আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘কদম কদম বড়ায়ে যা’ যে যেভাবে দেখি ॥ মুস্তাফা জামান আব্বাসী ॥

‘কদম কদম বড়ায়ে যা’ যে যেভাবে দেখি ॥ মুস্তাফা জামান আব্বাসী ॥ নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু স্বাধীনতার আহ্বান দিলে কাজী নজরুল ইসলাম হলেন তার প্রধান সহযোগী। নেতাজীর ভালো লাগত দু’টি গান : ‘চল, চল, চল, ঊর্ধ্বগগনে বাজে মাদল, নিম্নে উতলা ধরণীতল, চলরে চলরে চল’। আমার পিতার ইচ্ছা ছিল গানটিকে তদানীন্তন পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত করা। কিন্তু কে শোনে কার কথা? নেতাজীর অপর প্রিয় গান : ‘দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার হে, লংঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুঁশিয়ার’। নেতাজী ও নজরুলের কথোপকথন লিপিবদ্ধ : ‘পুড়িব একাকী’ গ্রন্থে।

‘কদম কদম বড়ায়ে যা’, গানটিও ছিল নেতাজীর পছন্দের। প্রতি পদে মানবের এগিয়ে যাওয়া, যারা এগিয়ে যেতে চান। প্রত্যুষে কুরআন তেলাওয়াত করছিলাম, আল্লাহ্র একটি নির্দেশের দিকে তাকিয়ে আটকে পড়লাম, যা নিয়ে লিখতে বসেছি। সূরা ইমরানে ১৪৭ আয়াতে আল্লাহ মানুষকে দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন এভাবে-- ‘আমাদের কদম মজবুত করো এবং কাফেরদের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করো। ’ এটি পড়ার পর আমি উপলব্ধি করতে সক্ষম হলাম প্রতি কদমে এগিয়ে যাওয়ার নামই মুজাহিদ।

আল্লাহ বলছেন : ‘মনভাঙা হয়ো না, চিন্তা কোরো না, যদি মুমিন হও, তাহলে তোমরাই বিজয়ী। যদি তোমাদের ওপর আঘাত লেগে থাকে, তাহলে এর আগে তোমাদের বিরোধী দলেরও এ ধরনেরই আঘাত লেগেছে। এটা তো সময়ের উত্থান ও পতন মাত্র, যা আমি মানুষের মধ্যে একের পর এক দিয়ে থাকি। তোমাদের মধ্যে সাচ্চা মুমিন কারা এবং তোমাদের মধ্য থেকে ওই লোকদের বাছাই করে নিতে চেয়েছিলাম যারা আসলেই সত্যের সাক্ষী, কেননা জালিমদের আল্লাহ পছন্দ করেন না। ’ মৌলানা জালালউদ্দিন রুমির কাছে ভক্তরা সমবেত হলে তিনি কুরআন শরিফ নিয়ে বসতেন।

নিত্যনতুনভাবে করতেন উপস্থাপনা। ভক্তরা ভাবতেন এগুলো তারাও পাঠ করেছেন, অথচ রুমির কাছ থেকে যখন শুনতেন, মনে হত যেন এুনি আয়াতগুলো নাজিল হলো। যখন ভোরবেলায় কুরআন শরিফ নিয়ে বসি, নিত্যনতুন রূপ নিয়ে কুরআন হয় উপস্থাপিত। এগুলো সবই আমার মনের অবস্থা, তা বুঝতে পারি, যেমন আজ। চার দিক থেকে শত্রুরা ঘিরে।

বুদ্ধিমানেরা খেয়াল করেছেন যে, আমরা তাদের শত্রুতা অর্জন করেছি শুধু কুরআনের কারণে। কুরআন ভুলে গেলে ওরা খুশি, রাসূল সা:’কে ভুলে যাই, তাহলে ওরা খুশি। মুসলমান হিসেবে আমার জন্ম হয়নি ওদের খুশি করার জন্য। ওদের খুশি করার দায়িত্ব আমার নয়, বরং যদি কোনো কারণে আমি ওদের কাছে এতই অপছন্দনীয় হই, তাহলে হয়তো শাহাদত পাব। ওটিই হবে সাফল্য।

আল্লাহ বলছেন : ‘এর আগে কত নবীই গত হয়ে গেছেন, যাদের সাথে মিলে বহু আল্লাহওয়ালা লোক যুদ্ধ করেছে। আল্লাহর পথে যত মুসিবতই তাদের ওপর পড়েছিল, সে জন্য তারা হতাশ হয়নি, তারা কোনো দুর্বলতা দেখায়নি এবং তারা বাতিলের সামনে মাথা নত করেনি। এমন ধরনের ধৈর্যশীলদেরকেই আল্লাহ পছন্দ করেন। ’ দিকে দিকে মুসলমানেরা পরাজিত বাতিলের কাছে। এর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে।

মনে হয় কুরআন থেকে সরে আসা, রাসূল সা: থেকে বহু দূরে থাকাই কারণ। তবে ভয় নেই। আল্লাহ বলছেন : ‘শিগগিরই ওই সময় আসবে যখন আমি কাফিরদের মনে ভয়ভীতি সৃষ্টি করব, কারণ তারা আল্লাহর সাথে এমন কিছুকে শরিক করেছে, যার শরিক হওয়ার পক্ষে আল্লাহ কোনো দলিল-প্রমাণ নাজিল করেননি। দোজখই তাদের শেষ ঠিকানা এবং এ জালিমদের থাকার জায়গা বড়ই খারাপ। ’ সমুদ্র বিজয়, শত্রুজয়, শত্রু বিনাশ নিয়েই দিন কেটে যাচ্ছে।

দ্বীনের তালিম, প্রসার ও খিদমতের পরিবর্তে প্রতি পদে দেখতে পাই মুসলমানদের প্রতি অবজ্ঞা, মসজিদের প্রতি ঘৃণা, যা কিছু ইসলামী তার প্রতি ছুড়ে দেয়া কতিপয় ব্যক্তির অসম্মানসূচক বক্তব্য। দীনের অসম্মান আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে করছে হতাশাগ্রস্ত। এমন সব লোকের আবির্ভাব ঘটছে, যারা আল্লাহর কালামকে ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিতে চাচ্ছে। আল্লাহ বলছেন, তা কোনো দিনই সম্ভব হবে না। এদের বিনাশ অবশ্যম্ভাবী, যা কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ধর্মের বর্ম পড়ে কুকর্ম ঢাকা যাবে না, এ কথা অনেকবার বলেছি। কুরআনে যারা আশ্রয় নিয়েছেন তারা আল্লাহর ক্ষমা পাবেন, মানুষের না পেলেও। মধ্যপ্রাচ্যে বড় আলেম ও প্রবক্তাকে নানা অছিলায় স্থান নিতে হয়েছে ফাঁসির মঞ্চে। এর কারণ আল্লাহর ভালো জানা। এটিও মুসলমানদের মঙ্গলের জন্য, তা বিশ্বাস করতে হবে।

প্রিয় নবীর দৌহিত্র হোসেন রা:’কে যখন দিতে হয় কলিজার তাজা খুন, মানুষ বুঝতে পারে না আল্লাহর কী ইচ্ছা। ইতিহাসের ছাত্ররা জানি, ইসলাম জিন্দা হয় প্রতি কারবালার পর। মুসিবত আল্লাহর একটি করুণা, সূরা আলে ইমরান ভালো করে পড়লে এটি বোঝা সম্ভব হবে। বদরের যুদ্ধ ও উহুদের যুদ্ধের ইতিহাস মুসলমানদের বারবার পাঠ করা প্রয়োজন অথবা পুরো ঘটনাটি মনের মধ্যে গেঁথে রাখলে ভালো হয়, তাহলে কোনো রকমের সংশয় বা ভয় তাদের মধ্যে প্রবেশ করবে না। কুরআন যাদের বর্ম, তাদের ভয় নেই।

যদি তারা শাহাদতও পান এর চেয়ে বড় কাম্য আর কোনো মুসলমানের হতে পারে না। যতই কুরআন পড়ি, আমার শহীদ হতে সাধ হয়। প্রতি ছত্রের কুরআন পাঠ সামনের দিকে উন্নীত হওয়ার শপথ। ‘কদম কদম বড়ায়ে যা’ গানটি যখনই শুনি উদ্বুদ্ধ হই। প্রতি কদমে আল্লাহর দিকে ধাবিত হওয়ার আহ্বান শুনি প্রতি সকালে পবিত্র কুরআনের উচ্চারণে।

যারা কুরআন পড়েন, কুরআন হৃদয়ে ধারণ করেন, তারা প্রতিদিন চলেছেন এমন এক পথে- যে পথ আনন্দের, যে পথ সুন্দরের, যে পথ শেষ হয়েছে তারই সৃষ্ট পবিত্র বাগানে। ১১ এপ্রিল, ২০১২ লেখক : সাহিত্য-সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।