আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“হে প্রিয় তুমি এসো।হাজার বছরের শ্বাস্রুদ্ধকর অন্ধকার অন্তঃপূর থেকে তুমি বেরিয়ে এসো-হে প্রিয় তুমি এসো”...বান্দরবন ভ্রমন ৭ম পর্ব..উৎসর্গ জুল ভার্ন....

পরির্বতনের সময় এখন.... ভোর ৬টায় ঘুম ভাঙ্গলেও প্রচন্ড ঠান্ডায় লেপ এর ভিতর থেকে বের হতে ইচ্ছে করছিলো না...সবাই তখনও ঘুমিয়ে..... আধা ঘন্টা পরে ৫ জনের দল যাত্রার আগেই জানিয়ে দিলো তাদের এক সহকর্মীর পাহাড়ে উঠার সময় পাঁয়ে ব্যাথা পেয়েছিলো যা এখন বৃদ্ধি পাচ্ছে...যার ফলে তারা সফর এখানেই ইতি টানছে....অন্য ৪ জনের সাথে তারাও ফেরত চলে যাবে..... ১২ জনের দল থেকে তিন জনে পরিনত হওয়ায় নিজেদেরই খারাপ লাগলো....পুরো পোগ্রাম এখন পরিবর্তন হয়ে যাবে....গাড়ি থেকে গাইড সব চলে যাবে.....আমরা তিনজন দ্রুত সিন্ধান্ত নিলাম.....আমরা ক্রেওক্রাডং পর্যন্ত যাবোই...এবং আজ ৩.০০ টায় বকা লেক থেকে ছেড়ে যাওয়া শেষ গাড়িটা ধরবোই.... সেই হিসেব মতে সকলের সাথে নাস্তা সেরে বিদেয় নিলাম আর আমাদের সাথে যুক্ত হলো নতুন গাইড(ইমরান)। ৮.০০টায় শুরু হলো আমাদের যাত্রা..... সামনে আমাদের পথ প্রদর্শক... একধরনের উত্তেজনা নিয়েই আমাদের পথচলা শুরু হলো...শুরুতেই কলাবাগান পাড়ি দিতে বেশ পুলকিত হলাম....যাত্রার ২০ মিনিট পর অনুভব করলাম ভুল করে অতি প্রয়োজনীয় পানির বোতল ফেলে আসলাম..... কলাবাগান এবং আমাদের যাত্রা ..... গাইড অভয় দিলো কোন সমস্যা নেই ঝরনা আছে দুটো.....আর লোকালয় থেকে পানির বোতল কিনে নেওয়া যাবে...... পথচলা... আমরাও খানিকটা দ্রুত পথচলা শুরু করলাম....পাহাড়ি এবড়ো থেবড়ো পথ বেয়ে....তবে এখানকার বেশীরভাগ পথই সরু এবং পাহাড়ের এক পাশ দিয়ে....পা ফেলতে হয় সাবধানে..এরই মাঝে শুকনো ঝরনার অস্তিত্ব খুঝে পেলাম দুবার যেখানে সারি সারি শিলা পাথর...যানা যায় এগুলো বর্ষকালে সরব থাকে আর শীতকালে নিরব........এভাবে চলতে চলতেই ক্ষনিক পরেই পানির ঝরঝর শব্দ শুনতে পেলাম......অনায়াসে একধরনের উত্তেজনা চলে আসলো আমাদের মাঝে....কাছে পাবার ব্যাকুলতা ..... কখন দেখা পাবো তার..... ফেলে আসা বকা লেক শুকনো ঝরনা... ব্যাকুলতা থেকেই হয়তো আমরা একটু তাড়াতাড়ি নামতে শরু করলাম....সাবধান করলো গাইড....ধীরে ধীরে চলুন ...এখনও অনেক পথ বাকি....পা মচকে গেলে সমস্যা হবে........আমরাও সাবধান হয়ে গেলাম.... ভাঙ্গা পথ পিপাসা মেটাতে ঝরনার পানির চেয়ে উৎকৃষ্ট আর কিছু আছে কিনা জানা নেই......এই পথ পাড়ি দিয়ে যে পরিমান ক্লান্তি ছিলো তা যেন এক চুমুকেই শেষ।তারপরও পর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করে নিলাম কারন আমাদের পানি ধারক নেই..... ঝরনার পানি ক্ষনিক বিরতির পর আবার পথচলা....পাহাড়ি উঁচু, নিচু, সরু পথ আর ভাঙ্গা বাঁশের ব্রীজ আবারো আমাদের সঙ্গী....মাঝে মাঝে পথগুলো এতটাই খাড়া যে আমাদের অনেকটা হাত পা চারটাই ব্যবহার করতে হয়...আর শীত যে কোথায় পালাইছে তা আর বলতে..ভাইগনাদ্বয় থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরতে বাধ্য হইছে..... সাপের ন্যায় পথ ভাঙ্গা বাঁশের ব্রীজ... ঘন্টাখানেক এর মাঝে আমরা আবারো পানির ঝরঝর শব্দে পুলকিত হলাম... এবার আরো বেশী....শব্দের উঠানামায় বুঝতে পারলাম....আমাদের পুলকিত হওয়ার স্থান আরো দূরে....চলার পথে এই প্রথম তাজিংডং থেকে ফেরত আসা একটি দলের সাথে দেখা....অভয় দিলো তারা....সাথে কিছু টিপস... ১. ভুলেও মুখ দিয়ে শ্বাস নিবেন না..... ২. বাঁশের লাঠির উপর কিছুটা ভর দিন... ৩. দৈাড়ে ওঠার চেষ্টা করবেন না এতে দ্রুত শক্তি ক্ষয় হবে.... ৪. নামার পথে বেশী সতর্কতা অবলম্বন করুন। ধন্যবাদ দিয়ে হাঁটা শুরু করলাম.....অল্পকিছুক্ষনের মধ্যেই আমরা চলে এলাম চিংড়ি ঝরনার কাছে.....দেখেই মুগ্ধ..................নিজের অজান্তে মুখ থেকে বের হয়ে গেলো....ওয়াও.......... মনে হয় যেন স্বপ্নরাজ্যে....সবুজে ঘেরা..পাথরে ঘেরা....আর নির্মল স্বচ্ছ পানি.....সবার আগে আবারো পিয়াস মিটালাম পর্যাপ্ত পরিমানে.......হাত মুখ ধুয়ে নিলাম...এই অপার সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করবো ফেরার পথে। তাই এবার বেশী সময় না নিয়ে আবার চার হাত পা ব্যবহার করে উঠতে শুরু করলাম..... চিংড়ি ঝরনা.... ওদের জন্য দুঃখ হলো....অন্তত এই পর্যন্ত ওরা আসতে পারতো........ চলার পথে এবার দুই বিদেশীর সাথে দেখা হলো....এরা নিউজিল্যান্ড প্রবাসী...এই বয়সেও ওরা পাহাড়ে ওঠে!!! ভাইগনাদের সাথে তাদের একজন মাথার উপরে সূর্য আর আমাদের পাহাড় বেয়ে যাওয়া...গলা শুকিয়ে কাঠ.....পা চলছে না.....নি:শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে....একটানা দুই ঘন্টা হাঁটার কারনে আমরা অসম্ভব ক্লান্ত বিশেষ করে মটু ভাইগনা বেশী কাহিল হয়ে পড়লো.....কিন্তু গাইড বেটার কোন ভাবান্তর দেখলাম না.... সে জানালো সামনে একটা বিশ্রামাগার আছে ওখানে গিয়ে বিশ্রাম নেওয়া যাবে....আমরাও ৫ মিনিটের একটা বিরতি দিয়ে আবার হাঁটা শুরু করলাম.....তবে এখন একটু একটু বিরতি দিয়ে আমরা এগিয়ে চলছি....অবশেষে বিশ্রামাগারে এসে আরেকটি ফেরত দলের দেখা পেলাম এখানে আমরা প্রায় ২০ মিনিটের একটা বিরতি দিলাম....আর জানতে পারলাম আমরা পথের অর্ধেক শেষ করে ফেলেছি.....এখন আর কষ্টের পথ তেমন নেই....... আড়াই ঘন্টা হাঁটার পর আমরা একটা লোকালয় এর দেখা পেলাম.....এবং অন্যরকম আনন্দ উপলব্দি করলাম..........কিন্তু বিদিবাম আজ ওদের বন্ধের দিন, এই দিনে ওরা কোন বেচা-কেনা করেনা.......অতপর অনুরোধ করে ওদের কাছ থেকে (ফেরত দেবো এই শর্তে) দুই লিটার এর একটা পানির বোতল নিয়ে নিলাম। লোকালয়.... লোকালয় পেরিয়ে আবার এগিয়ে চলা....গাইড অনেক দূরে একটা পাহাড় দেখিয়ে জানান দিলো ঐযে চুড়াটা দখেছেন ওখানে আমরা যাবো.....সেও মেলা দূর...তবে দূরে হলেও চূড়া দখেতে পেয়েছি সেটাই যেন আশার আলো হয়ে দেখা দিলো....আরো ঘন্টা দেড়েকের পথ.... ফেলে আসা লোকালয়... তবে এদিকটায় পাহাড় কেটে চলার পথ বেশ প্রশস্ত করা হয়েছে....জানতে পারলাম ক্রেওক্রাডং পর্যন্ত গাড়ি চলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে.... ভালো উদ্যেগ, কিন্তু হেঁটে চলার পথে যে আনন্দ বা উত্তেজনা সেটা কি পাওয়া যাবে.....কিংবা কষ্টের মাধ্যমে সৌন্দর্য উপভোগ করার যে আনন্দ সেটা কি তখন উপভোগ করা যাবে...? দেড় ঘন্টা হাঁটার পর আমরা অবশেষে আমরা চলে এলাম আমাদের গন্তব্যে......চুড়ায় উঠার জন্য এখানে কয়েক ধাপ সিঁড়ি রয়েছে....চুড়ার নিচে রয়েছে দোকান....সেখানে আমরা চা পানের বিরতি নিলাম...... চূড়ায় উঠার সিঁড়ি... সব ক্লান্তি যেন এখন যেন শেষ.....কোথায় যেন হারিয়ে গেছে...এখন শুধু সিঁড়ির কয়েকটি ধাপ পার হলেই সেই প্রত্যাশিত স্থান.....কেন যেন মনে হতে লাগলো দেখলেই তো শেষ......একটু ধীরেলয়ে দেখি...... সিঁড়ি বেয়ে চলে এলাম উপরে......সবুজ সবুজ সবুজ....সারি সারি....ধাপে ধাপে.....পাহাড় আর পাহাড়....এ যেন সবুজ পাহাড়ের সমুদ্র......সবুজ নীল আর সাদা কুয়াশার সংমিশ্রনে এ যেন স্বপ্নপুরী....আমি সত্যি বিমহিতো.....নিজের অজান্তেই গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিলাম "হ্যালো বাংলাদেশ"..........প্রতিধ্বনি হতে লাগলো সমস্ত পাহাড় জুড়ে.... আমরা তিনজন... ক্রেওক্রাডং এর চূড়া থেকে চারপাশের ছবি.... আমরা তিনজন চূড়ার সব দিকেই অনেকটা ছুটোছুটি করতে লাগলাম.......ইচ্ছে হচ্ছে রাতটা এখানে থেকেই যাই....কিন্তু সময় যে স্বল্প.... (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।