আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

The creativity of কাজের বুয়া of Dhaka city : তৃতীয় পর্ব

আমাদের কাজের বুয়ার ক্রিয়েটিভিটির শেষ কাহিনী আপনাদের শুনিয়েছিলাম জানুয়ারি মাসে। তার পর থেকে তিস্তা, ধলেশ্বরী, যমুনা দিয়ে অনেক পানিই প্রবাহিত হয়েছে। আর আমাদের বুয়াও তার নিত্য নতুন ক্রিয়েটিভিটির ঝাঁপি খুলে আমাদেরকে শোকের সাগরে ভাসিয়েছে। বিজ্ঞানের ছাত্র থাকার সুবাদে ব্যাঙ, তেলাপোকা, কেঁচো এবং ইঁদুর নিয়ে অনেক কাজই করেছি। এখন নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারছি আমরা যখন প্র্যাক্টিক্যাল করতাম তখন বেচারাদের মনের অবস্থা কেমন হত।

বাবারা আমাকে ক্ষমা করে দিস। আজ তোদের অভিশাপের কারনেই সম্ভবত আমার এই অবস্থা। ফার্মেসিতে পড়ার সুবাদে এনেসথেটিক এর ব্যবহার ব্যাঙ এর উপরই বেশি চালাতে হয়েছে। সেকেন্ড ইয়ার এ যখন পড়ি তখন ফাইনাল পরীক্ষায় আমার কাজ ছিল কোন ওষুধ দিলে কতক্ষন পর ব্যাঙ বাবাজি অজ্ঞান হয় সেটা বের করা। কপাল খারাপ সেদিন এক্সপায়ার হয়ে যাওয়া ওষুধ দিয়ে পরীক্ষা করছিলাম।

ব্যাঙ কিছুতেই অজ্ঞান হচ্ছে না দেখে শেষে আছাড় দিয়ে অজ্ঞান করে স্যার কে দেখিয়েছিলাম। আমি নিশ্চিত সেই ব্যাঙ এর অভিশাপেই আজ আমার এই দুরবস্থা। আমাদের বুয়া ইদানিং ব্যাপক ভাবে আছে। কারণও আছে। তাঁর রান্নার ব্যাপারে আমাদের ক্রমাগত অভিযোগ সহ্য করতে না পেরে সে অশ্রুসিক্ত নয়নে এবং কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাঁর সিদ্ধান্ত জানালো যে সে আমাদের মেসে আর রান্না করবে না।

শুনে কেয়ামতের আগেই আমাদের মাথায় সপ্ত আসমান ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হল। কারন এই বাজারে টাকা থাকলে সব কিছু পাওয়া গেলেও কাজের বুয়া পাওয়া যাবে না। অবশেষে ১০০০ টাকা বেতন বাড়িয়ে তাঁকে আরো কিছুদিন রান্না চালিয়ে যাবার ব্যাপারে রাজী করানো গেল। কানে ধরেছি, এখন থেকে আলকাতরা রান্না করলেও সেটাকে বেহেশতি সেমাই মনে করে খেয়ে নিব। অভিযোগ জানাবো না।

এই মুহূর্তে আবারো তাঁর বেতন বাড়াবার কোন ইচ্ছা আমাদের নেই। এই সুযোগ কি বুয়া ছাড়ে? নতুন উদ্যমে তিনি তাঁর ক্রিয়েটিভিটি দেখানো শুরু করে দিয়েছেন। কিছু নমুনা উপস্থাপন করলাম। রন্ধনপ্রেমী যারা আছেন তাঁরা চেষ্টা করে দেখতে পারেন। ১১. করলা কারি উইথ চিকেন বেগুনের প্রতি আমাদের বুয়ার তীব্র ভালোবাসা ছিল।

সেই ভালোবাসা এখন করলাতে ট্রান্সফার হয়েছে। খুব আগ্রহ নিয়ে দেশি মুরগী কিনে আনলাম। করলা আনলাম ভাজি করে খাবার জন্য। খেতে বসে তো পুরাই ভিরমি খাবার অবস্থা। কারন মুরগীর মাংসের সাথে করলা।

ঘটনা কি? ব্যাপার খুবই সিম্পল। করলাকে আড়াআড়ি এবং লম্বালম্বি কুচি কুচি করে কেটে সেটাকে প্রথমে মাংসের মসলার সাথে মিশানো হয়েছে। তারপর সিদ্ধ মাংসকে জ্বাল দিয়ে ভুনা করে তার উপর এই কুচি কুচি করলা ছিটিয়েছে। সবশেষে পানি দিয়ে ঝোলের পরিমান কিছুটা বাড়ানো হয়েছে যেন করলার তিতা স্বাদটুকু ঢেকে যায়। খোদা, রক্ষা কর।

১২. করলা কারি উইথ চিংড়ি মাছ তীব্র ভাষায় আমরা বুয়ার এই অগণতান্ত্রিক আচরণের নিন্দা জানাবার পর তিনি কমিটমেন্ট করলেন যে ভবিষ্যতে করলা এবং মাংস আর কখনো একসাথে রান্না করবেন না। যদিও আমরা তাতে খুব একটা ভরসা পাই নি। কারন রাজনৈতিক দলসমূহের হরতাল না দেওয়ার কমিটমেন্ট আর বুয়ার কমিটমেন্ট এর মাঝে কোন পার্থক্য আমাদের কাছে নেই। সেটার প্রমাণ ঠিক তার পরদিনই পেলাম। পরদিন বাজার করা হল চিংড়ি মাছ।

আমার খুব পছন্দের মাছ যদিও অনেকেই খেতে পারেন না। সেদিন করলা কেনা হয় নি। কিন্তু আমাদের ভোজনের আকাশে যদি দুর্যোগের ঘনঘটা বিরাজ করে তবে কে সেটা ঠেকাতে পারবে? আগের দিন সব করলা রান্না করা হয় নি। বুয়া সেই করলাকে প্রথমে সিদ্ধ করল। তারপর চিংড়ি মাছগুলোকে সিদ্ধ করল।

সবশেষে করলা এবং চিংড়ি একসাথে মশলা দিয়ে মাখিয়ে তেলে ভেজে আমাদেরকে পরিবেশন করল। সাধের চিংড়ি মাছের এই করুণ পরিনতি দেখে হাসব নাকি কাঁদব বুঝতে পারছিলাম না। কটমট করে বুয়ার দিকে তাকানো মাত্রই তাঁর নিরীহ মুখের সাবলীল উত্তর “আমি কিন্তু মাংসের সাথে করলা রান্ধি নাই, মাছের সাথে রান্ধছি। কেন মামা, মজা হয় নাই?” হ্যাঁ, এমন মজাই হইসে যে জীবনেও ভুল্ব না। ১৩. করলার জুস যেদিন বুয়া খুব বেশি ব্যাস্ত থাকে সেদিন বুঝি আজকের রান্না পেটে যাবার পর বেশ অনেকক্ষণ অবস্থান করতে পারবে।

পেট থেকে নিষ্ক্রান্ত হবার জন্য কান্নাকাটি শুরু করবে না। যেদিন বুয়া মোটামোটি ব্যস্ত থাকে সেদিন বুঝি আজকের রান্নাটা ভাল হবার সম্ভাবনা ৯০%। আর যেদিন বুয়া একদম ফ্রি থাকে সেদিন বুঝি আজ কপালে খারাপি আছে। কারন বুয়াদের অলস মস্তিষ্ক হচ্ছে ক্রিয়েটিভিটির কারখানা। আর আমাদের বুয়ার কারখানার কলকব্জা সবসময় চকচক করতে থাকে।

গ্যাসের অভাবে বাংলাদেশের বিদ্যুতকেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকলেও আমাদের বুয়ার মাথার ভেতরকার ক্রিয়েটিভিটির কারখানা বন্ধ হবার কোন সম্ভাবনা আমরা দেখি না। এই রকম এক ফ্রি দিনের আবিষ্কার হচ্ছে করলার জুস। যদি ভেবে থাকেন এই জুস ব্লেন্ডার মেশিনে তৈরি করা তবে আপনি ভুল ভাবছেন জনাব। কারন আমদের বুয়া সবসময় সাথে হামানদিস্তা রাখেন। কোন ব্লেন্ডার মেশিনের বাপেরও সাধ্য নেই এত মিহি করে করলা গুড়া করার।

আমার পাশের রুমমেট এর ১০১ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে শুয়ে ছিল। এই অবস্থা দেখে বুয়ার ভেতর প্রবল মাতৃত্ববোধ জেগে উঠলো। আহারে বেচারা বাবা-মা ছেড়ে এত দূরে থাকে। তিনি তখনই করলার জুস তৈরি করে আমার পাশের রুমমেটকে জোড় করে খাওয়ালেন। তাঁর পীরবাবা নাকি তাঁকে এই চিকিৎসা বাৎলেছেন।

ফলাফল ভয়াবহ। ৩০ মিনিটের মাঝেই বেচারার জর আরও ৩ ডিগ্রি বেড়ে ১০৪ ডিগ্রি তে পৌছালো। শেষ পর্যন্ত suppository দিয়ে রক্ষা। মেস লাইফে সেদিনই বুয়াকে সব থেকে বেশি ঝাড়ি দিয়েছিলাম বলে মনে হয়। ১৪. টমেটো ভাজি বিশ্বাস করা না করা সম্পূর্ণ আপনার ব্যাপার তবে আমি সম্ভবত সেই সব দুর্লভ মানব প্রজাতির অন্যতম সদস্য যে কি না বেগুন ভাজির আদলে টমেটো ভাজি খেয়েছে।

আমার মনে হয় না আমাদের মেসের ৭ জন সদস্য ছাড়া আর কারোরই এই সৌভাগ্য হয়েছে। তবে এই আইটেম টা আসলেও জোস, তাই সমালোচনায় যাচ্ছি না। রান্না করার সময় খেয়াল রাখবেন যেন লবনের পরিমান বেশি না হয়ে যায়। টমেটো ভাজার আগে স্লাইস করে টুকরোগুলোকে যদি কড়া রোদে ২০ মিনিট শুকিয়ে নিতে পারেন তবে ভালো হয়। আর অবশ্যই লেবু দিয়ে খাবেন।

পরিপূর্ণ তৃপ্তি কাকে বলে সেটা তখনই বুঝতে পারবেন। ১৫. বরবটি ফ্রাই এই আইটেমটাও কিন্তু খারাপ না। বাজার থেকে বরবটি কিনে এনে আগে ভালো করে ধুয়ে নিবেন। খুব হাল্কা সিদ্ধ করবেন (তিতাস গ্যাসের চুলায় ৫ মিনিটের বেশি না। এল পি গ্যাস হলে ৮ মিনিট)।

তারপর মধ্যমা আঙ্গুলের সমান করে কাটবেন। এরপর টুকরোগুলোকে মসলা দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে সরিষার তেলে ভেজে নিবেন। ব্যাস, হয়ে গেল আপনার বরবটি ফ্রাই। খেতে খুব একটা খারাপ লাগবে না। তবে সস দিয়ে মিশিয়ে খেয়ে নিলে যে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এর থেকে বেশি টেস্ট পাবেন সে ব্যাপারে আমি গ্যারান্টি দিতেই পারি।

ক্রিয়েটিভিটি চলছে, ভবিষ্যতেও চলবে। কারন খুব দ্রুত এই বাসা ছাড়বার ইচ্ছে নেই। তাই সামনে ক্রিয়েটিভিটির আরো নমুনা আপনাদের জানাতে পারব বলে আশা করছি। আজ মহান মে দিবস। আজ আমাদের মিল অফ।

কারন বুয়া আজ মে দিবসের জন্য ছুটি নিয়েছে। ছুটি না দিয়ে উপায় নেই। সরকার যদি শোনে যে আমরা বুয়াকে মে দিবসের ছুটি দিচ্ছি না তবে হাজতেও ভরতে পারে। কি দরকার বাবা ঝুঁকি নেওয়ার? জীবনতো একটাই তাই ফ্রেশ থাকতে চাই সবসময়। আনন্দের কথা এই আজ রাতে অফিশিয়াল ট্যুরে খুলনা যাচ্ছি।

এক সপ্তাহ পরে ফিরব। এই এক সপ্তাহ তো বুয়ার ক্রিয়েটিভিটির হাত থেকে বেঁচে থাকতে পারব। আনন্দে নাচতে ইচ্ছে করছে। ১ম পোরবো: Click This Link ২য় পোরবো: Click This Link ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।