আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শেখ হাসিনার সাথে কিছুক্ষন

সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল মধ্যাহ্ন সেই কবেই গত। একটা কাজ অর্ধেক করেই বেড়িয়ে পড়তে হল। পেটে ছুচো দৌড়াচ্ছে। কিছু না খেলে আর চলছে না। সাপ্তাহিক কাজের দিন।

রাস্তায় অসহনীয় জ্যাম। আশে পাশে ফুটপাতের কোন দোকানই খুজতে হবে। পকেটের অবস্থাও ভালো না। কি খাবো কি খাবো ভাবছি আর হাটছি। হয়তো অন্যমনস্কও হয়ে পড়েছিলাম।

হঠাৎ আমার পাশে একটা গাড়ি হঠাৎ করেই ব্রেক করে দাড়াতেই ভাবনায় ছেদ পড়লো। দুই তিন কদমছাট লোক ঘিরে ধরলো আমাকে। "আমাদের সাথে আপনাকে এখুনি যেতে হবে। " ওদের কন্ঠের বলিষ্ঠতা, শারিরিক গঠন আর দৃঢ়তা দেখে বুঝতে কস্ট হল না এরা কারা। এতো হতেই হতো।

মুনির ভাই সব সময় বলতো, "বাচ্চু, এতটা খোলামেলা লিখিস না। কি দরকার? চামে থাক, উন্নতি করতে পারবি। নইলে কোনদিন হয় রাস্ট্র নইলে সন্ত্রাসির হাতে বেঘোরে মরবি। আমরা দুই দিন হয়তো চিল্লাচিল্লি করবো, এর পর সব চুপ। এত উদাহারণ সামনে, চোখে দেখেও তো শিখতে পারিস?" এত সব ভাবনার মধ্যে ওরা আমার হাত ধরে ইতিমধ্যে গাড়িতে তুলে ফেলেছে।

জানি ওরা কারা হতে পারে, তবু জিজ্ঞেস করলাম "কে আপনারা? আমার কাছে কি চান?" আমার কথা যেন ওদের কানেই যায়নি। একজন শুধু পকেট থেকে আইডি কার্ড বের করে দেখালো। যা ভেবেছিলাম তাই। কতক্ষণ গাড়ি চলছিল মনে নেই। একটাই চিন্তা ছিল।

আমার কিছু হলে, মা বাবাকে কে দেখবে? যদি জেল টেল হয়, তবে জামিন টামিন নিয়ে কে টানাটানি করবে? আর এত টাকা পয়সাও আসবে কোত্থেকে? সে সব না হয় বাদই দিলাম। জেল তো অনেক পড়ে। আগে শরীরের উপর যে অত্যাচার সহ্য করতে হবে ! সেই ক্ষমতা কি আমার হবে? দেখতে দেখতে একটা বাড়ির সামনে আসতেই দরজা খুলে গেলো। প্রায় চ্যাংদোলা করেই ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিলো ওরা। বেশ বড় সর ড্রয়িং রুমে।

আসবাপত্র দেখে তো মনে হল কোন অতি বিত্তশালির বাড়ি। কিন্তু আমাকে এখানে আনলো কেন? "বাচ্চু আসছোস?" গলায় এতটা আন্তরিকতা নিয়ে যিনি সামনে এসে দাড়ালেন, তিনি শেখ হাসিনা। বিস্ময়ে আমি নির্বাক। "কিরে? তুই এত অবাক হয়া কি দেখোছ? আমারে নিয়া তো ডেইলি বদনাম করস। এখন কথা বন্ধ হইয়া গেছে?" উনার গলায় হুমকি নয়, কেমন যেন আপনভাব ছিল।

তাই ভয়ের পরিবর্তে কিছুটা তোতলামি এসে পড়লো। মনের অজান্তেই মুখ দিয়ে বের হল, "আআস সসালামু আলাইকুম। " মাথায় হাত বুলিয়ে উনি বললেন, "ওয়ালাইকুম। ভালো আছোস ভাই?" বলে কি? ভদ্রমহিলার দেখি মাথা খারাপ ! উনার দলের কত লোক কত হুমকি দিয়েছে তার ইয়াত্তা নেই। আর উনি কিনা ভাই ভাই করছে? না কোথাও কিছু সমস্যা আছে।

কোরবানি পশু জবাই করার আগে তাকে বেশ খাতির টাতির করা হয়। মনে হচ্ছে আমিও বোধ করি কোরবানি হয়ে যাবো। "এই দুপুরে তো খাওয়া টাওয়া হয় নাই, ঠিক না? আচ্ছা কথাটথা পরে। আগে চল তোরে ভাত খাওয়াই। " ভাত খাওয়ানোর জন্য একেবারে রাস্ট্রের সেবক দিয়ে ধরে আনাদের মধ্যে আমি বোধ করি প্রথম।

"আয় আমার সাথে। মর্জিনা আমাগো জন্য ভাত রেডি কর। " খাবারের আয়োজন খুব বেশি না। "বুঝলি বাচ্চু, বুজোসই তো? দেশ চালাই পার্টি চালাই, নানা হাঙ্গামায় থাকি। সংসার ছাড়া হইছি তো অনেক আগেই।

তাছাড়া বয়সও তো হইছে। তাও আজকা নিজেই দু এক পদ রানলাম। খা ভাই। " রান্না চমৎকার। কি হতে যাচ্ছে বুঝতে পারছি না।

তবুও ভালোই খেলাম। "খাওয়ার পর তো সিগারেট লাগে এইটা জানি। খাইতে চাইলে খাইতে পারোস। এই শহীদ, বাচ্চুরে সিগারেট আইনা দে। " বয়স্ক মহিলার সামনে সিগারেট খাবো কি খাবো না বলে ইতস্তত করছি দেখে হাসিনা বললেন, "আরে খা।

বইনের কাছে শরমের কিছু নাই। " নাহ ! আসলেও কোথাও খুব বড় কোন গন্ডগোল হচ্ছে। "আমাকে এখানে ডেকেছেন কেন?" "তোগো ধারণা আমি খুব খারাপ মানুষ?" "দেখুন দেশ চালাতে গিয়ে ভুল ত্রুটি সবাই করে। কিন্তু আপনি যা করছেন..." আমাকে থামিয়ে দিলেন হাসিনা। "তোগো ধারণা আমি সবকিছু চালাই?" " সেটাই তো সত্যি।

প্রধানমন্ত্রি আপনি, আর দেশ চালাবে অন্য লোক?" "তোদের কেউ কেউ সত্যাটা জানে। " "সত্যটা কি সেটা জানাতেই ডেকেছেন" "হ রে ভাই। এই হাসিনা একটা সাইনবোর্ড। শুধু হাসিনা ক্যান? খালেদা এরশাদ সবাই সাইনবোর্ড!" "এটা কি করে সম্ভব?" "যে দেশের লোকরে ১০০ টাকা দিলেই ভোট কিনা যায়, সেইখানে আমাদের সাইনবোর্ড কইরা পেছনে অন্যলোক দেশ চালানোর কথা কি খুব অসম্ভব?" "সবাই তো ভোট বিক্রি করে না। " "কিন্তু বেশির ভাগই করে।

আর গণতন্ত্রে বেশির ভাগ মানুষের ভোটেই ত হারজিত নির্ভর করে, তাই না?" "শোন রে ভাই, আমার চাইরদিকে লোকজনরে দেখছোস? এইচ টি ইমাম, মোশ্তাকের খাস লোক। অথচ তারে উপেদেস্টা বানাইতে হইলো। রিজভি মাউরা ইন্ডিয়ান। ওরে দিয়া পররাস্ট্রনীতি চালাইতে হয়। এলাহির কারবার তো জানোছই।

কিচ্ছু করার নাই। ১/১১ এর সময়ে যারা আমারেই বাইর কইরা দিতে চাইছিলো, তাগো এতদইন দাবায়ে রাখতে পারছিলাম। শেষে আর পারি না। দুইটারে মন্ত্রি বানাইতেই হইলো। ছাত্রলিগ আর যুবলিগরে কিছু কওন যাইবো? ওর খেপলে আমার রাস্তাঘাটে বাইর হওনটাই তো মুশকিল।

ফ্রাংকেস্টাইন বানানো হইছে। " "কিন্তু আপনি যেভাবে ভারতের পদলেহন করছেন, তাতে তো লোকজন আপনাকে মুখ্যমন্ত্রি বলছে। " " মিছা কথা তো কয় না ভাই! কিন্তু আমি লাচার !" " ওদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নির্বাচন করেছেন, লাচার কি সেকারনে?" " টাকা কি ইচ্ছা করে নিছি? জোর কইরা দিছে। " " ইন্ডিয়ার এত জোর যে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতির কন্যাকেও বাধ্য করতে পারে?" "বোকার মত কথা কইলি বাচ্চু। ইন্ডিয়া আর সেই আগের ইন্ডিয়া নাই।

যারা দুনিয়াতে মিডিয়া, ব্যাংক আর এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রি চালায়, ইন্ডিয়ার সাথে তাগো গলায় গলায় পিরিতি। জানোসই তো ! ওই হাবসি মহিলাটা ওপেনই কইছে, এই অঞ্চলে তারা ইন্ডিয়ারে মাতবর দেখতে চায়। হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না। ওরা অনুরোধের স্বরে হুকুম করে। না করলে, আমার অবস্থাও আমার বাবার মত হইবো।

" "কিন্তু আপনি প্রাণের ভয়ে এই দাসত্ব নিজের গলায় তো নিলেনই। সাথে দেশের পায়েও শিকল পড়ালেন? আপনার বিবেকে এতটুকু বাধলো না?" "শোন বাচ্চু। মানুষের সবচেয়ে বড় ডর তার জানের। আমার তো গুস্টি শেষ কইরা দিছে। কি করতে পারছি আমি? অনেক কাঠখড় পুড়াইয়া হুকুম আদায় করাদের কয়েকজনরে শুধু ফাসি দিতে পারছি।

আবার হুকুমের আসামির হাত থেকিকাই আবার শান্তি পুরস্কার নিতে হইছে। এই ব্যাথাটা বুঝতে পারোস?" " আচ্ছা না হয় মানলাম। কিন্ত আপনার ছেলে কেন এভাবে জড়িয়ে গেল?" "আমরা সবাই একই রশিতে বাধা রে বাচ্চু। ট্যা ফো করলে সব শেষ। সাদ্দামরে দ্যাখ।

গাদ্দাফি রে দেখ। ওই তুলনায় আমি তো কিছুই না। তাই টাকা নিয়া জান বাচাই। " "তাহলে আপনার কি ধারণা এই সব সারা জীবন চলতে থাকবে?" "গরীবের আর উপায় কি বাচ্চু? টাকার জন্য দেশ বিক্রি করতে পারে এমন লোক দেশে অনেক। যারা দুনিয়া কট্রোল করে, ওরা টাকা দিয়া যা খুশি তাই করাইতে পারে।

ওগো কথার বাইরে যাওয়া মুরোদ কারো নাই রে বাচ্চু। " "আমি খুবই সামান্য লোক, আমাকে এই সব তথ্য জানাছে কেন? " "সামান্য হইলেও তোর লেখায় কিছু সত্য থাকে। বাকিগুলি তো খবিসের একশেষ। টাকা দিলেই হইলো। রাইতরে দিন, আর দিন্রে রাইত বানাইতে পারে।

দেখলি না্‌ মুখে কত বড় বড় কুথা কলো, সাগরর রুনির বিচার হ্যান ত্যান। "চা" খাওয়াইয়া দিলাম। ব্যাস সব কয়টার চোপা বন্ধ !" ততক্ষণে বুঝতে পেরেছিলাম, নাহ প্রাণ যাবে না্‌ জেল জরিমানার ভয়ও নেই। তাই খানিকটা কৌতুক করেই বললাম, "আচ্ছা ! এমনও তো হতে পারে যে আপনি টাকাটা নিলেন, কিন্তু পক্ষ্যে কাজ করলেন না !" হাসিনাও মুচকি হাসলেন। "তোরে যে সরকারি অনুষ্ঠানগুলি কভার করতে দেয়না এইটা আমি জানি।

নইলে দেখতি যে, সব সরকারি অনুষ্ঠানে সাদা চেহারার লোকজন থাকেই। কত আলাদা আলাদা পদবিতে তারা পাহারায় থাকে! ওগো এত সোজা মনে করার কারণ নাই রে বাচ্চু। এইতো আজকেও সাংবাদিকের বেশে ৩টা পান্ডা আইলো। তোর জাতভাইয়েরা তো সব জানে। কইছে কেউ সেই কথা? তাছাড়া কইলামই তো ! তারা দেশের সব যায়গায় নিজেদের লোক ফিটিং দিয়া রাখছে।

" " অন্তত সেনাবাহিনীতে ওরা ঢুকতে পেরেছে বলে মনে হয় না। " আকর্ন হাসিতে ভরে গেলো হাসিনার মুখ। "তোরে তো কিছুটা বুদ্ধিমান ভাবছিলাম বাচ্চু। এই যে পিলখানায় এতগুলি অফিসার মরলো, এর পরেও কিছু হইলো না কেন? মইন মিয়া ২ বছর দেশ চালাইলো। গণতন্ত্রওয়ালারা তো দেখলি, একটা টু ফুও করলো না।

আরো ভাইঙ্গা কইতে হইবো?" "আমাকে এখানে এনে এই সব যে বলছেন, এটাও তো তাদের জানার কথা। " " যারা তোরে ধইরা এখানে আনছে, ওই তিনজন আমার খাস লোক। আর তোর পিছে যে টাইম দিলাম সেটাও অনেক গিরিঙ্গি কইরা বাইর করছি। " " তো রহস্যটা টা কি?" "সব রহস্যের কথা জানতে নাই রে বাচ্চু। আচ্ছা যা, এইবারর বাড়ি যা।

" "আগামিবার আপনি যখন বিরোধী দলে থাকবেন, তখন আরো কয়েকবার আপনার হাতের রান্না খাবো। সত্যি আপনা হাতের রান্না খুবই ভালো" কথাটাআ শুনে হাসতে হাসতে গড়িইয়ে পড়লেন হাসিনা, যেন খুব কৌতুকের কথা বলেছি। "তোরে কে কইলো আগামি ইলেকশনে আমি হারমু?" " বলেন কি? দেশের খোজ খবর দেখি আপনি একদমই রাখেন না বুবু। " আমার মুখে বুবু ডাক শুনে যেন কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হয়ে রইলেন হাসিনা। চোখ ছলছল করে আবেগে কিছুক্ষণ চুপ হয়ে থাকলেন।

"ভাইরে তোরে এতক্ষণ কি কইলাম? যতদিন আমারে দিয়া ওওগো স্বার্থ রক্ষা হইবো, ততদিন আমারে কেউ গদ্দি থেইকা সরাইতে পারবো না রে। তা তোগো ভাবিসাব যতই আন্দোলন করুক না কেন। " "আচ্ছা, এখন আয় ভাই। ভাল থাকিস। দোয়া করি আল্লা তোরে অনেক বড় করুক।

" ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা নিয়ে দরজার বাইরে আসতেই কিসের সাথে হোচট খেয়ে মাটিতে পড়ে গেলাম। চোখ খুলে দেখি বিছানা থেকে পড়ে আমি মাটিতে গড়াচ্ছি। হাসি পেলো। স্বপ্ন কত অবাস্তব আর অলিক হতে পারে ! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।