আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজ সেই ঐতিহাসিক ১১মে - কুরআনের প্রতি ভালবাসার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

আমি নতুন কিছু পড়তে ভালবাসি কুরআনের প্রতি ভালবাসা মুসলমানদের কলিজার সাথে সম্পৃক্ত। এই ভালবাসা কেউ কখনও মুছে ফেলতে পারেনি- পারবে না। মুসলমানরা জীবন দেবে কিন্তু কুরআনের অবমাননা হতে দেবা না। এমনই একটা ঘটনা ঘটেছে ১৯৮৫সালে। ১০এপ্রিল ভারতীয় দু'জন উগ্র হিন্দু পদ্মমল চোপড়া ও শীতল শিং ভারতীয় আদালতে কুরআনের সূরা বাকারার ১৯১ নং ও সূরা তাওবার ৩১নং আয়াতের রেফারেন্স দিয়ে কুরআন বাজেয়াপ্ত করার মামলা দায়ের করে।

উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আবার তা গ্রহণ করে বিচারপতি পদ্ম খাস্তগীর, শুধু তাই নয় তিনি আবার ১২এপ্রিল এ বিষয়ে তিন সপ্তাহের মধ্যে এফিডেফিট প্রদানের জন্য রাজ্য সরকারের প্রতি নির্দেশ দেন। এ ঘটনায় ভারত সহ সমগ্র বিশ্ব উত্তাল হয়ে উঠে। বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে ঈমানের বলে বলিয়ান প্রতিটি মুসলমান। বাংলাদেশেও এর হাওয়া বইতে শুরু করে প্রচন্ড গতিতে। শুরু হয় সমাবেশ, বিক্ষোভ, বিভিন্ন ধরনের প্রতিবাদ।

এমনিই একটি বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের কুরআনপ্রেমীরা। দিনটি ছিল ১১মে'৮৫। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ হোসাইন আহমদ এই সমাবেশ আহ্বান করেন। কেন্দ্রীয় ঈদাগা মাঠে সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়, লিফলেট বিতরণ সহ মাইকিং করা হয় সর্বত্র। কিন্তু হঠাৎ করে কোন এক অদৃশ্য কারনে প্রশাসন আয়োজকদেরকে ডেকে সমাবেশ না করার জন্য মুচলেকা দিতে বাধ্য করেন! কিন্তু কুরআনের সাথে যার সম্পর্ক হৃদয়ের সেটা কি আর মুচলেকা দিয়ে বন্ধ করা যায়।

নির্দিষ্ট সময়ে ঈদগা মাঠে জনতার ঢল নামলো, আসতে থাকলো শিক্ষক, ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, কুলি, মজুর, রিক্সাওয়ালা, ভ্যানওয়ালা সহ সকল স্তরের মুসলমান । এমনি সময়ে তৎকালীন পুলিশ সুপার আওলাদ হোসেন ও কুখ্যাত ম্যাজিস্ট্রেট মোল্লা ওয়াহেদুজ্জামানের (এখন সচীব) নেতৃত্বে সভাস্থলে ১৪৪ধারা জারি করা হয়। এতে আগুনে যেন ঘি ঢেলে দেওয়ার অবস্থা, জনগন উত্তাল তরঙ্গের মত ফুলে ফুঁপে উঠলো। "দোয়া করে চলে যাবো" এই আবেদনও যখন প্রশাসন প্রত্যাখ্যান করলো তখন ঈমানদাররা বিক্ষোভ করারই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হল। ঠিক সেই সময় ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহেদুজ্জামান মোল্লা (পরে প্রমোশন হিসেবে মোল্লা শব্দটা নামের শেষে যুক্ত করা হয়) সমাবেশে গুলির নির্দেশ দেন।

পুলিশ নির্বিচারে প্রায় ১৫মিনিট সেখানে গুলি চালায়। এতে শাহাদাত বরণ করেন- কাশিমপুর এ.কে ফজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র আব্দুল মতিন নামোশঙ্করবাটী উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র রাশিদুল হক নবাবগঞ্জ আলিয়া মাদরাসার ৯ম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র শীষ মুহাম্মদ নামোশঙ্করবাটী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র মুহাম্মদ সেলিম হরিপুর ১নং উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর মেধাবী ছাত্র মুহাম্মদ শাহাবুদ্দিন এছাড়াও এই শাহাদাতে কৃষকদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব দেন শহীদ আলতাফুর রহমান, রিক্সাচালকদের মধ্য থেকে শহীদ মোক্তার হোসেন, শ্রমিকদের মধ্য থেকে শহীদ নজরুল ইসলাম। আহত হলেন অসংখ্য কুরআন প্রেমী বনি আদম। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে আজ পর্যন্ত সেই খুনিদের তো বিচার হয়ই নি বরং এই নারকীয় তান্ডব চালানোর পুরস্কার হিসেবে তাদেরকে আরও প্রমোশন দেওয়া হয়েছে! অথচ ১৩মে কোলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি কে.বি.সি বাসক বামন উক্ত মামলাটি খারিজ করে দেন। আমরা জানি, পৃথিবীর হয়তো কেউ এই হত্যাকান্ডের বিচার করবেন না কিন্তু আহকামুল হাকীমিন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অবশ্যই একদিন না একদিন এর বিচার করবেনই, আমরা সেই দিনের অপেক্ষায় থাকবো।

পাশাপাশি আল্লাহর কাছে এই দোয়া করবো হে আল্লাহ! আপনি এই খুনিদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুন (তাওবা করলে ভিন্ন কথা) আর আমাদের ভাইদেরকে শহীদ হিসেবে কবুল করে জান্নাতুল ফেরদাউসে দাখিল করুন, আমাদেরকেও আমৃত্যু আপনার কুরআনের কাজ চালিয়ে যাওয়ার তাওফীক দান করুন।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।