আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এরই নাম হুজুগে পাবলিক

'বাস্তবতা' বিষয়ে পি.এইচ.ডি করতে চাই... কিছু কথা বলার ছিলো ,ভেতর ভেতর ক্ষোভে পুড়ছি কিন্তু কাউকে বলতে পারছি না । কীভাবে শুরু করবো ঠিক সেটাও বুঝতে পারছি না । আচ্ছা ,আমার দেখা খেলা চলাকালীন কিছু দৃশ্য দিয়েই শুরু করি... কালকে সারাদিন বাসায় টিভিতে খেলা দেখার পর ইচ্ছা হলো বাংলাদেশের ব্যাটিংএর শেষটুকু পাবলিকের সাথে দেখবো । তাই রাস্তায় নেমে পড়লাম । নেমে দেখি একটা দোকানের বাইরে টুলের উপর একটা উনিশ ইঞ্চি টিভি ।

ওটার সামনে প্রায় দু'শ লোকের ভিড় । তখন সবেমাত্র রিয়াদ ভাই আর মাশরাফি ভাই পিটিয়ে খেলতে শুরু করেছেন । টিভিতে নিও ক্রিকেট চলছিলো । এই চ্যানেলটা বিটিভি থেকে কয়েক সেকেন্ড পিছিয়ে থাকে । তো একটা জিনিস দেখে খুব ভাল লাগছিলো ,বোলার মাত্র রানাপ নেয়া শুরু করেছে এমন অবস্থায় অদূরে কোথাও কেউ একজন বিটিভিতে বাউন্ডারী দেখে চিত্‍কার দিয়ে উঠছিলো ।

আর সেই চিত্‍কার শুনে আমাদের জনতার সেকি উল্লাস! চোখে দেখার কয়েক সেকেন্ড আগে কেবল কানে শুনেই সবাই গলা ফাটিয়ে ফেলছিলো । আর চোখে দেখার পর তো কথাই নেই । একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে সেকি নাচন ! আবার একটা ডট বল হয় আর সবাই হাহাকার করে উঠে । পরক্ষণেই আবার সেই উল্লাস ! যারা স্টেডিয়ামে গিয়েছিলেন তাদের কেমন অনুভূতি তা আমি জানি না । 'বাংলাদেশ বাংলাদেশ' বলে মাত্র দু'শ জনতার যে উল্লাস আমি দেখেছি তাতেই আমি ভীষণ অভিভূত ! পেছনে থাকা মানুষগুলো ঠিকমত দেখতে পাচ্ছিলো না ।

তাই কতগুলো খালি রিকশার উপর দাঁড়িয়ে তারা খেলা দেখছিলো । একেক রিকশার উপর তিন চার জন করে দাঁড়িয়ে ছিলো । এক লোক রিক্সাওয়ালাকে বললো 'ভাই আপনের রিক্সা তো ভাইঙ্গা যাইবো !' ....রিক্সাওয়ালা বললো 'আরে রিক্সা জাহান্নামে যাক ,বাংলাদ্যাশের উপ্রে কোন কথা নাই ,আগে দ্যাশের খেলা ,তারপর অন্য কিছু' তখন কি যে ভাল লেগেছিলো বলে বোঝানো যাবে না । ভিড়ের প্রত্যেকটা লোক একে অপরকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলো -'আরে মিয়া কত লাগে ?১২ বলে ১৯ ??আরে ধুরু এইডা কোন ব্যাপার?! হৈয়া যাইবো !!' কিন্তু আমার খারাপ লাগলো ,খুব খারাপ লাগলো ,যখন ঐ রিক্সাওয়ালাটাই শেষ বল পর্যন্ত খেলা না দেখে ২বল বাকি থাকতেই রিক্সা নিয়ে কেটে পড়লো । তার নাকি লেট হয়ে যাচ্ছিলো ! আমার আরো খারাপ লাগলো ,যখন শাহাদাত শেষ বলে সিংগেল নেয়া মাত্রই সবাই হনহন করে টিভির সামনে থেকে সরে গেলো ।

এক ছোকড়াকে দেখলাম 'বাংলাদেশ ভুয়া' বরে চিত্‍কার করছে । অন্য কয়েকজন তার সাথে মাথা ঢুলিয়ে সম্মতি দিচ্ছে !কয়েকজন দেখলাম রিয়াদকে গালি দিচ্ছে । আশ্চর্য !একজনকেও দেখলাম না বাঘের বাচ্চাগুলোর বীরত্বের স্বীকৃতি দিতে ..... এই হলো হুজুগে মাতাল পাবলিকের অবস্থা । ভারতবধ আর লংকাবধের পরও পাকিদের সামান্য একটুর জন্য ধরাশায়ী করা গেলো না । কিন্তু এসব পাবলিক গতকালকের কথা আজকে এসে ভুলে যায় ।

তারা খেলাটা না বুঝলেও খেলোয়াড়দের ব্যবচ্ছেদ ঠিকই করেছে । 'শাহাদাত কেন শেষ ওভারে ১৯ রান দিলো ?শাহাদাত একটা **** ,,নাসির ,নাজিম কেন এত বল নষ্ট করলো ?রিয়াদ কেন আরেকটু পিটিয়ে খেললো না ?' এরকম নানা প্রশ্ন তুলছে তারা । ভাবটা এমন যেন ওদের যায়গায় তারা থাকলে ঠিকই দেশটাকে উদ্ধার করে আসতো । তাদের উদ্দেশ্যে বলি ,এটাই ক্রিকেট খেলা । তুমি খেলা না বুঝলে দূরে গিয়া মরো ।

এশিয়া কাপে প্লেয়ারদের পারফরম্যান্স অবশ্যই ভালো ছিলো । আর ভুল হতেই পারে । কিন্তু এসব ছোটখাট ভুল ক্ষমা করা যায় । উল্লেখ্য ,এশিয়া কাপ ক্রিকেটের পারফর্মেন্স অনুযায়ী 'দ্য ড্রিম এশিয়ান এলিভেন' ঘোষণা করেছে ইয়াহু ক্রিকেট। ১১ জনের তালিকায় ৫ জনই বাংলাদেশের! তাঁরা হলেন তামিম, সাকিব, নাসির,রাজ্জাক এবং মাশরাফি ।

বলা বাহুল্য ,বড় জরিপের ভিত্তিতেই এটা ঘোষিত হয়েছে । অতএব সহজেই অনুমেয় যে আমাদের টাইগাররা পৃথিবীব্যাপী মানুষের কতটা ভালবাসা আর সাপোর্ট পেয়েছে । ওদের কান্না সবাই দেখেছে । অনেকেই কেঁদেছে ওদের সাথে । ওরা কেন কেঁদেছিলো কাল মাঠে ?কাপ না পাওয়ার হতাশায় ?নাহ! ওরা কেঁদেছে ১৬ কোটি আশা পূরণ করতে না পারায় ।

আমাদের বুকে যে স্বপ্ন ওরা গেঁথে দিয়েছিলো সেটা ভেঙে যাওয়ায় । 'ইশ! ২রানের জন্য কাপ হৈলো না' বলে যারা আক্ষেপ করছেন তাদের বলি,,কাপে করে কি মুড়ি ভিজাইয়া চা খাবেন ?আপনার শোকেসে অনেক কাপ আছে । সেখান থেকে একটা তুলে নেন । আমরা ছোট দল এবং তরুণতম দল । এইটা অবশ্যই মাথায় থাকতে হবে ।

কিন্তু একই সাথে আমরা ফেভারিট দলও ! কাপ আমাদের প্রধান লক্ষ্য না,আমাদের প্রধান লক্ষ্য উন্নতি করা । আর উন্নতির পথ ধরে হাঁটার প্রক্রিয়ায় উপজাত হিসেবে কাপ এমনিতেই আসবে ....এইবারের টুর্নামেন্ট তো একটা নমুনা ছিলো মাত্র । সামনে আরো দেখা যাবে খ্যাপা বাঘ কী করতে পারে । আজ সকালে একটা নিউজ পড়ে মন খারাপ হয়ে গেলো । এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ফাইনালে ওঠার আনন্দে পতাকার রং মেখে ক্লাসে আসায় পিটিয়ে ৩০ ছাত্রছাত্রীকে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন এক শিক্ষক।

গত বুধবার শরিয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার সামন্তসার উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক মো. আব্দুস ছালাম সরদার এই ঘটনা ঘটান ( bdnews24) আমরা কি এই দেখতে চেয়েছিলাম ?ক্রিকেটীয় আবেগ আমাদের এমনিতেই বেশি । আর ছোট শিশুগুলো খেলা না বুঝলেও তাদের ভেতরে আবেগ থাকে আরও বেশি । তারা একেবারেই মৌলিকভাবে দেশকে ভালবাসে ,দেশের জয় কামনা করে । তাদের আবেগ কেড়ে নিতে চাইবে শিক্ষকরূপী কিছু ভন্ড ছাগুর দল ?? কিছু পাদাকে দেখলাম এখনো ওরা পাকিস্তানের পা চাটছে । ওরা খুঁজে খুঁজে পাকিস্তানি ফোরাম ঘেঁটে বের করে দেখাচ্ছে যে অনেক পাকিরা নাকি বাংলাদেশ সাপোর্ট দিয়েছে ,তাদের অনেকেই নাকি বাংলাদেশের জয়ে খুশি ইত্যাদি ইত্যাদি ।

এসব পাদারা এখানে ভারতকেও টেনে আনছে । ভারত আমাদেরকে গালি দেয় ,তাই তারা খারাপ । আর পাকিরা আমাদের গালি দেয়া না ,একারণে নাকি তারা ভালো(!?) হুমায়ুন আজাদের বিখ্যাত উক্তিটা মনে পড়ছে । ''পাকিস্তানীরা যখন আমার জন্য ফুল নিয়ে আসে আমি তখনও তাদের অবিশ্বাস করি" । অতএব ,পাকিদের মিঠা কথায় কান দেয়া হারাম ! আর আমাদের হুজুগে মাতাল পাবলিক তো ঐসব পাদার চেয়েও নিকৃষ্ট ।

খেলোয়াড়রা ভাল খেললে জানটাও দিয়ে দিবে ,আবার খারাপ খেললে চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করবে!! যত্তোসব ! শোনেন ভাই ,হুদাই লাফাইয়েন না ,ক্রিকেট খেলা শিখে তারপর খেলা দেখতে আইসেন !আর দেশকে ভালবাসলে নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসতে শিখেন । ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।