আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বই সাম্রাজ্যের সম্রাট এক প্রকাশক শ্রীচিত্তরঞ্জন সাহা

শুচি সৈয়দ প্রতি বছর বইমেলা আসে আর আমি অবাক হয়ে ভাবিÑ আমরা বাঙালিরা কত ভণ্ড আর আÍপ্রতারক! স্বাধীনতার পর চটের ওপর বই বিছিয়ে বই প্রদর্শনী করে বই বিক্রির মধ্য দিয়ে বইমেলার সূচনা করেছিলেন যে চিত্তরঞ্জন সাহা তার প্রবর্তিত বইমেলা এখন কর্পোরেট সংস্কৃতির যুগে পৌঁছেছে। কর্পোরট প্রতিষ্ঠানগুলো আজকাল স্পন্সর হচ্ছে বইমেলার, বইমেলা আকারে, আকৃতি এবং কলেবরে দীর্ঘ হয়েছেÑ এক কথায় পা-মাথা-দেহ সবকিছুই তার মোটা হয়েছেÑ সঙ্গে সঙ্গে হƒদয়ও। বইমেলা সব দিকে এমন মোটা হয়েছে যে শেষ পর্যন্ত তা আক্ষরিক অর্থে স্থূল হয়ে উঠেছে। বইমেলা এলে নানা কথাবার্তা, গোলটেবিল শুরু হয়। প্রকাশকরা অভিযোগ করেন লেখক, বাংলা একাডেমীর বিরুদ্ধে।

আর লেখকরা প্রকাশকদের বিরুদ্ধে। এসবই চলছে গত প্রায় ত্রিশ বছর ধরে। কার্যকর কোন উন্নতি দেখছি না। গায়ে-গতরে মোটা হওয়া ছাড়া। এবারের মেলায় আমার দুটি বই বের হয়েছে।

এক অনুজপ্রতিম সাংবাদিক ফোন করে জানতে চাইল, আপনার মেজাজ নিশ্চয়ই ফুরফুরে, দুটি বই বের হয়েছেÑ আমি তাকে বললাম, অফ দ্য রেকর্ডÑ ভাইরে, আমার তো কাঁদতে ইচ্ছা করছে দরজা লাগিয়েÑ এ কথা শুনে আমার বইয়ের চিত্রশিল্পী বললেন, আপনি তো কেঁদে পার পেতে চান, আমার তো মনে হচ্ছে মাটি যদি ফাঁক হতো তবে আমি সেখানে মুখ লুকাবার জায়গা পেতাম! কেন এ অবস্থা? এ অবস্থা এজন্য যে বাংলাদেশে বর্তমানেÑ এই একুশ শতকের দ্বিতীয় যুগের সূচনায়Ñ সত্যিকার অর্থে কোন ‘প্রকাশক’ নেই। আছে বুক সাপ্লায়ার। সাড়ে সাত কোটি মানুষের দেশে প্রকৃত, সত্যিকার প্রকাশক জšে§ছিলেন একজনই তার নাম শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহা। প্রকাশনায় নিবেদিত প্রাণ এ ভদ্রলোক তার নামের শেষের বংশ পদবিটি সার্থক করে ছিলেন সম্পূর্ণ বিপরীত অর্থে। তিনি অর্থগৃধœ– ছিলেন না, ছিলেন মেধাগৃধœ–।

দেশের আনাচে কানাচে সন্ধান চালিয়ে খুঁজে খুঁজে মেধাবী সন্তানদের বের করতেন। তাদের মেধাকে কাজে লাগাতেনÑ কাজে লাগিয়ে সেই মেধাকে সামাজিক অগ্রগতির ইঞ্জিনে পরিণত করতেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি কোন ব্যক্তির অনুসারী, শিষ্য, সাগরেদ কিংবা ভক্ত হওয়ার বিরোধী কিন্তু তা সত্ত্বেও মনে করি যদি এই লোকটির শিষ্য হওয়ার যোগ্যতা আমি অর্জন করতাম তাহলে নিজেকে সামান্য হলেও সার্থক মনে করতাম। প্রচণ্ডভাবে সফল-সার্থক দেশের একমাত্র প্রকাশক শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহা যিনি মুক্তধারা নামক প্রকাশনা সংস্থাটির জš§ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়েÑ যাকে বলে একেবারে রণক্ষেত্রেÑ মুক্তিযুদ্ধের একটি সেক্টর রূপেÑ তাকে আমরা তার প্রাপ্য সম্মান দিইনি। আমি হাজার ভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারি ভবিষ্যৎ প্রজš§ আমাদের এ কৃপণতার কথা বলবে।

আর যাকে বলেÑ প্রদীপের নিচে অন্ধকার সেই অন্ধকারকেই আমরা দেখতে পাই বর্তমান মুক্তধারা প্রকাশনাকে যার বর্তমান নির্বাহী তারই শ্যালক শ্রী জহর লাল সাহা নামে জনৈককে। নজরুলের একটি কবিতায় আছে, ‘লক্ষ বছর জলে ডুবে থেকে জল পায়নিকো নুড়ি’Ñ জল পাননি আÍীয় জহর লাল সাহা। জল পায়নি বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতের অন্য কোন প্রকাশকও। এই অসাধারণ লোকটির কথা ভাবলে আমি বিস্ময়ে বিস্ময়াভূত হয়ে যাই। বইকে তিনি সারা বাংলাদেশেরÑ পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলের এ দেশের-আনাচে-কানাচে পৌঁছে দিয়েছিলেন।

টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়াÑ আমরা সে­াগান দিইÑ মিথ্যাÑ আর তিনি কাজ করেছিলেনÑ সত্য। বাংলাদেশের এমন একটি গ্রাম ছিল না যে গ্রামে তার টিনের সাইন বোর্ড পেরেক দিয়ে গাছের সঙ্গে আটকানো ছিল নাÑ পুঁথিঘরের বই পড়–ন। অথবা মুক্তধারার বই পড়–ন। পুরনো উনিশটি জেলা শহরের প্রায় সবক’টিতে তার নিজস্ব বই বিক্রি ও বিপণনের জন্য বিক্রয় কেন্দ্র ছিল। দেশের সব স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় ডাকযোগে পাঠিয়ে দিতেন বইয়ের তালিকা।

কাকে বলে প্রকাশক কাকে বলে লেখক, কাকে বলে সম্পাদক, কাকে বলে শিক্ষার্থী, পাঠক-গ্রাহক-এজেন্টÑ কার কি কাজ তা তিনি হাতে কলমে করে দেখিয়ে দিয়ে গেছেনÑ আজও তার প্রদর্শিত পথের হাজার ভাগের এক ভাগ কেউ অর্জন করা তো দূরে থাক অনুসরণ করারও চেষ্টা করেননি। প্রকাশনা একটি মহান পেশা সেটি যে কত মহান তা তিনি স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু এদেশের কেউ তার দেখানো পথে হাঁটেনি, হাঁটার যোগ্যতা নেই কারও। এদেশে প্রকাশক হওয়ার চেয়ে সহজ কোন কাজ নেই। ফলে বই বাঁধতে বাঁধতে বাইন্ডাররাও প্রকাশক হয়ে গেছে।

বায়লাবাজারের চা টানা টোকাইরা প্রকাশক বনে গেছে। তারা দাবি করে এটি তাদের ‘বংশীয়’ পেশাÑ তারাও ছেপে বের করে রবীন্দ্র রচনাবলী, শরৎ রচনাবলী মায় সত্যজিৎ রায়ের রচনাবলী পর্যন্ত। সত্যজিৎ রায়ের স্বজন, উত্তরসূরিদের না জানিয়ে ছাপা সেই রচনাবলী বেচার জন্য আবার পসরা সাজায় কলকাতা বইমেলার মাঠেও। সেখানে গিয়ে দেশকে গঙ্গায় ডুবিয়ে দেশে ফেরে। যে দেশে দারোয়ান হয়ে যায় বাড়িওয়ালা সে দেশে সবই সম্ভব।

বাইন্ডাররা আজ ‘বংশীয়’ প্রকাশক! তারা শিল্পীর সম্মানী দেয় না, লেখকের রয়্যালিটি দেয় নাÑ সম্পাদক কাকে বলে, সম্পাদনা পরিষদ কি জিনিস তা জানে নাÑ এই তাদের বংশ গৌরব! শ্রীচিত্তরঞ্জন সাহা লজ্জা পেতেন এদের দৌরাÍ্য দেখলে। লজ্জা পেতেন তার নিজের হাতে গড়া মুক্তধারার চেহারা দেখলেও। এই কর্মবীর নিঃসন্তান মানুষটি কেন যে মুক্তধারাকে একটি ট্রাস্ট করে দিয়ে যেতে পারলেন না তা আমার বোধে আসে না। সেটা তিনি করতে পারলে আজ তাকে মরণোত্তর লাঞ্ছনার শিকার হতে হতো নাÑ তারই গড়া প্রতিষ্ঠান, তাকে যেন উপহাস করছে। কত অসাধারণ দূরদর্শী এবং আধুনিক ছিলেন শ্রীচিত্তরঞ্জন সাহা।

তার প্রকাশনা থেকে বেরুনো লেখকদের এক কপি বই বিক্রি হলেও বছর শেষে হিসাব করে রয়্যালিটির প্রাপ্য টাকা এবং চিঠি পাঠিয়ে দিতেন। এখন যারা প্রকাশনা ব্যবসা করেনÑ প্রকাশক তাদের বছরের কোন শুরুও নেই, শেষও নেইÑ ফেব্র“য়ারি মাসে তারা কেবল একটু লম্ফ ঝম্ফ করে মেলা আর প্রডাকশন হাউস তারপর জেগে জেগে ঘুম কিংবা ‘বংশীয়’ কাজ সম্পন্ন করা শুধু! বনেদী বংশীয় বলে কথা!! শ্রীচিত্তরঞ্জন সাহা বইয়ের প্রচারণার যে পথটি দেখিয়ে গেছেন সে পথটিও এরা অনুসরণ-অনুকরণ করতে পারে না। বই বের হয়ে গেলে তিনি প্রত্যেকটি বই দুই কপি করে দেশের সবগুলো প্রধান দৈনিকের সম্পাদক, সাহিত্যসম্পাদক বরাবর পাঠিয়ে দিতেনÑ শুধু পাঠিয়ে দেওয়া নয়, সেটার যাতে আলোচনার ব্যবস্থা হয় সেটা করার জন্রে তাদের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ রাখতেন, এক অলিখিত আÍীয়তে পরিণত হয়েছিলেন তিনি বইয়ের জগতের সব মানুষের। বেিয়র সাম্রাজ্যের এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী সম্রাট এই মানুষটিকে বাংলাদেশের বইয়ের জগৎ কোনদিনই ভুলতে পারবে না। কেননা তিনি তাপর সমস্ত চিত্ত দিয়ে বাংলাদেশী সমস্ত পাঠকের চিত্তকে রঞ্জিত করেছিলেন বইয়ের রঙে, বইয়ের বিভায়।

শুচি সৈয়দ প্রতি বছর বইমেলা আসে আর আমি অবাক হয়ে ভাবিÑ আমরা বাঙালিরা কত ভণ্ড আর আÍপ্রতারক! স্বাধীনতার পর চটের ওপর বই বিছিয়ে বই প্রদর্শনী করে বই বিক্রির মধ্য দিয়ে বইমেলার সূচনা করেছিলেন যে চিত্তরঞ্জন সাহা তার প্রবর্তিত বইমেলা এখন কর্পোরেট সংস্কৃতির যুগে পৌঁছেছে। কর্পোরট প্রতিষ্ঠানগুলো আজকাল স্পন্সর হচ্ছে বইমেলার, বইমেলা আকারে, আকৃতি এবং কলেবরে দীর্ঘ হয়েছেÑ এক কথায় পা-মাথা-দেহ সবকিছুই তার মোটা হয়েছেÑ সঙ্গে সঙ্গে হƒদয়ও। বইমেলা সব দিকে এমন মোটা হয়েছে যে শেষ পর্যন্ত তা আক্ষরিক অর্থে স্থূল হয়ে উঠেছে। বইমেলা এলে নানা কথাবার্তা, গোলটেবিল শুরু হয়। প্রকাশকরা অভিযোগ করেন লেখক, বাংলা একাডেমীর বিরুদ্ধে।

আর লেখকরা প্রকাশকদের বিরুদ্ধে। এসবই চলছে গত প্রায় ত্রিশ বছর ধরে। কার্যকর কোন উন্নতি দেখছি না। গায়ে-গতরে মোটা হওয়া ছাড়া। এবারের মেলায় আমার দুটি বই বের হয়েছে।

এক অনুজপ্রতিম সাংবাদিক ফোন করে জানতে চাইল, আপনার মেজাজ নিশ্চয়ই ফুরফুরে, দুটি বই বের হয়েছেÑ আমি তাকে বললাম, অফ দ্য রেকর্ডÑ ভাইরে, আমার তো কাঁদতে ইচ্ছা করছে দরজা লাগিয়েÑ এ কথা শুনে আমার বইয়ের চিত্রশিল্পী বললেন, আপনি তো কেঁদে পার পেতে চান, আমার তো মনে হচ্ছে মাটি যদি ফাঁক হতো তবে আমি সেখানে মুখ লুকাবার জায়গা পেতাম! কেন এ অবস্থা? এ অবস্থা এজন্য যে বাংলাদেশে বর্তমানেÑ এই একুশ শতকের দ্বিতীয় যুগের সূচনায়Ñ সত্যিকার অর্থে কোন ‘প্রকাশক’ নেই। আছে বুক সাপ্লায়ার। সাড়ে সাত কোটি মানুষের দেশে প্রকৃত, সত্যিকার প্রকাশক জšে§ছিলেন একজনই তার নাম শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহা। প্রকাশনায় নিবেদিত প্রাণ এ ভদ্রলোক তার নামের শেষের বংশ পদবিটি সার্থক করে ছিলেন সম্পূর্ণ বিপরীত অর্থে। তিনি অর্থগৃধœ– ছিলেন না, ছিলেন মেধাগৃধœ–।

দেশের আনাচে কানাচে সন্ধান চালিয়ে খুঁজে খুঁজে মেধাবী সন্তানদের বের করতেন। তাদের মেধাকে কাজে লাগাতেনÑ কাজে লাগিয়ে সেই মেধাকে সামাজিক অগ্রগতির ইঞ্জিনে পরিণত করতেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি কোন ব্যক্তির অনুসারী, শিষ্য, সাগরেদ কিংবা ভক্ত হওয়ার বিরোধী কিন্তু তা সত্ত্বেও মনে করি যদি এই লোকটির শিষ্য হওয়ার যোগ্যতা আমি অর্জন করতাম তাহলে নিজেকে সামান্য হলেও সার্থক মনে করতাম। প্রচণ্ডভাবে সফল-সার্থক দেশের একমাত্র প্রকাশক শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহা যিনি মুক্তধারা নামক প্রকাশনা সংস্থাটির জš§ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়েÑ যাকে বলে একেবারে রণক্ষেত্রেÑ মুক্তিযুদ্ধের একটি সেক্টর রূপেÑ তাকে আমরা তার প্রাপ্য সম্মান দিইনি। আমি হাজার ভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারি ভবিষ্যৎ প্রজš§ আমাদের এ কৃপণতার কথা বলবে।

আর যাকে বলেÑ প্রদীপের নিচে অন্ধকার সেই অন্ধকারকেই আমরা দেখতে পাই বর্তমান মুক্তধারা প্রকাশনাকে যার বর্তমান নির্বাহী তারই শ্যালক শ্রী জহর লাল সাহা নামে জনৈককে। নজরুলের একটি কবিতায় আছে, ‘লক্ষ বছর জলে ডুবে থেকে জল পায়নিকো নুড়ি’Ñ জল পাননি আÍীয় জহর লাল সাহা। জল পায়নি বাংলাদেশের প্রকাশনা জগতের অন্য কোন প্রকাশকও। এই অসাধারণ লোকটির কথা ভাবলে আমি বিস্ময়ে বিস্ময়াভূত হয়ে যাই। বইকে তিনি সারা বাংলাদেশেরÑ পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলের এ দেশের-আনাচে-কানাচে পৌঁছে দিয়েছিলেন।

টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়াÑ আমরা সে­াগান দিইÑ মিথ্যাÑ আর তিনি কাজ করেছিলেনÑ সত্য। বাংলাদেশের এমন একটি গ্রাম ছিল না যে গ্রামে তার টিনের সাইন বোর্ড পেরেক দিয়ে গাছের সঙ্গে আটকানো ছিল নাÑ পুঁথিঘরের বই পড়–ন। অথবা মুক্তধারার বই পড়–ন। পুরনো উনিশটি জেলা শহরের প্রায় সবক’টিতে তার নিজস্ব বই বিক্রি ও বিপণনের জন্য বিক্রয় কেন্দ্র ছিল। দেশের সব স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় ডাকযোগে পাঠিয়ে দিতেন বইয়ের তালিকা।

কাকে বলে প্রকাশক কাকে বলে লেখক, কাকে বলে সম্পাদক, কাকে বলে শিক্ষার্থী, পাঠক-গ্রাহক-এজেন্টÑ কার কি কাজ তা তিনি হাতে কলমে করে দেখিয়ে দিয়ে গেছেনÑ আজও তার প্রদর্শিত পথের হাজার ভাগের এক ভাগ কেউ অর্জন করা তো দূরে থাক অনুসরণ করারও চেষ্টা করেননি। প্রকাশনা একটি মহান পেশা সেটি যে কত মহান তা তিনি স্পষ্ট করে দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু এদেশের কেউ তার দেখানো পথে হাঁটেনি, হাঁটার যোগ্যতা নেই কারও। এদেশে প্রকাশক হওয়ার চেয়ে সহজ কোন কাজ নেই। ফলে বই বাঁধতে বাঁধতে বাইন্ডাররাও প্রকাশক হয়ে গেছে।

বায়লাবাজারের চা টানা টোকাইরা প্রকাশক বনে গেছে। তারা দাবি করে এটি তাদের ‘বংশীয়’ পেশাÑ তারাও ছেপে বের করে রবীন্দ্র রচনাবলী, শরৎ রচনাবলী মায় সত্যজিৎ রায়ের রচনাবলী পর্যন্ত। সত্যজিৎ রায়ের স্বজন, উত্তরসূরিদের না জানিয়ে ছাপা সেই রচনাবলী বেচার জন্য আবার পসরা সাজায় কলকাতা বইমেলার মাঠেও। সেখানে গিয়ে দেশকে গঙ্গায় ডুবিয়ে দেশে ফেরে। যে দেশে দারোয়ান হয়ে যায় বাড়িওয়ালা সে দেশে সবই সম্ভব।

বাইন্ডাররা আজ ‘বংশীয়’ প্রকাশক! তারা শিল্পীর সম্মানী দেয় না, লেখকের রয়্যালিটি দেয় নাÑ সম্পাদক কাকে বলে, সম্পাদনা পরিষদ কি জিনিস তা জানে নাÑ এই তাদের বংশ গৌরব! শ্রীচিত্তরঞ্জন সাহা লজ্জা পেতেন এদের দৌরাÍ্য দেখলে। লজ্জা পেতেন তার নিজের হাতে গড়া মুক্তধারার চেহারা দেখলেও। এই কর্মবীর নিঃসন্তান মানুষটি কেন যে মুক্তধারাকে একটি ট্রাস্ট করে দিয়ে যেতে পারলেন না তা আমার বোধে আসে না। সেটা তিনি করতে পারলে আজ তাকে মরণোত্তর লাঞ্ছনার শিকার হতে হতো নাÑ তারই গড়া প্রতিষ্ঠান, তাকে যেন উপহাস করছে। কত অসাধারণ দূরদর্শী এবং আধুনিক ছিলেন শ্রীচিত্তরঞ্জন সাহা।

তার প্রকাশনা থেকে বেরুনো লেখকদের এক কপি বই বিক্রি হলেও বছর শেষে হিসাব করে রয়্যালিটির প্রাপ্য টাকা এবং চিঠি পাঠিয়ে দিতেন। এখন যারা প্রকাশনা ব্যবসা করেনÑ প্রকাশক তাদের বছরের কোন শুরুও নেই, শেষও নেইÑ ফেব্র“য়ারি মাসে তারা কেবল একটু লম্ফ ঝম্ফ করে মেলা আর প্রডাকশন হাউস তারপর জেগে জেগে ঘুম কিংবা ‘বংশীয়’ কাজ সম্পন্ন করা শুধু! বনেদী বংশীয় বলে কথা!! শ্রীচিত্তরঞ্জন সাহা বইয়ের প্রচারণার যে পথটি দেখিয়ে গেছেন সে পথটিও এরা অনুসরণ-অনুকরণ করতে পারে না। বই বের হয়ে গেলে তিনি প্রত্যেকটি বই দুই কপি করে দেশের সবগুলো প্রধান দৈনিকের সম্পাদক, সাহিত্যসম্পাদক বরাবর পাঠিয়ে দিতেনÑ শুধু পাঠিয়ে দেওয়া নয়, সেটার যাতে আলোচনার ব্যবস্থা হয় সেটা করার জন্রে তাদের সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ রাখতেন, এক অলিখিত আÍীয়তে পরিণত হয়েছিলেন তিনি বইয়ের জগতের সব মানুষের। বেিয়র সাম্রাজ্যের এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী সম্রাট এই মানুষটিকে বাংলাদেশের বইয়ের জগৎ কোনদিনই ভুলতে পারবে না। কেননা তিনি তাপর সমস্ত চিত্ত দিয়ে বাংলাদেশী সমস্ত পাঠকের চিত্তকে রঞ্জিত করেছিলেন বইয়ের রঙে, বইয়ের বিভায়।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।