আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শাহেদ-পাপিয়া উপাখ্যান (ছোটগল্প)

আমি অতি সাধারণ মানুষ [১] -“শাহেদতো প্রেমে পড়ছে। ” সাপ্তহিক ছুটির দিন। bdnews24.com এ ঢুকে খবর পড়ছি। এ সময় রানা এসে খবরটা দিল। আমি খুব একটা আগ্রহ দেখালাম না।

প্রত্যেক মানুষের কিছু সতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্য থাকে। শাহেদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রেমে পরা। কিছুদিন পরপরই সে প্রেমে পরে। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। আমি রানার কথার কোন জবাব না দিয়ে খবর পড়ায় মন দিলাম।

রানা মনে হয় আমার মনের কথা বুঝতে পারল। “সত্যি সত্যি এবার প্রেমে পড়ছে শাহেদ। ” -“হুঁ। ” রানা মনে হয় একটু রেগে গেল। “তুই মনে হয় কথাটা পাত্তা দিচ্ছিস না?” -“এটা পাত্তা দেওয়ার মত কোন ঘটনা না।

শাহেদের কাজ হচ্ছে দুইদিন পরপর প্রেমে পড়া। তিন বছর আমি ওর রুমমেট ছিলাম। এ জিনিস বহুবার দেখা হয়ে গেছে। তুই এখন যা। আমাকে একটু খবর পড়তে দে।

” রানা চলে গেল। আমি খবর পড়া বাদ দিয়ে ফেবুতে ঢুকলাম। [২] আমাদের পরিচয়টা এ ফাঁকে দিয়ে নেই। আমরা তিন বন্ধু-আমি, রানা এবং শাহেদ একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রেজুয়েশন শেষ করে একই কোম্পানিতে জয়েন করেছি। অফিস চট্টগ্রাম।

অফিস থেকে একটু দূরে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে একসাথেই আমরা তিনজন থাকি। সময় ভালই কাটে। অনেকটা ভার্সিটির সেই হলের জীবনের মতই। ইতিমধ্যে শাহেদ পাশের বাসার এক মেয়ের প্রেমে পরেছে। সম্ভবত বাড়িওয়ালার মেয়ে।

ইন্টারে পড়ে। কিভাবে মেয়েটার সাথে কথা বলা যায় সেটা চিন্তা করেই শাহেদের এখন দিন কাটে। মাঝে মাঝে রানার কাছ থেকে পরামর্শ নেয়। রানা বর্তমানে ওর আনঅফিসিয়াল পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছে। একদিন সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফিরে শুয়ে আছি।

রানা রুমে আসল। “ফারহান, ঐ মেয়ের নাম তো পাপিয়া,” বলেই হাসতে শুরু করল। আমিও উঠে বসে হাসতে শুরু করলাম। সেকি প্রচণ্ড হাসি। হাসতে হাসতে পেট ব্যথা হয়ে গেল।

শাহেদের বাড়ি নোয়াখালী, কথাবার্তায় নোয়াখালীর আঞ্চলিক টান আছে। ‘প’ কে ‘ফ’ এবং ‘ফ’ কে ‘প’ বলার ব্যাপারটা তার মধ্যে ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যায়। সে বলবে- পারহান, পার্মেসি থেকে আমার জন্য ফ্যারাসিটামল নিয়া আয়, মাথা ধরছে খুব। এই মেয়েকে সে যদি ‘ফাফিয়া’ নামে ডাকে তাহলেই হয়েছে। ঐদিনই তার প্রেমের সলিল সমাধি হয়ে যাবে।

একটু একটু করে পাপিয়ার সাথে শাহেদ কথা বলা শুরু করে। এবং লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে সে পাপিয়াকে পাপিয়াই ডাকছে, ফাফিয়া নয়। মেয়েটা আমাদের চেয়ে প্রায় নয় বছর জুনিয়র, অথচ শাহেদ মেয়েটার সাথে আপনি আপনি করে কথা বলে। পাপিয়াকে প্রোপোজ করার সময়টাতে প্রচন্ড হাসি পায় যখন শাহেদ কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে- “আমি আপনাকে পছন্দ করি। ” -“ও।

” -“পছন্দটা একটু অন্যরকম। ” -“কি রকম?” -“না মানে.........বুঝেনি তো। ” শাহেদ আর কথা খুঁজে পায় না। আমি আর রানা রুমে বসে ওর কথা শুনে প্রচন্ড কষ্টে হাসি চেপে আছি। শাহেদ বারান্দা দিয়ে পাপিয়ার সাথে কথা বলছে।

শাহেদের অবস্থা দেখে পাপিয়ার মনে হয় একটু মায়া হল। -“আচ্ছা ঠিক আছে শাহেদ ভাই। আপনার আর বলতে হবে না, আমি বুঝার চেষ্টা করছি। বুঝলে আপনাকে জানাব। ” আস্তে আস্তে তাদের কথার দৈর্ঘ্য বাড়তে থাকে।

রাত জেগে তারা দুজন বারান্দা দিয়ে কথা বলে। আমি আর রানা ঘুমিয়ে যাই। ওদের কথা চলতেই থাকে। বুঝলাম পাপিয়া ভালভাবেই শাহেদের প্রেমে পড়েছে। তবে শাহেদের ব্যপারে আমি খুব একটা ভরসা পাই না।

ওর রেকর্ড ভাল না। আমাদের তিনজনকেই আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে ঢাকায় হেড অফিসে ট্রান্সফার করবে। ঢাকায় গিয়ে শাহেদের আদৌ পাপিয়ার কথা মনে থাকবে কিনা কে জানে। আমরা যেদিন ঢাকায় চলে আসব সেদিনটার কথা আমি ভুলব না। শাহেদ পাপিয়ার কাছ থেকে বিদায় নিল।

আমরা ধীরে ধীরে মালপত্র নিয়ে ভ্যানে উঠালাম। ভ্যান আমাদের নিয়ে বাসস্ট্যান্ডের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করল। আমি পাশের বিল্ডিঙের বারান্দার দিকে তাকালাম। পাপিয়া দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটা আকুল হয়ে কাঁদছে।

দৃশ্যটা দেখে বিভুতিভূশনের অপরাজিত গল্পের কাহিনি মনে পড়ে গেল। অপূর্ব কলকাতায় আসার সময় অপর্ণাও এভাবে কাঁদত। [শেষকথা] শাহেদের সাথে অনেকদিন দেখা হয় না। দুজন দু-জায়গায় চাকরি করি। দুই শহরে থাকি।

ও পাপিয়াকে বিয়ে করেছে আজ প্রায় পাঁচ বছর। শাহেদ ঢাকায় চাকরি করে, আর পাপিয়া নোয়াখালিতে শ্বশুরবাড়িতে থাকে। প্রতি বৃহস্পতিবার শাহেদ নোয়াখালি যায়, আর রবিবার সকালে ঢাকায় আসে। রানা বলেছে এখনো শাহেদ ঢাকায় আসার সময় পাপিয়া নাকি কাঁদে। রানার কথায় বিশ্বাস নাই।

অনেক চাপা মারে রানা। ব্যপারটা শাহেদকে জিজ্ঞেস করতে হবে। [উৎসর্গঃ] আমার বন্ধু বিপুকে। যদিও তার ভাষ্যমতে তার নাম ‘বিফু’। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।