আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যে কথা হয়নি বলা!

পরাঞ্জয়ী... ৭ মাস আগে শেষ লিখেছিলাম। আজকে লিখছি আবার! কোন শিরনাম মাথায় আসছে না, কি লিখব তারও কোন কুল কিনারা পাচ্ছিনা। লেখার ইচ্ছেটা হারিয়ে ফেলেছিলাম, সেই ইচ্ছেটাই শুধু ফেরত এসেছে, তাই লিখছি! প্রায় ৩ বছর আগে যখন ব্লগে রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম, ভীষন বিদ্ধস্ত ছিলাম। কখনো কোন কিছুতে দ্বিতীয় হয় নি যে মেয়েটা সেই মেয়েটা অন্যের ভুলে নিজের কাছে হেরে যাচ্ছিল! পরাজিত আর অপরাজেয় ২টি পারসোনালিটি একে অপরের সাথে বিগ ফাইট করছিল! হাজার কথা, যা কাউকে বলতে পারতাম না, এই ব্লগে লিখতাম। ক্লাস, আমার ঘর আর এই ব্লগটাই হল আমার জগত।

পড়াশুনার বাইরের একমাত্র জগত এই ব্লগ! অজানা, অচেনা কিছু মানুষের নাম সর্বস্ব প্রতিক গুলোকে ভীষণ আপন মনে হত। তাদের সমবেদনা, সৌহার্দ আর বন্ধুত্বটা কেমন করে যেন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেল। এক অসামান্য বন্ধু পেলাম। এর মাঝেই একদিন কেউ একজন স্বপ্ন দেখাল। জীবনে প্রথমবার নিজের ইচ্ছে মত স্বিদ্ধান্ত নিতে ইচ্ছে করল।

নিলাম ও! কিন্তু এবার নিজের দোষেই হেরে গেলাম নিজের কাছে। শুরু হল ভুলের পাহাড় জমানো। ব্লগে এসে আমার অবাধ্য, স্বৈরাচারী হওয়ার দিন শুরু হল! মনে হল আমার সাথে যে অন্যায় হয়েছে তার শোধ আমি তুলবই তুলব!! হা হা হা! মানুষ নিজেও জানেনা, অন্যের উপর শোধ নিতে গিয়ে সে প্রকারন্তরে নিজের উপর শোধ নেয়! চিরদিনের লক্ষী মেয়েটা অলক্ষী তো হলামই সাথে এমন কিছুও হলাম যা আদ্যতে আমি নই! নিজেকে নিয়ে এমন সুন্দর সুন্দর সুপাচ্য গল্প কানে আসল যেগুলো আমার নিজের না হলে বোধ করি কিছুক্ষনের জন্য বিশ্বাস করে বসে থাকতাম! একটা অন্যায় ডাল পালা মেলে "রাজার কালো ছেলে থেকে কাকে" পরিনত হল কবে নিজেও জানলাম না। তবে হাড়ে হাড়ে টের পেলাম একটা মেয়ের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা সব থেকে তীক্ষ্ণ অস্ত্র হল তার মেয়েত্ব (নারীত্ব)! যাক গে তিক্ত কথা। ব্লগ ব্লগ বাদ।

কতদিন দেশের কথা বলিনা। দেশ টেশ আপাতত চুলায় গেছে, আমি আছি গরম নিয়ে। আজকে বাসে বসে সিদ্ধ হচ্ছিলাম গরমে। তখন হঠাত মাথায় আসল --আল্লাহ খামাখা ৭ খানা দোযখের মেইন্টেনান্স বাবদ বিগ বিগ বাজেট করেন প্রতি বছর! পাপীষ্ট গুলোকে ঢাকায় পাঠায় দিলেই তো হয়! পাপের ধরন অনুযায়ি এক এক জনকে ঢাকার এক এক রাস্তায় ক্রমাগত চলাচল করতেই থাকবে এমন ব্যবস্থা করবেন! তার উপর আবার লোডশেডিং নামের জিনিস্টাকে যাতে না ভুলে যাই তাই আমাদের দয়ার সাগর প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য লোডশেডিং এর ব্যবস্থা করেছেন! আহ ঊনি না থাকলে আমাদের যে কি হত। আমরা আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ লোডশেডিং এর কথা ভুলেই যেতাম! সো কাইন্ড অব হার! তবে তার রাস্তার জ্যাম আমাকে দুনিয়ার সব থেকে সুন্দরতম একটা দৃশ্য দেখিয়েছে গত পরশু! ঢাকার গরমে অনেকদিন ধরে অনভ্যস্ত একজন মানুষ যখন ঘেমে নেয়ে ওঠে, তখনকার সেই চেহারা কতটা সুখকর দেখায়।

কানের কাছে আর্মি স্টাইলে কাটা চুলের ফাঁক দিয়ে গড়িয়ে পড়া ঘামের ফোটাটা আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করায় এত শান্তি আমি জানতাম না! ঘাম জিনিসটা সব সময় খুব ঘেন্নার বিষয় মনে হত আমার কাছে। সেই জিনিসটায় মমতার একটা ব্যাপার খুজে পাওয়া যায় তা আমাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বুঝতে সাহায্য করেছেন! এ কারনে আগামী দেড় বছর আমি তাকে গালি দিব না, প্রমিজ! এলোমেলো কত কিছুই লিখতে ইচ্ছে করছে। গত ৫ ঘন্টা ধরে লিখছি, কাটাকাটি করি আবার লিখি। মন মত কিছুই হচ্ছেনা! মনটা অসম্ভব বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে! দুজন মানুষের গল্প শোনাতে ইচ্ছে করছে। জানিনা এতদিন পর এসে আপনাদের বিরক্ত করছি কি না! এই দুজন মানুষের গল্পটা শুরু হয়েছিল বেশ আগে।

দুজন দুজনের সামনে মাথা নীচু করে নিজেদের সমস্ত দোষ স্বীকার করেছিল। তারপর একে অপরের চোখে তাকিয়ে বলেছিল "এস, নিজেদের সব অতীত ভুলে শূন্য থেকে শুরু করি"। সেই শুন্যটা কেমন করে এক অসীম মহাশূন্য হয়ে গেল! কত মেইল, কত ফেইক আইডি থেকে কান কথা দুজনের কাছে চালাচালি হল। দুজনেই ঠোঁট টিপে হেসেছে আর ভেবেছে "ওরে বোকার দল এসব আমরা জানি!" অবশেষে প্রমান হল, মন থেকে চাইলে পাওয়া যায় না, এমন কিছু বিধাতা (কিংবা প্রকৃ্তি) সৃষ্টি করেনি! আর মন্দ মানুষদেরও তো স্বপ্ন থাকতে পারে। তাই ভাল মানুষদের উচিত মন্দ মানুষদের সুখ দেখে চোখ বুজে রাখা।

এ হচ্ছে ঘোর কলিকাল, নয়ত মন্দ মানুষ গুলাও কেমন কেমন করে সুখি হয়ে যায়!! গতকাল সকাল থেকে এই দেশ, এই শহর কোন কিছুকেই যেন আপন মনে হচ্ছেনা। কি যেন নেই নেই! রাতভর ঘুমাতে পারিনি কাল। কালকে কেউ আমার ঘরে বালু পায়ে হাটেনি, মেঝের বালু বিছানায় তোলেনি, আমিও কাউকে ঝাড়ি দিতে পারিনি এই অপরাধে! খেতে পারছিনা, কারন কেউ নিজের খাবার থেকে আমাকে মুখে তুলে দিচ্ছে না। মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে কেউ বলবেনা "তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?"। রাতে বাথরুমে যেতে ভয় করে আমার।

ঘুম ভেঙ্গে ডাকতে গেলেই দেখতাম কি মাসুম করে ঘুমাচ্ছে! এত শান্তির ঘুমটা ভাঙ্গাতে ইচ্ছে করত না। মানুষ কেমন করে এত নিশ্চিন্তে শিশুর মত ঘুমায় আমার দেখেই শান্তি লাগত। আমি ঘুম না ভাঙ্গিয়ে চুপ করে শুয়ে থাকতাম। মনে মনে বলতাম "আমার লেইজি বোন্স"! আমার গাল টেপা, চুল টানা কিচ্ছুটি টের পেতনা ঘুমের চোটে! তার ঘুম ভাঙ্গানোর একটা মাত্র উপায় ছিল, "আমার ক্ষুধা লাগছে"! আর আমি বুঝে শুনে এই কথাটাই সময় মত ছুড়ে দিতাম! আমার কান্না কাটি হল্লা হাটি সব ই সে চুপ করে এঞ্জয় করেছে। যখন "বাবু" ডাকত ওর মধ্যে কোথায় যেন ফেলে আসা শৈশবের বাবার স্নেহের রুপটা দেখতাম! সেই সব কিছুকে আজ দিন ভরে মিস করেছি! যে শহর, যে মানুশগুল এত আপন মনে হত, সেই সব এত ফাকা কেন লাগছে জানিনা।

মন্দ হয়ে যদি এমন কিছু পাওয়া যায় তবে কসম করে বলছি, আমি যতবার জন্মাব, মন্দ হয়েই জন্মাব! সারাদিন মনের ভেতর ২টো লাইন বেজেছে -------------------------------পাড়ি দিতে নদী, হাল ভাঙ্গে যদি, ছিন্ন পালের কাছি মৃত্যুর মুখে দাড়ায়ে জানিব, তুমি আছ, আমি আছি-------------------------------------------- ভাল থাকবেন সবাই! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।