আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিবাহ রঙ্গ!

আমি একাই পৃথিবী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম http://www.facebook.com/kalponikvalo বেশ কিছুদিন যাবত আমার এক বন্ধুর বিবাহ লইয়া অতিব ঝামেলার মধ্যে দিনানিপাত করিতেছি। প্রমান যোগ্যতা থাকা সত্বেও কেহই তাহার জন্য একটি যোগ্য পাত্রী খুঁজিয়া বাহির করিতে পারিতেছে না। কেমন পাত্রী তাহার পরিবারের পছন্দ সেই বিষয়ে তাহাকে বহুবার জিজ্ঞেস করিয়াও কোন স্পষ্ট ধারনা পাওয়া যায় নাই। আধুনিক যুগের ছেলে হওয়া সত্বেও কোন সফল বা অসফল প্রেম কোনটার সাথেই সে জড়িত ছিল না।

ইচ্ছে ছিল বাবা মার পছন্দ মতই সে বিবাহ করিবে। কিন্তু আমাদের সমাজে বিয়ের পাত্রী দেখিয়া আসার পর যেভাবে লাশের মত ওই পাত্রীর ব্যবচ্ছেদ করা হয় এবং ১০০ জনের মতামত চাওয়া হয়ে তাতে এর যাই হোক পাত্রী পছন্দ হয় না। হতে পারে আমার এই বন্ধুটিও এই ধরনের সামাজিক কোন রীতির কারনে 'সঠিক' পাত্রী খুঁজে পাচ্ছিল না। কিন্তু ইতিমধ্যে পরিচিত বন্ধুবান্ধব ও এলাকার ছোটভাই সহ অনেকই বিবাহ করিয়া ফেলায় তাহার জীবনটা অনেকটা দূর্বিষহ হইয়া উঠিল। বিবাহের ময়দানে নামিবার পূর্বে সুপাত্র হিসাবে নিজেকে লইয়া তাহার যে আত্মবিশ্বাস ছিল, বর্তমান প্রেক্ষাপটে তাহা বালির বাঁধ এর মতো চুরচুর করিয়া ভাঙ্গিয়া যাইতে লাগিল।

একদিন রাতে আমার বন্ধুর বাবা আচমকা ঘুম থেকে উঠিয়া তাহার মাকে ধরিয়া কাঁদিতে লাগিল। কাঁদিতে কাঁদিতে তিনি বলিতে লাগিলেন, 'ওগো, শুনছ, আমি কি সুন্দর আমার বউ কে লইয়া আরাম করিয়া ঘুমাইয়া আছি, আর আমার বিবাহযোগ্য ছেলেটা একলা শুইয়া আছে, কষ্টে আমার বুক ফাটিয়া যাইতেছে। যতদিন না আমার ছেলেকে আমি বিবাহ দিতে পারিতেছি তত দিন আমিও আমার বউ এর সাথে ঘুমাইব না। ' এহেন কথা শুনিয়া আমার বন্ধুর মা ও কাঁদিতে লাগিলেন। কাঁদিতে কাঁদিতে তিনি বলিলেন, 'এখন আর আমাকে তোমার ভালো লাগে না, তাই ছেলের বিয়ে কথা বলিয়া তুমি নিজেই আরও একটি বিবাহ করিতে চাইতেছ, আমি কি কিছুই বুঝি না? ছেলে কি আমার কাঁদিতেছে বিয়ের জন্য?' এইরুপ চিৎকার চেচামেচিতে আশেপাশের মানুষ জড়ো হইয়া গেল।

বাহির হইতে তাহারা শুনার চেষ্টা করিতে লাগিল ভিতরে কি হইতেছে। হঠাৎ একজন বলিয়া উঠিল, রহমান সাহেব (বন্ধুর বাবা) দ্বিতীয় বিবাহ করেছেন এবং প্রথম স্ত্রীকে বের করে দিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীকে ঘরে তুলিয়াছেন। আরো একজন বলিলো, রহমান সাহেব যৌতুকের জন্য তাহার স্ত্রীকে নির্যাতন করিতেছেন। চরম স্পর্শকাতর জনগন এহেন অন্যায় দেখিয়া বিক্ষোভে ফাটিয়া পড়িল। বিক্ষোভ ধীরে ধীরে রাস্তায়ও ছড়িয়ে পড়ল।

এবং তা একসময় অবরোধে রুপান্তরিত হইল। খবর পাইয়া সাংবাদিক, পুলিশ, মানবধিকারকর্মী সবাই আসিয়া উপস্থিত হইল। সবাই তাহাদের নির্ভরযোগ্য ও গোপন সুত্রের বরাত মারফত বিভিন্ন বক্তব্য দিতে লাগিলেন। নারীনেত্রীবৃন্দ সংবাদপত্রে বিবৃতি দিলেন তারা পপি বেগম ( আমার বন্ধুর মা) এর পাশে আছেন। পপি বেগম সই করা মাত্রই তাহারা রহমান সাহেবের বিরুদ্ধে বিবাহ বিচ্ছেদ এর মামলা শুরু করে দিবেন।

টিভিতে ব্রেকিং নিউজ বের হইলো, যৌতুকের কারনে স্বামীর পাশবিক নির্যাতনের স্বীকার চল্লিশোর্দ্ধো এক নারী। কোন কোন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হইল ইভটিজিং এর গঞ্জনা সইতে না পারিয়া চল্লিশোর্দ্ধো এক নারী আত্মহত্যার প্রচেষ্টা। এহেন অবস্থায় দেশের বিরোধী দল কঠিন এক বিবৃতি প্রদান করিলেন। তাহারা বলিলেন, এই সরকার দেশকে এমন এক অবস্থায় নিয়া গিয়াছে যেখানে নুন্যতম সামাজিক মুল্যবোধের কোন স্থান নাই। তাহাদের আমলে মানুষের মাঝে সামাজিক মুল্যবোধের এক অভুতপুর্ব জাগরণ সৃষ্টি হইয়াছিল।

অন্যদিকে সরকারী দল এটাকে বিরোধী দল কতৃর্ক সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট করার এক হীন প্রয়াশ বলে পাল্টা বিবৃতি প্রদান করিলেন। তারা এও বলিলেন, তাদের আমলে দেশের জনগনের ভিটামিন এ এর অভাব সম্পূর্ন দূর হইয়াছে। তাই চোখে কম দেখার দরুন কেউ যে চল্লিশোর্দ্ধো কোন নারীকে ইভটিজিং করিবেন সেটার কোন সম্ভবনা নেই এবং এটা যে সরকারকে বেকায়দাইয় ফেলার জন্যই বিরোধী দলের কাজ তা আজ দেশপ্রেমিক জনগন এর সামনে প্রমানিত। সরকারীদলের এরুপ নোংরা ও অরাজনৈ্তিক ভাষা ব্যবহারের প্রতিবাদে বিরোধীদল দেশপ্রেমিক সকল জনগনকে ২ দিন হরতাল পালন এর আহবান জানান। এখন যাহার বিবাহ লইয়া এইরুপ ঘটনা, আমার সেই বন্ধুটি এইসব কিছুই জানে না।

বেচারা অফিস এর ট্যুরে ৩ দিন দেশ এর বাইরে ছিল। দেশ এ ফিরিয়া তাহার বাসায় সামনে এত মানুষের ভিড় দেখিয়া কিছুটা অবাকই হইল এবং কিঞ্চিৎ অমঙ্গলের আশায় তাহার বুক কাপিয়া উঠিল। ঘটনা কি ঘটিয়াছে তাহা জিজ্ঞেশ করিতেই এলাকাবাসী সহানুভুতি প্রকাশ করিতে লাগিল। পরে সবার কাছে ঘটনা শুনিয়া আমার বন্ধু বাকরুদ্ধ হইয়া পড়িল। তাহার মা বা বাবা এখন কোথায় আছে তাহা জানিতে চাহিলে কেহই কিছু বলিতে রাজি হইল না।

এলাকার একজন ডাব বিক্রেতা, আমার বন্ধুটিকে একটি ডাব কাটিয়া দিয়া বলিল, ঘটনার রাত্রে তাহার মা বাবাকে ছোট ছোট করে কাটা চুলের কিছু লোক একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাসে করে তুলিয়া কোথায় যেন লইয়া গিয়াছে। এই সব শুনিয়ে আমার বন্ধুটি ডুকরে কাঁদিয়া উঠিল এবং উপস্থিত জনগন এর কাছে দাবি জানাইল তাহার বাবা মা কে যেন খুঁজিয়া বাহির করা হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এই কথা ছড়িয়ে পড়ল যে, জনাব রহমান এবং তাহার স্ত্রী পপি বেগম কে খুঁজে পাওয়া যাইতেছে না, কেহ তাহাদিগকে অপহরণ করিয়াছে। তাৎক্ষনিক ভাবে বিরোধী দলের নেতারা বলিলেন, আমার বন্ধুর মাতাপিতাকে গুম করা হইয়াছে। এই জালিম সরকার নির্যাতনের কাহিনী ধামাচাপা দিতেই তাহাদের গুম করিয়াছেন।

সুশীল সমাজ, মানবধিকারকর্মী সবাই এই ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করলেন। একজন বিশিষ্ট ও বয়োবৃদ্ধ আইনজীবী বলিলেন, যৌতুক এর কারনে রাগের মাথায় রহমান সাহেব পপি বেগমকে মারধর ও তালাক দিয়েছিলেন। তাই তাদের এক ঘরের নিচে থাকা বৈধ নয় দেখিয়া সরকার তাদেরকে তুলিয়া গোপন জায়গায় নিয়া গিয়াছে। সরকারের কাছে তাহার দাবি, সরকার যেন তাহাদের হিল্লা বিবাহ দিয়ে আবার যেন ফেরত দিয়া যায়। অন্যদিকে সরকারী দল এটাকে স্বামী স্ত্রীর নিজস্ব পারিবারিক মামলা বলে দাবি করলেন।

সরকারী দলের এক নেত্রী বলবেন, এটা তাদের ছেলের সাজানো নাটক, বিশ্বস্ত সুত্রে সরকার অবগত হয়েছেন যথা সময়ে ছেলের বিয়ে দেননি দেখে সে তার বাবা মা কে লুকিয়ে রেখেছে। এর বিরোধীদল এটা সুযোগ নিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ স্বীকার করার চেষ্টা করছে। এই বিবৃতি প্রকাশের কিছুক্ষন এর মধ্যে 'পপি-রহমান বাঁচাও' ঐক্যপরিষদের সভাপতি লুলু মিয়া আমার বন্ধুর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। এহেন মানসিক চাপ আর প্রচন্ড গরমে আমার বন্ধুটি জ্ঞান হারিয়ে পড়িয়া গেলে সবাই ধরাধরি করিয়া তাহাকে এক বাসায় লইয়া যায়। তাহাকে খানিক বিশ্রাম এর বন্দোবস্ত করিয়া সবাই বাসার বাইরে অপেক্ষা করিতে লাগিল।

এইদিকে জ্ঞান ফিরিবার পর তাহার নাকি প্রথমেই মনে হইয়া ছিল সে বোধহয় মারা গিয়াছে। কারন তার মুখের সামনে যে অতি সুন্দরী তরুনী দাঁড়িয়ে ছিল পৃথিবীর কোন মেয়ের পক্ষে এইরুপ্ সুন্দর হওয়া সম্ভব নয়। একমাত্র বেহেস্তই এই রকম সুন্দরী মেয়ে পাওয়া সম্ভব। এটা নিশ্চয় হূরপরী। কিন্তু হূরপরীর সাথে মেয়েটার কি যেন মিলছিল না।

ভালোভাবে লক্ষ্য করার পরই পাথর্ক্যটা বুঝা গেল। হুরপরীদের দৃষ্টি তে থাকে একটা প্রেম প্রেম ভাব আর এই মেয়েটার দৃষ্টিতে রয়েছে কটমটে একটা ভাব। হঠাৎ এই কটমটে দৃষ্টির হূরপরীটি আমার বন্ধুর সাথে, কথা কহিয়া উঠিল। বলিল, ' আমি আপনাকে গাধা বলিয়া জানিতাম, কিন্তু আপনি যে মহা গাধা এটা জানিতাম না। চিলে এ কান লইয়া গিয়াছে বলে আপনি কান না দেখেই চিলের পিছন এ দৌড়াচ্ছেন? আপনার বাবা মা নিখোঁজ, কোন আত্মীয় বা অন্য কার বাসায় কি খবর লইয়াছিলেন? শুধু মানুষের কথায় আপনি বিশ্বাস করে আপনি নিজে পেরেশান হচ্ছেন।

। নিজের বাসায় কি গিয়েছেন আপনি? বা তাদের মোবাইল এ কি একবারও ফোন দিয়েছিলেন? মেয়েটার কথা শুনে বন্ধু আমার লাফিয়ে উঠল। ব্যাপারটি তো সত্যি। এই সাধারন কথাটা একবারও তার মাথায় আসলো না। হঠাৎ মেয়েটিকে কেন যেন আমার বন্ধুর বেশ পরিচিত মনে হয়।

ভাল করে লক্ষ্য করে আবিষ্কার করল এটা তো তাদের পাশের বাসার জামাল চাচার মেয়ে মারিয়া! এই মেয়ে এত সুন্দর হলো কবে? কবেই বা এত বড় হলো? বাড়ির সামনে কুয়া রেখে ও কিনা পানির জন্য সারা দেশে হাহাকার করে বেড়াচ্ছে! এটা ভাবতে ভাবতে বন্ধু আমার দ্বিতীয় বারের মত জ্ঞান হারালো। জ্ঞান ফিরে বন্ধু দেখিলো, সে তাহার মা এর কোলে মাথা রাখিয়া শুইয়া আছে। সামনে তাহার বাবা রহমান সাহেব, মারিয়া, জামাল চাচা আর চাচি দাঁড়াইয়া আছেন। রহমান সাহেব গল্প করিতেছেন, তাহারা স্বামী স্ত্রী ঝগড়া করছিল, হঠাৎ বাইরে ব্যাপক লোক সমাগম দেখিয়া তাহার ঘাবড়ে যান এবং লাইট বন্ধ করিয়া ঘুমিয়ে পড়েন। সকাল এ ঘুম থেকে উঠিয়া দেখেন যে তখনও বাসার বাইরে অনেক মানুষ জন, তিনি ভাবিয়াছিলেন বোধহয় কোন রাজনৈতিক দলের কর্মসুচি।

তাই অহেতুক গোলযোগের আশংকায় বাড়ি হইতে বাহির না হইবার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু তাদেরকে ঘিরিয়া যে এত বড় কিছু ঘটিবে তাহার নূন্যতম ধারনা উনাদের ছিল না। কিছুক্ষন আগে মারিয়া গিয়া তাহাদের সমস্ত ঘটনা খুলিয়া বলিলে তাহারা যারপরনাই অবাক হইয়া এইখানে ছুটিয়া আসেন। পরিশিষ্টঃ মারিয়া কে দেখিয়া রহমান সাহেব দম্পতির বেশ পছন্দ হয়। রহমান সাহেব বলিলেন, এই রকম একটি মেয়ের সন্ধান এ তাহারা কতকিছুই না করিয়াছেন।

কারও মতামত এর দরকার নাই। এই মেয়ের সাথেই তিনি তার ছেলের বিয়ে দিবেন। জামাল সাহেব আর রহমান সাহেব বিয়ে নিয়ে কথা বলিতে অন্য কামরায় চলিয়া গেল। বন্ধু আমার এখন আর মারিয়ার চোখে কটকটে দৃষ্টির না দেখিয়া প্রেম প্রেম দৃষ্টি দেখিতে পাইল। আবার তাহার মাথা ঘুরিতে লাগিল।

শেষমেশ কিনা তাহার হূরপরীর সাথেই বিবাহ হইতেছে। এই গুম নাটকের অবসান নিয়ে রাজনৈ্তিক দল গুলো কি বিবৃতি প্রদান করিল সেটা না হয় অন্য কোন দিন বলিব। ** এই গল্পের সমস্ত চরিৎ কাল্পনিক। বাস্তবের কাহারো সাথে মিলিয়া গেলে সেটা হইবে নিতান্তই কাকতালীয়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।