আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লাশ নিয়ে মিথ্যাচার

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব। অভিন্ন কণ্ঠে ও ভাষায় ‘লাশ গুমের’ গোয়েবলসীয় কায়দায় মিথ্যাচারে নেমেছে বিএনপি, জামায়াত ও হেফাজত। উদ্দেশ্য গুজব ছড়িয়ে সরলপ্রাণ মানুষকে উস্কে দিয়ে দেশে বিশেষ পরিস্থিতির সৃষ্টি করা। ভয়াল ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ‘সরকার উৎখাতের’ চক্রান্তে ব্যর্থ হয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে লাশ নিয়ে এই নতুন রাজনীতিতে নেমেছে তারা। শুধু বক্তৃতা-বিবৃতিতেই নয়, লাশগুমের গুজব ইন্টারনেট ও ফেসবুকেও ছড়িয়ে দিচ্ছে।

আসল সুত্র হেফাজত ক্যাডারদের দেয়া আগুনে বায়তুল মোকাররমের সামনে পবিত্র কোরানসহ অসংখ্য ধর্মীয় গ্রন্থ পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ‘একজন সংখ্যালঘু’র নাম জড়িয়ে বিএনপির চরম মিথ্যাচারে হতবাক জাতি। বিক্ষুব্ধ ক্ষতিগ্রস্তরা। বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজত এই ত্রিশক্তির ‘লাশ’ নিয়ে গুজবের বিরুদ্ধে তৎপর সরকারও। জানা গেছে, বিএনপি ও হেফাজতের কাছ থেকে লাশের তালিকা চাওয়া হবে। লাশ গুমের অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হলে অভিযোগকারী বিএনপি, জামায়াত ও হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতিও চলছে সরকারীভাবে।

পাশাপাশি জনমনে বিভ্রান্তি নিরসনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রেসনোটের মাধ্যমে প্রকৃত হতাহতের তালিকা এবং হেফাজতের ধ্বংসযজ্ঞে ক্ষতির চিত্র জাতির সামনে তুলে ধরার প্রক্রিয়া চলছে। চৌদ্দ দলের নেতারাও মনে করেন, এসব বিভ্রান্তি দূর করতেই অবিলম্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেসনোট জারি করা উচিত। তাহলে এ ধরনের গুজব ছড়ানোর সুযোগ থাকবে না। বিএনপি ও হেফাজতের শত শত লাশ গুমের অভিযোগকে ‘শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাচার’ আখ্যায়িত করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সিনিয়র নেতারা তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়া হেফাজতকর্মীদের সরাতে র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির যে যৌথ অভিযান পরিচালিত হয়েছে তাতে কারও প্রাণহানি ঘটেনি। অথচ এ অভিযানে শত শত মানুষ মারা গেছে বলে বক্তব্য দিয়ে খালেদা জিয়া ও তাঁর দল বিএনপি শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাচার করেছে।

তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এবং এ দেশের গণমাধ্যম এতই শক্তিশালী যে মিথ্যাচার করে জাতিকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। লাশ গুমের তথ্য-প্রমাণ দিতে না পারলে খুব শীঘ্রই অভিযোগকারী নেতাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ প্রসঙ্গে প্রবীণ রাজনীতিক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিনা রক্তপাতে হেফাজতকর্মীদের মতিঝিল থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। বিএনপি কথায় কথায় একাত্তরের গণহত্যার সঙ্গে তুলনা করার মাধ্যমে একাত্তরের গণহত্যাকে ছোট করতে চায়। মতিঝিলের ঘটনাকেও তারা গণহত্যা বলে মিথ্যাচার করছেন।

যে দেশের মিডিয়া এত শক্তিশালী সেখানে এ ধরনের মিথ্যাচার করে পার পাওয়া যাবে না। অভিযোগকারী বিএনপি নেতা এম কে আনোয়ারের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, যে এম কে আনোয়ার ১৯৬৯ সালের ২০ ও ২৪ জানুয়ারি ঢাকার জেলা প্রশাসক থাকা অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিতে পারেন, তাঁর মুখে এ ধরনের গণহত্যার মতো মিথ্যাচার অপ্রত্যাশিত নয়। সরকারের উৎখাতের পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার পর এখন বিএনপির ঘাড়ে ‘লাশের’ ভূত চেপে বসেছে! লাশ নিয়ে রাজনীতি নতুন কিছু নয়। আন্দোলনের মাঠে লাশ পড়লেই তা নিয়ে কাড়াকাড়ি বাংলাদেশের রাজনীতিতে চিরচেনা প্রথা। আন্দোলন, সংগ্রাম কোনকিছুতেই সুবিধা করতে না পেরে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে এখন গোয়েবলসীয় কায়দায় লাশ নিয়ে নতুন রাজনীতিতে নেমেছে।

সাভারের ভবন ধসে শত শত লাশ গুমের অভিযোগের পর রবিবার রাতে হেফাজতের অবস্থান কর্মসূচী হটিয়ে দিতে যৌথ বাহিনীর অভিযানের পর একই কায়দায় সরকারের বিরুদ্ধে শত শত লাশ গুমের অভিযোগ করেছে। যার একটি প্রমাণও এখন পর্যন্ত দেখাতে পারেননি দলটির অভিযোগকারী নেতারা। জনগণকে বিভ্রান্ত করতে মিথ্যা অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম জনকণ্ঠকে বলেন, বিএনপি, জামায়াত ও হেফাজত মিথ্যাচারের ক্ষেত্রে গোয়েবলসকেও হার মানিয়েছে। বিনা রক্তপাতে শান্তিপূর্ণভাবে যৌথ বাহিনী হেফাজতের কর্মীদের শাপলা চত্বর থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এখন তথ্যপ্রযুক্তি, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও মোবাইল ফোনের যুগ।

তিনি বলেন, রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে ওই রাতের অভিযান সরাসরি প্রত্যক্ষ করে সংবাদ পরিবেশন করেছেন অসংখ্য মিডিয়াকর্মী। বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারিত অভিযানের সরাসরি দৃশ্যও দেশের কোটি কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। মিডিয়াকর্মীর ক্যামেরায় ও সাংবাদিকদের কলমে একটি লাশ সরানোর কথা উঠল না, অথচ বিএনপি-হেফাজত বলে শত শত লাশ নাকি গুম করা হয়েছে! এটা মিথ্যাচারীদের দল বিএনপি-জামায়াতের শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই এসব মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে যারা জনগণকে উস্কে দেয়ার ষড়যন্ত্র করছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রত্যক্ষদর্শী বিপুলসংখ্যক গণমাধ্যমকর্মীদের মতে, তাদের সামনেই গত ৫ মে হেফাজতকে মতিঝিলের অবস্থান থেকে সরাতে মধ্যরাতের অভিযান শুরু হয়।

গত রবিবার সকাল থেকে সোমবার ভোর পর্যন্ত রাজধানীর পল্টন, মতিঝিল ও গুলিস্তান এলাকায় হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশের এক সদস্যসহ মোট ৮ জন মারা যায়। এ ছাড়া মাত্র ২০ মিনিটের অভিযানে রবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড আর টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেই শাপলা চত্বরের নিয়ন্ত্রণ নিতে পেরেছে যৌথবাহিনী। অভিযানের শেষের পর শাপলা চত্বরের সামনে হেফাজতের নিয়ন্ত্রণে থাকা পলিথিন দিয়ে ঢাকা চারটি লাশ উদ্ধার করে নিরাপত্তা বাহিনী। রবিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলাকালে এসব ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতাল মর্গ থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও মর্গে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় থেকে আসা ১৮টি লাশের হদিস পাওয়া গেছে।

পুলিশের এসআই শাহজাহানকে পিটিয়ে হত্যা করেছে হেফাজতীরা। জানা গেছে, ১৮টি লাশের মধ্যে ৭টি সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল ও মর্গে গেছে সোমবার ভোরের দিকে। ধারণা করা হচ্ছে, শাপলা চত্বর থেকে উদ্ধার হওয়া ওই চারটি লাশ বাদে বাকি ২ জন গভীর রাতে শাপলা চত্বরে অভিযানের সময় নিহত হয়েছেন। বাকি ১১ জনের লাশ রবিবার দুপুর থেকে শুরু করে মধ্যরাতের অভিযানের অনেক আগে এসেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযানের শেষে শাপলা চত্বর থেকে কোন লাশ গোপনে সরিয়ে ফেলার কোন দৃশ্য বা আলালত দেখতে পাননি ওই সময় দায়িত্বরত কোন গণমাধ্যমকর্মীই।

বিপুলসংখ্যক বেসরকারী ইলেকট্রনিক মিডিয়া মধ্যরাতের অভিযানের দৃশ্য সরাসরি প্রচার করেছে। কিন্তু কোন কোন টেলিভিশনই লাশ সরানোর কোন আলামত দেখতে পাননি। বরং মতিঝিল সোনালী ব্যাংকসহ বিভিন্ন স্থানে আটকে পড়া হাজার হাজার হেফাজতকর্মীকে নির্যাতনের পরিবর্তে শান্তিপূর্ণভাবে চলে যেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতার চিত্রই দেশবাসী দেখেছে টেলিভিশন চ্যানেলের মাধ্যমে। এ ছাড়া অভিযানের সময় দায়িত্বরত গণমাধ্যমকর্মী কিংবা আটকে পড়া হেফাজতের কোন কর্মীই লাশ গুমের কথা বলেননি। তাই বিএনপি ও হেফাজতের শত শত লাশ গুমের অভিযোগকে ‘সস্তা লাশের রাজনীতি’ বলেই মন্তব্য করেছেন মধ্যরাতে অভিযান প্রত্যক্ষদর্শীরা।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন শত শত মানুষ হত্যা ও গুমের বিএনপি ও হেফাজতের দাবিকে হাস্যকর উল্লেখ করে বলেন, মতিঝিলের সমাবেশে কোন আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার হয়নি। শুধু রবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছে। জাতিকে বিভ্রান্ত করতেই লাশ গুমের চরম মিথ্যাচার ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান ও দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত অবিলম্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রেসনোট দিয়ে গুজবের জবাব দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিএনপি ও জামায়াত গুজব ছড়িয়ে মানুষকে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করছে। ফেসবুকে ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই গুজব ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।

তিনিও গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। হেফাজতের প্রকাশ্য বায়তুল মোকাররমের সামনে থাকা পবিত্র ধর্মগ্রন্থের দোকানসহ আশপাশের সব দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছেন শত শত মানুষ। এমনকি আগুন নেভাতে আসা দমকল বাহিনীর গাড়ি হেফাজতের হিংস্রতা মোকাবেলা করে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে প্রায় এক ঘণ্টা বিলম্ব ঘটে। হেফাজতের দেয়া আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় পবিত্র কোরান শরীফ-হাদিস, তসবিহ, জায়নামাজসহ অসংখ্য ধর্মীয় গ্রন্থ। বিভিন্ন বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল ও গণমাধ্যমে তা প্রচার ও প্রকাশিত হয়।

কিন্তু ঘটনার পরদিন হঠাৎ করেই কোরান শরীফ পোড়ানোর অভিনব তত্ত্ব হাজির করেন বিএনপি নেতা এম কে আনোয়ার। তাঁর নতুন আবিষ্কার হলো- বায়তুল মোকাররমের সামনে ফুটপাথের দোকানে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা দেবাশীষের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জড়িত! ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিরা এ দাবিকে চরম মিথ্যাচার উল্লেখ করে বলেন, প্রকাশ্য হেফাজতের শত শত ক্যাডার সব দোকানে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। বিএনপি নেতা এম কে আনোয়ারের লাশ গুমসহ উত্থাপিত অভিযোগের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, যৌথ অভিযান পরিচালনাকালে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কোন প্রাণহানি ছাড়াই সফলভাবে হেফাজতকে ঢাকা ছাড়া করে রাজধানীতে শান্তি ফিরিয়ে এনেছে। এম কে আনোয়ার অসত্য তথ্য দিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।

আর ছাগলদের প্রচারনা আপনারাই দেখে বলেন কি বলবেন ? এম কে আনোয়ারের প্রতি প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, কোন তথ্যের ভিত্তিতে এ ধরনের কথা বলে জাতিকে বিভ্রান্ত করছেন? এই তথ্যের প্রমাণ দেখান অথবা আপনার বক্তব্য প্রত্যাহার করুন। অন্যথায় আপনার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হব। একই সঙ্গে কোরান শরীফ পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন তারও প্রমাণ দিন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকুও লাশ গুমের অভিযোগ প্রমাণে বিএনপির কাছ থেকে লাশের তালিকা চেয়েছেন। সুত্র  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।