আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এক আপুর ফেসবুক স্টেটাস পড়ে Inspiring হইলাম

তোমার মাপে হয় নি সবাই তুমিও হও নি সবার মাপে, তুমি মর কারো ঠেলায় কেউ বা মরে তোমার চাপে— আপনার আমার কিছু হয়নি। যদি একটু ভাবেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার টর্নেডোতে ক্ষতিগ্রস্ত- স্বজন হারা, ঘরহারা, বস্রহারা সেইসব মানুষের কথা তাহলে একটু হলেও বিবেক আপনাকে নাড়া দিয়ে যেতে বাধ্য । তাঁদেরও ছিল আমার আপনার মতো সাজানো ঘর, ঘর ছিল ভালোবাসায় পরিপূর্ণ, যেখানে ছিল কারো বাবা-মা, আদরের ভাইবোন বা প্রিয় সন্তান । মমতাময়ী মায়ের কোলে নবজাতক যে শিশুটি ছিল সবচেয়ে নিরাপদ, সেখানেও কোন নিরাপত্তা ছিলনা সেদিন। কিছু একটা যেন নিমেষেই কেড়ে নিল মায়ের কোলের সেই শিশুটিকে আর প্রিয় আশ্রয় –ঘরের চালা।

এমনই দুর্যোগ নেমে আসেছিল সেদিন হাজারো মানুষের জীবনে। নিমেষেই শেষ হয়ে গেলো সারা জীবনের একটু একটু করে গড়া শেষ আশ্রয়। এদের কে দেবে সান্ত্বনা, কে শোনাবে আশার বানী!!! পরিবারের সবাইকে হারিয়ে যে একাকী বেঁচে আছে, তাঁর জন্য কোন সান্ত্বনার ভাষা কি কারো জানা আছে??? আর সেই সর্বহারা মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর প্রবল ইচ্ছায়ই ছুটে চলেছিলাম আমরা কজন। ইউনিভার্সিটিতে ৫ দিনের ক্যাম্পেইন শেষ হতেই আমরা রওয়ানা হলাম এ শহর থেকে অনেক দূরে, ধ্বংসের সাক্ষী সেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। শুক্রবার খুব সকাল থেকেই আমরা ত্রান বিতরণের জন্য বেরিয়ে পড়ি ।

মনকাশাইর থেকে সুলতানপুর ইউনিয়নের দিকে ত্রান সামগ্রী নিয়ে যাওয়া পিকআফ ভ্যানটিকে অনুসরণ করে আমরা সিএনজি করে যাচ্ছিলাম। ওই অনুভূতিটিই ছিল সবচেয়ে সুখকর এই ভেবে যে- টিভিতে নয় ওদের আমরা কাছ থেকে দেখতে যাচ্ছি, পর্যটক হয়ে নয় সাহায্যের হাত বাড়াতে যাচ্ছি। আর দুর্গত এলাকায় যাওয়ার পরের অনুভূতিটা আমার এমন ছিল যা বলা কখনোই হয়তো সম্ভব হবেনা। যতদূর চোখ যায় শুধুই ধ্বংসস্তূপ, প্রকৃত প্রাণের উপস্থিতি থাকলেও প্রান ছিলনা যেন তাদের জীবনধারায়। কোথাও সবুজের চিহ্নও নেই, সূর্যরশ্নিও যেন আগুন ঝরাচ্ছে।

সরকারী তাঁবু হয়তো রাতের বেলা মাথা গুঁজার জায়গাটুকুই দিচ্ছে, আর দিবালোকে নিষ্ঠুর সূর্য ক্রমাগত পুড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে আর বৃষ্টি হলে ভিজিয়ে দিয়ে যাবে। শত শত মানুষ এখনো হাসপাতালের শয্যায় মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করছে, আর মৃতের আসল সংখ্যাতো এদেশের প্রেক্ষাপটে জানা অসম্ভব। যাই হউক, এদেশের প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা এখানে অনেক বেমানান। সেদিন ৩০০ এর মতো তাঁবুতে আমরা খাবার আর কাপড় বিতরন করেছি। এর পর শুরু হল আমাদের ঘরে ফেরার যুদ্ধ।

দুপুর ২ টায় ট্রেন আসবে, কসবা রেল ইস্টেশনে সবাই অপেক্ষা করছি। পরদিন লংমার্চ এর জন্য ট্রেন আসবে কি আসবেনা এই অনিশ্চয়তার মাঝেও ট্রেনএর দেখা মেলে রাত ৮ টায়। ৬ ঘণ্টা দেরি হলে ও এটা নিশ্চিত হতে পেরে খুবই আনন্দিত হলাম যে ঢাকায় যেতে পারব তাহলে। জীবনের প্রথম ট্রেন জার্নি, চট্রলা এক্সপ্রেসে ঢাকার পথে। কেমন যেন মিশ্র প্রতিক্রিয়া হচ্ছিলো, শেষটা ভালো হবে কিনা।

২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট হতে চলছে, ট্রেন থেমে গেল। ভাবলাম যাত্রা বিরতি, কিন্তু না ট্রেন আর ঢাকায় যাবে না- সরকারী আদেশ। জায়গাটা ছিল পুবাইল, গাজীপুরের আশেপাশে কোথাও হবে। কি আর করা, ট্রেন থেকে নেমে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি সবাই। অমনি একটা বাস এলো,তাতে করে টঙ্গী ইস্টেশন রোড- সেখান থেকে সিএনজি করে বাসায়।

আসার পথে একটু কষ্ট হলেও, ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর আনন্দ আমাদের এতটুকুও কমেনি। আমাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করার জন্য সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। সশ্রদ্ধ সালাম আমাদের স্যার- ম্যাম ও আব্বু-আম্মুদের, আপনাদের দোয়া , ভালোবাসা, সহযোগিতা আর অনুপ্রেরণাই ছিল আমাদের শক্তি। আর সকল কৃতজ্ঞতা, মহান আল্লাহ্‌র প্রতি। লেখক ঃ শিফাত শারমীন মৌ,স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি ধন্যবাদ আপু আপনার এই মহৎ কাজ আমাদের উজ্জল পথ দেখাতে সাহায্য করবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।