আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যদি নিজের মাকে ভালবাসেন-এই লেখাটি পড়তে পারেন!

আপডেট। আপগ্রেড। লাভ হোয়াট ইউ ডু। ডু হোয়াট ইউ লাভ। ছোট বয়সে নানা জনের নানাকিছু শখ থেকে অভ্যাস; আমার বেলায় সেটি ছিল কমিক এবং গল্পের বই পড়া; ফুটবল খেলায় গোল করার পর খেলোয়াড়েরা যেই রকম গায়ের জামা খুলে লাফ-ঝাঁপ আনন্দ করে নূতন একটা না হয় কমিক উপহার পেলে ওই বয়সে আমার সেইভাবে আনন্দ করতে ইচ্ছে হত- কিন্তু সেটি করা যায় না তাই মুখে চৌদ্দহাত লম্বা হাসি নিয়ে দাঁড়া হয়ে থাকি! একেকটা কমিক বই খুলে সেটি পড়তে শুরু করার আগে আগে আমি সেটির দিকে যেই চোখে তাকাই মানুষজন প্লেটভর্তি বিরিয়ানির দিকে এই চোখে তাকায় কমিকগুলি পড়তেপড়তে আমার ধারনা হয়ে যায় আহা সুপারহিরোদের জীবন কতই না সুখের, তাদের কতকত সুন্দরী বান্ধবী, তার চাইতে বড় কথা তাদের বিচিত্র কতকত ক্ষমতা; কেউ হাতের আঙ্গুলগুলি সোজা করে ধরলে সেইখান থেকে জাল বাহির হয়ে আসে, কেউ উড়েউড়ে নানান জায়গায় চলে যায়, কেউ চোখ খুলে থাকালেই চোখ থেকে কি একটা মারাত্মক রশ্মি বাহির হয়ে আসে তাকে তাই চোখের উপর বাড়তি একটা কি যন্ত্র পড়ে থাকা লাগে; আহা আমি তাকিয়েতাকিয়ে চোখ ব্যথা করে ফেললেও সেইগুলি থেকে কিছুই বাহির হয় না; দেয়াল বেয়ে ওঠার বিষয়টি নিয়ে তো কোন কথাই নাই, আহা এটি করা গেলে কতই না সুবিধা হত; কষ্ট করে সিঁড়ি বেয়ে ওঠা লাগতো না- দেয়াল বেয়ে উঠে জানলা দিয়ে নিজের বাসায় যেতাম ঢুকে! এই ধরন অতিমানবিক ক্ষমতা শুধু কমিক বইতেই পাওয়া গেলেও সত্যি বলতে- বাস্তবেও আছে।

বলতে কি প্রত্যেক পরিবারেই একজন করে আছে। আমাদের আম্মাদের কথা বলছি। আম্মারা ১০টা হাত ৮টা মাথা ২ডজন পা না থাকলে যেই কাজগুলি সহজে করতে পারার কথা না সেই কাজগুলি এত সহজে করে ফেলেন যে, তাদেরকে সুপারহিরো না বলে উপায় থাকে না! তারা যে সময়টিতে আমরা খুব একটাকিছু খারাপ কাজ করি, যখন আমাদের নিজেদের ভিতর ভয় হতে থাকে তিনি আমাদের তিন চার কুচি করে কাঁচা, মরিচ পেয়াঁজের সাথে ভাতের মধ্যে দিয়ে খেয়ে ফেলেন কি না- এই সময় গুলিতে আম্মারা কিকরেকিকরে মিষ্টি দু’টো কথায় যেটি করা হয়েছে সেটি করা কেন ঠিক হয় নাই সেটি বুঝিয়ে দেন; আবার শাসন করার বিষয়টিও তারা এত ছোট সময়ের ভিতর দিয়ে সেড়ে দিতে পারেন যে- দশটা সাজোঁয়া ট্যাং নিয়ে সেনা বাহিনীর লোকজন এসেও এত ভালভাবে সেটি করতে পারতো কিনা সন্দেহ! আম্মারা চোখের একটুখানি কড়া দৃষ্টি দিয়েই কিকরে কিকরে আমাদের মেঝের সাথে সিলাই করে দেন, মিথ্যে না সত্যি বলা হচ্ছে সেটি মাথার পাতা উল্টেউল্টে ঠিকঠিক পড়ে ফেলেন, এবং একসাথে ঘরের কোথায় কি হচ্ছে কিকরেকিকরে ঠিকঠিক জেনে ফেলেনঃ তাকে সুপারহিরো না বলে উপায় কি! প্রতি মে মাসের ২য় রবিবার এই আম্মাদের দিবস- এইবারে সেটি পড়েছে ১৩ই মে-তে-১৩ই মে “বিশ্ব মা দিবস”। সময়েসময়ে ফটোকপি মেশিনে ঢুকিয়ে নিশ্চয়ই আম্মাদের নূতন একটা কপি করে নেয়া যায় না তাই আম্মা আমাদের প্রত্যেকের একজন করে থাকেন; জন্মের পর পর বড় একটা সময় পর্যন্ত আমরা যেই মানুষটির মুখ সব চাইতে বেশি দেখি সেটি আমাদের আম্মার; আম্মাদের বগলের কাছে তাই মাটির কলসই থাকুক কিংবা অনেক দামি কুমিরের চামড়ার হাত ব্যাগ- আম্মাই দুনিয়ার বুকে আমাদের সবচাইতে কাছের মানুষ। মা দিবস বিশ্ব জুড়ে নানাভাবে পরিবারে নিজেদের ভিতরেই পালিত হয়; কোথাও হয়ত ছেলে মেয়েরা আব্বার সাথে দল পাকিয়ে চুক্তিকরে আম্মার জন্যে সকালের নাস্তা তৈরি করে বিছানার কাছে এসে আম্মাকে দেয় চমকে; কেকটা হয়ত বিস্বাদ হয়েছে কফিতে হয়তো দুধ চিনি কিছু হয় নাই রুটি হয়তো মুখে দেয়া যায়না- কিন্তু আম্মা সেগুলি একটু একটু খেয়ে হাসিমুখে মাথা নেড়ে বলেন বেশ হয়েছে! কোথাও হয়তো ছেলে মেয়ে নিলে আম্মার জন্যে গান লিখেছে একটিঃ সেটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শুনে গেলে হয়তো বোঝা মুশকিল লাগতে থাকে সেটি বিষয়বস্তু কি কিন্তু আম্মা খুব একটা অসাধারণ কিছু শুনেছেন এই ভঙ্গিতে হাতে হাতে তালি দিয়ে উৎসাহ দেন! কোথাও হয়তো পরিবারের নানান ছবি কাটিকুটি করে একটা এ্যালবামমতো দাড়া করানো হয়েছেঃ সেটি খুব দামি একটা কিছু নাড়াচাড়া হচ্ছে এই রকম সতর্ক একটা ভঙ্গিতে সবাই উল্টেপাল্টে দেখছে; বিচিত্র কোন পুরোনো ছবি দেখে হয়তো আম্মা হু হু করে হাসছেন আবার ছবি দেখে হয়তো কেউ ভাল দেখতে না পারে এইভাবে চোখের কানি নেন মুছে! ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের মনে হতেই পারে আহা এমন একটি বাইপোলারাইজেশন মডিউল বা এই ধরন একটা কিছু যদি বাজারে কিনতে পাওয়া যেত যেটি আম্মার মাথায় পরিয়ে দিলেই তার মস্তিস্কের জায়গায় জায়গায় পরিবর্তন চলে এসে আম্মাকে পুরো একটা নতুন একজন মানুষে পাল্টে দিবেঃ খাওয়ার সময় খাওয়া করার জন্যে আম্মা এখন আর পিছন পিছন ছুটাছুটি করেন না, পড়ার সময় পড়া না করলে মারপিট করেন না এবং “গোসলের সময় গোসল না করলে কি আসে যায়- যাও বাবা আরেকটু খেলা কর গে” এই ধরনের কথা তার মুখে নূতন শোনা যেতে শুরু করেছে; আহা জীবন কতই না মধুময় আগেতো বোঝা যায় নাই ইত্যাদি; কিন্তু ঘটনা এখানে দু’টো, এক, এই ধরনের কোন মডিউল নাই এবং দুই, থাকলেও সেটি ব্যবহার করার বেশি কিছু কারন ছিলনা; আম্মারা যেটি করেন সেটি জেনে বুঝে আমাদের ভালর জন্যই করেন; এই আম্মারাই আমরা যখন খেলাধূলা শেষে আগে একটন বালু আর মাথায় ধানপাতার মত আলুথালু চুল নিয়ে বাসায় ফেরত আসি তখন বালু ঝেড়ে চুল সমান করে গালে চুমু দিয়ে দেন; স্কুল প্রোগ্রামে আমাদের মুখ আঁকাবাঁকা করা গান শুনে যখন সবাই মুক্তিপেয়ে আসছে তখনও আমাদের মাথার চুল নেড়ে দিয়ে বলেন- সাবাস।

বলেন না? সেফ ডিপোজিট বক্সে একটা কিছু খুব সহজে গছিয়ে তালা বদ্ধ করে রেখে দেয়া যায়- সেটি নিয়ে আর বেশি কিছু চিন্তামাথায় আনা লাগে না; আম্মারা হলেন সেই সেফ ডিপোজিট বক্স; যেখানে আমরা আমাদের সমস্ত দুশ্চিন্তা আর আশংকা জমা রেখে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারি! দেশের আয়তন ১,৪৭,৫৭০বর্গ কিলোমিটর, আমি কোন গণিতবিদ না- কিন্তু নিশ্চিত করে বলতে পারিঃ এতএত কিলোমিটার জায়গার ভেতর সবচাইতে নিরাপদ আমরা অনুভব করি কয়েকবর্গ ইঞ্চির আম্মার বুকেই! আমার চিন্তাভাবনার জগৎ বেশ একটু বিচিত্র; বয়স ১২কি ১৩এর মাথায় যার সাথেই নূতন দেখা হয় সবাইকে নিয়েই নোটবুকে দুই চার লাইন লিখে রাখি; আম্মার বেলায় তো কথাই নাই তাকে পয়দা হওয়ার সময় থেকেই চিনি; তাকে নিয়ে লিখে তাই পাতা পাতা ভর্তি করে ফেলতে থাকিঃ সেটি শুরু হয়েছে মায়ের সংজ্ঞা দিয়ে- “মা হলেন পৃথিবী ও স্বর্গের মাঝে সেতু বন্ধন” সাত শব্দের বাক্য পড়তে গেলে নিজেরই মাথার ভিতর চার পাঁচ জায়গায় ধাঁধাঁ লেগে যায়; সংজ্ঞার নিচে আম্মার উপর ৮/১০ রকম প্রশ্ন লিখা সেগুলি অনেকটা এই রকম ঃ প্রশ্ন ঃ আম্মাকে সবচাইতে ভাল দেখায় কখন? উত্তর ঃ আম্মা যখন রান্না করা খাওয়া নিয়ে এসে টেবিলে রাখছেন- তখন ইত্যাদি। এই প্রশ্নের তালিকায় একটি প্রশ্ন এই রকমঃ আম্মার কোন দিকটুকু পরিবর্তন হলে আমি খুশি হব? এটির উত্তরে একেক সময় আগের উত্তর কেঁটে নূতন উত্তর লেখা হয়েছে- তাই তালিকাটুকু বেশ লম্বা। আব্বার বন্ধু এক দুইজন বাসায় আসতেন, তাদের ভেতর একজন এই নোটবুকটি কিকরে কিকরে ফেললেন দেখে; তিনি আমাকে একটু ডাকেনঃ আমার হাতে তখন খেলনা বিমান সেটি নিয়ে আমি বাংলাদেশ ভারত সৌদি আরব পার হয়ে এশিয়া ছেড়ে এখন অন্য অন্য মহাদেশের দিকে রওনা হয়েছি, সেটি ছেড়ে উঠে আসায় আমাকে বেশিকিছু আনন্দিত দেখা যায়না; তিনি আমার কাঁধে বিরাট থাবা বসিয়ে বললেন বেটা! আমি তোমাকে দু’টা কথা বলতে চাই। এক, তোমার প্যান্টের জিপার খোলা সেটা লাগাও। দুই, আমার ছোট বয়সের একটা ঘটনা শুনাই।

আমার কাছের একজন মানুষ বিলেত থাকতেনঃ সেইবার এসছেন দেশে, বিলেতে মোটা মোটা বই সেই গুলি পড়ে পড়ে তার কথার ধরনই গেছে পাল্টে- দশটা কথা বললে আটটাই বড় বড় মানুষের উদ্ধৃতি; এর ভিতর একটা কার পুরোপুরি মনে নাই; সেটি অনেকটা এই রকমঃ হতাশার সময় মায়ের কাঁধে মাথা রাখার কোন দরকার হয় না, কারন হতাশায় কাঁধে মাথা রাখার দরকার হয় এই রকম পরিস্থিতিই মা কখনও তৈরি হতে দেবেন না। তোমার মত বয়সে শোনা কথা তাই সেইটার গুরুত্ব ভাল বুঝতে পারি নাই- এখন পারি, এখন আম্মা নাই- খুব যখন হতাশ লাগে তখন কেউ একজনের কাঁধে মাথা রেখে বেশ একটু কান্না করার ইচ্ছা হয়, তখন খেয়াল হয় আম্মা নাই, খুব তখন একা লাগে। এখন যদিও আম্মার এইটা ওইটা নানাদিক খারাপ লাগতেই পারে একটা সময় আসবে যখন আম্মার এই দিকগুলিই অনেক বেশি মনে পরবে। আমি শুকনা মুখে উঠে আসি তারপর বিমানে করে এশিয়া পার হয়ে বাদবাকি মহাদেশে ঘোরার বিষয়টুকু শেষ করি তারপর নোটবুকে “আম্মার কোন দিকটুকু পরিবর্তন হলে আমি খুশি হব?” সেটির উত্তরের অংশটুকু কেটে লিখে দিই কোন দিকই পাল্টানোর দরকার নাই! সব আম্মারাই এমন। তারা নিখুঁত।

তাদের কোন একটি দিকও পাল্টাবার দরকার পড়ে না। তারা সুপারহিরো! পৃথিবীর এই সব ক’জন সুপারহিরোদের জন্যেঃ শুভ বিশ্ব মা দিবস! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।