আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেরিলিন..দ্য ক্যান্ডেল ইন দ্য উইন্ড

বুকের ভেতর বহু দূরের পথ... My Week with Marilyn (2011) Director: Simon Curtis Stars: Michelle Williams, Eddie Redmayne, Kenneth Branagh মাই উইক উইথ মেরিলিন চলচ্চিত্রটি মেরিলিন মনরো জীবনের উপর ভিত্তি করে নির্মিত নয়। বরং কলিন ক্লার্ক নামক এক ব্রিটিশ তরুনের অপিরণত বয়সের প্রেমের উপাখ্যান। ষাটের দশকে স্যার লরেন্স অলিভিয়ারের আমন্ত্রণে দি প্রিন্স এন্ড দ্য শোগার্ল (১৯৫৭) ছবিতে অভিনয় করতে বৃটেনে আসেন তৎকালীন সময়ে খ্যাতির শীর্ষে থাকা মেরিলিন মনরো। খামখেয়ালীপনা আর অনিয়মের কারণে প্রোডাকশন ইউনিটের সবাই তার উপর চরম বিরক্ত হয়ে পড়ে। মেরিলিনকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে তার চেয়ে সাত বছরের ছোট কলিন ক্লার্ক।

প্রেমের পড়েন ক্লার্ক, ঘোরের মধ্যে কাটতে থাকে সময়। কিন্তু বাস্তবতা টের পেতে খুব বেশি সময় লাগেনা কলিনের। এই ব্যর্থ প্রেমের আখ্যানই কলিন লিখে রাখেন ডায়েরিতে। পরিচালক সাইমন কার্টিস দীর্ঘ প্রায় ৫৫ বছর পর তা পর্দায় রূপ দিলেন। নির্মাতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে চলচ্চিত্রে জগতে পা রাখা কলিন ক্লার্ক প্রথম জীবনে স্যার লরেন্স অলিভিয়ারের তৃতীয় সহকারি হিসেবে কাজ শুরু করেন।

তার মূল দায়িত্ব ছিলো পরিচালকের ফুট-ফরমায়েশ খাটা। চলচ্চিত্রের জন্য নিবেদিত প্রাণ কলিন ক্লার্ক একটা সময় নিজেকে একজন সফল প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সফল হয়েছিলেন। কিন্তু ইতিহাসে তিনি সফল নির্মাতার চেয়ে মেরিলিন মনরোর একজন ব্যর্থ প্রেমিক হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছেন। পঞ্চাশের দশকে হলিউডে আবির্ভাব ঘটেছিলো নরমা জিন মরটেনসন নামের এক অপ্সরীর। পর্দায় যিনি পরিচিত হয়েছিলেন মেরিলিন মনরো নামে।

মনরোকে বিবেচনা করা হয় বিশ শতকের সবচেয়ে আবেদনময়ী অভিনেত্রী, মডেল ও কন্ঠশিল্পী হিসেবে। রূপের জাদু দিয়ে জয় করে গেছেন কোটি দর্শকের হৃদয়। মাত্র ৩৬ বছরের ক্ষুদ্র জীবনে যিনি জন্ম দিয়েছিলেন বহু ঘটনা এবং রটনার । তিনবার বিয়ের পিড়িতে বসলেও মোহনীয় রূপের ছলনায় কত পুরুষকেই না তিনি ভুলিয়েছিলেন! নিজের অভিনয় ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার কথা তিনি জানতেন। তাই অভিনেত্রীর চেয়ে অনেক বেশি সেক্স সিম্বল হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

কিন্তু নিজের প্রতিভা নিয়ে হীনমন্যতা কাজ করত মেরিলিনের মাঝে। আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলেন। তাই তার আচার-আচরনেও অস্বাভাবিকতা পরিলিক্ষিত হয়। খামখেয়ালী স্বভাব আর অনিয়মের জন্য ছিলেন কুখ্যাত। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে খ্যাতির ভারে ন্যুব্জ মেরিলিন মূলত নি:সঙ্গ একজন মানুষ ছিলেন।

পর্দার প্রিয় মুখ মেরিলিন আস্তে আস্তে হারাতে বসেছিলেন নিজের স্বত্ত্বা। মেরিলিনকে শয্যাসঙ্গিনী হিসেবে পুরুষ কামনা করত, কিন্তু ভালোবাসতো না । মেরিলিন ভালোবাসার চেয়েও বেশি চেয়েছিলেন কেউ তাকে একটু বুঝুক, একটু নি:স্বার্থ সময় দিক, কেউ তার সুখ-দু:খের সারথি হোক। ব্যস এইটুকুই। কিন্তু মেরিলিনের ভাগ্যে তা জুটেনি! বাস্তবের নরমা জিন মরটেনসন পর্দার মেরিলিন মনরোকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি ।

চলচ্চিত্রটিতে মেরিলিন তার এই দু:খের কথাই কলিনকে বলেছিলেন এভাবে- "All people ever see is Marilyn Monro. As soon as they realize I'm not her they run." অনিন্দ্যসুন্দরী মেরিলিন মনরোকে ছাড়াও চলচ্চিত্রটিতে কয়েকটি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র দেখতে পাওয়া যায়। অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অভিনেতা স্যার লরেন্স অলিভিয়ার (হ্যামলেট, কিং লীয়ার), তাঁর স্ত্রী অস্কারজয়ী খ্যাতনামা অভিনেত্রী ভিভিয়ান লেহ (গন ইন দ্য উইন্ড, অ্যা স্ট্রিট কার নেমড ডিজায়ার) । স্যার লরেন্স অলিভিয়ার চরিত্রে কেনেথ ব্রানাগ আর ভিভিয়ান লেহ চরিত্রে জুলিয়ান ওরমন্ড মোটামুটি উৎরে গেলেও ছবির প্রাণ মূলত মিশেল উইলিয়ামসের অভিনয়। মেরিলিন মনরোর চরিত্রে অভিনয়ের জন্য মিশেল উইলিয়ামসকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। শারীরিক অনেক পরির্বতন আনতে হয়েছে, ওজন ঝরাতে হয়েছে ছয় কেজির মত।

রীতিমত এক বছর মনরোর হাঁটা-চলা, বানভঙ্গি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করে রপ্ত করতে হয়েছে। মিশেলের পরিশ্রম বৃথা যায়নি। একলাই ছবিটিকে টেনে নিয়ে গেছেন তিনি। মিশেলের প্রতিটি মুভমেন্ট, চলন-বলন, হাসি এমনকি চোখের পলক ফেলাতেও খুঁজে পাওয়া গেছে মেরিলিনকে ! মিশেল উইলিয়ামস অস্কার মনোনয়ন পেলেও ‌দি আয়রন লেডি' মেরিল স্ট্রিপের কাছে পরাজয় মেনে নেয়া ছাড়া উপায় ছিলেনা তার। কিন্তু পুরষ্কার দিয়ে তো সব সময় সব কিছু মূল্যায়ন করা যায়না, উচিতও নয়।

মাই উইক উইথ মেরিলিন চলচ্চিত্রটির একটি চরিত্রে এমা ওয়াটসন অভিনয় করেছেন। এতে এমা ওয়াটসন ভক্তদের খুশি হওয়ার কোন কারন নেই । এইরকম একটা চরিত্রে এমা ওয়াটসন কীভাবে অভিনয় করলেন তা আমার কাছে বিস্ময়কর ঠেকেছে !! চরিত্রটির না ছিলো গুরুত্ব না ছিলো অভিনয়ের সুযোগ! কলিন ক্লার্ক চরিত্রে এডি রেডমায়নি ছিলেন মোটামুটি। আরেকটু ভালো অভিনয়ের প্রত্যাশা ছিলো। আসলে মিশেল উইলিয়ামস সারা ছবি জুড়ে এত আলো ছড়িয়েছেন যে বাকি সবার পারফরম্যান্স ফিকে হয়ে গিয়েছিলো।

এমনকি চলচ্চিত্রটির নির্মাণশৈলী আর চিত্রনাট্যের দুর্বলতাটাকেও ঢেকে দিয়েছে। সব মিলিয়ে মাই উইক উইথ মেরিলিন একটি শিল্পসম্মত উপভোগ্য চলচ্চিত্র । আর এ ছবির মাধ্যমে মনরোর পুরো জীবনটা উঠে না আসলেও সামান্য কয়েকটি সপ্তাহের উপলব্ধি দর্শককে বাস্তবের মনরো আর পর্দার মনরোর পার্থক্য বুঝিয়ে দিতে সক্ষম হবে। দুর্ভাগা মেরিলিন মনরোর জন্য এলটন জনের মত করেই বলতে চাই- And it seems to me you lived your life Like a candle in the wind.. দি সেভেন ইয়ার ইচ (১৯৫৫) মুভিতে মনরোর বাতাসে স্কার্ট উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার সেই বিখ্যাত দৃশ্য মেরিলিন কে নিয়ে এলটন জনের বিখ্যাত গান ক্যান্ডেল ইন দ্য উইন্ড। আইএমডিবি মিডিয়াফায়ার ডাউনলোড লিংক ব্লুরে ৬০০ মেগাবাইট টরেন্ট ডাউনলোড লিংক ডিভিডি রিপ ৭০০ মেগাবাইট ____________________________________________ উৎসর্গ: নাফিজ মুনতাসির ব্লগে চলচ্চিত্র বিষয়ক লেখালেখিতে নাফিজ মুনতাসির একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় নাম।

আজকাল মুভি নিয়ে লিখতে গেলে যাদের লেখা অনুসরন করি নাফিজ তাদের অন্যতম। নাফিজের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা ____________________________________________ ***চলচ্চিত্র বিষয়ক আমার যত পোস্ট***  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।