আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চড়ক পূজা ও মানবিকতা

অশালীনতা পরিহার করে যুক্তির কথা বলার নাম মননশীলতা চৈত্র সংক্রান্তি, পহেলা বৈশাখ তথা বাংলা নতুন বছরের শুভ আগমনকে উদযাপনের জন্য নানাবিধ আয়োজন, ব্যবসাদারদের হালখাতা মহরত ইত্যাদি নানা উৎসবের মাধ্যমে তিন চারদিন ধরে চলে বিভিন্ন পার্বণ । এগুলো শতবছরের পুরানো ঐতিহ্য । দুই বাংলার মানুষের সংস্কৃতি- ধর্মীয় সবকিছু দিয়ে পালিত হয়ে থাকে এই আয়োজন গুলো । এদের ভিতরে একটি পার্বণ হল চড়ক পূজা । পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ লোকোৎসব।

চৈত্রের শেষ দিনে এ পূজা অনুষ্ঠিত হয় এবং বৈশাখের প্রথম দু-তিন দিনব্যাপী এর উৎসব চলে। হিন্দুদের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী চৈত্র মাসে শিবারাধনা প্রসঙ্গে নৃত্যগীতাদি উৎসবের উল্লেখ থাকলেও চড়ক পূজার উল্লেখ নেই। উচ্চ স্তরের লোকদের মধ্যে এ অনুষ্ঠানের প্রচলন খুব প্রাচীন নয়। তবে পাশুপত সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাচীনকালে এ উৎসব প্রচলিত ছিল। এ পূজার অপর নাম নীল পূজা- কোথায়ও কোথায়ও এটি হাজরা পূজা নামে পরিচিত ।

গম্ভীরাপূজা বা শিবের গাজন এই চড়কপূজারই রকমফের। গাজন পূজায় কোন দুর্গন্ধযুক্ত পচা মৃতদেহ রশি দিয়ে বাশের সাথে ঝুলিয়ে নেচে নেচে গান গেয়ে গ্রাম ঘোরা হয় । কোন কোন জায়গায় শিশুর মৃত দেহ ঝুলানো হয় । চড়ক পূজা চৈত্র মাসের সংক্রান্তিতে পালিত হয়। আগের দিন চড়ক গাছটিকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করা হয়।

এতে জলভরা একটি পাত্রে শিবের প্রতীক শিবলিঙ্গ রাখা হয়, যা পূজারিদের কাছে "বুড়োশিব" নামে পরিচিত। পতিত ব্রাহ্মণ এ পূজার পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করেন। পূজার বিশেষ বিশেষ অঙ্গ হলো কুমিরের পূজা, জ্বলন্ত অঙ্গারের ওপর হাঁটা, কাঁটা আর ছুড়ির ওপর লাফানো, বাণফোঁড়া, শিবের বিয়ে, অগ্নিনৃত্য, চড়কগাছে দোলা এবং দানো-বারানো বা হাজারা পূজা করা। পূজার মূলে রয়েছে ভূতপ্রেতে ও পুনর্জন্মবাদের ওপর বিশ্বাস। এর বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রাচীন কৌমসমাজে প্রচলিত নরবলির অনুরূপ।

পূজার উৎসবে বহু প্রকারের দৈহিক যন্ত্রণা ধর্মের অঙ্গ বলে বিবেচিত হয়। চড়কগাছে ভক্ত বা সন্ন্যাসীকে লোহার হুড়কা দিয়ে চাকার সঙ্গে বেঁধে দ্রুতবেগে ঘোরানো হয়। তার পিঠে, হাতে, পায়ে, জিহ্বায় এবং শরীরের অন্যান্য অঙ্গে বাণ শলাকা বিদ্ধ করা হয়। কখনো কখনো জ্বলন্ত লোহার শলাকা তার গায়ে ফুঁড়ে দেয়া হয়। লোকের বিশ্বাস এভাবে নিজের শরীরের রক্ত বা নিজের দেহ শিবের নামে উৎসর্গ করলে পরকালে স্বর্গপ্রাপ্তি অনিবার্য ।

১৮৬৫ সালে ব্রিটিশ সরকার আইন করে এ নিয়ম বন্ধ করলেও গ্রামের সাধারণ লোকের মধ্যে এখনো তা প্রচলিত আছে। নীল পূজারীদের কয়েকজনের একটি দল নিয়ে সারা গ্রাম ঘুরে বেড়ায়। দলে থাকে একজন শিব ও দু'জন সখী। একজনকে সাজানো হয় লম্বা লেজ দিয়ে, তার মাথায় থাকে উজ্জ্বল লাল রঙের ফুল। সখীদের পায়ে থাকে ঘুঙুর।

তাদের সঙ্গে থাকে ঢোল-কাঁসরসহ বাদকদল। সখীরা গান ও বাজনার তালে তালে নাচে। এদেরকে নীল পাগলের দলও বলা হয়। এরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গাজনের গান গায় আর নাচ-গান পরিবেশন করে। বিনিময়ে দান হিসেবে যা কিছু পাওয়া যায় তা দিয়ে হয় পূজা।

এই উৎসবকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে যা "চড়ক সংক্রান্তির মেলা" নামে অভিহিত । এটা সত্যি যে- ধর্ম যার যার। কিন্তু ধর্মীয় রীতি পালনে অমানবিক কিছু করা কোন সভ্য সমাজের ঐতিহ্য হতে পারে না । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।