আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‌‌ মুক্তি সংগ্রামী মা এর ইজ্জত

সাদামাটা বাঙ্গাল “ দুই লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে ’’ শব্দ কনিকা ঃ সন্দেশ একটি শব্দ যা রাজা বাদশাহ দের আমলে আজকের সংবাদ শব্দের সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হত। রাজা রা খুব উৎকন্ঠিত কন্ঠে আজ্ঞাবহ প্রহরীকে আদেশ করতেন - বল প্রহরী কি সন্দেশ নিয়ে এসেছ ? সেই সন্দেশ এখন মিষ্টির দোকানের একটি আইটেমে পরিণত হয়েছে । সংবাদ পত্রওয়ালারা ও আর এখন সন্দেশের খোঁজ মিষ্টির দোকান ছারা অন্য কোথাও করেন না। বঙ্কিম ভাবনা ঃ মোগল রাজ প্রাসাদে মোগল নারীদের মোগল বংশের বাইরে বিবাহের অনুমতি ছিলনা। বলা বাহুল্য যে এ নিয়ম পুরুষদের বেলায় প্রযোজ্য নয়।

লালসা আক্রান্ত হয়ে কোন অ মোগল পুরুষ যদি মোগল নারীর প্রতি আসক্ত হতো তখন তাদের বেলায় যে নিয়ম হতো তাকে বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রুপকার্থে যা সাধু ভাষায় বলেছেন, তা ছিল বঙ্কিমী রীতি। আমি বহু আগে পড়েছি তা এখন হুবহু লিখতে পারব না, তবে চলিত ভাষায় মোটামোটি ধারনা দিতে পারব। রুপকার্থে ঃ হিন্দুদের রান্না ঘরে প্রায়ই কুকুর ুঢুকে ভাতের হাঁড়িতে মুখ ুঢুকিয়ে দেয়, তাতে কুকুরের মুখ লাগা ভাত নষ্ট হয়। হিন্দুরা ভাত শুদ্ধ সে হাঁড়ি ফেলে দেয় কিন্তু মোগলরা হাঁড়ি ফেলেনা বরং কুকুরটির এমন ব্যবস্থা করে যাতে করে আর তার ভাতের প্রয়োজন হয়না। এখন কথা হচ্ছে, আমি যে কথাটি বলতে চাই সে কথাটি বলার জন্য রাজা বাদশাহদের সন্দেশ এবং মোগল বাদশাহ দের কুকুর শব্দ দুটির প্রয়োজন পড়বে।

তাই ধান ভানতে শিবের গীত গেয়ে পাঠক মহোদয়ের সময় অপচয় করার জন্য দুঃখিত, যদি পাঠক অনুগ্রহ করে পড়েন। আমার বয়স এখনও চল্লিশ হয়নি পার হতে দুই বছর বাকী। আমাদের স্বাধিনতার চল্লিশ বছর পার হয়েছে । এই চল্লিশ বছর ধরেই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক অনুষ্ঠানে দুটি লাইন ধর্মীয় শ্লোকের মত অত্যন্ত ভাবগাম্ভীর্যের সহিত উচ্চারণ করে আমাদের দেশের দেশ প্রেমিক বক্তারা বক্তব্য শুরু করেন - “ ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের দামে দুই লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে” এই দেশ স্বাধিন হয়েছে। স্বাধীনতার জন্য তাদের এই ত্যাগ জাতি হিসেবে আমরা কখনও ভুলব না।

আমার বুঝে উঠার পর থেকে দ্বিতীয় লাইনটিতে ইজ্জতের বিনিময়ে কেন, তা মেনে নিতে পারছিনা স্বাভাবিকভাবে। এবার আসা যাক ইজ্জত শব্দটি নিয়ে, তাত্বিক বিশ্লেষণে না গিয়ে, মান-ইজ্জত-সম্ভ্রম এইগুলোকে আমরা সমার্থক হিসেবে জানি। এখন আসা যাক মায়ের ইজ্জত হারানোর প্রসঙ্গে: ইজ্জত হারায় সেই মানুষ যার নৈতিক চারিত্রিক স্খলন ঘটে। যেমন এক লোক চুরি করলো, ধরা পড়লো সে চোর সাব্যস্থ হলো, সামাজিক ভাবে সে ইজ্জত হারালো । অথবা এক লোক একটি মেয়েকে ধর্ষন করলো ।

সে সামাজিক ভাকে লম্পট-চরিত্রহীন-বেইজ্জত হিসেবে আখ্যায়িত হবে। নাকি অসহায় ধর্ষিত মেয়েটি একটি পশুর পাশবিক আক্রমনের কাছে শারীরিক প্রতিরোধে অসমর্থ হওয়াতে সে চরিত্রহীন হয়ে যাবে ! একটি শিশু যদি ধর্ষিত হয় তবে কি আমরা তাকে গর্ব করে তার ইজ্জত হারানোর গল্প শুনিয়ে বড় করব আমৃত্যু ? অন্যায়ভাবে যে আক্রমনকারী তার ইজ্জত হারায় না আক্রান্ত ব্যক্তি ই্জ্জত হারায়। ইজ্জত হারায় চোর না গৃহস্ত ? ইজ্জত হারায় ধর্ষক না ধর্ষিত ? যে পাকিস্তানী সেনা ইসলাম রক্ষার দামামা বাঁজিয়ে এদেশে এসে মুসলিম অমুসলিম সকল নিরস্র মাকে অস্রোর জোরে পাশবিক নির্যাতন করেছে তার ইজ্জত হারায় নি ? তার মানবিকতা, তার ধর্ম, তার দেশকে বেইজ্জত করেনি ? সেই লম্পট তার দেশ পরিবারের কাছে ফিরে গিয়ে কোন বর্বরগাঁথা শুনিয়ে ইজ্জত বাড়িয়োছে ? আমার জানা নেই অথচ দেশের জন্য স্বশস্র দানবের সাথে লরে ইজ্জত হারালো আমার নির্যাতিত নিপিড়িত স্বামী সন্তান হারানো মা ! বঙ্কিম চন্দ্রের দৃষ্টিতে হিন্দু নারীরা ভাতের হাঁড়ি। কুকুর স্পর্শ করলে ফেলে দিতে হয় । আমরা ত বঙ্কিমী কাল থেকে অনেক এগিয়েছি ।

মুক্তি সংগ্রামে নিপিড়িত একজন নারীকে আমরা মুক্তিযোদ্ধার ন্যায় সম্মানীত করেছি, তাদেরকে আমরা বীরাঙ্গনা বলে সম্ভোধন করি। যাকে বীরাঙ্গনা বলে সম্মানীত করেছি তাকেই আবার ইজ্জত হারানোর শিরোনাম দিয়ে বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে বেড়াচ্ছি এ কেমনতর দ্বিচারিতা ? জ্ঞানীরা ভুল করলে তাকে নাকি বলে আর্ষ প্রয়োগ, ভুল বলা যায় না। জ্ঞানীদের ভুল খোঁজাও মুর্খতা। আমার মত অর্বাচীন এতবড় দুঃসাহস দেখাতে চাইনা। মনে মনে স্বপ্ন দেখি মুক্তিযুদ্ধে দুই লক্ষ মায়ের সাথে জড়িত ইজ্জত শব্দটি একদিন ঘুম থেকে জেগে উঠার পর দেখব, সমস্ত বাঙ্গালীর কথায়- লেখায় সন্দেশ শব্দটির মত প্রচলিত অর্থ হারিয়ে মামুলি কোন পন্যের দোকানে নিকৃষ্ট কোন পন্যের নামে রুপান্তরীত হয়েছে।

অথবা পাকিস্তানী কুকুর সেনাদের কে বধ করবার জন্য ইতিহাসের ধুসর পাতা থেকে মোগল সেনারা উঠে আসছে জহর মাখানো খঞ্জর হাতে পেশোয়ারের অবসরপ্রাপ্ত সেনাকুঞ্জে। খবরটি এদেশের সর্বাধিক পঠিত জাতীয় পত্রিকা প্রথম আলোতে শিরোনাম হয়েছে। খনার বাপ ১২-০৫-২০১২ রাত:০১:৫২:২০ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।