আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাকে লেখা চিঠি

সৃজনশীল সাহিত্যের শৈল্পিক প্রয়াসে নিমগ্ন একজন প্রকাশক মা আমার এই চিঠি কি কোনদিন পৌছাবে তোমার কাছে! ভাঙ্গা বাংলায়, বানান কইরা কইরা এই চিঠি কি তুমি পড়তে পারবা মা! মাগো, আমি তোমার রতন। তোমার বংশের বাত্তি, একমাত্র পোলা। হাজার মানত দিয়া যারে পাইছিলা তোমার কোলে। তাই সারাটা জীবন মাথায় তুইলা রাখলা পরম আদরে। হেই আমি রতন, তোমার পোলা এখন থাকি ঢাকার শহর।

শিক্ষিত বেকার, কাজের ধান্দায় যায় জীবন। একটা ঘর ভাগ করই থাকি তিন বন্ধু। তাগো একজনের নাম আবার রতন। আমি হেরে মিতা কইয়া ডাকি। গতকাইল রাইত থিকা জানো মা, শরীরে আমার বেসুমার জ্বর! ক্ষণে ক্ষণে য্যান মনে হয় ঘোরের মইধ্যে আছি।

সেই ঘোরের মধ্যেই মনে লয় এই চিঠি তোমারে লেকতাছি। সন্ধ্যা রাইতে জ্বর য্যান মাথায় উইঠা গেল। কেমন ঘোর লাইগা গেছিল। সেই ঘোরের মধ্যেই টের পাইছি রতন আমার মাথায় পানি ঢালে, একটু পরপর কপালে হাত দিয়া জিগ্যায়- শরীর কি বেশি খারাপ লাগছে দোস্ত? ডাক্টারের কাছে নিয়া যামু? আমি জবাব দেই না। খালি দুইচোখ দিয়া পানি গড়াইছে।

সেকি রতনের স্নেহ দেইখা না তোমার স্নেহহীনতা লাইগা? বুঝিনাই ঠিক! তুমি যখন ছিলা, সেই আমার রাজা-বাদশাহী জীবনে, এমনু জ্বর হইলে তুমি কেমুন অস্থির হই যাইতা। আর আমি সারাটা দিন নেতানো গাছের মতো বিছনার পইরা থাকতাম। রান্না ঘর থিকা ক্ষণে ক্ষণে আইসা আমার মাথায় হাত দিতা আর জিগাইতা-আব্বা শরীলডা এখন কেমুন লাগে? একটু সাগু বার্লি জ্বাল দিয়া দেই. উইঠা খাও। ভালো ঠেকব। 'আমি হাইসা তোমার সেই কথা উড়াইয়া দিতাম।

কইতাম- কি যে কও না প্রাগৈতিহাসিক কথা, এই যুগে জ্বর হইলে কেউ সাগু বার্লি খায়না, স্যূপ খায়। তুমি বানাইতে পারতান, তাই জোর কইরা সাগুই দিতা। অহন যদি রতনরে কই স্যূপ খামু,রাস্তার মোড়ের থিকা এক দৌড়ে আইনা দিব জানি। কিন্তু মা, আমার যে অহন খুব সাগু-বার্লি খাইতে ইচ্ছা করে। একবার আইসা আমরা একবাটি সাগু জ্বাল দিয়া দিয়া যাওনা মা।

মাথাটা যখন টনটন করে ব্যাথায়, নিজের কপালে নিজেই হাত দেই, তোমার হাতটা অনুভব করতে চেষ্টা করি, কিন্তু তোমার হাতটা পাইনা। আমার হাত বা রতনের হাত, কারো হাত তোমার হাতার লাহান না ক্যান গো মা! তোমার মতো তো আমিও একদিন মইরা যামু না? মরণের পর কি তোমার লগে দেহা হইবো? হেই যে হাশরের ময়দান,হেইখানে গিয়া দাড়াইলে তুমি কি আগায় আসবা আমারে নিতে। য্যামুন নিতা বাড়ির উঠান থিকা, আমার বাবায় আইছে, বাবায় আইছে কইয়া। একবার কি তোমার মুখটা দেখতে পামু মা। খালি একবার! আর একবার তোমারে দ্যাখতে চাই মা,খালি একবার তোমারে কইতে চাই হেই কতাডা, যেই কতাডা এই জন্মে তোমারে কইতে পারিনাই।

তোমারে অনেক ভালোবাসি গো মা. অনেক ভালোবাসি তোমারে মাগো! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।