আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

--মাতৃত্ব--অবিনশ্বর সত্যতা --

জানি না কবে কোথায় , কিভাবে তোমাকে আবার দেখব। তবে তোমাকে হারানাটাই আমার অনেক বড় একটা বাজে অনুভুতি । ভাল থেকো বিবেকা। ভাল থেকো বিবেক। ভাল থেকো আমার কবিতাগুলো একদিন একটা গ্রামে , এক গরীব চাষির ছেলে বাগানে পড়ে থাকা শুকনা পাতা কুড়াতে গেল ।

একটা সারের বস্তায় পাতাগুলো ভরছে , ছয় –সাত বছর বয়সী ছেলেটা। হঠাৎ চোখ গেল ,, বাগানের পাশের বাড়িটায় । জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখল টেবিলের উপর অনেকগুলো তালরুটি রাখা । মাত্র তৈরী করে রেখে দেয়া হয়েছে । ঘরে কেউ নাই ।

এই সুযোগে ছেলেটি একটা লম্বা গাছের ডাল জানালা দিয়ে ঢুকিয়ে রুটির থালাটা জানালার কাছে নিয়ে এল । এরপর কয়েকটা রুটি সে তার ছোট্ট ছেড়া হাফ প্যান্টের পকেটে ঢোকালো ভাজ করে করে । অনেক যত্ন নিয়ে । কিন্তু একটা টুকরাও খেল না । অথচ ছেলেটির মুখ দেখলে বোঝা যায় সে খুব ক্ষুধার্ত।

এই ফাঁকে বাড়ির মধ্যে থেকে কেউ একজন দেখে ফেলে ছেলেটিকে রুটি চুরি করতে। ছেলেটিকে ধরে অনেক মারধোর করা হয় । ছেলেটি চুরি করার লজ্জাতে কন কথা বলে না । মার খেয়ে যায় নীরবে । এক সময় বাড়ির মধ্যে থেকে একজন মহিলা তাকে এক টুকরা রুটি আর পানি খেতে দেয় ।

ছেলেটি পাগলের মত খেতে থাকে । তখন মহিলাটি তাকে আদর করে জিজ্ঞাসা করে , “ তুমি কেন চুরি করেছিলে ?” ছেলেটির জবাব ছিল – “ আমার মা তালরুটি খুব ভালবাসে । আমরা খুব গরিব, তাই বাড়িতে কখনও তালরুটি বানায় না । আজকে তালরুটি দেখে মার কথা খুব মনে পড়ল । তাই ভুল করে চুরি করতে এসেছিলাম ।

আমি আমার জন্যে চুরি করিনি , বিশ্বাস করুন । মা যদি জানতে পারেন আমি চুরি করেছি , মা খুব কষ্ট পাবে” এই ছিল ছেলেটির গল্প। এরপর কি হয়েছিল তা আমার জানা নেই, আমি এতটুকু শুনেই চোখের পানি আটকে রাখতে পারিনি । একটা ৬ বছরের বাচচা, তার মাকে কততুকু ভালবাসে । আর আমি??? ভাবতেই নিজেকে অপরাধি মনে হয়।

এটা একটা চাইনিজ গল্প । বাংলায় অনুবাদ করা । মা শব্দটা পৃথিবীর মধুরতম শব্দ , অথবা মা সবথেকে আপন এ কথাটা আমরা অনেকবার শুনেছি এবং মেনেও নিয়েছি। এটা নিয়ে অনেকবার অনেকে লিখেছেন । আমি আজ একটু অন্যরকম করে লিখতে চাই ।

খুব ভাল করে ভেবে দেখি তো ? মা ছাড়া কোন কাজটা আমার ঠিকভাবে হয় ? যত বড়ই হই না কেন ? সবথেকে বেশি বিপদের সময় আমি কার কাছে যাই ? উত্তরটা মা । সবথেকে ভাল করে মায়ের অস্তিত্ব বুঝতে পারি , যখন কোন জায়গা থেকে বাড়ির দিকে ফিরি । বাড়ি ফিরে মা একমাত্র ব্যক্তি যার কাছে আমার সব আবদার সারাজীবন মূল্যায়িত হয় । আমি কোন জিনিসটা খেতে বেশি ভালবাসি , সন্ধ্যার সময় আমার খিদা লাগে । রাতে আমার ঘুমের সময় কাথা গায়ের উপর না থাকলে ঘুম ভেঙে যায় ।

এই সব খবর মার কাছে থাকে । আর কোনদিনও মা আমার ঘুম ভেঙে যেতে দেন না । আমাকে কষ্ট পেতে দেন না । এই পৃথিবীর কোথাও কোন বিপদের পর যদি কেউ আমার সাথে থাকেন তো আমার মা । সেটা শুধু আমার কথা নয় ।

সবার কথা । বলা বাহুল্য মাত্র । এই কথাগুলোও আমরা অনেকবারই শুনেছি। কিন্তু মনে রেখেছি কি ? বুকে হাত দিয়ে কখনও বলতে পারব ? মাকে আমি কষ্ট দেই নি ? তার মুখের দিকে না তাকিয়ে আমার কিছু ভন্ড স্বার্থর দিকে ছুটে যাই নি ? মা কে গালাগালি করি নি ? তার বুকফাটা কান্না এসেছে কিন্তু আমাদের বোধ আসেনি। তার মনটার মধ্যে আমার জন্যে সবসময় চিন্তার সমুদ্র ঠেলে উঠেছে অথচ আমি তার খোজ রাখিনি।

তার মুখের উপরে দুটো কথা না বললে আমার ভাত হজম হয়নি । তার দিকে আমার ময়লা জামাকাপড় ছুড়ে দিয়েছি আবার কাচার পর একটুখানি ময়লা থাকাতে অসংখ্যবার গালমন্দ করেছি । তাক চুরি করে মদ- গাজা বিড়িতে আস্কত হয়েছি। রাতের পর রাত বাড়ির বাইরে মোজ মাস্তি করে বেড়িয়েছি। অথচ, একটা দিনের একটা ঘন্টা সময়ও হয়নি , রান্নাঘরের চারদেয়ালের মধ্যে বন্দী আমার মাকে গিয়ে কিছু সুন্দর কথা বলে তার সময়টাকে সুন্দর করে দিতে ।

ছুটির দিনে হইহই করে বেরিয়ে গেছি বন্ধুদের সাথে অথচ এই একাকী মানুষটা বাসার মধ্যে দম আটকে এলেও মরতে পারেনি আমার জন্যে । সে না থাকলে আমার কষ্ট হবে তাই। তার সব কষ্ট , সব না ঘুমানো রাতগুলোকে পারিনি আমার সুন্দর কাজের মাধ্যমে সুখে পরিণত করতে । মাত্র একটা ভাল রেজাল্ট অথবা কিছু ভাল ব্যবহার পারত তার মুখটাকে হাসিতে ভরিয়ে দিতে । আমার মা বাদাম খেতে খুব ভালবাসে , আমি প্রেমিকার জন্যে সোনার আংটি কিনেছি , বন্ধুর জন্মদিনে বড় উপহার দিয়েছি,, কিন্তু মার জন্যে একশ গ্রাম বাদাম কেনার সময় আমার হয়নি।

একদিন এই মানুষটা মরে যাবে । যাবার আগে আমার জন্যে তার সবটা ভাল দোয়া রেখে যাবে । কোনদিন চাইবে না আমার কষ্ট হোক । অথচ আমিই কিনা সেই মাকে রেখে আসি বৃদ্ধাশ্রমের বদ্ধ কেবিনে । জীবনটা কি সত্যিই নিকৃষ্ট হয়ে যায় না ? একটু ভেবে দেখা দরকার—জীবনের প্রয়োজনে সামাজিক বন্ধনের মূল্যটা কতটুকু ।

টাকা পয়সা, যশ – খ্যাতি , এসব কতদিন ?? বিবেকের গ্লানি কিন্তু সারাজীবনের । আমি আমার মা , তোমার মাকে নয় । সবার মাকে ভালবাসি । মা পৃথিবীর সবথেকে বড় – সবথেকে বড় একটা হীরার নাম-যেটা অবহেলায় হারিয়ে গেলে জীবনের রঙ ধূসর হয়ে ছড়িয়ে যায । মা” ভাল থেকো ।

আমি তোমার জন্যে পৃথিবীর সবথেকে সুন্দর সময়টা ছিনিয়ে আনব । আর তোমার কোলের কাছে বসে সুখের সংজ্ঞাকে পাল্টে দেব । -- এই কথগুলো লেখা থাকুক সবার ডায়েরীতে ,যেটা মন রোজরোজ পড়ে । মা , তুমি অবিনশ্বর সত্যতা । সুদীপ্ত , ছেংদু, চায়না ।

৩০/৩/২০১২ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।