আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মন-মস্তিষেক গণ্ডগোল শুরু : কীভাবে বুঝবেন

আমি অবক্ষয়, একজন ব্লগার মানসিক সমস্যা বা মানসিক ব্যাধি সাধারণত ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করে। এ বিকাশধারাটি এত ধীরে আর নিভৃতে হতে পারে যে, আপনি বুঝতেই পারবেন না কখন মানসিক অসুস্থতার শিকার হয়ে গেছেন। পরিবারের কথায় আসি। পরিবারের কোনো সদস্য সবার অজ্ঞাতে ধীরে ধীরে মানসিক সমস্যায় পড়তে পড়তে ব্যাধিগ্রস্ত হয়ে পড়ল। পরিবারের সদস্যদের প্রশ্ন করলে তারা বলেন আমরা বুঝতেই পারিনি কীভাবে সে মানসিক পীড়াগ্রস্ত হয়ে পড়ল।

তারা এখনো বলেন যে, আমরা তো দেখেছি তার সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। আসলে কি জানেন এই সবকিছু বলতে আমি-আপনি যা বুঝি তাই হয়তো সব নয়। মানুষের মন-মননশীলতার বিস্তৃতি অনেক ব্যাপক। তারা হয়তো এমনটি বলে থাকেন যে, অমুকের মুড বা মন-মেজাজ কিছুদিন যাবৎ খুব খারাপ ছিল। মাঝে মাঝে অল্পতেই তার মেজাজ রুক্ষ হয়ে যেত, মাঝে মাঝে অবসন্ন থাকত এ আর এমন কি? আমাদেরও মাঝে মাঝে এমন হয়।

কাজেই তাকে পৃথক করে দেখার কিছু নেই। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল, এটিই ভয়াবহ নীরব ঘাতক বিষণ্নতা বা ডিপ্রেশনে রূপ নিল। আপনাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি অ্যালকোহল যাকে আমরা অনেকে মদ বলে জানি তা অনেক দেশেই সামাজিকভাবে স্বীকৃত। আমাদের দেশে কাউকে আপনি দেখলেন যে মাঝে মাঝে অ্যালকোহল সেবন করে-কদাচিৎ অন্য কোনো ড্রাগস বা মাদক সেবন করে। আপনি কি জানেন যে পরবর্তীতে আপনার এ বন্ধুটিই মাদকাসক্ত হয়ে পড়তে পারে, যা হয়তো আগে চিন্তা করেননি।

চিন্তা করলেও হয়তো ওভাবে গুরুত্ব দেননি। কাজেই মানসিক অসুস্থতা হওয়ার আগেই বুঝতে চেষ্টা করুন, আপনি কোনো গুরুতর মানসিক ব্যাধিতে জড়িয়ে পড়ছেন কি না। সতর্কতা উদ্রেককারী লক্ষণ ও উপসর্গসমূহ ঘুমের সমস্যা, অনিদ্রা, ঘুম আসতে সমস্যা, ঘুম বারবার ভেঙে যাওয়া, রাত অনেক বাকি থাকতে ঘুম ভেঙে যাওয়া এবং আর ঘুমাতে না পারা। দিনে বা রাতে অনিয়মিত চক্রে ঘুমানো (যারা মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে তাদের বেলায় এমনটি হতে পারে) - সমাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া। নিজেকে পৃথক কিছু ভাবা বা বেশির ভাগ সময় একা একা কাটানো - মানুষের সাথে সামাজিক আন্তঃসম্পর্কে ক্রমশ অবনতি ঘটা - কখনো খুব বেশি কর্মতৎপরতা বা কখনো একেবারে কর্মহীন থাকা এবং এ দুটি ব্যাপার ঘুরেফিরে আসা - চরম শত্রুতা, ভয়ভীতি অথবা সবকিছুতে সন্দেহপ্রবণতা - কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে না পারা বা মনোনিবেশ করতে সমস্যা - বন্ধুত্বে বা ভালোবাসায় অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়ান্বিত হওয়া বা পারিবারিক অসমমতি - নিজের ব্যক্তিগত যত্ন না নেয়া বা নিজের প্রতি খেয়াল না রাখা - সব সময়ই সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা - কোনো কারণ ব্যতিরেকে পরিবারে অনেক বিষয় লুকানো বা প্রকাশ না করা - অপ্রকৃতিস্থ আবেগজনিত প্রতিক্রিয়া - বিমূর্ত কোনো কিছু বারবার লেখা ও শিশুর মতো অসপষ্ট আঁকিবুঁকি করা - আবেগহীন মুখাবয়ব বা চোখে-মুখে আবেগের প্রকাশ না থাকা - এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা, চোখের পাতা না ফেলা বা অহেতুক বারবার চোখের পাতা ফেলা - শব্দ বা আলোকের প্রতি অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা বা সপর্শকাতরতা - অদ্ভুত শব্দ বা ভাষায় কথা বলা - অপ্রকৃতিস্থ আচরণ যেমন পরিচিত কাউকে গায়ে সপর্শ করতে না দেয়া, বারবার মোজা পরা ও খোলা, বারবার শেভ করা, নিজেকে নিজে কোনো কিছু দিয়ে আঘাত করে কষ্ট দেয়া।

ওপরে আমরা মানসিক রোগের কতক উপসর্গ বা লক্ষণ প্রকাশ করলাম তার মানে কিন্তু এই নয় যে, এর দু-একটা উপসর্গ কারো থাকলে সে বুঝি মানসিক রোগী। তবে কারো যদি একগুচ্ছ উপসর্গ থাকে, তবে বুঝতে হবে তিনি মানসিক অসুস্থতার ঝুঁকির সমমুখীন অর্থাৎ তিনি বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছেন। আমরা চোখে দেখতে পাই যা তা হলো ব্যক্তির বিহেভিয়ার বা আচরণ। তাই মনের মতো বিমূর্ত বিষয়ে ইতি টেনে বিজ্ঞানীরা ঝুঁকে পড়েছেন আচরণ নিয়ে গবেষণায়। দেখুন তো আপনার আগের আচরণগত ও বর্তমান আচরণ জগতের মাঝে অনেক বেশি পার্থক্য হয়ে যাচ্ছে কি না? একটু ভাবুন তো যদি বুঝতে পারেন যে বর্তমান ও অতীত আচরণে বিশাল ফারাক, তবে বিলম্ব না করে মনোচিকিৎসক বা সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শ নিন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।