আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

// যে কথা বলতেই হবে ।। গুন্টার গ্রাস //

বাঙলা কবিতা যে কথা বলতেই হবে / গুন্টার গ্রাস --------------- বাঙলায়ন : রহমান হেনরী -------------- এইসব যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায়, যেখানে স্পষ্টতঃই আমরা ক্রীড়নক আর টিকে থাকার প্রশ্নে ব্যবহৃত হচ্ছি কেবলই কিছু পাদটীকা স্বরূপ__ সেখানে, কেন নীরব ছিলাম আমি? নিশ্চুপ, এতোটা কাল? যে কথা বলছি, সেটা হলো প্রতিরোধপ্রিয় আগ্রাসন কর্তৃক প্রথাসিদ্ধ অধিকারের দাবী, হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা আস্ফালনে আর দানাবদ্ধ হয়ে ওঠা উল্লাসধ্বনিতে, যা কিনা মুছে দিতে পারে ইরানী জনতাকে, এই অযুহাতে যে, তাদের কর্মদক্ষতা জুড়ে ওই এলাকায় তৈরি হচ্ছে পারমাণবিক অস্ত্রসমূহ। এবং অতঃপর, কেনই বা আমি বারিত রাখবো নিজেকে অপরাপর দেশসমূহের নামোচ্চারণ থেকে, যখন, বছরের পর বছর__ হোক তা পর্দার আড়ালে__ লাগামহীনভাবে প্রবৃদ্ধিরত পরমাণু অস্ত্র বেড়েই চলেছে সানুক্রমিক, কেবল, কোনও পরিদর্শনই তার টিকিটিরও নাগাল পচ্ছে না ব’লে? উপলব্ধি বলছে, এই প্রশ্নে প্রত্যেকেই নীরব আর আমার নৈঃশব্দ্যও ওই নীরবতারই গোলামী করছে, যেন এর সবই দমিত মিথ্যা আর বিধি-নিষেধ, যা শাস্তিকেই জানায় আমন্ত্রণ, এই সবে কোনও মনোনিবেশ নেই আমাদের; ফলে তো, ‘ইহুদি-বিদ্বেষ’ এক সাধারণ রায়ে পরিণত হলো! এবার শোনো, যখন্ই আমার দেশ, সময়ে সময়ে, স্পর্শ করেছে অনন্য ও স্বতন্ত্র অপরাধসমূহ, তার ন্যায্যতাই প্রতিপাদনে হয়েছে তৎপর ও সচেষ্ট, আর যদি কেবলই নির্ভেজাল বণিকী উদ্দেশ্যপ্রণোদনাতেও হয়__কিংবা ধরো, আমাদের জিহ্বা দ্রুত নড়ে উঠলো এই কথা বলতে যে, এ হলো এক ধরণের ‘ক্ষতিপূরণ’ বা পুষিয়ে দেয়া__ তা সত্বেও, যেখানে কোনও পরমাণু অস্ত্রের অস্তিত্ব প্রমানিতই নয় বরং কী যে প্রমাণিত হলো, সে কথাও দাবী রাখে ব্যাখ্যার; সে দেশেরই বিরুদ্ধে বিধ্বংসী যুদ্ধযাত্রাকে বেগবান করে তুলতে আরও আরও সাবমেরিন ইসরায়েলে পাঠানো কি সমীচীন? শোনো, সেটাই বলছি আমি, যা বলা আবশ্যকীয়। কেন আমি নীরব থেকেছিলাম গতকাল অব্দি? এ জন্য যে, আমার আদিপুরুষের পরিচয় বিষয়ক ভাবনা একটা অস্পষ্ট আঁচড়ের ভার নিয়ে অপেক্ষায় ছিলো সেই সত্যকেই এড়াতে, যা ইসরায়েল রাষ্ট্রের ঘোষণায় উচ্চকিত হয় যে, প্রকারান্তরে আমারও থেকে থাকতে পারে সম্পৃক্ততা, অর্থাৎ ইহুদি-বিদ্বেষ। আজকের এই পর্যায়ে, কেন আমি বলছি এটা, এই বার্ধক্যে আর আমার কলমের ফুরিয়ে আসা কালিতে: ইসরায়েলের পরমাণু শক্তি গোটা বিশ্ব-শান্তির পক্ষে হুমকি__ শুধু কি এই জন্যে? বলছি, এ কারণে যে, আজই বলা অত্যাবশ্যক, নইলে, আগামীকাল হয়ে উঠবে এ-সব বলার পক্ষে যথেষ্ট বিলম্বিত স্বরক্ষেপ; বলছি, এক জন জার্মান হিসেবে এবং অতীতে ঘটে যাওয়া অপরিমেয় ভুলভ্রান্তির যন্ত্রণা নিয়েই__ সম্ভাব্য অপরাধ সংঘটনের আগেই, বহুবার, আমরা তো সচেতন হতে পারতাম! আর আজও যদি না হই, কোনও অযুহাতই আমাদের পাপের কালিমা মুছে দিতে পারবে না। এবং স্বীকার করছি আমি: আর নির্বাক থাকবো না কেননা, পশ্চিমা ভণ্ডামী অনেক দেখেছি, এখন ক্লান্ত আমি; কেননা, আমার বিশ্বাস, এই নির্মম নীরবতা থেকে নি®কৃতি চায় আরও অনেকেই, বলছি, অস্বীকারের স্বীকৃত ঝুঁকি অবলোপনে, ইসরায়েলি পরমাণু অস্ত্রের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আর বিলুপ্তি চেয়ে; আর ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলি পরিচালিত হবে সে দেশের সরকার এবং আন্তর্জাতিক তত্ত্ববধানের যৌথতায়। কেবল এভাবেই__ ইসরায়েল, ফিলিস্তিন এবং প্রত্যেকেই, সমস্ত জনতা, যেখানেই দাঁড়িয়েছে বৈরিতা নিয়ে পরস্পরের মুখোমুখি, পাগলামি অধিকৃত দেশে দেশে___ তারা বেরিয়ে আসার একটা পথ খুঁজে পাবে, আর এই একই কথা আমাদের জন্যেও খাটে। ==== * আলেসান্দ্রো গাব্রেজিয়াভেরের ইংরেজি অনুবাদ থেকে বাঙলায়নকৃত।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।