আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোন এক বাবার গল্প...প্রথম পর্ব

২৬ শে সেপ্টেম্বর ২০০৫, জাহিদ একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠল, বাজারে জেতে হবে, চিন্তা করেই মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল, কাল সারা রাত ভাল ঘুম হয়নি, আগের দিন লিনা কে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা কিন্তু কয়েক দিন ধরে নাকি বাচ্চার মুভমেন্ কম, ডাক্তার এর চেম্বারে গেল সকালেই, ডাক্তার আপা চেক আপ করে দ্রুত ভর্তি করতে বললেন। বারডেমে সিট পাওয়া কি সোজা কথা? অবশ্য লিনার Diabetes থাকাতে একতা সিট পাওয়া গেল নারস দের waiting রুমে, নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভাল। ভরতির ফরমালিতিস শেষ করতে করতে দুপুর প্রায় শেষ। ইতিমধ্যে সবার দুপুরের খাবার দেওয়া হয়ে গেসে, ওকে কি এখন দেবে? একটু পরেই একজন আয়া এসে ভাত, মুরগির মাংস ডাল দিয়ে গেল, যাক এক্টা চিন্তা গেল।

লিনা খাবার নিয়ে বসে আছে, কি বেপার, খাচ্ছ না কেন? জাহিদ একটু উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করে, হঠাথ লিনা হু হু করে কেদে ফেলে, আশ্চরজ, কাঁদছ কেন?জাহিদের এই কথার কোন উত্তর দায়না লিনা, আসলে এক অজানা আশঙ্কায় লিনার একেবারেই ভাল লাগচেনা, ওর খালি মনে হচ্ছে ও মারা যাবে। জাহিদ ওকে শান্তনা দেয়, বলে, আরে তুমি খালি খালি চিন্তা করছ, দেখবে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিছুক্ষণ পরে একজন ডাক্তার এসে ওকে দেখে যায় এর কিছু পরেই এক নারস এসে ওকে একটা ইঞ্জেকশান দেয়। লিনা জিজ্ঞেশ করাতে নারস টা বলল এতে বাবু টা ভাল থাকবে। বিকেল পার হয়েছে অনেক্ষন লিনা বলল বাশায় যাবে না? এইত যাব , আসলে জাহিদের তখন যেতে মন চাইছিলনা, হটাত লিনা বলল আমার পেটে হাত দিয়ে দেখ বাবু টা পা নাড়ছে!! জাহিদ হেসে বলল, কি তোমাকে বল্লাম না, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে, খালি খালি তখন কাঁদছিলে।

একটু পর নারস এসে বলল ভাই ভিজিটিং আওয়ার শেষ, অনিচ্ছা সত্ত্বেও জাহিদ বাসায় চলে এল। জাহিদ বাজারে আসার একটু পরেই পকেট রাখা মোবাইল বেজে উঠল, বের করে দেখে লিনার ফোন, ধরতেই লিনা বলল ১১ টার দিকে সিজার করবে। তুমি বাসা থেকে কাপরের ব্যাগ টা নিয়ে এস, ওখানে সব কিছু গুছিয়ে রাখা আছে, কালকেই যে ভরতি হতে হবে জানলে নিয়ে আসতাম, তুমি একটু তারা তারি এসো। হাতের ঘরিতে দেখে ৯.৪০ প্রায়, বাজার বাদ দিয়ে জাহিদ দ্রুত বাসায় যায়। বাসায় জাহিদের সাথে শুধু ওর ছোট বোন আর বাবা থাকে, জাহিদ ওদের কে বলেই হসপিটাল চলে যায়, সাথে নিয়ে যেতে গেলে দেরি হয়ে যাবে।

জাহিদ যখন গাইনি ওয়ার্ডে পৌঁছুল তখন দেখল লিনা কে OTর ড্রেস পরিয়ে operation theatre এ নিয়ে যাচ্ছে, কাছে আসতেই লিনা ওকে ওড়না টা রাখতে দিল বলল বিছানায় রেখে আসতে ভুলে গেসি, বেচারির মুখ শুকিয়ে একে বারে পাণ্ডুর, জাহিদ একটু হেসে অভয় দেয়ার চেষ্টা করল কিন্তু হাসিটা নিজের কাছেই বেসুরো লাগল। আচ্ছা অপারেশান হবে কন তালায়? জিজ্ঞেশ করতেই একজন নারস বলল ২ তালায়। এরি মধ্যে জাহিদের বাবা, বোন, ওর শশুর শাশুড়ি সহ বেশ কিছু আত্মীয় স্বজন চলে এসেছে। ২ তলাতে অপারেশান ইউনিট এর বাইরে বেশ অনেক লোকজন, কারো স্ত্রী, কারো বোন বিভিন্ন অপারেশান রুমে আছে। কিচুখখন পর পরই আয়ারা এসে বিভিন্ন প্রসুতির নাম উল্লেখ করে বলছে কারো ছেলে কারো মেয়ে হয়েছে, কাথা কাপড় নিয়ে আবার ভিতরে চোলে যাচ্ছে, জাহিদের কেমন যেন অস্থির লাগছিল, ঘন ঘন ঢোঁক গিলছিল।

লিনার এক বান্ধবী এসেছে, লিনার এক খালাত বোনকে ও বলছে দেখবেন লিনার ছেলে হবে। ইশ এত দেরি হচ্ছে কেন, জাহিদের রীতি মত হাত পা ঘামতে থাকে। ভিতর থেকে এক আয়া বের হয়ে এসে বলে, লিনার লোকজন কে আছেন? জাহিদ হন্ত দন্ত হয়ে সামনে যায়, আয়াটি বলে “ছেলে হইছে, কাপড় চোপড় কি আনছেন দেন”। জাহিদের মনে হল মাথার উপর থেকে একমন পাথর সরে গেল বুঝি, ওর বান্ধবী হেসে দিয়ে বলল কি বলেছিলাম না!! এর কিছু পরেই কএকজন ডাক্তার হুর মুর করে অপারেশান রুম এ ঢুকে যায়...। ( আগামি পরবে সমাপ্য) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।