আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রূপকল্প-২০২১ !!!

জাতির জনক ও বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উন্নয়ন দর্শন ছিল অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক মুক্তি-মধ্যস্থতাকারী উন্নয়ন দর্শন, যা বিনির্মাণে নিয়ামক ভূমিকায় থাকবে জনগণ। তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সমবায়কে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেয়ার কথা ভাবছিলেন। আর সে কারণেই মালিকানার নীতি বিষয়ে সংবিধানের ১৩ নাম্বার অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- রাষ্ট্রের মালিকানা ব্যবস্থা হবে প্রথমত রাষ্ট্রীয় মালিকানা, দ্বিতীয়ত সমবায়ী মালিকানা, তৃতীয়ত ব্যক্তিগত মালিকানা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন দেখতেন দেশের প্রতিটি গ্রামে সমবায় সমিতি গঠন করা হবে। সমবায় কার্যকরকরণে ৩০ জুন ১৯৭২ বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়ন আয়োজিত সমবায় সম্মেলনের ভাষণে তিনি বলেছিলেন- 'আমার দেশের প্রতিটি মানুষ খাদ্য পাবে, আশ্রয় পাবে, শিক্ষা পাবে, উন্নত জীবনের অধিকারী হবে- এই হচ্ছে আমার স্বপ্ন।

এই পরিপ্রেক্ষিতে গণমুখী সমবায় আন্দোলনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। কেননা, সমবায়ের পথ- সমাজতন্ত্রের পথ, গণতন্ত্রের পথ। বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ২৬ মার্চ ১৯৭৫ স্বাধীনতা দিবসের র‌্যালিতে বলেছিলেন_ 'আগামী ৫ বছরে সরকার বাধ্যতামূলকভাবে ৬৫ হাজার গ্রামে বিভিন্নমুখী সমবায় সমিতি চালু করবে। বঙ্গবন্ধুর সদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে সমবায়কে কাজে লাগিয়ে দ্রুত দেশকে লক্ষ্যস্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর সে স্বপ্ন পূরণে রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে সমবায়কে কাজে লাগাবার ঘোষণা দিয়েছে।

সমবায়কে কাজে লাগাবার উদ্যোগ নিলে সারাদেশের দেড় লক্ষাধিক সমবায় সমিতির কোটি মানুষ দেশ গঠনে উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করবে। বর্তমানে সমবায়ে বিনিয়োগের পরিমাণ ১২০০ কোটি টাকারও বেশি। অতএব সমবায় বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনাময় এবং উপযোগী একটি ক্ষেত্র এতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রাচীন ও পরীক্ষিত অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার নাম হচ্ছে সমবায়। সঙ্ঘবদ্ধভাবে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উত্তরণের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে যে অভিযাত্রা, তারই নাম সমবায় আন্দোলন।

বঙ্গবন্ধু এ বিষয়টি স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। সমবায় বাংলাদেশের উন্নয়নে হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগতে পারে। তাই দেশকে ২০২১ সালে একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দেয়ার সুস্পষ্ট অঙ্গীকার নিয়ে ঘোষণা করা হয়েছে রূপকল্প-২০২১। রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের সমবায়কে কাজে লাগিয়ে ২২টি লক্ষ্য অর্জনে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে বর্তমান সরকার। ২২টি লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে- বিকাশমান অর্থনীতি, দারিদ্র্য মুক্তি, অংশীদারিত্বমূলক সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, সামাজিক ন্যায়বিচার, নারীর সমঅধিকার, আইনের শাসন, মানবাধিকার, সুশাসন ও দূষণমুক্ত পরিবেশ।

সমবায়কে কার্যকরকরণে ২২টি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ৬টি জেলার ৫৫ জন অভিজ্ঞ সমবায়ীর কাছ থেকে তথ্য-উপাত্ত ও ধারণা সংগ্রহ করা হয়েছে। অভিজ্ঞ সমবায়ীদের প্রায় ১২০০ সুপারিশক্রমে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হবে। বর্তমানে অসংখ্য সমবায় সমিতি অকার্যকর ও সম্ভাবনাবিহীন অবস্থায় বিরাজ করছে। সমবায় দিবসের ক্রোড়পত্র থেকে জানা যায়, দেশে সমবায় সমিতির সংখ্যা ১ লাখ ৬২ হাজার। সমবায়ের মাধ্যমে রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে যে ২২টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- ১) প্রতি গ্রামে সমবায় সমিতি গড়ে সমিতির সদস্যদের সন্তান কিংবা পোষ্যদের প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা।

এভাবে ২০১০ সালের মধ্যে প্রথিমিক স্তরে ভর্তির হার ১০০ ভাগ নিশ্চিত করা। ২) ২০১০ সালের মধ্যে দেশের সব মানুষের জন্য নিরাপদ সুপেয় পানির ব্যবস্থ্যা করা। ৩) ২০১২ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা। ৪) ২০১৩ সালের মধ্যে প্রতিটি বাড়িকে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থার আওতায় আনা। ৫) ২০১৩ সালে বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার হবে ৮ শতাংশ।

২০১৭ সালে এই হার ১০ শতাংশে উন্নীত করে অব্যাহত রাখা। ৬) ২০১৩ সালে বিদ্যুতের সরবরাহ হবে ৭ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০১৫ সালে ৮ হাজার মেগাওয়াট। ২০২১ সাল নাগাদ দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা ২০ হাজার মেগাওয়াট ধরে নিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। ৭) ২০১৩ সালে পর্যায়ক্রমে স্নাতক পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা। ৮) ২০১৪ সালে নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা।

৯) ২০১৫ সালের মধ্যে সকল মানুষের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা। ১০) ২০১৫ সালে জাতীয় আয়ের বর্তমান হিস্যা কৃষিতে ২২ শিল্পে ২৮ ও সেবাতে ৫০ শতাংশের পরিবর্তে হবে যথাক্রমে ১৫, ৪০ এবং ৪৫ শতাংশ করা। ১১) ২০২১ সালে বেকারত্বের হার বর্তমান ৪০ থেকে ১৫ শতাংশে নেমে আসবে। ১২) ২০২১ সালে কৃষি খাতে শ্রমশক্তি ৪৮ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়াবে ৩০ শতাংশে। ১৩) ২০১১ সালে শিল্পে শ্রমশক্তি ১৬ থেকে ২৫ শতাংশে এবং সেবা খাতে ৩৬ থেকে ৪৫ শতাংশে উন্নীত হবে।

১৪) ২০২১ সাল নাগাদ বর্তমান দারিদ্র্যের হার ৪৫ থেকে ১৫ শতাংশে নামবে। ১৫) ২০২১ সালে তথ্য প্রযুক্তিতে 'ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে বাংলাদেশ পরিচিতি লাভ করবে। ১৬) ২০২১ সালের মধ্যে দেশের ৮৫ শতাংশ নগরিকের মানসম্পন্ন পুষ্টি চাহিদা পূরণ নিশ্চিত হবে। ১৭) ২০২১ সালের মধ্যে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য প্রতিদিন নূন্যতম ২১২২ কিলোক্যালরির উপর খাদ্য নিশ্চিত করা হবে। ১৮) ২০২১ সালের মধ্যে সকল প্রকার সংক্রামক ব্যাধি সম্পূর্ণ নির্মূল করা।

১৯) ২০২১ সালে গড় আয়ুষ্কাল ৭০ এর কোঠায় উন্নীত করা। ২০) ২০২১ সালে শিশু মৃত্যুর হার বর্তমান হাজারে ৫৪ থেকে কমিয়ে ১৫ করা। ২১) ২০২১ সালে মাতৃমৃত্যুর হার ৩.৮ থেকে কমে ১.৫ শতাংশ হবে। ২২) ২০২১ সালে প্রজনন নিয়ন্ত্রণ ব্যবহারের হার ৮০ শতাংশে উন্নীত করা। এই ২২টি লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন সম্ভব হলে সত্যিকার অর্থে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নে সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

এখন দেখার বিষয় সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কতটা পারে। সমবায় বাংলাদেশে কোনো নতুন ধারণা নয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে আইনানুগভাবে দেশে বিভিন্ন ধরনের সমবায় সমিতি কার্যক্রম চলছে। এসব সমিতির মাধ্যমে বিভিন্ন পেশাজীবীরা স্বপ্রণোদিত হয়ে সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় নিজেদের ভাগ্যপরিবর্তনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে। একই প্রক্রিয়ায় সারাদেশের গ্রামে-গঞ্জে-শহরে-বন্দরে পরিচালিত হচ্ছে সমবায়ের কার্যক্রম।

বাংলাদেশে ২০০৪ সালে সমবায় তার শতবর্ষ অতিক্রম করেছে। প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রীয় নীতিমালার মাধ্যমে সুসংগঠিত পদ্ধতিতে দেশের দেড় লক্ষাধিক সমবায় সমিতিকে কাজে লাগালে উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সুফল পাওয়া যাবে এমন কথা বলছেন সমবায় বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমবায় নিয়ে রয়েছে বিশাল তৎপরতা। শুধু সমবায় নয়, সরকারের আরেকটি অনন্য উদ্যোগ 'একটি বাড়ি একটি খামার' গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নের নতুন আশার সঞ্চার করেছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে এই প্রকল্প মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।

এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হলে জীবন ধারণের মৌলিক চাহিদা মেটাতে যা যা প্রয়োজন তা উৎপাদন হবে নিজের বাড়িতেই। গ্রামীণ পর্যায়ে সংগঠন সৃষ্টির মাধ্যমে পল্লীবাসীদের সংগঠিত করে স্থানীয় সম্পদ আহরণ ও ব্যবহার সর্বোপরি তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে এ প্রকল্পের কার্যক্রমসমূহ বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পের কার্যক্রমসমূহ পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অধীনস্থ বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি), সমবায় অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বার্ড) কুমিল্লা ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (আরডিএ) বগুড়া ৪টি সংস্থা কাজ করবে। প্রকল্পের অধীনে প্রত্যক উপজেলায় ৪টি ইউনিয়ন করে বাংলাদেশের ৪৮২টি উপজেলার প্রতি ইউনিয়নে ৫টি গ্রাম হিসেবে ১৯৮২টি ইউনিয়নের ৯৬৪০টি গ্রামে হতদরিদ্র, দরিদ্র ও পেশাজীবীর সমন্বয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে অনূর্ধ্ব ৬০টি থানার সদস্য নিয়ে গ্রাম সংগঠন গঠন করা হবে। সরকারের রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের আলোকে প্রকল্প এলাকায় ডাটা ও টেলি সেন্টার স্থাপন করা হবে।

এরফলে গ্রামীণ জনগণ কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও ব্যবসা সম্পর্কিত তথ্য সুবিধা পাবে। কৃষি ও অকৃষি খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি ও গ্রামীণ উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণ সুবিধা সৃষ্টি হবে। প্রকল্পের মাধ্যমে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ৪০০ দরিদ্র পরিবারকে সহায়তা হিসেবে বিভিন্ন ধরনের সম্পদ - গাভী, ছাগল, কৃষি উপকরণ, ইকো-স্যানিটেশন, টিন, সোলার প্যানেল, গাছের চারা ইত্যাদি প্রদান করা হবে। প্রকল্পের সুবিধাভোগী হিসেবে ৩০% থেকে ৪০% মহিলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এসব উদ্যোগ জোরেশোরে চলমান রেখে কার্যকর ফল আদায় করতে পারলেই প্রকৃত অর্থে দারিদ্র্য দূর হবে।

গড়ে উঠবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। দেশবাসী এখন সেই অপেক্ষায় আছে। Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।