আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

[ফটোগ্রাফির খুঁটিনাটি] 'বোকেহ'নামা - শিখে নিন ফটোগ্রাফির একটি বহুল প্রচলিত টেকনিক

একজন সাধারন বাংলাদেশীর ব্লগ বোকেহ আবার কি জিনিশ? খায় না মাথায় দেয়? আসলে এটা একটি ফটোগ্রাফিক টার্ম। এটা কি তা বুঝতে হলে আসলে সবচে ভালো হয় একটি উদাহরন ব্যাবহার করলে। উপরের ছবিতে আমি টিনটিন ও কুট্টুস এর ওপর ফোকাস করেছি এবং তাই আমরা ওদের পিছনের ব্যাকগ্রাউন্ড এ সবকিছু অস্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। পিছনের ব্যাকগ্রাউন্ড আউট অফ ফোকাস। এই আউট অফ ফোকাস এবং blurred অংশটিই হল বোকেহ।

উপরের ছবিটি তে মেয়েটির মাথার জবা ফুলটির ওপর ফোকাস করা হয়েছে এবং পিছনের ব্যাকগ্রাউন্ড আবারও আউট অফ ফোকাস। ওটাই বোকেহ। বোকেহ (bokeh) একটি জাপানিজ শব্দ। বোকেহ দ্বারা ছবির blurred পার্টটি বোঝানো হয়। অনেকে একে “বোকাহ” ও উচ্চারণ করে থাকে।

তবে বোকাহ অথবা বোকেহ যাই বলেন না কেন, ফটোগ্রাফারদের জন্য এর সঠিক ব্যাবহার জানা খুবই জরুরি। কারন চিন্তা করে দেখুন, আপনি অবশ্যই আগে অনেক অ্যাডভারটাইস অথবা মডেল ফটোগ্রাফি দেখে মুগ্ধ হয়েছেন যেগুলো কিন্তু এই বোকেহ ই ইউস করেছে। কিন্তু এতদিন জানতাম শার্প ছবি ভালো, অস্পষ্ট না! তা ঠিক, কেউই অস্পষ্ট ছবি চায় না। তবে লক্ষ্য করুন, বোকেহ কিন্তু পুরো ছবি অস্পষ্ট করছে না, শুধু আপনি যতটুকু চান ততটুকুই করছে। এর কারনে আপনার তোলা ছবি গুলোর উপর আপনি পাবেন আরও বেশী সৃজনশীল নিয়ন্ত্রণ! আগে যেখানে একটা ছবি তোলার আগে আপনি শুধু ফ্রেমিং, কমপজিশন অথবা লাইট এর কথা চিন্তা করতেন, এখন আপনি বোকেহ এর সঠিক প্রয়োগ করে আপনার ছবি কে দিতে পারেন এক নান্দনিক ছোঁয়া।

কিন্তু বোকেহ হয়না কেন আমার ক্যামেরায়? :’( আসলে বোকেহ ডিপেন্ড করে লেন্স এর উপর। সাধারণত DSLR ছাড়া ভালো বোকেহ অ্যাচিভ করা কঠিন। আবার শুধু কিট লেন্স দিয়েও বোকেহ হবে না। দরকার একটি এমন লেন্স যেটার মিনিমাম অ্যাপারচার ১.৮ (f/1.8)অথবা এর কাছাকাছি। কারন অ্যাপারচার ভ্যালু যত ছোট নাম্বার এর হবে আপনার লেন্স এর depth of field ও তত ছোট হবে।

অ্যাপারচার ভ্যালু আবার কি? অ্যাপারচার ভ্যালু হল ক্যামেরার অ্যাপারচার কত বড় অথবা ছোট হবে তার মাপ। এটাকে fstop ও বলা হয়। এখানে লক্ষ রাখতে হবে, অ্যাপারচার ভ্যালু যত ছোট, অ্যাপারচার আসলে ততই প্রশস্ত এবং ভাইস ভারসা। অর্থাৎ fstop যত কম হবে ততই বড় থাকবে অ্যাপারচার। নিচের ছবি টি দেখুন।

আবার লেন্স এর ফোকাল লেংথ এর ওপরও নির্ভর করে depth of field কত প্রশস্ত/সংকীর্ণ হবে। নিচের ছবি তে দেখতে পাবেন কিভাবে একই fstop ভ্যালু তে depth of field আলাদা হচ্ছে। অতএব, ফোকাল লেংথ যত বেশী, অত বেশী বোকেহ পাবেন। মানে একটা 55mm লেন্স থেকে একটা 200mm লেন্স অবশ্যই বেটার বোকেহ দেবে। আরও একটি উদাহরন উপরের ছবি থেকে হয়ত আরও ভালো একটি ধারনা পাবেন।

ওখানে বলা আছে wide aperture, অর্থাৎ কামেরার অ্যাপারচার যদি আপনি বেশী খোলা রাখেন (যেমন f/1.8 অথবা f/2.4) তাহলে depth of field হবে সঙ্কীর্ণ (narrow)। আবার যদি কামেরার অ্যাপারচার আপনি ছোট রাখেন (যেমন f/5.6 অথবা f/10) তাহলে depth of field হবে প্রশস্ত(wide)। উপরের ছবিটি খেয়াল করুন, আপনি যদি আপনার ক্যামেরার অ্যাপারচার f/1.8 রাখেন এবং দ্বিতীয় ফুলটির ওপর ফোকাস করেন তাহলে শুধু সেটিই ফোকাস এ থাকবে এবং প্রথম ও তৃতীয় ফুলটি হয়ে যাবে blurred। এবার ধরুন আপনি অ্যাপারচার f/10 রাখলেন এবং দ্বিতীয় ফুলটির ওপরই আবার ফোকাস করলেন, এবারে কিন্তু প্রথম ও তৃতীয় ফুলটি আর blurred হবে না; তিনটি ফুল ই depth of field এর রেঞ্জ এ পরবে এবং সব কিছুই স্পষ্ট উঠবে। কোন লেন্স ইউস করলে ভালো বোকেহ পাবেন? যেকন লেন্স যেটার মিনিমাম fstop ভ্যালু কম।

আমার নিজের একটা প্রাইম লেন্স আছে যেটার মিনিমাম fstop হল f/1.8 । এটা দিয়ে খুব ভালই বোকেহ পাওয়া যায়। লেন্স টার নাম হলঃ Nikon AF-S Nikkor 35mm 1:1.8G DX। লেন্স টার নাম এর সারমর্ম নিচে দেয়া হল। এতে আপনি এখন যেকোনো লেন্স এর নাম দেখেই বুঝে নিতে পারবেন এর বিভিন্ন স্পেসিফিক্স।

AF-S : অর্থাৎ এতে বিল্ট ইন মোটর আছে, তার মানে কম দামি DSLR এও অটোফোকাস হবে। Nikkor : এটা লেন্স এর ব্র্যান্ড নেইম 35mm : লেন্স এর ফোকাল লেংথ। এটা ৩৫মিমি এই ফিক্সড, অর্থাৎ জুম হবে না। তাই এই জাতীয় লেন্স কে প্রাইম লেন্স বলে। 1:1.8G DX : এটা হল fstop ভ্যালু।

1:1.8 আর f/1.8 আসলে একই জিনিস এর দুই ফরম্যাট। যেকন ভাবেই লেখা যায় কিন্তু একই কথা। আরও কিছু লেন্স যা ভালো বোকেহ দিবেঃ Nikkor 50mm f/1.4 Nikkor 50mm f/1.8 Nikon 85mm f/1.8 Canon 100mm f/2.8 Macro USM Canon 35mm f/1.4 পোস্ট টা একটু লম্বা হয়ে গেল। কিন্তু, নতুনরা যাতে জিনিসগুলো বুঝতে পারে তাই একটু বিশদ বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি এবং পোস্ট টি মুলত যারা নতুন DSLR কিনেছেন অথবা কিনবেন ভাবছেন তাদের জন্যই। আর এতেই মনে হয় একটু থিওরিটিকাল হয়ে গেল পোস্ট টা।

যাইহোক, সবাইকে অনেক ধন্যবাদ ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য! আমার অন্যান্য ফটোগ্রাফি রিলেটেড পোস্টঃ ডিএসএলআর কেনার কথা ভাবছেন? একটি পরিপূর্ণ ক্যামেরা বাইং গাইড (বাংলাদেশী দাম সহ!) কোন লেন্স কিনবেন ডিএসএলআর এর জন্য? ডার্করুম থেকে চলে আসুন লাইটরুম এ লাইট পেইন্টিং : ছবির ফ্রেম যখন আপনার ক্যানভাস! ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.