আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পিতা-পুত্র

বুদ্ধিজীবী হতে ডিগ্রী লাগেনা। আবু কিছুটা রগচটা স্বভাবের। তার হাঁটার ভঙ্গিতেই পরিষ্কারভাবেই সেটা ফুটে ওঠে। পৃথিবীটাকে লাথি মারতে মারতে সে যেন পথ চলে। সন্ধ্যার হব হব এরকম সময় সে বাজার থেকে বাড়ীর পথে পা বাড়াল।

রিকশা না পাওয়ায় মেজাজ টা হট হয়ে আছে। বাড়ানো পায়ের লাথিটা মাটিতে না মেরে রিকশাওয়ালাদের পাছায় মারতে ইচ্ছে করছে। চেনা ভঙ্গিতে হাঁটতে হাঁটতে সে খেলার পথ মাঠ ক্রস করে এগিয়ে গেল। শিরিষ গাছগুলোর মাথায় সন্ধার অন্ধকারের আভাষ দেখা যাচ্ছে। রাস্তার বাঁক টা অতিক্রম করতেই একটা ছেলে তাকে সালাম দিল, “আসসালামু আলাইকুম আংকেল।

” তার ছোট ছেলের বয়সী হবে। সে হাঁটা থামিয়ে সালামের উত্তর দিল, -“ওয়ালাইকুম আসসালাম। কিছু বলবে খোকা। ” - আংকেল, আমি আর আসিফ এক সাথে পড়ি। আজ ক্লাসে জানালার পাশে বসা নিয়ে আসিফের সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছে।

ও আমাকে থাপ্পড় মেরেছে। আমিও ওকে চড় মেরেছি। কিন্তু ও বলেছে এখন থেকে যদি আমি জানালার পাশে বসি তাহলে আমাকে জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলবে, লাথি মেরে ঠ্যাঙ ভেঙ্গে দেবে। কিন্তু আমি যদি ক্লাসে আগে যাই তাহলে আমি কেন জানালার পাশে বসব না। - আচ্ছা আমি আসিফকে বলে দেব।

নাম কি তোমার? - আমার নাম মামুন। - ওকে মামুন, বাসায় যাও। হাতমুখ ধুয়ে পড়তে বস। আসিফ হল আবুর ছোট। আসিফুর রহমান।

লেখাপড়ায় ভাল। কিন্তু স্বভাবটা যেন ঠিক আবুর মত। এর ওর কাছে প্রায়ই নালিশ শুনতে হয় আসিফের নামে। বড় ছেলেটা ঠিক উল্টো। ধমক দিলেও কথা বলে না।

বাসায় ফিরে বউ এর হাতে মাছের ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে কলপাড়ে গেল হাত পা ধুতে। পেছন থেকে বউয়ের গলা পাওয়া গেল। - এই ভর সন্ধ্যায় তোমাকে ছোট মাছ কে আনতে বলেছে। মাছ কুটতে বসলে সারা গা গন্ধ হয়ে যায়। - আরে ছেলেদের জন্য না হয় কষ্ট করলে একটু।

ছোট মাছে প্রচুর ভিটামিন। চোখ ভাল থাকে। জানই তো আমাদের আবার কানার বংশ। - সেই ভয়ে কি ঔষধ হিসেবে ছোট মাছ খাও নাকি প্রতিদিন! বউয়ের কথা শুনে হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকল। তার দুই ছেলে পড়তে বসে গেছে।

গামছায় মুখ মুছে আসিফ কে জিজ্ঞেস করলে, - কি পড়িস? - ইংরেজী। - ইংরেজীতে কত পাবি এবার? - এ+। - ক্লাসে স্যার আজ তোকে বকা দিয়েছে? - না। কেন? - তুই মারামারি করেছিস নাকি? আসিফ চালাক ছেলে। ঘুষোঘুষি একটু হয়েছে কিন্তু স্যার তো বকা দেয়নি।

মামুনের সাহসই নাই টিচারের কাছে নালিশ করার। সে বুঝে গেল আব্বা চালাকি করে কথা বের করার চেষ্টা করছে। মুহূর্তেই নিভে যাওয়া মুখটা উজ্জ্বল করে বলল, - মারামারি করিনি আব্বু। মামুন ঝগড়া করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু আমি কিছু বলিনি।

কিন্তু আবু কম যায়না। তাকে কথা ফাঁকি দেয়া অত সোজা। - ঝগড়া করার চেষ্টা করল আর তুই কিছু বললি না। মারলি না ক্যান! ৩৪ টাকা দরে চাল কিনে খাওয়াচ্ছি তোদের। আর কেউ গায়ের উপর এসে কথা বলে যাবে আর তোরা ভ্যাদা মাছের মত চুপ করে থাকবি।

ভাবতেই লজ্জা লাগছে আমার। বাপের কথা শুনে আসিফ এবার সাহস পেল। গর্বের সাথেই সে সত্যি কথাটা বলে দিল। মামুন কে যে দুই চোয়ালে থাপড়েছে, মামুন থাপ্পড় খেয়ে তাকে একটা চড় মারতে আসল, সে কিভাবে ব্যাকটার্ন করে সেটা সামলানো, কিভাবে মামুনের পেটে কারাতি স্টাইলে একটা ব্লু মারল সব বলে ফেলল। গলায় আদর ফুটে ঊঠেছিল আসিফের।

কিন্তু বাপের মুখের দিকে তাকিয়ে কথা শেষ করতে পারল না। কালবৈশাখীর কালো মেঘের আভা ফুটে ঊঠেছে আবুর চেহারায়। আসিফ বুঝতে পারল এবার বজ্রপাত হবে। - ৩৪ টাকা দরের চাল কিনে খাওয়াচ্ছি তোদের। বাজার ঘেঁটে ছোট মাছ কিনে আনি।

আর খেয়ে দেয়ে ফিল্মী স্টাইলে মাস্তানী করে বেড়াও। ফের যদি কোনদিন শুনি মারামারি করেছিস তো লাথি মেরে সবগুলো দাঁত ফেলে দেব। আবুর মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। ইচ্ছে করছিল ছেলেটাকে উত্তমরুপে থাপরাতে। কিন্তু সহজে সে ছেলেদের গায়ে হাত তোলে না।

বড় ছেলের দিকে তাকিয়ে সে মিটমিট করে হাসছে। ছোট ভাইকে আব্বু বকা দিয়েছে বলে খুশী হওয়ার মত ছেলে আশিক নয়। - আশিক পড়া টেবিলে বসে অন্য দিকে খেয়াল যায় কেন! মন দিয়ে পড়। - অন্য দিকে না আব্বু। এই অংক টা দ্যাখো।

- কিসের অংক? - বয়সের অংক। বলছে পিতার বয়স পুত্রের বয়সের তিনগুন। পুত্রের বয়স ১৫ বছর হলে পিতার বয়স কত? - কেন, ৪৫ বছর হবে। হাসির কি আছে এতে। - আচ্ছা আব্বু ছেলের বয়স যখন ১ বছর ছিল তখন পিতার বয়স কত ছিল? ৩১ বছর? - হুম তাইতো।

- কিন্তু প্রশ্নমতে তো ৩ বছর হবে। আবু প্রথমে ধরতে পারেনি। এখন বুঝতে পেরে হাসি থামাতে পারল না। হো হো হাসির শব্দে কেঁপে উঠল পুরো বাড়ী। বারান্দার গ্রিলে ঝোলানো বাসায় বারান্দায় বসে পায়রাগুলো ডানা ঝাপ্টানো শুরু করেছে।

ছোট মাছের ভিটামিনে ছেলেদের মাথা ভালই খুলেছে। রান্নাঘর থেকে আসিফের মা গলা চড়িয়ে জিজ্ঞেস করল - কি হল তোমার? চেঁচাতে চেঁচাতে আবার হাসি শুরু করলে কেন? আবু হাসতে হাসতেই জবাব দিল, - পিতা-পুত্রের বয়সের অংক যদি বুঝতে তাহলে জানতে হাসি কেন। ৩ বছরের পিতার ১ বছরের ছেলে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.