আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যেই ব্যক্তিকে বলা হচ্ছে ‘সেই জাতির জনক‘ তাকেই আবার বলা হচ্ছে ‘সেই জাতির হাজার শ্রেষ্ঠ কীর্তিমান ব্যক্তি‘!!! এরূপ ভন্ডামি যে কেবল আওয়ামী লীগই করে থাকে তা কিন্তু নয়। তার ধারাবাহিকতায় বিএনপিও জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক নামে আখ্যায়িত করে!!

জীবনে যা দেখেছি, যা শিখেছি যা শিখছি তাই সবার সাথে শেয়ার করার অপপ্রচেষ্টা……সাথে বানানো কিছু গল্প। জানি অনেকে এটা পড়েছেন। তারপরেও যারা পড়েন নি তাদের জন্য শেয়ার দিলাম। বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৫ আগস্ট এবং বিশেষ বিশেষ কিছু সময় এলে ‘জাতির পিতা‘ নামক একটি পশ্চাৎপদ ও প্রতারনামূলক ধারনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। বিশেষ বিশেষ সময়ে তা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলেও এর যেই ক্ষতিকর প্রভাব সেটা কিন্তু বিশেষ বিশেষ সময়তেই সীমাবদ্ধ থাকেনা, এর কুপ্রভাব সুদূরপ্রসারী।

তাই এ নিয়ে কিছু লিখবার অভিপ্রায়েই নীম্নোক্ত লেখাটি লিখতে বসলাম। প্রত্যেক ব্যক্তিই কোন না কোন জাতির মাঝে জন্মগ্রহন করেন। সেই কারনে যে কোন অবস্থাতেই ব্যক্তির আগেই হল জাতি। এছাড়া কোন জাতিই স্থিরভাবে এক জায়গায় থাকেনা, তার ক্রমাগত পরিবর্তন ও গঠন ঘটে, আবার একই সাথে এমন একটি ধারাবাহিকতা বজায় থাকে, যা সেই জাতির অতীতের সাথে তার বর্তমানকে একই সূত্রে আবদ্ধ করে। কাজেই কাউকে ‘জাতির পিতা‘ নামক উপাধি দেওয়া অবাস্তব এবং তা একই সাথে সাধারন মানুষকে মতাদর্শিকভাবে শোষিত করে যা মোটেও হেলাফেলার বিষয় নয়।

আমরা যদি আধুনিক ইউরোপের দেশগুলির দিকে লক্ষ্য করি তাহলেই দেখব যে সেখানেও এই ‘জাতির জনক‘ নামক ধারনাটিকে সঙ্গত কারনেই কোন অবস্থাতে গ্রহন করা হয়নি। উদাহরন স্বরূপ আমরা দেখতে পারি জার্মানী, ইতালী এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের দিকে। জার্মানীতে ছিল অনেক রাজা এবং প্রিন্সের শাসন, যেসব উচ্ছেদ করে বিসমার্কের নেতৃত্বে একটি অখন্ড জার্মান রাষ্ট্র গঠিত হয়। অনগ্রসর ‘জাতির পিতা‘ নামক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তাই বিসমার্ককে ‘জার্মান জাতির জনক‘ নামে আখ্যায়িত করা যেত কিন্তু সেটা কিন্তু করা হয়নি। কারন জার্মানী সাংস্কৃতিক দিক থেকে সবচাইতে অগ্রসর দেশের মধ্যে একটি।

জার্মান ইতিহাসে বিসমার্কের যেই ঐতিহাসিক অবদান সেটার পরেও জার্মানী সহ ইউরোপের অন্যান্য দেশে দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক, সামাজিক চিন্তার যেই বিকাশ ঘটেছিল সেটার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ‘জার্মান জাতির জনক‘ হিসাবে ভূষিত করলে সেটা পশ্চাৎপদ একটি কাজ বলে পরিগনিত হত। জার্মানীর মত ইতালীতেও অখন্ড ইতালী গঠনের যেই প্রয়োজনীয়তা দাঁড়িয়েছিল তার পরিপ্রেক্ষিতে যেই আন্দোলন গড়ে উঠে সেই আন্দোলনের ক্ষেত্রে কাভ্যুর, মাৎজিনী ও গ্যারিবাল্ডী উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু তারপরেও তাদের কাউকেই কিন্তু ‘জাতির পিতা‘ নামে আখ্যা দেওয়া হয়নি, কারনটা ছিল খুবই সহজ। জার্মানীর মত ইতালীতেও দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক, সামাজিক চিন্তার যেই অগ্রগতি হয়েছিল তার সাথে ‘জাতির জনক‘ নামক অবাস্তব আখ্যা কোনভাবেই যায়না। এমনকি আমরা যদি মার্কিন যুক্ত্ররাষ্ট্রের ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলেও দেখব যে সেখানে একটি নতুন রাষ্ট্রের ভিত্তিস্বরূপ একটি সংবিধান তৈরী হয় যার ক্ষেত্রে জর্জ ওয়াশিংটন, টমাস জেফারসন, জেমস ম্যাডিসনের অসামান্য ভূমিকা ছিল।

কিন্তু ইউরোপের উন্নত, প্রগতিশীল চিন্তার ধারাবাহিকতা তাদের মধ্যেও বজায় ছিল বিধাতেই তাদের কাউকেই ‘জাতির পিতা‘ আখ্যা দেওয়া হয়নি। তাদের আখ্যা দেওয়া হয়েছিল ‘ সংবিধানের পিতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠাতা ‘ যা খুবই সঙ্গত ছিল, কেননা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যেই সংবিধান আজও বিদ্যমান, তার রচয়িতা ও প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তারা। আমরা তুর্কির ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখব যে সেখানে কামাল পাশা তুর্কির ক্ষমতায় আসার পরে সেখানে একটি সেক্যুলার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন, এবং সেখানে একটি আধুনিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নানা প্রগতিশীল পদক্ষেপ গ্রহন করেন, যার মাঝে ছিল শিক্ষার আধুনিকীকরন, নারী সমাজের স্বাধীনতার উদ্দেশ্যে নানা ধরনের প্রগতিশীল পদক্ষেপ। সেখানে তিনি কোন সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন নি কিন্তু তুর্কি সমাজের যেই পরিবর্তন তার কারনে ঘটেছিল তার চরিত্র অবশ্যই বৈপ্লবিক ছিল যার কারনে তুর্কীরা তাকে আখ্যায়িত করেছিল ‘আতা তুর্ক‘ বা ‘তুর্কীর পিতা‘ হিসাবে। কিন্তু আমরা সেই সময়তেই দেখি যে তখন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে লেনিনের নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছিল সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব যার সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন ছিল তুর্কীর সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের চাইতেও অনেক বেশী মৌলিক, গভীর এবং গুরুত্বপূর্ণ।

তারপরেও কিন্তু লেনিনকে ‘জাতির জনক‘ হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয়নি। কারন সোভিয়েত ইউনিয়নে লেনিনের নেতৃত্বে যেই কমিউনিস্ট পার্টি তখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে ছিল তার দৃষ্টিভঙ্গী ছিল অনেক প্রগতিশীল এবং উন্নত। সমাজ সম্পর্কে এইরূপ ‘ব্যক্তিকেন্দ্রিক‘ ধারনার কোন সংস্কৃতির উপস্থিতি সেখানে ছিলনা এবং পরবর্তীতে চীন, ভিয়েতনাম, উত্তর কোরিয়া, কিউবাতেও আমরা তারই ধারাবাহিকতা দেখতে পাই। ইতিহাসে লেনিন, স্ট্যালিন, মাও সে তুং, হো চি মিন, ফিদেল ক্যাস্ত্রোর ভূমিকা অপরিসীম হলেও তারা কেউই যৌক্তিকভাবেই ‘জাতির পিতা‘ নামে আখ্যায়িত নন। এই প্রসঙ্গে রুশ দার্শনিক প্লেখানভের বিখ্যাত বক্তব্যটি উল্লেখযোগ্য ” এটা দেখা গেছে যে, মহান প্রতিভাধর ব্যক্তিদের আবির্ভাব ঘটেছে সেখানেই যখন তাদের বিকাশের পক্ষে সহায়ক সামাজিক পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।

এর অর্থ হচ্ছে প্রত্যেক প্রতিভাধর ব্যক্তি যাঁরই যথার্থ আবির্ভাব ঘটেছে, প্রত্যেক প্রতিভাধর ব্যক্তি যিনিই একটি সামাজিক শক্তি হয়ে উঠেছেন, তিনি হলেন সমাজ সম্পর্কের মূর্ত প্রকাশ। এই যখন হল ঘটনাটা, এটা তাহলে পরিষ্কার, প্রতিভাধর ব্যক্তিরা, আমরা যেমনটি বলছি, শুধু ঘটনাসমূহের বিশেষ কিছু দিককেই বদলাতে পারেন কিন্তু তাদের সাধারন ধারাকে বদলে দিতে পারেন না ; তাঁতা নিজেরাই হলেন এই ধারার মূর্ত প্রকাশ, এই ধারাটি না থাকলে এঁরা নিজেরাই সম্ভাবনা থেকে বাস্তবের আঙ্গিনায় উপনীত হতে পারতেন না। ” (প্লেখানভ : ইতিহাসে ব্যক্তির ভূমিকা) আমরা যদি ভারত উপমহাদেশের ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে দেখব যে তার চিত্র উপরিউক্ত দেশগুলোর চাইতে সম্পূর্ণই আলাদা। ভারতবর্ষ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যাবার পরে ভারত এবং পাকিস্তান উভয় অংশেই ‘জাতির পিতা‘ হিসেবে যথাক্রমে ‘মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী‘ ও ‘মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ‘ কে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। এখানের যেই চিন্তাধারা সেই অনুযায়ী কোন কীর্তিমান ব্যক্তিকে যথাযথ সম্মান দেওয়া এবং তাকে ‘ঈশ্বর‘!!! বলে গন্য করাটা প্রায় সমার্থক।

আমরা যদি জার্মানী, ইতালী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর সাথে ভারতবর্ষের তুলনা করি তাহলে দেখব যে কিছু উল্লেখযোগ্য পার্থক্যের কারনে চিন্তা - ভাবনায় বিস্তর ফারাক। জার্মানী, ইতালী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদী দেশগুলোতে যথার্থভাবেই তৎকালীন সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত অনেকাংশে প্রগতিশীল বুর্জোয়া বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। যার কারনে সেইসব দেশসমূহে দার্শনিক, রাজনৈতিক, বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা স্বাভাবিকভাবেই ছিল প্রগতিশীল। অন্যদিকে, সেই সময়ে সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহ পশ্চাৎপদ হলেও বিপ্লব ও সমাজ পরিবর্তন সম্পর্কে নেতৃত্বাধীন দলগুলোর আদর্শ তাদের সচেতন করে রেখেছিল বিধাতেই সেসব দেশেও ‘জাতির পিতা‘ নামক হাস্যকর কোন ধারনা সেখানে গড়ে উঠতে পারেনি। কিন্তু ২০০ বছর ব্রিটিশ শাসনের অধীনে থাকার সময় ভারত উপমহাদেশের যেই মধ্যবিত্ত শ্রেণী গড়ে উঠেছিল তার চরিত্র ইউরোপের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর থেকে আলাদা ছিল।

সবচেয়ে বড় পার্থক্য ছিল এই জায়গাতে যে সেই শ্রেণীটির নিজস্ব রাজনৈতিক কোন ক্ষমতা ছিলনা যা ইউরোপের মধ্যবিত্ত শ্রেণীটির ছিল। যেই দেশীয় পুঁজি সেই সময়ে গঠিত হয়েছিল তার সিংহভাগই বিনিয়োগ করা হত ভূসম্পত্তি ও জমিদারী স্বত্ব কেনার জন্যে। তাই ইউরোপীয় বুর্জোয়া শ্রেণীর মত এই বাঙ্গালী মধ্যশ্রেণী কোন শিল্প প্রক্রিয়ার থেকে উদ্ভব হয়নি তেমনি তার কোন স্বাধীন অস্তিত্ব ছিলনা। যেহেতু ভারতবর্ষের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর চরিত্র ইউরোপের মধ্যবিত্তের থেকে আলাদা ছিল সেই কারনে দার্শনিক, রাজনৈতিক, সামাজিক চিন্তাধারার ক্ষেত্রে তারা রয়ে গিয়েছিল ইউরোপের চাইতে অনেকাংশে পশ্চাৎপদ। আর ভারতবর্ষ ‘ ভারত ‘ এবং ‘ পাকিস্তান ‘ নামক দুটি দেশে বিভক্ত হবার পর যেই অংশ স্ব স্ব দেশে ক্ষমতাশালী হয়েছিল তাদের চরিত্রও প্রগতিশীল ছিলনা।

নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখবার জন্যে তারা জনগনের মধ্যে নানা প্রকারের অনগ্রসর চিন্তা, অভ্যাস, বজায় রাখতে চেয়েছিল। সর্বোপরি মধ্যবিত্তের যেই বিকাশ ইউরোপে ঘটেছিল তার প্রধান কারন ছিল সেই শ্রেণীটির স্বাধীন শিল্প উদ্যোগ। কাজেই সেখানে বুর্জোয়া শ্রেণীটির চরিত্রও গঠিত হয়েছিল তার সাথে সম্পর্কিতভাবে। তাদের ব্যবসা - বাণিজ্য, শিক্ষা, সাহিত্য, চিত্রশিল্প, সঙ্গীত সবই ছিল সেই স্বাধীন বিকাশের ফলাফল। কিন্তু উনিশ শতকের শুরু থেকে পাকিস্তান আমলের শেষ পর্যন্ত যেই মধ্যবিত্তের বিকাশ আমরা বাংলাদেশে দেখেছি তার মাঝে কোন মেরুদন্ড ছিলনা।

১৯৭১ সাল থেকেই যেইসব রাজনৈতিক দল, সামরিক শাসনের দ্বারা বাংলাদেশ পরিচালিত হয়েছে তার সম্পর্কে বিস্তারিত কোন ব্যাখ্যার প্রয়োজন এখানে নেই। এটুকু বলা যায় তাদের প্রত্যেকের চরিত্রই প্রতিক্রিয়াশীল, পশ্চাৎপদ, নানা প্রকার উদ্ভট, অনগ্রসর চিন্তা - ভাবনার দ্বারা তারা এদেশের মানুষের চিন্তা - ভাবনা থেকে শুরু করে সবকিছুর উপরেই প্রভাব বিস্তার করে আছে যার ফলাফল হয়েছে ভয়াবহ। যেই জায়গাতে এসে সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর নেতৃত্বে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো তাদের আদর্শের কারনে নানাবিধ অনগ্রসর, পশ্চাৎপদ ধারনা থেকে সেদেশের জনগনকে মুক্ত করবার অভিপ্রায়ে তাদের স্ব স্ব রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে সেখানে বাংলাদেশের প্রতিটি শাসক শ্রেণীই ‘ব্যক্তি কেন্দ্রিক‘ ধারণা দ্বারা সাধারন মানুষের রাজনৈতিক ভাবনা আচ্ছাদিত করে রাখতে সদা সচেষ্ট। প্রতিটি দলই সদা তৎপর তাদের নেতাকে ‘ জাতির মুক্তির অগ্রপথিক ‘ হিসাবে দাঁড় করাতে। প্রসঙ্গক্রমে বলা যায় যে একদিকে আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবর রহমানকে ‘জাতির পিতা‘ বলে আখ্যায়িত করে অন্যদিকে তাকেই আবার বলে ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী‘!!!! তাকে বাঙ্গালী জাতির জনক হিসাবে বললে অবশ্যই ১৯৭১ সালের পূর্বের যেই বাঙ্গালী জাতি তার থেকে বিচ্ছিন্ন করেই বলতে হবে কারন তাতে বাঙ্গালী জাতির যেই ইতিহাস সামনে এসে যায় সেটা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মেরও আগের!!!! সেই সময়ে আরো অনেক অনেক কীর্তিমান ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটেছিল এবং বাঙ্গালী জাতিও অন্যান্য জাতি সমূহের মতই ক্রমাগত পরিবর্তিত এবং গঠিত হচ্ছিল এমন এক ধারাবাহিকতায় যা বাঙ্গালী জাতির অতীত এবং বর্তমান উভয়কেই একই সূত্রে সম্পর্কিতভাবে বেঁধে রাখে।

অর্থাৎ যেই ব্যক্তিকে বলা হচ্ছে ‘সেই জাতির জনক‘ তাকেই আবার বলা হচ্ছে ‘সেই জাতির হাজার শ্রেষ্ঠ কীর্তিমান ব্যক্তি‘!!! এরূপ ভন্ডামি যে কেবল আওয়ামী লীগই করে থাকে তা কিন্তু নয়। তার ধারাবাহিকতায় বিএনপিও জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক নামে আখ্যায়িত করে!!! এরূপ ‘ব্যক্তিকেন্দ্রিক‘ উপাধির উদাহরন আজ বাংলাদেশে সর্বত্র দেখা যায়। সুদখর মহাজন ডঃ মোহাম্মদ ইউনুসকে বলা হয় ‘গরীবের একমাত্র প্রকৃত বন্ধু‘!!! এইরূপ যত ‘ব্যক্তিকেন্দ্রিক‘ উপাধি দিয়ে জনগনের মনে ধুম্রজাল সৃষ্টি করা হয় তার মধ্যে কিন্তু আওয়ামী লীগ, বিএনপি মার্কা পার্থক্য নেই বরং মিল রয়েছে। তা হল জনগনকে রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে রাখা, তাদের মনে এই ধারনার সৃষ্টি করা যে সংগঠিতভাবে কোন প্রকার ইতিবাচক পরিবর্তন বাংলাদেশে করা সম্ভব নয়। সর্বত্রই এই ধারনা ছড়িয়ে দেওয়া যে দেশের, রাষ্ট্রের মুক্তি আনবার জন্যে সম্মিলিত কোন প্রতিরোধের প্রয়োজন নেই, বরং সৃষ্টিকর্তা প্রেরিত একজন অবতার এসে এই রাষ্ট্রকে মুক্ত করে দিতে সক্ষম!!!!!! জনগনের উপর এই যে মতাদর্শিক আধিপত্য বিস্তার করা একে হালকাভাবে নেবার কোন সুযোগ এই সময়ে এসে আর একেবারেই নেই।

সময় হয়ে গিয়েছে আমাদের সকলেরই উপলব্ধি করবার বিশেষত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর যে বিকাশের যেই ইতিহাস সেটাই প্রত্যেক কীর্তিমান ব্যক্তির নির্দিষ্ট প্রভাবশালী ভূমিকাকে নির্ধারণ করে দেয়, তার বিপরীতটি নয়। আর সর্বত্র বিকাশের যেই ইতিহাস সেটা ধারাবাহিকভাবে ঘটে চলে সকলের সম্মিলিত উদ্যোগে, কোন একজনের প্রতিভায় নয়। আমাদের প্রত্যেকেরই বারবার মনে করা উচিত ফুলবাড়ি, কানসাট, আড়িয়াল বিলের ঘটনাগুলো স্মরণ করা। সেই ঘটনাগুলো খন্ড খন্ড ভাবে ঘটলেও তা আমাদের বুঝিয়ে দেয় সকলের সম্মিলিত প্রতিরোধেই ইতিহাসের গতি-প্রকৃতির পরিবর্তন সম্ভব, ইতিহাসের পট পরিবর্তনকে নিয়ন্ত্রণ করা কোন ব্যক্তি বিশেষের বীরত্বের গল্পগাঁথা নয়। ।

অনেক কষ্ট দিলাম এত বড় একটা লেখা পড়িয়ে। আর একটু কষ্ট করে কি বুঝলেন তা জানাবেন… ‘জাতির জনক’ নামক একটি পশ্চাৎপদ ধারনা এবং ভারতবর্ষ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।