আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লং মার্চ আর হিজরত নিয়ে যত ধরণের ভ্রান্তির জবাব !!!

ইদানিং ব্লগে আসলেই দেখি... সবার মুখে এক কথা। হেফাজত রাসুল (সাঃ) এর হিজরতকে লং মার্চ বলে অবমাননা করছে। এর জন্য এরা কাফের এই সেই আরও কত কি। খুজে দেখলাম এটির জবাব কেউ দেয়নাই। (যদিও এই সব আউল ফাউল কথার উত্তর দেওয়ার দরকার আমি মনে করিনা)।

তবে হঠাৎ ভাবলাম... এটিকে ব্যাবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। তাই লিখে ফেললাম কিছু কথা... হিজরতঃ আরবি هِجْرَة শব্দের অর্থ হলো— পরিত্যাগ কিংবা পরিবর্জন । কিন্তু ইসলামী পরিভাষায় 'হিজরত'বলতে বুঝায় : দ্বীন ইসলামের খাতিরে নিজের দেশ ছেড়ে এমন স্থানে গমন করা যেখানে ইসলামী প্রয়োজন সমূহ পূর্ণ হতে পারে. মুহাজিরঃ মুহাজির শব্দের অর্থ হচ্ছে হিজরতকারী অথবা হিজরতকারিনী । কিন্তু ইসলামী পরিভাষায় 'মুহাজির' বলতে বুঝায় : দ্বীন ইসলামের খাতিরে নিজের দেশ ছেড়ে এমন স্থানে গমনকারী যেখানে ইসলামী প্রয়োজন সমূহ পূর্ণ হতে পারে. সালাতুল কসরঃ কুরআনুল কারীমের সূরা নিসার ১০১নং আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা কসর নামায আদায়ের নির্দেশ দেন। এ নির্দেশ মানা ফরয।

কসরের নামায বলা হয় মুহাজিরের সালাত কে। আল্লাহ তাআলা বলেন:  يُرِيدُ اللّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ  অর্থ: “আল্লাহ তোমাদের সহজ চান, কঠিন চান না। ” (সূরা আল বাকারাহ, আয়াত: ১৮৫) ইসলাম একটি সহজ ধর্ম। আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে কোন দায়িত্ব অর্পন করেন না এবং এমন কোন আদেশ তার উপর চাপিয়ে দেন না, যা পালনে সে অক্ষম। তাই সফরে কষ্টের আশংকা থাকায় আল্লাহ সফর অবস্থায় দুটো কাজ সহজ করে দিয়েছেন।

এক: নামাজ কসর করে পড়া। দুই: দুই নামায একত্র করে আদায় করা। উপরে গেলো মুহাজির, হিজরত আর সালাতে কসর সম্পর্কে। এবার আসা যাক হিজরত কি রাসুল (সাঃ) এর পর রহিত হয়ে গেছে? এই সম্পর্কে হাদিস, --রাসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ‘‘আর আমি তোমাদের পাঁচটি জিনিসের আদেশ দিচ্ছি, যা আল্লাহ্ আমাকে আদেশ করেছেনঃ আল-জামা’আ (ঐক্য), শোনা, মানা, হিজরত এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। ’’ [আহমদ, হারিছ আল আশআরী (রদিয়াল্লাহু আনহু)] এবং তিনি আরো বলেন, ‘‘হিজরত বন্ধ হবে না যতদিন না তওবা বন্ধ হয়।

আর তওবা বন্ধ হবে না যতদিন না সূর্য তাঁর অস্ত যাওয়ার দিক দিয়ে উদিত হয়। ’’ [আবু দাউদ (রদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত] --আল্লাহ্ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘যারা নির্যাতিত হবার পর হিজরত করে, পরে জিহাদ করে এবং ধৈর্য্যধারণ করে; তোমার রব এই সবের পরে, তাদের প্রতি অবশ্যই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। ’’ (সূরা নাহল ১৬:১১০) তার মানে হিজরত কিয়ামত পর্যন্ত চলবে, আজও হিজরত বিদ্যমান। তাই হিজরত নিয়ে ইসলামিক বিধান এসেছে... যেমন- সালাতুল কসর। এবার আসি হেফাজতে ইসলামের সফরকে উপরোক্ত হাদিছ আর কোরানের আলোকে বিবেচেনা করি।

হেফাজতের সকল কর্মী নিজ খরছে স্বার্থহীন ভাবে শুধুমাত্র ইসলামের জন্য সরকারের শত বাঁধার মুখে প্রানবাজি রেখে সহস্র কষ্ট স্বীকার করে, মাইলের পর মাইল হেঁটে ঢাকা গিয়েছেন। রাসুলের হিজরত ছিল দ্বীনে ইসলামের জন্য, হেফাজতে ইসলামের হিজরতও ছিল দ্বীনে ইসলামের জন্য। এই প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি এটিও একটি হিজরত ছিল (রাসুলের হিজরতকে এই হিজরতের সাথে কখনো তুলনা চলেনা, তবে শাব্দিক ও পারিভাষিক ভাবে এটি হিজরতের মধ্যে পরে) লং মার্চ- লং মার্চ মানে দীর্ঘ পথ অতিক্রান্ত করা। তার মানে কি? কোন একটি দাবীকে সামনে রেখে দীর্ঘপথ অতিক্রান্ত করা। এবার বলুন রাসুল (সাঃ) কি মক্কা থেকে মদিনা পর্যন্ত দীর্ঘ পথ অতিক্রান্ত করেননি? মদিনা থেকে তাবুক দীর্ঘপথ অতিক্রান্ত করেননি? মদিনা থেকে খাইবার দীর্ঘপথ অতিক্রান্ত করেননি? যদি বলা হয়, রাসুল হিজরত কিভাবে করছেন? উত্তর হবে... রাসুল লং মার্চের মাধ্যমে মক্কা থেকে মদিনা হিজরত করছেন।

সুতরাং বলা যায়... পৃথিবীর প্রথম লংমার্চ পরিচালিত হয় মহানবী (স.)-এর নেতৃত্বে। অত্যাচারী রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াসের আক্রমণ থেকে মুসলিম জাহানকে বাঁচানোর জন্য নবম হিজরিতে মদিনা থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে তাবুকের উদ্দেশে পরিচালিত হয় লংমার্চ। ইতিহাসে এই লংমার্চ তাবুক অভিযান হিসেবে খ্যাত হয়ে আছে। এই দীর্ঘ লংমার্চে রসুলের (স.) সঙ্গী ছিলেন ৩০ হাজার সাহাবি সৈন্য। আর ছিল ৯০০ উট ও ১০০ ঘোড়া।

বাকি সবাই ছিলেন পদাতিক। বর্ণনা থেকে দেখা যায়, প্রতি ১৮ জন সৈন্যের জন্য ছিল মাত্র একটি উট। সেই ১৮ জন পর্যায়ক্রমে উটে সওয়ার হতেন। খাদ্য সামগ্রীর অপ্রতুলতার কারণে অনেক সময় গাছের পাতা খেতে হচ্ছিল। উটের সংখ্যা কম হওয়া সত্ত্বেও ক্ষুধার জন্য উটও খেতে হচ্ছিল।

এজন্য ইতিহাসে এই বাহিনীর নাম হয়েছে ‘জায়সে উছরত’ বা অভাব-অনটনের বাহিনী। অপরিসীম দুঃখ-কষ্ট সয়ে রসুলের (স.) নেতৃত্বে সত্যের সৈনিকরা ১৫ দিন ধরে একটানা হেঁটে পৌঁছে যান তাবুকে। সেখানে ২০ দিন অবস্থান করে বিজয়ী বাহিনী ফিরে আসে মদিনায়। হেফাজতের লং মার্চ আর রাসুলের লং মার্চ। আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরি বলছেন, রাসুল (সা) লং মার্চ করছেন।

''আমরাও লং মার্চ করছি রাসুল (সাঃ) এর অনুকরণে অনুসরনে। মার্কসবাদী চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্টাতা মাও সেতুংকে অনুসরণ বা অনুকরন করে নয়''। আমার উপরের লেখাটা ভালো ভাবে পড়লে মনে হয়না এই কথায় কোন ক্রুটি খুজে পাবেন। রাসুলকে অনুসরণ করে রাসুলের হিজরত করার উপায়ে তারা লং মার্চ করছে... এখানে ভুল কোথায়? যদিও এর পর ভুল পেয়ে থাকেন... বলতে হবে আপনার চুলকানি আছে, আর চুলকানি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর একটি রোগ। চিকিৎসা করান... ধন্যবাদ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।