথায় মানে হচ্ছে যে-আলোর ফোটন কনার সম্মলিত শক্তি বহুগুন বাড়িয়ে দেয়া । আর এই বাড়িয়ে দেয়া আলোর কনার শক্তি দিয়েই করা হয় বিস্ময়কর যতো কাজ। কয়েক ধরনের লেজার রয়েছে যেমন- 1. Gas laser- HeNe(helium-neon leser) carbon di oxide laser-লেজার সার্জারী ও ত্বকের সার্জারী Argon ion laser 2.Diode laser -দাতের সার্জারীতে 3.Dye laser- ত্বকের উপরিভাগের দাগ জন্মদাগ ও ট্যাটু সরানো 4.Excimer laser- ল্যাসিক সার্জারী তে 5. Fiber laser 6.Free electron laser-ব্রেন টিউমার(মেনিনজিওমা,হৃদরোগের চিকিৎসা ও ব্রনের চিকিৎসায়) আরও অনেক ধরনের লেজার আছে আমি চিকিৎসা শাস্ত্রে ব্যাবহ্রত লেজার গুলোই উল্লেখ করলাম- লেজার স্কালপেল বা লেজারের ছুরি- চিকিৎসা শাস্ত্রের এক অপরিহার্য শাখা সার্জারী তারই অপরিহার্য জিনিস হচ্ছে ছুড়ি আমরা বলি স্কালপেল- কার্বন ডাই অক্সাইড লেজারের এই ছুড়ি মানব দেহে কাজ করে নিখুত ভাবে ,যেমন ধরেন সার্জন ২ মিমি গভীরতার এক ইনসিসান দিবেন লেজার রশ্মি এই পরিমাপ নিখুত ভাবে পরিমাপ করবে। আর একটি সুবিধা হলো এই রশ্মি একই সাথে কাটার সাথে সাথে পার্শবর্তী জায়গা থেকে রক্তপাত ঘটানোও বন্ধ করবে।

হৃদরোগে লেজার- বিশ্বের বড় বড় হাসপাতালে লেজার দ্বারা হার্টের প্লাক সরানোর কাজ হচ্ছে- একটু খোলাসা করে বলি- যখন আমাদের হৃদপিন্ডের রক্তনালী তে একটু একটু করে প্লাক বা চর্বির কনা জন্মে তখন সে এলাকায় রক্ত চলাচলও কমে যায় এবং সে এলাকায় আস্তে আস্তে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় যাকে বলা হয় মায়োকার্ডিয়াল ইনফারকশন বা হার্ট এটাক। পরবর্তীতে এ রোগের গভীরতা দেখে বাইপাস সার্জারী বা হার্টে রিং,বেলুন যাকে বলা হয় PTCA করা হয়। এই পিটিসিএ ইখন লেজার দিয়ে করা হয়। বলা হচ্ছে যে-লেজার রশ্মি ফ্রি ইলাকট্রন লেজার বা ফাইবার অপটিক লেজার দিয়ে সেই আর্টারীর মধ্যের প্লাক গলিয়ে দিয়ে রক্তচলাচল বাড়িয়ে দেয়া হয় যা আগে রিং বা বেলুন দিয়ে করা হতো এই অপারেশনের নাম হচ্ছে লেজার এনজিওপ্লাস্টি। তাছাড়া লেজার এসিস্টেড বেলুন এনজিওপ্লাস্টি ও করা হয়।

কিছুটা ঝুকি আছে আর তা হলো যদি লেজার রশ্মি যদি সঠিক গভীরতা ও দিকে না ফেলা হয় তবে রক্তপাতের সম্ভাবনা থাকে । তবে এসব ক্ষেত্রে ভীষন সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। http://www.youtube.com/watch?v=6I2-REHJV8Q চোখের চিকিৎসায় লেজার- চোখের ক্ষেত্রে কর্নিয়া রেটিনা ও গ্লুকোমার ক্ষেত্রে লেজার ব্যবহার করা হয়। ডায়াবেটিক রোগীর চোখের রেটিনাতে নিওভাসকুলারাইজেশন বা নতুন রক্তনালী তৈরী হয় যা রেটিনার সামনে হওয়াতে চোখের দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায় । আর্গন গ্যাস লেজার দিয়ে সেই রক্তনালীগুলো গলিয়ে ফেলে দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা যায়।

ডিটাচড রেটিনা বা রেটিনা ছিড়ে গেলে আর্গন লেজার দিয়ে সেটা আবার পুনরায় ঠিক করা যায়-মজার ব্যাপার হলো-গর্ডান গোল্ড যিনি এই লেজারের আবিষ্কার কর্তা তার নিজেরই এই সার্জারী লাগে এবং তিনি সুস্হ ও হন। আরেকটি চোখের রোগ হলো গ্লুকোমা- যাতে চোখের পানি বের হতে না পেরে চোখের প্রেশার বেড়ে যায়,এর জন্য অনেক ভালো ভালো ওষুধ আছে,কিন্তু যখন ওষুধ কাজ করে না তখন অপারেশনের সিদ্ধান্ত আসে । এক্ষেত্রে লেজার দিয়ে ছোট্ট একটা ছিদ্র করে দেয়া হয় যাতে পানি গড়িয়ে যেতে পারে। ল্যাসিক - এবার আসি বহুল ব্যাবহৃত শব্দ ল্যাসিক বা LASIK(laser assisted in situ keratomilensis) আসলে চোখের চশমা চোখের লেন্সের ব্যাসার্ধ কমিয়ে বা বাড়িয়ে রেটিনার উপর ছবি ফেলতে সাহায্য করে। অনেক সময় চশমার পাওয়ার অনেক বেশী থাকে বা চালশে দৃষ্টির জন্য মোটা লেন্স ব্যাবহার করা হয় এক্ষেত্রে এক্সিমার লেজার দিয়ে কর্নিয়ার কিছু অংশ কেটে তার ভিতরের অংশ লেজার দিয়ে পরিচ্ছন্ন ও শেপের কিছু পরিবর্তন করে আবার কর্নিয়া প্রতিস্হাপন করা হয়।

এতে চশমার প্রয়োজনীয়তা কমে। ত্বকের পরিচর্যায় লেজার- লেজার দিয়ে ত্বকের কালো পোড়া দাগ,জন্মদাগ,ট্যাটু, অবান্চিত লোম পরিস্কার করা হয়। দাতের পরিচর্যায় লেজার- দাতের রং, দাতের ক্ষয় ও মাড়ির রোগে লেজার ব্যবহার করা হয়। আসলে মুলমন্ত্র টা হলো যে জিনিসটা ক্যাভিটি বা ক্ষয় করে তা দাতের এনামেলের চাইতে অনেক নরম আর তাই লেজার রশ্মি অনেক সহজেই সেই ক্ষয়কারী টিস্যু ধ্বংস করে দেয় দাতের এনামেলের কোন ক্ষতি করা ছাড়াই। এক্ষেত্রে ব্যাবহার করা হয় Nd-YAG লেজার যা ক্রিস্টাল মিডিয়ামের মাধ্যমে কাজ করে।

যদি এতে কিছু পরিমান রক্ত ক্ষরন ও হয় তবে তা লেজারই বন্ধ করে, আর যেহেতু লেজার সেকেন্ডর ৩০ ট্রিলিয়ন ভাগের একভাগ সময়ের মধ্যে কাজ করে সেহেতু ব্যাথা টের পাওয়া যায়না কারন ব্যাথা টের পাওয়ার জন্য যতটুকু সময় দরকার লেজার তারচাইতেও দ্রুত কাজ করে। এভাবেই চিকিৎসা ক্ষেত্রে লেজার কাজ করে যাচ্ছে নিরলস ভাবে। বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে এ প্রযুক্তি জনপ্রিয় হচ্ছে । ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।