আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আজো ডানা-ভাঙ্গা একটি শালিক হৃদয়ের দাবি রাখো...

চুপ! [১] ইদানীং আর নিজেকে একা ভাবতে পারছি না! যে আত্মপ্রত্যয় আর দম্ভ নিয়ে বলতে পারতাম, আমি একা;সেই অহংকারটাকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না! কেন যেন মনে হচ্ছে, সারাক্ষণই আমার সাথে কেউ আছে, আমার পাশে পাশে, নিশীথে-দিবসে! এমনকি সেই উতসবের দিন…পহেলা বৈশাখ না কি অন্য কিছু-র দিনে ভীষণ ভীড়ে হঠাৎ করে আসা দুঃসংবাদে ভেঙ্গে পড়ে আমি যখন একা, একদম একা বসে আছি; মনে হলো কেউ একজন খুব কাছে থেকে আমার হাতটা ধরে আমাকে বার বার বলছে- 'ভয় নেই, মিশু! আমি আছি না! সব ঠিক হয়ে যাবে, ইনশাল্লাহ!' সে ভাবল আমার নিঃসঙ্গতা'য় সাথী হল, অথচ আমি জানি- আমার আজন্মলালিত 'এককীত্ম' এর সৌন্দর্য-কে বিসর্জন দিলাম... [২] কতটুকু ভালবাসলে কাউকে বলা যায়- যা চাইবে তার সবই দেবো আমি! সেই যেদিন ছোট্ট মেয়ে আমি ঘরের বাইরে পা দিলাম প্রথম, বাবা মাথায় হাত রেখে বললেন- 'মা, যা চাইবে তা-ই দেবো আমি যতক্ষণ সৃষ্টিকর্তা সহায় হন! কখনো-ই কারণ জানতে চাইবো না!' এই যে চাওয়ার স্বাধীনতা, যা চাইব তা-ই পাওয়ার আশ্বাস- তা-ই বোধ হয় কৃপণ করে ফেলে আমায়, আমি আর চাইতে পারি না! যিনি দাতা, তিনি জানেন চাওয়ার লজ্জা আর তা-ই তো দেয়ার বেলায় তিনি আরো অকৃপণ, আরো উদার! আজকাল ভালবাসা-কে বড় বেশী মোবাইল কোম্পানি-র অফারের মতো মনে হয়! তোমার যা যা চাই তার সব-ই পাবে আমার কাছে, তবে 'শর্ত প্রযোজ্য'! এই লেখাটা হয় তো খুব সুন্দর করে লুকিয়ে রাখা যায় অথবা আমরা লোভী, লোভে পড়লে অন্ধ হয়ে শর্ত'টা আর দেখতে পাই না, ছুটে যাই! নিঃশর্তে পাওয়ার যে আশ, তাতে খোয়াতে হয় অনে-ক বেশী; লোভে যে পাপ হয়, আর পাপে সর্বনাশ... অথবা আমি হয় তো আরো খারাপ…… দেয়ার বেলায় চাইছি হাজার শর্ত মানা, আর নেয়ার বেলায় নিচ্ছি বুঝে ষোল আনা! তার হয় তো আমার কাছে একটা-ই শর্ত, তবে আমার শর্ত হাজারো! চলো, জলেতে নামি তবে পানি ছোঁব না ……খড়কুটো ঠোঁটে নিয়ে ওই আকাশটাতে পাখী হবো আমরা, ঘর বাঁধবো না…...এসো, বৃষ্টিতে ভিজি, জলের চিহ্ন রাখবো না... প্রত্যাশাহীন ভালোবাসা কেউ শিখি নি আমরা!! যদি কোনদিন কেউ নিঃশর্তে এই আমাকে ভালবাসে, শুধু আমাকেই… আর ভালোবাসা প্রকাশে হতে পারে দ্বিধাহীন অথবা… অথবা যেদিন আমি তাকে নিঃশর্তে ভালোবাসতে পারব, যা চাইবে তা-ই দিতে এই মন হতে পারবে দ্বিধাহীন… সেদিন তাকে বলবো- এই দেখো,…আমি এলেম তোমার দ্বারে… তার কাছে হয় তো আমি-ই শেষ, কিন্তু সে-ই আমার একজনা! [৩] সারাদিনের ক্লান্তি শেষে সূর্য যখন তার ঝাঁপি বন্ধ করে আপন দেশে ফিরে যায়, পাখীরাও নীড়ে ফেরে আর দু’টো মানুষ একটু পাশাপাশি বসে থাকার আশায় ব্যাকুল হয়, এই যে অনুভূতি- এর কি কোন নাম আছে? কোন প্রতিশ্রুতি ছাড়া ক্ষণিক সময়ের এ পাশাপাশি থাকা-র প্রত্যাশা বুঝি অপরাধ? তোমরা কি একে ভালোবাসা বলো? আমি ভাবি, সংজ্ঞার কি দরকার, যতক্ষণ মনে আছে আশ!! কী জানি- তার সাথে পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে …এই পথ যদি না শেষ হয়… অথবা প্রহর শেষের রাঙ্গা আলোয় চোখে চোখ পড়লেই… তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ…… মনে না হওয়াটা হয় তো আমার অন্যায়, আমি যে ভালবাসতে জানি না! আমি জানি, বন্ধুরা চলে যায়…জীবন থেমে থাকে না…কাছের বন্ধু শহর ছাড়ে আর প্রাণের বন্ধু যায় ভিনদেশে, প্রিয় সবুজ, কুয়াশার চাদর বা বৃষ্টিভেজা প্রান্তর…একসাথে হাঁটা, গল্প-গানে মেতে ওঠা সময় শুধু চলে যাওয়ার আর ফিরে না আসার…তবু কেন ইদানীং এই জানাটাকে মাঝে মাঝে-ই ভুল জানা মনে হয়? ! তাকে যদি পেতে না-ই চাই, তবে হারাবার ভয় কেন মনে অহর্নিশ? [৪] কিছুদিন থেকে মনের কষ্ট’টা যখন প্রায়ই অসহনীয় হয়ে উঠছে, শরীরের কষ্টটা যেন তাতে মলমের কাজ করছে! এতদিনে যেন বন্ধুর হাতে ব্লেডের আঁকিবুকি-র রহস্য স্পষ্ট হলো, বুঝেই পেতাম না মানুষ শরীরকে কষ্ট দেয় কীভাবে! শিউরে উঠতাম রীতিমত! সেই আমি আজকাল মাঝে-মাঝেই ভাবছি কাটাকুটি-র যে শিল্প তার ক্যানভাস হিসেবে হাতটাকে ব্যবহার করলে কেমন হয়, তাতে হয় তো মনের তীব্র দহনের জ্বালা একটু হলেও জুড়োবে! শরীরের কষ্টের অনুভূতি-কে বুঝতে পারলেও শরীরের ভালোবাসা বুঝতে যে আমার ভীষণ বিবমিষা! তাকে কখনো-ই হয় তো বলা হবে না, শরীরের ভালোবাসা আমি ঘৃণা করি!আমার এ কথা শুনে তোমরা বিরক্ত হচ্ছ হয়তো, আমি জানি- জানলে সে-ও বিরক্ত হবে অমনি… তোমরা যাকে পুস্তকের ভালোবাসা বলো, ইংরেজীতে যাকে বলো platonic love…আমি বাংলায় বলবো- বিমূর্ত ভালোবাসা…তার আকার-প্রকার কী জানি না, তবে তার পূজারী আমি! জানি সেই মানুষটাকে কাছে না পেলেও সে আমার সাথে আছে অহর্নিশ, তাকে ছুঁয়ে না দিলেও অনুভবে আমার মনকে স্পর্শ করে থাকবে সে আজীবন… বা আমি যত দূরেই যাই না কেন…ঠিক ঠিক জানব, ফিরে আসব একদিন তার-ই কাছে… এই মানুষটার হয় তো সত্যিকারের অস্তিত্ব তখন অন্য কারো বুকে, বা তার বুক-পকেটে ভিন্ন কারো ছবি… কী এসে যায় তাতে!... সব সুন্দর সম্পর্কের পরিণতি কেন হতে হবে 'বিয়ে'? থাকুক না কিছু অনামা, অসংজ্ঞায়িত অথচ অসাধারণ সম্পর্ক......দলিলে দস্তখত করে অথবা তিনবার কবুল বলে শরীরের ভালবাসা-র সার্টিফিকেট যে আমি পেতে চাই না…… [৫] সেই যে ভালোবাসা-র দৌড় প্রতিযোগিতা হলো একদিন- দৌড়ে যে জিতবে সে-ই বেশী ভালোবাসে! তুমি বরাবরই ছিলে এগিয়ে, খানিক স্থুল হয়ে যাওয়া শরীরে আমি অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠছিলাম। হঠাৎ করেই থেমে গেলে তুমি- ভালবাস কি না সংশয় ছিল মনে? নইলে জিজ্ঞেসই বা করছিলে কেন- আচ্ছা? সত্যি সত্যি বলো, কে বেশী ভালবাসে? তুমি না আমি? আমি তো হেসেই খুন, আমি কি আর ভালবাসতে জানি! কিন্তু তোমাকে স্থবির দেখেই দুষ্ট বুদ্ধি চাপল মাথায়, এক দৌড়ে এগিয়ে গেলাম সামনে, ছুঁয়ে দিলাম লাল ফিতা! আচ্ছা, সত্যি আসলে সেদিন কে জিতেছিল- তুমি না আমি? আমি না তুমি? আমি জানি না কে জিতেছিল, নিজেকে-ই যে চিনি না! বুকের ভেতরের টলটলে স্বচ্ছ জলের কুয়োতে চোখ মেলে তাকালে কদিন আগেও যেন এর অনেক গভীরের তলায় পড়া স্বর্ণমুদ্রাটাকে স্পষ্ট চকচক করতে দেখতে পেতাম! আজকাল হঠাৎ হঠাৎই কেন যে কুয়োর জল চলকে ওঠে ঝাপ্সা হয়ে যায়, আবছাভাবে তাতে যেন কীসের আনাগোনা দেখা যায়! আমি বুঝি না, একদম-ই বুঝতে পারি না। কতটুকু বুঝলে কাউকে ভালোবাসা যায়? অথবা কতখানি ভালোবাসলে তার ভেতরে প্রতিনিয়ত বয়ে চলা স্বচ্ছ স্রোতস্বিনীকে দেখতে পাওয়া যায়? কে যেন বলেছিল, বন্ধুত্বে যখন শরীর আসে তা-ই নাকি প্রেম! আমি ঠিক ঠিক জানি, বন্ধুত্ব যখন শরীরের অনেক ঊর্ধ্বে ওঠে, তখনই সেটা প্রেম,………সকল গল্প আর দ্বিধা-দ্বন্দ্বের পরিসমাপ্তি হয় সেখানে...… [চতুর্মাত্রিকে প্রকাশিত এবং কিঞ্চিত পরিমার্জনের পর সামুতে প্রকাশ করা হলো]


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।