আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“এক পায়ে ভর করে বয়ে বেরানো জীবন এবং রিক্সাচালক”

আমারও লিখার অধিকার আছে......... জীবন অনেক বৈচিত্রময়। দুপুরের রোদে অনেকের জীবনের গতি থমকে দারায়, ঠিক এ ঘাম ঝরা দুপুরেই কেউ কেউ জীবনের চাকা ঘোরাতে মরিয়া প্রায়। জীবন ধারনের চেষ্টায় আমরা কত কিছুই না করি। আজ আমি দেখলাম অন্যরকম একটা জীবন, যার চাকা ঘোরছে এক পায়ে ভর করে। ঘাম ঝরা দুপুর।

ঠিক তিনটা কিংবা তার একটু কম হবে সময়। প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলাম। একটু দূরে যাব বলে রিক্সা খুঁজছি। হঠাৎ রিক্সার বেল শুনে পিছন ফিরে তাকালাম। যা দেখলাম সেটা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

৬০ কিংবা ৬৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ রিক্সা নিয়ে আমার পাশে এসে দারাল। আমাকে বলল “মামা যাবেন?” আমি তখনও তার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারিনি। পারিনি নিজের চোখকে অবিশ্বাস করতে। এও কি সম্ভব! যেখানে রিক্সা চালানোর প্রথম যোগ্যতা দু পা। যেখানে কিনা ঐ বৃদ্ধার এক পা নেই।

বৃদ্ধ বয়সে যে কিনা বয়সের ভারে নজু, সেখানে এক পায়ে কি করে রিক্সার ভার বহন করে। তবুও আমি বৃদ্ধের রিক্সায় উঠলাম এই ভেবে যে, আমি না হলেও কাউকে না কাউকে তো তার বইতে হবে। নতুবা তার জীবন যে থমকে দারাবে। রিক্সায় উঠে নিজেকে বড় বেশি অপরাধী মনে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যেন আমি ঐ বৃদ্ধার বুকের উপর দাড়িয়ে আছি।

নিশ্বাস ভারি হয়ে আসছিল, অপরাধ বোধটা বেশি হওয়ায় কিছুদূর যাবার পর নেমে পরলাম রিক্সা থেকে। নেমে বৃদ্ধাকে জিজ্ঞাস করলাম “চাচা, এভাবে চালাতে কষ্ট হয়না?”। বৃদ্ধ চাচা আমাকে অবাক করে উত্তর দিল “কষ্ট ছাড়া কি আর ট্যাঁহা কামাই করুন যায়? ” বৃদ্ধ চাচার কাছে তার এই বৃদ্ধ বয়সে এভাবে অমানবিক কষ্টের কারন জানতে চাইলাম। চাচা তার কষ্টের কথাগুলো আমাকে বললো তার চোখের জলে। অনেক আগে থেকেই ঢাকায় বাস।

নিজের কঠোর পরিশ্রমে ছোট্ট একটা খাবারের হোটেল চালাতো। আর সাথে চালাতো দুই সন্তানের বড় হয়ে ওঠার স্বপ্ন। নিজে না খেয়ে মানুষ করেছে ছেলেদের। বাবার প্রচেষ্টায় ছেলেরাও বড় হয়, বড় অফিসে চাকরি পায়। বদলে যায় সব কিছু।

হঠাৎ একদিন বাস এক্সিডেন্টে বৃদ্ধ পা হারায়, চিকিৎসা বাবদ হারায় তার হোটেলটিও। এর পরে সে হয়ে যায় ছেলেদের বোঝা। আবার বদলাতে থাকে সবকিছু, সাথে বৃদ্ধের ভাগ্যও। ছেলেদের মানুষ করার প্রতিদান স্বরূপ একদিন বৃদ্ধ দম্পতিকে বের করে দেওয়া হল বাড়ি থেকে। এখন আবার সেই জীবন যুদ্ধ।

এক পা নেই তাতে কি! জীবন তো আর থেমে থাকবে না। তাই এক পায়ে ভর করেই চলছে জীবন। চোখের জলে আমাকে বলা বৃদ্ধের শেষ কথাটি ছিল এরকম............ “আমি অগোরে অভিশাপ দিমু না। শুধু আল্লার কাছে কমু, ওগো ছাওয়াল-পান যেন ওগোরে আমার মত রাস্তায় ফেইলা না দেয়”। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।