যখন অলস সময় পাই, কিংবা রাতে একাকী সময়টা, তখন তোমাকে মনে পরে ..!! পরক্ষনেই ভুলে যাবার চেষ্টা.... দায়িত্ব এবং আরও হাজারো চিন্তায় তোমার ভাবনা গুলো আবার হারিয়ে যায়... আবার ব্যস্ততা, মনে পরা, ভুলে যাওয়া ....... চলে যাচ্ছে দিন, ভালই তো....!!! বাড়ির উঠুনে একটা বড়সড় জটলা । লুঙ্গি পাঞ্জাবি পরিহিত মানুষের সংখ্যাই বেশি । উঠুনের এক কোণায় কয়েকজন হুজুরকে কোরআন শরীফ পড়তে দেখা যাচ্ছে ।
ঘরের ভেতর থেকে নারীদের কান্নার শব্দ ভেসে আসছে ।
কিছু একটা হয়েছে আজ এই বাড়িতে ।
ভীর ঠেলে সামনে এগিয়ে যেতেই চোখে পড়লো একটি খাটিয়া । লাশ বহন করার খাটিয়া । কেউ একজন মারা গেছে আজ । এজন্যই এতো ভীর । কান্নাকাটি ।
কিন্তু কে মারা গেলো ।
ওই যে , এ বাড়ির সবচেয়ে বড় পুরুষ হারুন অর রশিদ সাহেব কে দেখা যাচ্ছে ।
তার বড় ছেলের কাঁধে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছেন । পাশেই তার ছোট ছেলে ।
তাহলে কে মারা গেলো ।
বারান্দায় দেখা যাচ্ছে হারুন সাহেবের স্ত্রীকে । তার বড় ছেলের বউকে সামলাচ্ছেন । সে গগনবিদারী চিৎকার করছে ।
আরে , তার মেয়ে মারা যায় নি তো ।
নাহ , তার তিন মেয়ে পাশেই দাড়িয়ে চোখের পানি মুছছে ।
ঘরে যেতেই চোখ পড়লো মাটিতে মাদুর বিছানো । সাদা কাফনে মোড়া একটি লাশ ।
কিন্তু আশ্চর্য , এতো ছোট কেন লাশ টা ।
মনে হচ্ছে কয়েকমাসের কোন বাচ্চার লাশ এটি ।
আচ্ছা , হারুন সাহেবের বড় ছেলে তো কয়েকমাস আগে পুত্র সন্তানের বাবা হয়েছেন , তাকে দেখা যাচ্ছে , না ।
কই সে ।
কে মারা গেলো তা নিশ্চিত হবার জন্য কাফন এর মুখের কাপড় টা সরালাম । দেখলাম ফুটফুটে এক শিশুর মুখ । বুকটা কেঁপে উঠলো ।
এতো সে ছেলেটি ।
কিছুক্ষণ পর সবাই ঊঠে দাঁড়ালো । কবর দেওয়ার সময় হয়ে এসেছে । কচি বাচ্চার কাফনে মোড়া দেহ তোলা হল ।
তারপর সবাই এগিয়ে চলল গোরস্থান এর দিকে । লাশ নেওয়ার সময় চিৎকার করে ঊঠছিলেন ছেলেটির মা ।
তার পুত্রকে তার বুক থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ।
বিধি মোতাবেক সব হল । ছোট্ট কচি দেহটি কে মাটির নিচে কবর দিয়ে আসা হল ।
কবরে দুটি বকুল আর দুটী গোলাপের চারা পুঁতে দিলেন তার বাবা ।
__________________________________________________
আজ থেকে ২৪ বছর আগে এমনই কিছু একটা হয়েছিল ।
আজ থেকে ২৪ বছর আগে হারুন অর রশিদ এর বড় ছেলে , আজিজুল হক এর একমাত্র ছেলে মারা যায় ।
সিয়াম সাধনার মাসে জন্ম হয়েছিল বলে মা বাবা আদর করে নাম রেখেছিলেন ‘সিয়াম’’
সে ‘সিয়াম’ আরেকটি সিয়াম সাধনার মাস আসার আগেই এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলো । মাত্র ৭ মাস বয়সে ।
___________________________________________________
উপরের দৃশ্যকল্প কিছুটা সাজানো । পটভূমি আমার ছোট ফুফুর কাছ থেকে শোনা ।
ঠিক এরকম ই ছিল আজ থেকে ২৪ বছর আগে । ১৫ এপ্রিল আমার বড় ভাই মারা যায় ।
মাত্র সাত মাসের আয়ু নিয়ে সে এই পৃথিবীতে আসে । তাকে আমি কোন দিন দেখি নি । আমি জানতাম ও না তার কথা ।
আমার বয়স যখন ১১ , তখন আমি তার কথা জানতে পারি ।
তখন থেকে আমি উনার মৃত্যুবার্ষিকীর কথা ভুলি নি । কিন্তু এবার আমি ভুলে গেছি । আজ সন্ধায় বাসায় মিলাদ ছিল । তখন আমার খেয়াল হল উনার কথা ।
আগে সব সময় মসজিদে মিলাদ , বাসায় মিলাদের পুরো আয়োজন আমি ই করতাম । কিন্তু এবার করতে পারি নি ।
আমি আমার পরিবার থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন । সেটা একটা কারন হতে পারে ।
কিন্তু তারপর ও , আমি আমার অদেখা ভাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভুলি নি ।
‘সিয়াম’ ভাইয়া , তোমাকে অনেক ভালোবাসি । তোমাকে আমি কোনদিন দেখি নি । কিন্তু নিজের মনেই তোমার একটি ছবি একে নিয়েছি । যেখানেই থাকো , খুব ভালো থাকো ।
খুব দ্রুত , আমি তোমার সাথে মিলিত হব ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।