আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভালো আদর মন্দ আদর ৩

আগের পর্ব ঃ Click This Link ১ম পর্বঃ Click This Link দুঃস্বপ্ন দেখে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলে মনটা কেমন আচ্ছন্ন হয়ে থাকে সারাদিন। স্বপ্নে কী ঘটেছিল সেটা অনেক সময় মনে না থাকলেও, তার রেশ যে রয়ে যায়। ঠিক তেমনি যেন এক ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের মত বারবার পুরোনো সেই স্মৃতিগুলো হানা দেয় অনিকের মনে। অনেক ছোটবেলার কথা সেসব। ওর বাবা-মা দুজনেই ছিলেন কর্মজীবী।

কাজের মেয়ের কাছে ওকে রেখে বাসায় তালা দিয়ে দুজনেই চলে যেতেন কাজে। বাবা-মা যখন বাসায় থাকতো না, কাজের মেয়ের কথা না শুনলে মার খেতে হতো ওকে। খুব কাঁদতো তখন ও। কাজের মেয়েটা ওকে যে শুধু মারত, তাই নয়, মাঝে মাঝে...। আবছা আবছা কিছু মনে পড়ে অনিকের, বেশির ভাগই মনে পড়ে না।

আসলে এসব ও মনে করতে চায় না। তবু মনের উপর বিষাদের কালো ছায়া লেগে থাকে লেপ্টে। এই কষ্টগুলোর কথা কেউ কোনদিন জানতে পারবে না। এভাবেই বেশির ভাগ যৌন নিগৃহিত শিশুদের কথা আমাদের কাছে অজানা থেকে যায়। যেকোন সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার শিশুরা নিগৃহিত হতে পারে, তবুও এ ব্যাপারে আমাদের মধ্যে তেমনভাবে সচেতনতা দেখা যায় না।

শিশুদের যেমন এ ব্যাপারে আগে থেকে সাবধান করে দেওয়া হয় না, তেমনি ওরা নিগৃহিত হলেও অসচেতনতার কারণে আমরা সেগুলো বুঝতে পারি না। অনিকের মত যারা শৈশবে যৌন নিগৃহের শিকার হয়ে থাকে তারা পরবর্তীতে,( এমন কি প্রাপ্তবয়ষ্ক হবার পরেও) শারিরীক, মানসিক, আবগিক, সামাজিক বিভিন্ন সমস্যায় ভুগে থাকে। শিশু নিগ্রহকারীরা সাধারণ এক ধরনের বিকৃত রুচির মানসিকতা পোষণ করে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে নিগ্রহকারীর নিজেরই শৈশবে অন্যের দ্বারা নিগৃহিত বা ধর্ষিত হবার অভিজ্ঞতা থাকতে পারে। কেউ কেউ শিশুদের প্রতি যৌন আকর্ষণবোধ করে বলে এ ধরনের কাজ করতে পারে।

এটি এক ধরনের মানসিক রোগ, যার নাম পিডাওফিলিয়া। যারা শিশুদেরকে নিজের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার সুযোগে থাকে, সাধারণত ঐ শিশুর পরিবারে তারা আস্থাভাজন ব্যক্তি হিসেবে জায়গা তৈরি করে নেয়। আর তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, শিশুটি তার খুব পরিচিত ও বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের দ্বারাই ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মধ্যে নিগ্ররহকারী শিশুর পরিবারের সদস্য হতে পারে (এমন কি বাবা, ভাই), হতে পারে পারিবারিক বন্ধু, প্রতিবেশি বা প্রাইভেট শিক্ষক। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শিশুরা শিশুদের দ্বারাও নিগৃহিত হতে পারে।

নিগ্রহকারীরা শিশুদের নানাভাবে নিগ্রহের কথাটি অন্য কাউকে বলা থেকে বিরত রাখে। সাধারণত ওরা শিশুদের ভয় দেখায় এই বলে যে, বাবা-মা জানতে পারলে শিশুটির উপরে রাগ হবেন। শিশুদেরকে তারা সহজেই দ্বিধান্বিত করে দেয়। ফলে শিশুরা বুঝতে পারে না, কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়। আর এ সুযোগটাই নেয় নিগ্রহকারীরা।

অনেক শিশু লজ্জায় এ কথাগুলো কাউকে কখনো বলতে পারে না। আবার অনেক শিশু বুঝতেই পারে না বা তাদের এটা বোঝার ক্ষমতা থাকে যে, সে নিগৃহিত হচ্ছে। অনেক নিগ্রহকারী শিশুদেরকে এটা একটা খেলা বা এতে কোন অসুবিধা নেই বলেও বুঝিয়ে থাকে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থাটা এমন যে, এ ধরনের ঘটনা ঘটলে ভিকটিমের গায়ে কলংক দিতে তৈরি থাকি। ফলে একবার শারিরিকভাবে নিগৃহিত হবার পরে তাকে আবার নিগৃহিত হতে হয় মানসিক ও সামাজিকভাবে।

এভাবেই শিশুটি, শিশুর পরিবারটি থেকে যায় নীরব। আমাদের কাছে অনেক সত্য চিরকাল থেকে যায় অজানা। তাই এ ধরনের ঘটনাগুলো সম্পর্কে আমাদের খোলামেলা আলোচনা করা উচিত। অভিভাবকদের এ ব্যাপারে আরো সচেতন হতে হবে। শিশুদের শেখাতে হবে ভালো ও মন্দ স্পর্শ সম্পর্কে।

তাদের শেখাতে হবে, এমন ঘটনা ঘটলে যেন সে লুকিয়ে না রাখে। ভীতু নয়, তাকে আত্নবিশ্বাসী করে গড়ে তুলুন। আপনার শিশুটিকে বিষাদের অন্ধকারে নয় ‘’আলোকের ঝর্ণাধারায়’’ জীবনকে ভাসিয়ে নিতে শেখান। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.