আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সব মেঘ গর্জনে আমি রইবো তোমার পাশে

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! আজ দুইদিন ধরে পৃথিশার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছি । ওর সামনে পড়তে চাচ্ছি না । কেমন জানি একটা অস্বস্তি খেলা করছে বুকের ভিতর । কি সহজ সুন্দর একটা সম্পর্ক ছিল ওর সাথে আর এখন কেমন জানি হয়ে গেল । হয়তো কিছুই হয় নি কিন্তু নিজের কাছে কিছুতেই সহজ হতে পারছি না ।

স্যার ঢোকার পরপরই ক্লাস রুমে ঢুকেছি তাই পৃথিশা কথা বলার সুযোগ পায় নি । এখন স্যার ক্লাস রুম থেকে বেরোনোর সাথে সাথে বের হয়ে যেতে হবে যাতে পৃথিশা আমাকে ডাকার সুযোগ না পায় । কিন্তু যেমনটি ভাবলাম তেমনটি হল । ক্লাস রুম থেকে বের হতে যাবো ঠিক এমন সময়ই পেছন থেকে ডাক শুনতে পেলাম -এই আবির । দাড়া বলছি ।

পৃথিশা ডাকছে । ডেকে যখন ফেলেছে দাড়াতেই হল । আমার সামনে এসে বলল -মোবাইল হারিয়ে ফেলছিস ? -মোবাইল হারাবো কেন ? -কাল আর পরশু মিলে কত বার ফোন দিয়েছি ? আমি হিসাবটা জানি । পরশু দিন থেকে ও কম করে হলেও সত্তর বার ফোন দিয়েছে । মেসেজও পাঠিয়ে অনেক গুলো ।

আমি ধরি নি । বলতে গেলে ধরতে পারি নি । অস্বস্তির জন্য । -সাইলেন্ড ছিল তো বুঝতে পারি নি । -পরে তো দেখেছিস ।

ব্যাক করিস কেন ? -আসলে ........ -থাক মিথ্যা কথা বলতে হবে না । আমি দুদিন ধরে দেখছি তুই আমাকে এড়িয়ে চলছিস । কারনটা বলবি ? -কই না তো এড়িয়ে চলছি না তো । এড়িয়ে চলবো কেন ? আশ্চর্য । -আমার সাথে মিথ্যা কথা বলার ট্রাই করিস না ।

এখন পালাচ্ছিলি কেন ? -পালাবো কেন আশ্চর্য ? -আমি তোর বিহেবিয়ার খুব ভাল করে জানি । তুই যখন কিছু লুকাতে চাস তখন তুই কথার শেষে বারবার আশ্চর্য লাগাস । আর তোর নাক ঘামতে থাকে । কথা সত্য । নাকে হাত দিয়ে দেখলাম সত্যি নাক ঘামতেছে ।

-না সত্যি এখন আমার একটা জরুরী কাজ আছে । এখনই যেতে হবে । মনে হল না যে পৃথিশা আমার কথা বিশ্বাস করেছে । বলল -ঠিক আছে যা । তবে বিকাল বেলা দেখা করবি ।

আমি বলতে যাচ্ছিলাম টিউশনি আছে কিন্তু আমার বলার আগেই পৃথিশা বলল -আমি জানি আজ তোর টিউশনি নাই । তারপর কি মনে হল পৃথিশা আমার আর একটু কাছে এসে দাড়াল । আমার হাতটা ধরে বলল -আমার হাত ছুয়ে কথা দে যে দেখা করবি । বল । আমি অস্বস্তির মধ্যে পড়ে গেলাম ।

ওর চোখের দিকে তাকাতেই অস্বস্তিটা আরো বেড়ে গেল । কি গভীর চোখেই না ও তাকিয়ে আছে আমার দিকে । এই দৃষ্টিটা আমার একদমই পরিচিত নয় । -আচ্ছা আমি কথা দিলাম । আসবো ।

পৃথিশা ক্লাস রুমের ভিতরে চলে গেলো । আমি পালালাম ওখান থেকে । বলতে গেলে পৃথিশা আমার সব থেকে ভাল বন্ধুদের একজন । একজন বলছি কেন ও ই সব থেকে ভাল বন্ধু আমার । ওর সব থেকে যে দিকটা আমার ভাল লাগে সেটা ও সব কিছু সোজা সুজি বলে ।

কোন ঘুরিয়ে পেচিয়ে না । একজনকে ওর পছন্দ না সরাসরি বলবে যে পছন্দ না । কথা ঘোরাবে না । আর ও কোন কিছুতে লুকোছাপা করতো না । একটু এক গুয়ে ।

যা একবার বলবে তা করবেই । এমন একটা মেয়ের সাথেই ছিল আমার বন্ধত্ব । ওর সাথে সময় বেশ ভালই কাটছিল । আমাদের সম্পর্কটা বেশ সহজ আর স্বাভাবিক ছিল । আমরা একসাথে পড়তাম খেতাম ঘুরতাম গল্প করতাম ।

কি চমৎ‍কারই না দিন কাটছিল ! কিন্তু সব কিছু কেমন পরিবর্তন হয়ে গেল দুদিন আগে । দুদিন আগে ওর সাথে সোঁনার গায়ে বেড়াতে গিয়েছিলাম । আমাদের প্লান ছিল বিকালের মধ্যেই ফেরত্‍ আসবো । সোঁনার গা দেখার পর আমরা পাশের একটা গ্রামের পথ ধরে হাটছিলাম । সত্যি বলতে ওর সাথে হাটতে খুব ভাল লাগছিল ।

পৃথিশাকে হাসি খুশি লাগছিল । কিন্তু হঠাত্‍ ওর মুখটা কালো হয়ে গেল । আমি বললাম -কি হল ? তোর মুখটা ওমন কেন হয়ে গেল কেন ?? ও আকাশের দিকে ইশারা করে বলল মেঘ জমছে । -তো কি হয়েছে ? আমরা গ্রামের কোন ঘরে আশ্রয় নিয়ে নেবো । সমস্যা কি ? -না না চল ।

জলদি চল । -কেন ? দেখ না কি চমৎ‍কার একটা আবাহাওয়া । আর একটু থাকি না ? কিন্তু পৃথিশার চেহারায় কেমন জানি একটা অস্বস্থিরতা দেখতে পেলাম । ও বারবার বলতে লাগল -চল আবির । প্লিজ চল ।

আর থাকা গেল না । ওকে নিয়ে রওনা দিলাম । কিন্তু এতো দ্রুত সারা আকাশ কালো হয়ে গেল যে আমরা খুব বেশি যেতে পারলাম না । পুরো আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে গেল । আর বিদ্যুৎ‍ চমকাতে লাগল ।

বাধ্য হয়ে একটা বড় বটগাছের নিচে দাড়াতে হল । একটু পর খুব জোড়ে বিদ্যুৎ‍ চমকাতে লাগলো । আমি অবাক হয়ে দেখলাম পৃথিশা কেমন জানি ভয় পাচ্ছে । প্রতিটা বর্জ্যপাতের সাথে ওর চেহারায় কেমন একটা ভয়ে চিহ্ন দেখা দিচ্ছে । বাচ্চা মেয়ে মত ভয়ে কুড়রে উঠছে ও ।

আমি ওর হাত ধরলাম । -কি হয়েছে পৃথু ? এমন করছিস কেন ? ঠিক তখনই খুব জোড়ে বাজ পড়ল । পৃথিশা এতোই ভয় পেলো যে আমাকে জড়িয়ে ধরল । এতো জোড়ে জড়িয়ে ধরল যে আমার কেমন যেন অস্বস্তি লাগা আরাম্ভ করল । প্রতিবার বাজ পড়ছিল আর ও আরো একটু একটু করে আমাকে জড়িযে ধরছিল ।

কি করবো ঠিক মাথা কাজ করছিল না । তবে এটুকু বুঝতে পারছিলাম যে ও বর্জ্যপাতে ভয় পাচ্ছিল । আমার জড়িয়ে ধরে ও আশ্রয় খোজার চেষ্টা করছিল । যতক্ষন আকাশে মেঘ ডাকছিল ও আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিল । তবে শেষের দিকটা ওর ভয় পাওয়ার মাত্রটা একটু কম ছিল ।

মেঘ ডাকা কমে গেলে আমরা ঢাকা দিকে ফিরে আসি । পুরো রাস্তা ধরে ও এক দম চুপ করে থাকল । আমার হাতটা একটা বারের জন্যও ছেড়ে দেয় নি । মনে হচ্ছিল যেন বাচ্চা একটা মেয়ে । কোন কিছু দেখে ভয় পাচ্ছে ।

তাই আমার হাত ধরে রেখেছে । ওকে হলে পৌছে দিলাম কিন্তু আমার মনের ভিতর একটা অস্বস্তি রয়েই গেল । বার বার ঐ সময়ের কথা আমার মনে পরছিল । পৃথিশা কিভাবে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল । এই অনুভুতিটা আমি কিছুতেই মুছে ফেলতে পারছি না ।

তাই বিকেল বেলা যখন ওর সাথে দেখা হল খুব অস্বস্তি লাগছিল । আমি বসে ছিলাম জারুল গাছটার নিচে । পৃথিশা কেমন এলোমেশো পা ফেলে এগিয়ে আসছিল । কিছু একটা ভাবছিল । কাছে আসতে ওকে বললাম -কেমন আছিস ? কেন জানি ওকে তুই করে বলতে একটা কষ্ট হচ্ছিল ।

-ভাল । পৃথিশা হাসল । আমার কাছে এসে বসল । কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকল । একসময় বলল -কিছু বলছিস না কেন ? -কি বলব ? তুই না বললি কি যেন বলবি ।

পৃথিশা আরো কিছুক্ষন চুপ করে থাকল । তারপর হঠাৎ‍ করে বলল -তুই খুব অবাক হয়ে ছিলি না ? - হুম ? কি বললি ? -ঐ দিন যে তোকে জড়িয়ে ধরেছিলাম । অবাক হয়েছিলি ? -একটু হয়েছিলাম । -এই জন্য আমার কাছ থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলি ? -পালাবো কেন ? আশ্চার্য ! পৃথিশা হেসে ফেলল । -তুই আসলেই একটা গাধা ।

ঠিক মত মিথ্যা কথাও বলতে পারিস না । আমি কিছু বললাম না । ও আবার বলল -জানিস আবির আমি মেঘ ডাকা খুব ভয় পাই । সেই ছোট বেলা থেকে । এতো ভয় লাগে আমার ।

এই জন্য তোকে জড়িয়ে ধরেছিলাম । ভয়ে । -ঠিক আছে সমস্যা নাই । -জানিস আগে এতো ভয় পেতাম । মাঝে মাঝে তো অজ্ঞান হয়ে যেতাম ।

-এতো ভয় কেন পাস ? -জানি না । -ওকে সমস্যা নাই । চল কিছু খাওয়া যাক । আমি উঠে দাড়ালাম । -আবির বস ।

আমি এখনও কথা শেষ করি নি । আমি আবার বসে পড়লাম । ও বলল -আমি সারা জীবন মেঘ ডাকাকে এতো ভয় পেয়েছি তোকে কিভাবে বোঝাবো ? কিন্তু সেদিন যখন তোকে জড়িয়ে ধরেছিলাম প্রথম প্রথম খুব ভয় লাগছিল । কিন্তু একটা সময় এসে আমি লক্ষ্য করলাম আমার আর ভয় লাগছে না । আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম ।

তোমার বুকে আমি নিজেকে এতো নিরাপদ বোধ করছিলাম যে তোকে বলে বোঝাতে পারবো না । পৃথিশা চুপ করে থাকল কিছুক্ষন । আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না । -আবির ? -হুম । আমি পৃথিশার দিকে তাকালাম ।

ওর ঠোট দুটো কাঁপছে । কিছু যেন বলতে চাইছে । কিন্তু বলতে পারছে না । ওর চোখ দুটো নির্বাগ চাহনিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । চোখের ভিতে পানি জমতে শুরু করেছে ।

আমি হঠাৎ‍ করে বুঝে ফেললাম ও কি বলতে চায় । হঠাৎ‍ করে সেই অস্বস্তিটা চলে গেল । ওখানে কেমন যেন একটা ভাল লাগা আমার পুরো মন কে স্পর্শ করল । ওকে বললাম -তোকে কিছু বলতে হবে না । ওর হাত দুতো নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বললাম -আমি সব সময় তোর পাশে থাকবো ।

পৃথিশার চোখ দিয়ে টুপ করে জল গড়িয়ে পড়ল । আমি সেই অদ্ভুদ ভাল লাগা অনুভূতি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।