আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এই ধরনের ঘটনা আর নতুন কি! সবই ক্ষমতাসীনদের খেলা।“

সময়ের সাথে...... ইদানিং লক্ষ্য করা যাচেছ যে, অনেকেই টকশোতে অংশ নিয়ে বা আয়োজন করে হরহামেশা বিপদে পড়ে যাচ্ছেন। এতে তিনি নিজে যেমন রিমান্ডের যাতনা ভোগ করছেন, ঠিক তেমনি পরিবার পরিজনকে ফেলে দিচ্ছেন বিশাল দুশ্চিন্তায়। যারা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে TALKশো করে বেড়াচ্ছেন তাদের জন্য TALK এবং টকের (এক প্রকার স্বাদ বিশেষ) পার্থক্য বোঝাতে বিশেষ কোর্সের আয়োজন করা হয়েছে। যাতে TALK করতে গিয়ে অতিমাত্রায় টকের ব্যবহারে নিজের বিপদ নিজেই ডেকে আনতে না হয়। ইদানিং টকের বিশেষ একটা মাহাত্ম প্রকাশ হয়ে পড়েছে।

অতি মাত্রায় টক ব্যবহারের ফলে রতনের মতো মানুষেরা দ্বি-সত্ত্বা লাভ করেছেন। কারণ পুলিশ বলেছে রতনকে রাত নয়টায় ভাংচুরের সময় গ্রেফতার করা হয়। অথচ উনি রাত বারটার সময়ে একটা বেসরকারি টিভি চ্যানেলের TALKশোতে অংশ নেন বলে প্রচারিত আছে। পুলিশের কব্জা থেকে কিভাবে তিনি ঐ সময়টুকুতে বের হয়ে টিভি চ্যানেলটিতে গিয়েছিলেন সেটা পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য হবে শিগগিরই। হয়তোবা পুলিশের ভেতরেই বিরোধী দলের এজেন্ট লুকিয়ে থাকতে পারে।

এটা নিশ্চয়ই তার বা তাদের কাজ। এরাই সব সময় দেশের উন্নয়ন এবং স্বাধীনতার চেতনাকে বাধাগ্রস্ত করে চলেছে। অতএব, সাবধান!! যতো পারো TALK করো, টক দেয়া যাবে না বকবক করো যতো, টকশোতে যাবে না। । বাক স্বাধীনতা আহা! কি দারুণ সৃষ্টি টকঝাল বাদ রেখে, ঢালো শুধু মিষ্টি।

অনেকেই বলেন, আমাদের মতো দেশগুলোতে সরকার TALK ফ্রেন্ডলি হলেও টক এলার্জিক। কথা বলা যাবে কিন্তু টকশোতে টক কথা অর্থাৎ সরকারের সমালোচনা করা যাবে না। যতো খুশি মিষ্টি TALK করো তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই টক স্বাদযুক্ত TALK করা যাবে না। রতন, বেচারা ১২ বছর রাজনীতির বাইরে থেকে এই সাধারণ জ্ঞানটুকুও হারিয়ে ফেলেছিল।

নচেৎ দুই টকের পার্থক্য না বুঝেই তেঁতুলের ব্যবহারটা বোধহয় একটু বেশিই করে ফেলেন। অধম রতনের কি দোষ। বাংলাদেশে আপেল থেকে মাছে সব কিছুতেই ভেজাল, ফরমালিন থাকে। বাক স্বাধীনতার মতো চটকদার শব্দগুলোতেও যে অদৃশ্য ফরমালিন মিশিয়ে ভেজাল করে দেয়া হয়েছে তা কি রতন জানতো! ফরমালিন দেয়া পচা (মিথ্যা) বাক স্বাধীনতার মোহে পড়ে রতনের বারোটা বাজলো। এই বাক স্বাধীনতায় এখন যে মজেছে, সেই পুড়েছে।

আসিফ নজরুল এবং ইটিভির সঞ্চালকের পরিণতি থেকেও শিক্ষা নেয়নি। এবার রিমান্ডে গিয়ে বোঝ ঠ্যালা! আমি অবশ্য রতনের কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছি না। ক্ষমতা হারালে ওদের কি হবে সেই ভেবে আতঙ্কিত। যে পথ ওরা দেখিয়ে দিয়ে যাচ্ছে, প্রতিহিংসার পরিমাণটা শুরুর চেয়ে একটু বেশিই হয়। এতোগুলো গুম মানুষের স্বজনদের ক্রোধ যে ওদের কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে যাবে কে জানে! এই দুষ্ট চক্র থেকে কে প্রথম বের হয়ে এসে আমাদেরকে রক্ষা করবে জানি না! অধিক কথা বলতে গিয়ে কোর্সের নামটাও বলা হয়নি।

কোর্সের নামেও মুন্সিয়ানা থাকবে। এই যেমন হতে পারে, ‘TALK করো, টক নয়” কিংবা ‘টক ছাড়া TALK’. নামটা চূড়ান্ত না হলেও এতে কি শিক্ষা দেয়া হবে সেটা প্রায় চূড়ান্ত। অনেকটা সিনেমার গল্প বানানোর আগেই কাটতি বাড়াতে গানগুলোর ভিডিও এ্যালবাম বাজারে ছেড়ে দেবার মতো। প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু ঠিক করার আগে আমাদের গবেষণা কর্মীরা অনেক মেধার অপচয় করে আমাদের রাজনীতিবিদদের ভালো লাগা মন্দ লাগাগুলো কি কি সেগুলোর একটা তালিকা তৈরি করেছেন। যেমন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগে বলেছেন, TALK শোতে নাকি বেশি টক এবং ঝালের ব্যবহার হচ্ছে।

তিনি অনুরোধ জানান টকঝালের সাথে সাথে কিছু মিষ্টি দেবার জন্য। কিন্তু বাজারে আবার চিনির আকাল, দাম অতি চড়া। মিষ্টি স্বাদ বলে কথা! সেটা কমদামী মিছরি দিয়ে হলেও চলবে। মিছরির প্রসংগ আসতেই সেই বহুল প্রচলিত বাকধারা ‘মিছরির ছুরি’র কথা মনে পড়ে গেল। আমাদের রাজনীতিবিদরা যে কথা প্রকাশ্যে বলেন, সেগুলো আসলে তারা বলার জন্যই বলেন।

ওভাবে চলতে গেলে বিপদ আছে। এই যেমন বাক স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ইত্যাদি। আসলে বুঝতে হবে ওনাদের না বলা কথাগুলো কি ছিল। সেটাই হলো ওনাদের মনের কথা। এই বিষয়াবলী গবেষণা করে প্রশিক্ষণে চূড়ান্তভাবে বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয়েছে।

এই যেমন TALK এবং টকের মধ্যে পার্থক্য। মিষ্টির উপকারিতা এবং টকঝালের ক্ষতিকারক দিকসমূহ। কিভাবে নিরপেক্ষতার নামে ভারসাম্যপূর্ণ কথা বলে গুবলেট করে ফেলা যায়। তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিজ সমর্থনকারী দলকে রক্ষা এবং জেনারেলাইজেশনের মাধ্যমে বর্তমানের নিন্দনীয় খবরটিকে সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায়। মূলত: সবই করা হয়েছে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে।

ট্রেনিং এ হাতে কলমে শিক্ষা দেবার ব্যবস্থা থাকবে। যেমন একটি উদাহরণ খবর: গত ৩০শে এপ্রিল বাংলানিউজে প্রকাশিত একটি সংবাদ “রেহানার সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন”। এটার একটা নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ এরূপ হতে পারে যেখানে বর্তমানের অপরাধকে মুখ্য করে দেখিয়ে সেটাকে বন্ধের আবেদন আছে। “আদালতের দায় কি শুধু নির্যাতিতা কিছুদিনের জন্য শুধু নির্যাতনকে রক্ষা করে আবারো রিমান্ডের নামে অসুস্থ করার জন্য পাঠানো। নাকি রিমান্ডে নিয়ে কাউকে যেন নির্যাতনের শিকার হতে না হয় তারও ব্যবস্থা করা? আদালত কি জানে না রিমান্ডের নামে সেখানে কি হয়? তাছাড়া রেহানার সারা শরীরে নির্যাতনের দাগ কোথা থেকে এলো আদলতের কাছ থেকে সেটা জানতে চাওয়ার সেই মানবিকতা কি একজন নাগরিক আশা করে না! তাজউদ্দিনের নাতিকে পেটানোর জন্য আদালত কেঁপে ওঠে।

কিন্তু রেহানার সারা শরীরের নির্যাতনের দাগ আদালতের মনে একটুও আঁচড় কাটলো না। আমাদের দেশে বড় মানুষের আত্মীয় হয়ে জন্ম না নেওয়াটাও একটা অপরাধ। “ এভাবে বলতে গেলেই বিপদ। আবার মুখ বন্ধ রাখলেও সমস্যা। সাধারণ মানুষের ছিঃ ছিঃ শুনতে হবে।

এই পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষতার ভাব ধরে খবরটিকে ভারসাম্যপূর্ণ বিশ্লেষণ দাঁড় করিয়ে ফেলেন। যেমন, “রেহানার শরীরে যত্রতত্র আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেলেও কে করেছে তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাছাড়া একজন নারী হয়ে কি করে রেহানা রাজপথে বেগানা পুরুষদের সামনে হাত উঁচিয়ে, আঙুল নাড়িয়ে স্লোগান দেয়! নাউজুবিল্লাহ! তবে যারাই রেহানার গায়ে হাত তুলেছে তাদের সেটা উচিত হয়নি। সরি বলা উচিত। আর রেহানারও এভাবে রাজনীতির নামে ঘরের রান্না বাদ রেখে রাস্তায় নামা ঠিক হয়নি।

রেহানার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা না খেয়ে কষ্ট পেতে পারে। এটা নিজ সন্তানকে অবহেলার শামিল যেটা জাতিসংঘের ‘চাইন্ড প্রোটেকশনের’ সাথে সাংঘর্ষিক। “ কিংবা হতে পারে বিশ্লেষণটা তুলনামূলক। যেমন- “আজকে রেহানার শরীরে যতোগুলো আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে গত সরকারের আমলে মতিয়া সাজেদাদের পিঠেও এর চেয়ে কম আঘাত দেখা যায়নি। বড় নেতা হবার কারণে তারা রিমান্ডের হাত থেকে বেঁচে গেলেও আজকে রেহানার অবস্থা তারই ধারাবাহিকতার ফল।

“ এভাবে বললে দলের অপরাধকে খাটো করে দেখানো গেলো, নেতারাও খুশি হলেন, আর বিরোধী দলকেও বেশি চটানো হলো না। আর চটলেই বা কি! এখনকার মতো তো আর কোনো বিপদ নেই। সংবাদটির বিশ্লেষণে জেনারাইলেশন বা সাধারণীকরণ কিভাবে হতে পারে! নিচে দেখুন, “এই ধরনের ঘটনা আর নতুন কি! সবই ক্ষমতাসীনদের খেলা। “ ছোট্ট কথা। ধরি মাছ না ছুঁই পানি।

সুন্দর ছোট্ট এক কথার মোচড়ে পাবলিকের চিন্তাটা বর্তমান থেকে সরিয়ে অতীতের সাথে যুক্ত করে দিয়ে জেনারালাইজ করে ফেলা গেলো। এভাবেই উভয়ের মধ্যে দোষ বণ্টন করে দেয়া হলো। আবার কাউকেই দোষারোপ করা হলো না। শব্দের কতো যাদু! তাই না! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।