- অমন ঝনাৎ করে উঠলে যেন কেউ পান এবং চুনের দাবি একই সাথে করে বসেছে!
রাজবাড়ীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলুম তাই, ভাবলুম উঠেই যাই- বুড়ো-বার্ধক্যে কৈশোরের দেবালয়
নির্বাসনের এই আটত্রিশ বছরে কতোটা স্থির আছে তা তোমার মন্দির না ছুঁয়ে
আমি কেমন করে বুঝে উঠি লখা?
ওরা যখন আমাকে নাজিম উদ্দীন থেকে কাশিমপুর নেয়, আমি বুঝিয়েছি- তোমার আকাশের
এক ছটাক অক্সিজেন ছাড়া আমি বাঁচিনা একদিনও, তারা শুনলোনা
কতোবার বলেছি- আমার প্রত্যাবর্তনে পৃথিবীর এক টুকরাও আর আমার থাকবেনা
খুবলে খাবে সব- ম্লান খোড়ো ঘর থেকে শুরু করে পিপাসায় চৈত্রের জল, বাঁশপাড়ার সাঁকো
আমার লখা- সব, খাট্রাইশের মতো ছিবড়ে আখমাড়াই দিবে একদিন উন্মত্ত খানেদার
তারা শুনলোনা, বললো ‘চুপ বেতমিজের বাচ্চা শালা শুয়োর’- আমি টানা তিন মাস চুপ করে ছিলাম।
সব শেষ লখা আটত্রিশ বছরে পাল্টে গেছে গোরস্থান, মঠ, ঈদগাহ, প্রতিবাদী ওসমান-হাজেরা-আকলীমা
বিস্তৃত বটের তল, বৈশাখ-জৈষ্ঠ্, আম-জাম কাঠাল-বড়ই, দোয়েল-বক সব
খোলশ পাল্টেছে গোখরা-ঢোঁরা্র মতো দ্রুত থেকে দ্রুত- যেনো সর্বত্র আয়শার দৈন্যের দশা
কেনো? আমি নির্বাসনে থাকা মানেই তো তোমাদের গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা মেষ
স্কুলে স্কুলে ডানো-ল্যাক্টোজেন, পুষ্টির উষ্ণ সবক- ভরপুর বোশেখ-জেঠ-পুষ কুয়াশায় মুড়ী-খই
আমার নির্বাসন মানেই তো ছিলো রাজার প্রশস্ত বুক, সৈন্য-সেনার স্বাধীন গোলা-বারুদ
রাজপথে নিরবতা শুনশান, উন্নয়নের সাড়ে-সাত মিলিমিটার বৃষ্টি, প্রকল্প আর প্রকল্প- খাল বিল
কালভার্ট চল্লিশ ফুট হাইওয়ে, ব্রডগেজ রেলওয়ে, আন্ডারপাস-ওভারব্রীজ বাস বহুতল
যমুনার বুকে সেতু, পদ্মার বুকে সেতু, জন্মনিরোধক, ভিটামিনের ক্যাপস্যুল
সৌন্দর্য হ্রদ, বেড়ীবাঁধ, সমরাস্ত্র, মরিচের গুড়ো, মাঝে-মধ্যে দু’টুকরো হসপিটাল।
আমার যেদিন প্রথম সেদিন অনেকেরই গর্ভে ছিলো নূতন ভ্রূণ। কেউ আছে কেউ নেই
ভ্রুণ রয়ে গেছে সটান শিল-কড়ই। বানে-বন্যায় কিছু মিছু ঝরেও গেছে,পঁচেও গেছে
কিছু মরেছে ওলাওটা কলেরায়।
কিছু স্কুলে গেলো, কলেজে গেলো, মাদ্রাসা-মিশনে গেলো
ক্যাবিনেট মিনিস্টার হলো, ভোটের ভীক্ষায় পরাক্রমশালী সাংসদ হলো, বিদেশ-বিভূইয়ে গেলো
দাঙ্গা-পুলিশ হয়ে রাইফেল বাট হাতে পিটিয়ে তক্তা বানালো যাকে পেলো তাকে
রাজ-ভান্ডার তছনছ করে খেলো গাপুস-গুপুস। আগুন দিলো মসজিদে-মন্দিরে নারীর ব্যাকুল হৃদয়ে
মিল-ফ্যাক্ট্রী-ইন্ডাস্ট্রীজে, এতীমখানায়, ভর মজলিশে- সবখানে সবখানে
সুচতুর চালাকীতে দেশ চলে গেলো গণতন্ত্রের নিলামে, মাত্র আটত্রিশ বছরে
হাফিজুল- সেই বেকুব ছেলেটি, তারও সংসার হলো। হরিলুট জোছনায় ভরপুর তার বাড়ির উঠোন
ভুলে গেলো বেশুমার ক্রান্তিকাল- সন্ধ্যা আর প্রভাতের তুমুল পার্থক্য!
শুধু আমি ফয়জুদ্দীন, কোণা বাড়ির অবিসংবাদিত খোন্দকার আবু মোস্তফা ফয়জুদ্দীন
এই আটত্রিশ বছরেও একটা দিন নিশ্চিন্তে পাতের ভাত পেটে নেয়নি লখা
যদি ফেরতকালে তোমার সিঁধুর ওরকমই লাল থাকে!
- তোমাদের এই এক মুদ্দা দোষ পুরুষ! ডানের কবজিতে না হয় শুধু রাখার জন্যেই রাখা তোমার
বছর চল্লিশের পিতলের বালা। ঘুচিয়েছি ঘরদোর, কালি-পূজা, ঠনঠনে আষাঢ়ে-বাদল
দশ-দশটি মনুষ্য-ছানার পেচ্ছাব বিছানা কুড়িটি বছর। পুরনো, তবু আকাশে তোমার
আকাশী-টি আজো আকাশ-রঙা এই আটত্রিশ বছর পরে! যেন কিচ্ছুটি নয়, রবির পরে সোম!
বিনিয়ামিন, ঢাকা
৭ এপ্রিল ২০১৩ সাল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।