আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৩টি অঙ্গ নেই, তারপরো অনেককে টেক্কা দিচ্ছে শিশু তামান্না

আমিনুর রহমান মামুন প্রতিবন্ধিরা এমনিতেই অবজ্ঞার পাত্র। এখনো যাদেরকে বোঝা হিসাবেই ভাবা হয়। সেখানে দু’হাত আর এক পা ছাড়াই যদি কেউ মেয়ে শিশু জন্ম দেয়, তা হলে তার পরিনতি কী হয় তা সহজে অনুমেয়। ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া গ্রামের রওশন আলীর স্ত্রী খাদিজা পারভিন শিল্পীও সে পরিনতি এড়াতে পারেন নি। বরং দু’হাত আর এক পা বিহীন মেয়ে সন্তান জন্ম দেয়ার পর তাকে কেন বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল তার জন্য তাকে অনেক ধিক্কার আর লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছিল।

কিন্তু বুকে পাহাড়সমান কষ্ট ধারণ করে বিকলাঙ্গ সেই মেয়েকেই বুকে আকড়ে থাকেন তিনি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি সেই মেয়েটির সাথেই এখন লেখাপড়ায় পেরে উটছেনা সুস্থ - সবল অনেক শিশুই। প্রথম শ্রেণী থেকে ৩ৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত সে ছিল কাসে প্রথম। এর বাইরে গান, আবৃতি, ছবি আকা থেকে শুরু করে নিজের অনেক কাজ নিজেই করে সে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। যশোর শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া গ্রামের রওশন আলীর স্ত্রী খাদিজা পারভিন শিল্পী ৯ বছর আগে একটি বিকলাঙ্গ কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।

এ জন্য আনন্দের পরিবর্তে তার স্বজনদের মাঝে হতাশার সৃষ্টি হয়। অনেকেই বাকা চোখে দেখেন শিল্পীকে। আকার-ইঙ্গিতে কেউ কেউ দুই হাত আর এক পা বিহীন কন্যা শিশুটিকে কেন বাঁচিয়ে রেখেছে তা নিয়ে প্রশ্ন করেন। কিন্তু শিল্পী সে সব কথা শুনে শুধু কাঁদতেন। নিজের গর্ভজাত বিকালঙ্গ ঐ শিশুটিকে বুকে আগলে রাখেন।

এ নিয়ে অবশ্য অনেক লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করতে হয় তাকে। তবে স্বামী তার পক্ষে থাকায় সবকিছু মুখবুঝে সহ্য করে বিকলাঙ্গ শিশুটিকে বড় করতে থাকেন শিল্পী। মেয়ের নাম রাখেন তামান্না আক্তার নুরা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি সেই বিকালাঙ্গ শিশুটি দেখতে হয়েছে ফুটফুটে চাঁদেরমত। রুপে-গুনেও সে অদ্বিতীয়।

অনেক কষ্ট করে তাকে স্থানীয় একটি স্কুলে ভর্তি করা সম্ভব হলে প্রথম শ্রেণী থেকেই তার রোল নম্বর হয় এক। তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত তার সে আসন কেউ ছিনিয়ে নিতে পারেনি। অসুস্থতার কারণে চতুর্ত শ্রেণীতে উঠার সময় ভাল ভাবে পরীক্ষা দিতে না পারায় এবার তার রোল হয়েছে ৩। তবে যে প্রথম হয়েছে তার সাথে নম্বরের পার্থক্য ছিল মাত্র ৪। শুধু কি লেখাপড়া- হুইল চেয়ারে একাএকা চলাফেরা, নিজের সাজসয্যা, কাসের পড়া-লেখা এমনকি মোবাইল পর্যন্ত রিসিভ করতে পারে তামান্না।

তবে হাত না থাকায় এসব কাজ তাকে করতে হয় পা দিয়েই। এসব কাজ সে সুনিপুণভাবেই করে আসছে। তবে এ পর্যন্ত আসতে পদে পদে বাধার সম্মুখিন হতে হয়েছে রওশন দম্পত্তিকে। তামান্না জন্ম নেয়ার পর মানুষের টিপ্পনি হজম করার পর সে যখন বড় হয়, তখন সমস্যা দেখা দেয় স্কুলে ভর্তি নিয়ে। হাত-পা না থাকায় কোন স্কুলই তাকে ভর্তি নিতে অস্বীকৃতি জানায়।

স্থানীয় ব্র্যাক স্কুলে ভর্তি করলেও ২ হাত আর এক পা না থাকায় সেখান থেকে তাকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর তার পাশে এগিয়ে আসে আজমাইন এডাস নামের একটি স্কুল। এখানকার কর্তৃপক্ষ তামান্নাকে ভর্তি করে নেন। সেই থেকে শুরু। মেধা দিয়ে তামান্না শিক্ষিকাদের মন জয় করে নিয়েছেন।

এখন তারা সবাই তামান্নাকে নিজেদের সন্তানেরমত দেখেন। স্কুলের শিক্ষিকাদেরমত সহপাটিরাও ভালবাসে তামান্নাকে। এলাকার সাধারণ মানুষও এখন চান সববাধা দুর করে তামান্না এগিয়ে যাক। তামান্নাকে নিয়ে এখন স্বপ্ন দেখেন তার বাবা-মাও। তারা তাকে ডাক্তার বানাতে চান।

মানুষের স্নেহ-মমতায় যেহেতু সে বেড়ে উঠছে তাই তাকে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করতে চান। তামান্নারও একই ইচ্ছা। সে জানায় বড় হয়ে সে ডাক্তার হতে চায়। তামান্না এখন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী। আজমাইন এডাস স্কুলে পড়তে পারবে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত।

গ্রামেই রয়েছে হাই স্কুল। তারপর কি করবেন তার পিতা-মাতা। এখন তার মা অথবা বাবা হুইল চেয়ারে করে স্কুলে পৌছিয়ে দিয়ে যায়। তখন কি হবে ? মুখ ফুটে না বললেও তামান্নার মা-বাবার ইচ্ছা উন্নত কোন দেশে নিতে পারলে হয়তো কৃত্রিম হাত-পা লাগানো সম্ভব হতো। তাহলে তামান্না অভিশপ্ত জীবনটা পাল্টে যেত।

কিন্তু সে সুযোগ তাদের নেই। তামান্নার অভিশপ্ত জীবনে যতটুকু আশার আলো তা হলো তার মেধা। সেই মেধাকে কাজে লাগিয়ে কতদূর যেতে পারবে সে ? সবার প্রত্যাশা সব বাধা দুর করে এগিয়ে যাক তামান্না। জয়হোক তামান্নার। # আমিনুর রহমান মামুন ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।