আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব-দ্বীপের মানুষের উজান চলা

বাংলাদেশের মানুষ যে কত অসহায় সেটা উপলব্ধি করছি বারবার। তাদের ইচ্ছা মতন কোন কিছু করার উপায় নাই । তবু এই ব-দ্বীপ ভূখণ্ডের মানুষ কি সুখী! পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে হাসি খুশি মানুষ। প্রকৃতিগত ভাবে তারা যদি এই র্নিমল প্রকৃতির অর্ন্তগত না হতো তা হলে একে অপরকে মেরে কেটে চলত কবেই বাংলাদেশীরা কাউ বয়দের মতন এক অপরকে শেষ করত। কিন্তু ব-দ্বীপ আবহওয়ায় নরম উর্বর মাটির মতনই তাদের মন, আবেগী আর প্রেমিক।

মানুষের অসহায়, গরীব হওয়ার সুযোগ নিয়ে কিছু সুবিধাবাদি মানুষ তাদের কে দিয়ে মারামারি করিয়ে নিচ্ছে। গ্রাম বাংলার সাধারণ ঘরের সাধারন একটি ছেলে যখন পড়ালেখার প্রয়োজনে ঢাকা বা অন্যান্য জেলার বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজে আসে। পড়া লেখার পাশাপাশি অনিচ্ছাকৃত ভাবে তাদের জড়িয়ে পরতে হয় দলিয় রাজনীতিতে । রুম দখল থেকে দলের পক্ষে মারামরি এমন আরো অনেক কঠিন গোপন কাজে তারা নিজেদের অনিচ্ছায়, অজান্তে অসহায় অবস্থার কারণে বাধ্যগত ভাবে জড়িয়ে যায়। তাদের কোন উপায় থাকে না।

তাদের হাত পা বাঁধা থাকে নানা প্রয়োজনে। অহেতুক দখলদারী নিয়ে দলাদলি চলছে শিক্ষার্থির উপর। কতৃপক্ষও জেনে না জানার ভান করে থাকে। যে পরিমান ছাত্র ভর্তি হয় সে পরিমাণ থাকার ব্যবস্থা তারা করতে পারেন না। মৌলিক চাহিদা।

খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের সংস্থান করতে নিজের বাড়িঘর ছেড়ে আসা ছাত্রর,বিভিন্ন সংগঠনের আওতায় চলে আসে রাতে মাথা গোজার ঠাঁই পাওয়ার জন্য। অনেকের পক্ষে প্রতি দিন হোটেল রেস্টুরেন্টে খাওয়া সম্ভব হয় না, পয়সা থাকে না। তাই তাদের কিছুটা বাড়তি রোজগারের কারণে দলের পক্ষে নানান কাজ করতে হয় যা তারা করতে চায় না। অনেকের প্রয়োজন না থাকলেও র্নিবিবাদে আপন মনে চলতে পারে না। দলিয় হুমকির মুখে অসহায় হয়ে জড়িয়ে পড়তে হয় অথবা মার খেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁচতে হয়।

তারা বিষয়টা বাড়িতে অভিভাবকেও জানায় না। বিদ্যা অর্জনের আশায়। কিছুদিনের মধ্যে একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে থাকা, খাওয়ার সুযোগ পাবে, পড়ালেখায় মন দিবে এমন মরীচিকার আশায় পথ চলতে গিয়ে সহজ সরল পরিবার থেকে উঠে আসা মাত্র ষোল থেকে উনিশ, বিশ বছরের ছেলে মেয়েটি একটি জটিল প্রক্রিয়ার জীবনে ঢুকে উজ্জ্বল সুন্দর পথ থেকে সরে গিয়ে অন্ধকার পাঁকে জড়িয়ে যায়। অন্যপক্ষে বিত্তবান ঘরের সন্তানরা অনেকেই জীবনের অর্থ খুঁজে পায় টাকা খরচের মাধ্যমে। জীবনের নানান সুখ টাকার মাধ্যমে কেনায়।

এর মাঝখানে মধ্যবিত্ত সঠিক পথটিতে হাঁটার জন্য তুমুল লড়াই করে যায়। কোন দিকেই না ঝুঁকে পড়ার কসরতে টানটান পথ চলা। এর ভিতর উচ্চ এবং নিম্নবিত্ত পর্যায়ে কিছু ব্যাতিক্রম আছে তবে সার্বিক ভাবে অবস্থাটা এমন। বিদ্যাশিক্ষার জন্য আসা শিক্ষার্থিদের কেন রুমে থাকার জন্য কোন একটি দলের অর্ন্তভূক্ত হতে হবে? র‌্যাগীংএর মতন তাদের উপর অত্যাচার করার অধিকার দলগুলি কোন অধিকারে পায়? কেন দলে টানার জন্য হুমকি? কারণ সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সর্ব সুযোগ দিতে অক্ষম। জন প্রতিনিধির বিলাশ বহুল জীবন যাপনের খরচ জনগনের পয়সায়।

আর জনগনের সন্তানের হলে হোস্টেলে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা তাদের লাঠিয়ালদের হাতে। আমি যদি কারো পক্ষে কাজ করব সে আমার নিজের ইচ্ছায় করব। জোড় করে কেন দলের খাতায় নাম লেখাতে হবে। আমি না চাইলেই কেন আমাকে মার খেতে হবে? একজন মানুষের অধিকার নিয়ে জোড় জবরদস্তি করার জন্য রাজনীতি নয় বরং একজন মানুষ যেন তার অধিকারটুকু পায় তার ব্যবস্থা করা রাজনীতির কাজ। এ সবের মূলে হলো আমাদের যে সর্ষে দিয়ে ভুত ছাড়াব সেই সর্ষেতেই ভুত।

পরিবার তন্ত্রের রাজনীতি চলা পর্যন্ত এমন চলতেই থাকবে। আমি একজনকে পছন্দ করলে তার ভুলগুলোও কেন আমাকে মেনে নিতে হবে? ভুলের বিরুদ্ধে কথা বললে আমার জীবনের উপর হুমকি। বড় বড় জ্ঞানের কথা বলে কচি কচি মাথায় নীতির বুলি ঢুকিয়ে দিয়ে নিজের প্রতি অনুগত্য করে, টগবগে রক্তের টানটান উত্তেজনার যৌবন নিজের স্বার্থে অনায়াসে ব্যবহারের মন্ত্রটা নেতারা ভালোই পারেন। তারা দেশ জাতী জনগণের কথা বলেন কিন্তু নিজের ষোল আনা সবার আগে আদায় করে নেন। আমাদের দেশের ক’জন নেতা সাধারণ জীবন যাপন করেন? আর যারা করেন, সত্যিকারের উপলব্ধি নিয়ে আছেন।

তাদের ক’জন জনগনের প্রতিনিধি হিসাবে র্নিবাচিত হয়েছেন? বা কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন অনায়াসে কোন বাধা বিপত্তি ছাড়া? নিয়মগুলো সবার জন্য এক হওয়া প্রয়োজন। ব্রিটেনের রাজপুত্র হ্যারি রাস্তায় মাতলামি করলে তাকে গ্রেফতার করার অধিকার পুলিশ রাখে। র্জজ বুশের মেয়ে মাতাল হয়ে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালালে তাকেও পুলিশ আটক করে রাখে থানায়, হাজতে। নিয়ম মাফিক তাকে মুচলেকা, জরিমানা, কারাভোগ করেই জীবন যাপনে ফিরতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের জনপ্রতিনিধির অতি নিম্ন পর্যায়ের নেতার চৌদ্দোগুষ্টি রাজকীয় কায়দায় চলাফেরা করেন।

তাদের জন্য কোন নিয়ম কাম্য নয়, জনগন এবং জনগনের সম্পদ তাদের নিজেস্ব। ইচ্ছে করলেই তারা সব কিছু নিজেদের করে নিতে পারেন। কোন আইনের ধার ধারেন না তারা। তাদের টিকিটিও ছূঁতে পারবে না আইন। বরঞ্চ তাদের বিরুদ্ধে আইনগত সঠিক প্রয়োগের বুমেরাং হবে প্রয়োগ কর্তার প্রতি।

আইন সবার জন্য এক হতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ এই জিম্মি অবস্থা থেকে মুক্তি চায় কিন্তু কে দিবে তাদের মুক্তি। শাসক গোষ্টি দুই বড়দলের মধ্যে আসবে ঘুরে ফিরে। এছাড়া আর যারা আছে আশে পাশে তাদের নীতি চেতনার কথা ভিন্ন হলেও সংসদে গেলে সবাই এক গোয়ালের গরু । নিজের, নিজের পরিবারের, আত্মীয় স্বজনের সুখ সুবিধা দেখায় ব্যস্ত।

যেন এই মহান দায়িত্ব পালনের জন্যই জনগন তাদের ভোট দিয়ে মনোনীত করেছে। আর জনগন নানান অধিকারের কথা বলে নিত্য প্রয়োজনীয় নূন্যতম সুবিধার জন্য রাস্তা সরগরম করছে। তাদের দাবী আদায়ের জন্য উসকে দিয়ে সুবিধা ভোগ করছে এদল, ওদল। মহা এক জালে বাঁধা পরে আছে বাংলার মানুষ এই ফাঁদ কেটে কেমনে বেরুবে তারা, কি উপায়, কোথায়? দেশের মানুষের হাতে আজ অনেক টাকা। আগে হাতে গোনা দুচারজন বড় লোক ছিল বাংলাদেশে।

এখন অগুনতি। সবাই যে কালোটাকায় বড়লোক হয়েছে তা কিন্তু নয়্ অনেক প্রচেষ্টায় অনেক যত্নে অনেকেই পারিবারিক সাহায্য সহোযোগীতায় নানা ভাবে গড়ে তুলেছে বিভিন্ন শিল্প কলকারখানা। রফতানি করছে পন্য সামগ্রী বিদেশে। মাছ, সবজী, কাপড় থেকে যন্ত্রপাতি অনেক রকমের বস্তু আজ রফতানী হচ্ছে কিন্তু নিজেদের এই প্রতিষ্ঠানগুলো যখন মানুষ অনেক প্রতিকুলতা ঠেলে প্রতিষ্ঠা করছে, নিয়মিত তা চালাতে বারবার বাধা প্রাপ্ত হয় রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে। রাজনীতিবীদ যখন হরতাল, ধর্মঘট ডাকেন তখন কি তারা একবারও ভাবেন যে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে যায় একটা প্রতিষ্ঠানে সঠিক সময়ে পণ্য রফতানী করতে না পারার জন্য।

সাথে নষ্ট হয়ে যায় তাদের অতি কষ্টে অর্জিত গুড উইল। বিদেশের প্রতিষ্ঠান দেশের ধর্মঘটের কারণে পণ্য না পাঠাতে পারার অজুহাত শুনবে না। সময় মত তাদের সামগ্রী হাতে চাইবে। আর সাধারণ অগুণতি মানুষের ভোগান্তি সেতো আছেই। কাজে না গেলে অফিসে অসুবিধা।

পথে যেতে জীবন হাতের মুঠোয়। এই শান্তি প্রিয় মানুষগুলো শান্তি পাবে শুধু নিয়মে। যে নিয়ম পরিচ্ছন্ন থাকবে সবার জন্য। আর দলের খেলায় হবে কিছু রদবদল। প্রধানদল বিরোধীদল নয় বাংলার মানুষ খুঁজে আনবে সত্যিকারের নেতা যে নিজের জন্য নয় মানুষের প্রয়োজনে কাজ করবে সংসদে।

প্রতিটি পরিবারের মানুষ যেমন জানে পরিবারের সদস্যদের ভালোমন্দের খবর। এলাকা, গ্রাম, শহর বাসীরাও জানে ভালো এবং মন্দ মানুষ সম্পর্কে তাই তারাই বাছাই করবে ভালো কাজের মানুষটিকে নিজেস্ব এলাকায় হিংসা হানাহানীর পথ ছেড়ে। আর তার কাজের সময় থাকবে র্নিধারিত পাঁচ বছর। এই সমযের মধ্যে যদি তার কাজে লোভের হাতছানী দেখা দেয় অবশ্যই তাকে তার শাস্তি পেতে হবে। কঠিন ভাবে এই সত্যকে অবলম্বন করে কাজ করার জন্য চাই একজন সত্যিকারের সুযোগ্য মানুষ।

মিথ্যার বেশাতি করে, ইতিহাস বিকৃত করে কেটে গেল কত বছর। পরিবারতন্ত্র না থাকলে ভাঙ্গা স্যুটকেস ডলারে ভরে যেত না। প্রধানমন্ত্রীর ও কারুনা আদায় বা অহংকার করার কিছু নাই যা ছিল তার পিতার তা নিয়ে। নিজের শাসন ব্যবস্থা এবং জনগনের শান্তি, সুখ নিরাপত্তার ব্যবস্থা দেখে জনগনই র্নিধারণ করবে তিনি কতটা সফল রাষ্ট্র পরিচালনায়। এইদেশের মানুষ কত অল্পতে খুশি।

আমার দেশ বলে চিৎকারে গলা ফাটিয়ে ফেলে ভালোবাসায়। এই ভালোবাসা কোন রাজনীতিবীদ তাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়নি। এ তাদের অন্তরের শতস্ফূর্ত ঝর্ণাধারা। চল্লিশ বছর আগে যে ভালোবাসায় মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল বাংলার মানুষ দেশ স্বাধীন করতে। সেই ভালোবাসায় আজকের প্রজন্ম চিৎকার করে রাজাকারের বিচারের।

খেলার সাফল্যে। নোবল বিজয়ের আনন্দে। একার নয় কিন্তু এই বিজয়গুলো বাংলার মানুষের অহংকার হয়ে যায়। এখনও তারা আশায় দৃঢ় প্রত্যয়ে আপেক্ষা করে একদিন সবাই ন্যায্য পাওনাটুকু পাবে। তাদের প্রত্যাশা অনেক বেশী না।

প্রতিদিন দুবেলা পেট পুরে আহার, ঘরে আলো, শান্তিতে এক টুকরো ঘুম, পবিবার, প্রজন্মের নিরাপত্তা। বাংলার মানুষ নদীর মতই নিস্তরঙ্গ বয়ে যায়। কিন্তু তারা ভেঙে ভাসিয়ে নিতেও জানে নদীর মতন প্রয়োজনে। কিন্তু তারা পছন্দ করে ভাটির টানে বাঁশির সুরে চাঁদের আলোয় স্নান করতে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।